somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোয়েন্দা কাহিনীর জনক মার্কিন সাহিত্যিক এডগার এ্যালান পো'র ২০৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্যে রহস্যকাহিনীর বর্তমান যে ধারা প্রচলিত, তার পথিকৃৎ এডগার এ্যালান পো। প্রথম জীবনে তিনি প্রচুর কবিতা লিখেছেন। তবে গদ্য সাহিত্যের জন্যই তিনি বেশি খ্যাতি ও গৌরবের অধিকারী। তিনি অনেক রহস্য ও রোমাঞ্চকর গল্প এবং অনেক হরর গল্পও লিখেছেন। তাঁর পূর্বে এমন হরর গল্প আর কেউ খুব একটা লেখেননি। এজন্যে তাঁকে রোমাঞ্চ জাগানো গল্পের জনকও বলা হয়। তিনি ছিলেন একাধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোমান্স আন্দোলনের অন্যতম নেতা, কবি, ছোট গল্পকার, সম্পাদক, সমালোচক এবং গোয়েন্দা কাহিনীর জনক। আজকাল কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও যে গোয়েন্দা কাহিনী পড়ে সে গোয়েন্দা কাহিনীরও জনক এডগার এ্যালান পো। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের আজ ২০৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৮০৯ সালের আজকের দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। রহস্য সাহিত্যের জনক এডগার এ্যালান পো-এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।


এডগার এ্যালান পো ১৮০৯ সালের ১৯ জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ বছর বয়স হবার আগেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং তখনই তাঁর কিছু কিছু রচনা প্রকাশিত হয়। এ্যালান পো এর সারা জীবনই কাটে নানা রকম যন্ত্রণা, আর্থিক দৈন্যদশা ও মানসিক অস্থিরতার মধ্যে। জীবদ্দশায় এক দিকে তিনি অসংযমী জীবন যাপন করেছেন, জুয়ো খেলেছেন, অসুস্থ হয়েছেন, মাদক দ্রব্য সেবন করেছেন। মৃত্যুর এক বছর পূর্বে ঘুমের বড়ি খেয়ে এক বার আত্নহত্যারও চেষ্টা করেন তিনি। এত কিছুর মধ্যেও কয়েকটি গভীর আবেদনময় কবিতা ও ব্যতিক্রমধর্মী ছোটগল্প রচনা করে শুধু মার্কিন সাহিত্যভুবনে নয়, বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজের জন্য একটি গৌরবমন্ডিত স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছেঃ ১। হেলেনের প্রত ২। স্বপ্ন, ৩। ইস্রাফিল, ৪। দাঁড়কাক, ৫। অ্যানাবেল লী প্রভৃতি।‘দ্য রেভেন’ বা ‘দাঁড়কাক’ কবিতাটি ১৮৪৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। কবিতাটি রোম্যান্টিকতা,মোহন সুরেলা ছন্দোময়তা ও তার রহস্যময় পরিমণ্ডলের জন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতারূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এডগার এ্যালেন পো অনেক রহস্য ও রোমাঞ্চ গল্প লিখেছেন। পো তাঁর বেশ কয়েকটি ছোটগল্পে উল্লেখযোগ্য নৈপুণ্যের সঙ্গে রহস্যময়, ভুতুড়ে, মৃত্যুর গন্ধমাখা, খুনখারাবি ভরা, আতঙ্কতাড়িত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। গোয়েন্দা-গল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান স্মরণীয়।


গোয়েন্দা ধারার রচনার মধ্যেঃ ১। আমন্তিলাডোর পিপা, ২। রু মর্গের হত্যাকাণ্ড এবং ৩। চুরি যাওয়া চিঠি তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। এছাড়াও তিনি অনেক হরর গল্প লিখে ছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য হরর গল্পগুলো হচ্ছেঃ ১। দি ফল অফ দ্য হাউস অফ আশার, ২। দি পিট এ্যান্ড দি পেন্ডুলাম, ৩। দি ব্লাক ক্যাট ইত্যাদি। এডগার এ্যালেন পো-র উচ্চমানের রচনাশৈলী এবং প্রতীকবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তী কালের অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন আইরিশ কবি ডব্লিউ. বি. ইয়েট্স্ ও ফরাসি কথাসাহিত্যিক মোপাসাঁ এবং কবি শার্ল বোদ্ল্যার ও অল ভালেরি। আজও পো-র সাহিত্যকর্ম সাধারণ পাঠক ও বিদগ্ধ সমালোচক সবার কাছে সমাদৃত হচ্ছে।


মাঝে-মধ্যে পৃথিবীতে এমন কিছু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে, যার কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাওয়া যায় না। রহস্যই থেকে যায়। তথ্য উদ্ঘাটন আর সম্ভব হয় না। এভাবে কেটে যায় যুগের পর যুগ। এমনই এক রহস্যের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে এলান পো এর মৃত্যু। বেঁচে থাকতেই যিনি পেয়ছেন রহস্যপুরুষের খেতাব তার মৃত্যুও যদি হয় রহস্যজনকভাবে, তাহলে তো কথাই নেই। এডগার অ্যালান পো তেমনি এক রহস্যপুরুষ। নিজের মৃত্যুকে তিনি করে গেছেন রহস্যময়। তার মৃত্যু নিয়ে আজও আলোচনা হয়, চলে বিতর্ক। মৃতুর আগে পো একা একা বাস করতেন নিউইয়র্কের কাছাকাছি ছোট্ট এক কুটিরে। অনেকেই মনে করেন, সেসময় তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিষণ্ন এবং সাধারণ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন এক আলাদা মানুষ। তার জীবনের সঙ্গেই অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে আছে 'রহস্যের জনক' শব্দটি। ১৮৪৯ সালের ৩ অক্টোবর হঠাৎ তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের রাস্তায়। জোসেফ ওয়ালকার নামের এক সহৃদয় ব্যক্তি তাকে ভর্তি করে দেন ওয়াশিংটন কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু বাঁচেননি তিনি। ১৮৪৯ সালের ৭ অক্টোবর এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যুবরন করেন এডগার এ্যালান পো। তার মৃত্যু নিয়ে আছে নানা রহস্য। ঠিক কী কারণে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তার কারণ আজও জানা যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন, মৃত্যুর আগে অ্যালকোহলে আসক্ত ছিলেন তিনি। যার কারণে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। আবার অনেকেই মনে করেন, ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বেশিরভাগ লোকেরই ধারণা, সম্পত্তির লোভে তাকে কেউ হত্যা করছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পর সঙ্গে সঙ্গেই এ নিয়ে আলোচনাও হয়নি। সংবাদপত্রে তখন বলা হয়েছিল, মস্তিষ্কের মারাত্মক রোগে পো মারা গেছেন। এরপর ছোট্ট আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এ সাহিত্যিকের মৃত্যু নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। শুরু হয় গবেষণা। কিন্তু মুশকিল হয়ে পড়ে যে হাসপাতালে পো মারা গেছেন সেখানে তার মৃত্যু ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো নথি পাওয়া যায়নি। এটাও এক রহস্য। পরবর্তীকালে পোর মৃত্যু নিয়ে অনেকেই গল্প ফাঁদেন। এমনকি আলোচনায় আসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ফেঁদেছিলেন বিভিন্ন কাহিনী। কিন্তু কোনো কাহিনীই কিনারা করতে পারেননি তার মৃত্যুর। রহস্যকাহিনীর জন্মদাতা এই মহান কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদকের মৃত্যুরহস্য হয়তো এভাবেই রহস্যময় থেকে যাবে চিরকাল।


আজ সেই রহস্য আর গোয়েন্দা কাহিনীর জনক এডগার এ্যালান পো'র ২০৬তম জন্মবার্ষিকী। রহস্যকাহিনীর জন্মদাতা বিখ্যাত কবি, ছোট গল্পকার, সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোমাঞ্চ আন্দোলনের পুরোধা এডগার এ্যালান পো'র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×