somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিষেধক বিদ্যার জনক, জীবানু গবেষক এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার এর ১৯২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্রিটিশ জীবাণু গবেষক এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার। তাঁকে বলা হয় 'প্রতিষেধক বিদ্যার জনক'। স্মলপক্সের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত তিনি। আজ থেকে ৬০, ৭০ বছর আগেও বসন্ত ছিলো এক মারাত্বক আতঙ্ক। যখন কোনো গ্রামে বসন্ত দেখা দিতো, তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতো, মহামারী আকারে মৃত্যুর কারণ ঘটাতো হাজার হাজার লোকের। বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে খুব কম লোকই বেঁচে উঠতো। যদিও বা কেউ কেউ প্রাণে বাঁচতো, কিন্তু সারা জীবনের জন্য শরীরে বয়ে বেড়াতে হতো সেই মারাত্বক রোগের বীভৎস ক্ষতচিহ্ন। এই কালব্যাধির হাত থেকে যে মহান ব্যক্তি রক্ষা করেছেন পৃথিবীর মানুষকে, তিনি হলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার। তিনি সর্বপ্রথম ১৭৯৬ সালে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন। গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করে জেনার পৃথিবীতে বইয়ে দিলেন স্বস্তির বাতাস। আর সেই টিকাদানের প্রেক্ষিতেই বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে যে পৃথিবীতে গুটিবসন্ত বলতে আর কোন রোগ নেই। বলা হয়ে থাকে জেনারের এই আবিষ্কার অন্য যে কোন আবিষ্কারের তুলনায় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। জেনার পরবর্তী জীবনের গোটাটাই তাঁর আবিস্কৃত বসন্তের টিকার উন্নতি বিধানের জন্য গবেষণা করে গেছেন। গোটা পৃথিবীকে তিনি রক্ষা করেছেন বসন্ত রোগের হাত থেকে। ১৮২৩ সালের আজকের দিনে গ্লসেস্টারশায়ারের বার্কলে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানী । আজ তাঁর ১৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


১৭৪৯ সালের ১৭ই মে এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার ইংল্যান্ডের বার্কলে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিলো তিনি একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী হবেন। তাই তিনি মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সময়কাল ১৭৯৬। লিউয়েনহুকের আবিষ্কারের পর আরো শ’খানেক বছরেরও বেশি বুড়িয়ে গেছে পৃথিবী। সে তখনো ধুঁকছে জীবননাশী সব মহামারিতে। দাঁত কেলানো হাসিতে তাকে বধ করে চলেছে প্রতিনিয়ত সব ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত ব্যাধি। গুটিবসন্ত এদেরই একজন। মানব জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া এই ভাইরাসঘটিত রোগ পুরো মানব জাতিকে ভয়ে তটস্থ করে রেখেছিল দীর্ঘ সময়জুড়ে। একবার এর বিষাক্ত ছোঁয়া বেশিরভাগ হতভাগাকেই মৃত্যুর শীতল হাতে সোপর্দ না করে রেহাই দিতনা আর আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় শিশুরাই থাকত সবার সামনের সারিতে। সেই সময়েই মানুষের জন্যে সবচেয়ে বড় উপহারটি নিয়ে হাজির হলেন ইংরেজ ডাক্তার এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার।


(প্রথম টিকাদান এডওয়ার্ড জেনারের হাত ধরে)
একসময় The Croods নামে একটা অ্যানিমেটেড মুভি তৈরী হয়েছিল। Croods-রা মূলত গুহামানব। সারা পৃথিবী থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। গুহাতেই তারা তাদের জীবনের প্রায় পুরোটাই কাটিয়ে দেয়। প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে তারা দিন-রাত যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্য। প্রকৃতির ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা তারা জানে না। তাই তারা ঘটনাগুলোকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে। আর তৈরি হয় নানা মিথ।


মানুষের ইতিহাসও অনেকটা Croods দের মতো। মানুষের কাছে যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগেনি। তখন তারা প্রকৃতির কাছে এমনটাই অসহায় ছিল। আর মানুষের চরম শত্রু ছিল নানা প্রাণঘাতী রোগ। এমন একটি রোগ হলো গুটিবসন্ত বা Smallpox। যে রোগ ছিল লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। আঠারো শতকের শেষ দিকে প্রায় চার লাখ ইউরোপিয়ানদের মৃত্যুর কারণ ছিল এই গুটিবসন্ত। আর যারা মৃত্যু থেকে রেহাই পেত তাদের ভাগ্যে জুটত অন্ধত্বসহ নানা ধরনের পঙ্গুত্ব। সেই সময়কার অসহায় মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলে মন ভারী হয়ে উঠে সঙ্গে আতঙ্কগ্রস্ত হয় সেসব রোগের কথা মনে করে। মুক্তি তখন ছিল অসম্ভব। তাই মানুষ অন্য কোনো উপায় না দেখে Croods দের মতো নানা মিথ তৈরি করতে থাকে।


জীবাণু গবেষক এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার এক গোয়ালিনীর কাছ থেকে জানতে পারেন তার কখনো গুটিবসন্ত হয়নি কারণ তার আগে গোবসন্ত হয়েছিল। জেনার গোয়ালিনীর এই তথ্যকে তার পরীক্ষায় ব্যবহার করেন। জেনার আট বছর বয়েসী এক ছেলের বাহুতে গোবসন্তের জীবাণু প্রবেশ করান। ফলে ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর ছেলেটি আর কখনো গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু এটি কীভাবে কাজ করেছে এডওয়ার্ড জেনার তা জানতেন না। পরবর্তীতে পাস্তুর বের করেন কীভাবে এ পদ্ধতিটি কাজ করে। পাস্তুর এর নাম দেন ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিন নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Vacca’ যার মানে গরু থেকে। এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনারের কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পাস্তুর এই নামটি রাখেন। ধারণা করা হয় ১৬ শতকের আগেই চীন বা ভারতে টিকা প্রচলন শুরু হয়। যদিও তা এখনকার ভ্যাক্সিনের মতো ছিল না।


১৮২৩ সালের ২৬শে জানুয়ারি এই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইংল্যান্ডের গ্লসেস্টারশায়ারের বার্কলে শহরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। আজ তার ১৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিষেধক বিদ্যার জনক, জীবানু গবেষক এডওয়ার্ড অ্যান্থনি জেনার এর মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×