somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যকার ও বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী গবেষক সেলিম আল দীন এর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যকার ও বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী গবেষক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। শিল্প বিষয়ে জ্ঞান অর্জন, নিজের শিল্পবিশ্বাস নির্মাণ করে তা অনুশীলন ও পরবর্তী প্রজন্মকে সেই শিল্প ধারণায় অবগাহনের প্রেরণা আমৃত্যু সঞ্চার করেন যিনি তিনিই তো একজন আচার্য হয়ে ওঠেন। সেই অর্থে সেলিম আল দীনের অবস্থান আমাদের সাহিত্যক্ষেত্রে একজন আচার্যের মতোই। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে পুরোধা নাট্যকার সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা নাটকের প্রবাদ পুরুষ, রবীন্দ্রোত্তর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের মৃত্যু দিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


১৯৪৯ সালের ১৮ই আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামেনা জন্মগ্রহণ করেন ট্যকার সেলিম আল দীন। পিতা মফিজউদ্দিন আহমেদ ও মাতা ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তানস তিনি ৷সেলিম আল দীনের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। সেই সূত্রে ঘুরেছেন বহু জায়গা। সেলিম আল দীনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে৷ তিনি এসব জায়গার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন ৷সেলিম আল দীন ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন৷ ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন৷ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন৷ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় সাদত কলেজে৷ সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন৷ ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন সেলিম আল দীন৷ ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি ছিল তাঁর চরম ঝোঁক। তাই দূরে কাছে নতুন বই দেখলেই পড়ে ফেলতেন এক নিমেষে। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর লেখক হওয়ার বিষয়ে পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। লেখক হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে, কবি আহসান হাবিব সম্পাদিত দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার মাধ্যমে। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের নিয়ে লেখা তাঁর বাংলা প্রবন্ধ নিগ্রো সাহিত্য ছাপা হয় ওই পত্রিকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে, কপি রাইটার হিসাবে।


তাঁর প্রথম রেডিও নাটক বিপরীত তমসায় ১৯৬৯ সালে এবং টেলিভিশন নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় লিব্রিয়াম (পরিবর্তিত নাম ঘুম নেই) প্রচারিত হয় ১৯৭০ সালে। আমিরুল হক চৌধুরী নির্দেশিত এবং বহুবচন প্রযোজিত প্রথম মঞ্চনাটক সর্প বিষয়ক গল্প মঞ্চায়ন করা হয় ১৯৭২ সালে। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্য বিষয়ক কোষগ্রন্থ বাংলা নাট্যকোষ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত হরগজ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে। সেলিম আল দীনের প্রথমদিককার নাটকের মধ্যে সর্প বিষয়ক গল্প, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, মূল সমস্যা, এগুলোর নাম ঘুরে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে প্রাচ্য, কীত্তনখোলা, বাসন, আততায়ী, সয়ফুল মূলক বদিউজ্জামান, কেরামত মঙ্গল, হাত হদাই, যৈবতি কন্যার মন, মুনতাসির ফ্যান্টাসি ও চাকা তাকে ব্যতিক্রমধর্মী নাট্যকার হিসেবে পরিচিত করে তোলে। জীবনের শেষ ভাগে নিমজ্জন নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান বেরিয়ে আসে সেলিম আল দীনের কলম থেকে। সেলিম আল দীন স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার উপর গবেষণা করেছেন। বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী এ নাট্যকার ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাট্যে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা নাটকের আপন বৈশিষ্টকে তুলে ধরেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখনী মুনতাসির, শকুন্তলা, কিত্তনখোলা (১৯৮৬), কেরামতমঙ্গল (১৯৮৮), চাকা (১৯৯১), হরগজ (১৯৯২), যৈবতী কন্যার মন (১৯৯৩), হাতহদাই (১৯৯৭), প্রাচ্য (২০০০), নিমজ্জন (২০০২)


নাট্যকার সেলিম আল দীন ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার। ১৯৯৫ সালে তিনি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটক এর উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। প্রখ্যাত বাংলাদেশী এই নাট্যকার অনেক পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পুরস্কার সমূহঃ বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০০৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), নান্দিকার পুরস্কার (আকাদেমি মঞ্চ কলকাতা) ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন নাট্যকার (১৯৯৪), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (একাত্তরের যীশু, শ্রেষ্ঠ সংলাপ) ১৯৯৪, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পান ২০০১ সালে এবং ২০০৫ সালে তিনি মুনীর চৌধুরী সম্মাননা লাভ করেন।


বাংলা নাট্যের মহাকবি সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। সেলিম আল দীনের মৃত্যু তো আসলে মৃত্যু নয়, এটা আরেক উজ্জীবনের নাম। তাঁর চলে যাওয়ার ভেতর দিয়ে তাঁর অস্তিত্বকেই বরং আমরা বারবার টের পাব তাঁর রচনাবলির মধ্য দিয়ে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে দায়িত্ব তিনি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অর্পন করে গেছেন, তা তাদেরকে অবিরাম প্রেরণা দিয়ে যাবে। আচার্য সেলিম আল দীনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×