somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেন দিবস আজঃ শহীদ নূর হোসেনর ২৭তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম শহীদ নূর হোসেন। যিনি মিটিং-মিছিল ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার অধিকার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সবসময় তিনি সক্রিয় ছিলেন মিছিল মিটিং সমাবেশে। সময়ের সাহসী সন্তান নূর হোসেন সেদিন বুকে পিঠে "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক" শ্লোগান লিখে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথের মিছিলে স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পেটোয়া বাহিনী গুলি চালিয়ে বিদীর্ণ করেছিল তার বুক। তবে গণতন্ত্রের জন্য তার আত্মদান বৃথা যায়নি। তার রক্তের ধারা বেয়েই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে।


১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৫,৭ ও ৮ দলীয় জোটের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়। এদিন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। গুলিতে আরো শহীদ হন যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটোও। নূর হোসেনের আত্মত্যাগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান ও তিন জোটের সংগ্রাম অপ্রতিরোধ্য রূপ লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে। বীরোচিত জীবনদানের ফলে নূর হোসেন সেই সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। এরপর থেকে নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা সেই শ্লোগান "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক" হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক। শহীদ নূর হোসেনের ২৭তম শাহাদত বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


নূর হোসেনের পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাতবুনিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তার পরিবার স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে। তার পিতার নাম মুজিবুর রহমান পেশায় ছিলেন পেশায় আটো-রিকশা চালক। তাঁর মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। অথর্নৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশুনা বন্ধ করে মোটর চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে নূর হোসেন ঢাকা মিনিবাস সমিতি চালিত বাসের সুপারভাইজর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তারুণ্যে পা দিয়েই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর নূর হোসেন তার বুকে ও পিঠে "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক" স্লোগান লিখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৫ দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পৌঁছলে একটি বুলেট এসে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়।


নূর হোসেনসহ অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে স্বৈরাচারের পতনকে ত্বরানিত্ব করে দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। এই আন্দোলনের জোয়ারে নব্বইয়ের শেষ দিকে ভেসে যায় স্বৈরাচারের তক্তপোশ। সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেনেরন শহীদী আত্মদান আন্দোলনকারীদের প্রাণে বিপুল শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়।


এছাড়া তিনি যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তার নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরন করা হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার। ১০ই নভেম্বর তার মৃত্যুর কিছু সময় পূর্বে তোলা তার গায়ে লেখাযুক্ত আন্দোলনরত অবস্থার ছবিটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ শহীদ নূর হোসেনের ২৭তম শাহাদাত বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×