somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী মওলানা আবুল কালাম আজাদের ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা মওলানা আবুল কালাম আজাদ। তরুণ বয়সে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থানে তার বিরোধিতা ছিল না। তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রবক্তা ছিলেন এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সামরিক শাসন ও পাকিস্তান ভাগ সম্পর্কেও তিনি ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। স্বাধীন ভারতে শিক্ষাবিস্তারে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণে রেখে তাঁর জন্মদিনটি সারা দেশে "জাতীয় শিক্ষা দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মওলানা আবুল কালাম আজদের আজ ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫৮ সালের আজকের দিনে তিনি দিল্লিতে ইন্তেকাল করেন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা মওলানা আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা


মওলানা আবুল কালাম আজাদ ১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর সৌদি আরবের মক্কায় জন্ম গ্রহন করেন। তার প্রকৃত নাম আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ। তরুণ বয়সে তিনি ছদ্মনাম ‘আজাদ’ ধারণ করেন। এর অর্থ হলো মুক্ত। এ জন্য তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তার পিতার নাম মওলানা খায়রুদ্দিন এবং মাতা ছিলেন সম্ভ্রান্ত আরব বংশোদ্ভূত। আজাদের পূর্বপুরুষরা সম্রাট আকবরের আমলে আফগানিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। রক্ষণশীল পরিবারের সদস্য হওয়ায় মৌলানা আজাদকে বাড়িতে বসেই সাবেকি পদ্ধিতে শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। মাত্র পনের বছর বয়সেই তিনি আরবী ও ফার্সী ভাষায় বিশেষ দখল অর্জন করেন। অল্প বয়সেই তিনি ধর্ম ও দর্শনের ওপর উর্দুতে কবিতা লিখতেন। তার এসব লেখালেখি ছিল মূলত ব্রিটিশ রাজত্ব ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত। মৌলানা আজাদ ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তিঁনি আরবীতে দর্শন, জ্যামিতি, গনিত ও বীজগনিতের উপর শিক্ষালাভ করে সাবেকি পদ্ধতিতে শিক্ষা-অর্জনের সমস্ত ধাপ সমাপ্ত করেন এবং শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।


(মহাত্মা গান্ধীর সাথে মওলানা আবুল কালাম আজাদ)
একাধিক ভাষায় দখল ছিল মওলানা আজাদের।তরুণ বয়স থেকে তিনি উর্দু ভাষায় কবিতা এবং ধর্ম ও দর্শন-সংক্রান্ত নিবন্ধ রচনা করতে শুরু করেন। কর্মজীবনে মওলানা আজাদ সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণ করে বৃটিশ শাসনের সমালোচনা করেন এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে সমর্থন জানান। পরে আজাদ খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন। খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় থেকেই মওলানা আজাদ মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসেন। আজাদ ১৯১৯ সালের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গান্ধীজির অহিংস অসহযোগের ধারণায় অনুপ্রেরিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলন সংগঠনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। তিনি গান্ধীর অহিংস আন্দোলনকে সমর্থন করতেন। বিদেশি পণ্য বর্জন করতে তিনি মানুষকে আহ্বান করতেন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেন। এসময় ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মওলানা আজাদ গ্রেফতার হন।


ভারতের অন্তর্বর্তী সরকারেও মন্ত্রীত্ব করেন মওলানা আজাদ। দেশভাগের অব্যবহিত আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির প্রচেষ্টা চালান। স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি চালু করেন। তিনিই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্থাপন করেন। তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ “ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম”। বইটি মৌলানা আবুল কালাম আজাদের আত্নজীবনীমূলক রচনা হলেও, ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মৌলানা আজাদের অন্যতম প্রধাণ ভূমিকা ছিল। এই গ্রন্থে তিনি ভারত-ভাগের পটভূমিসহ ১৯৩৫-৪৮ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলীর অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক ইতিহাসবিদের কাছেই বইটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি নির্ভরযোগ্য দলিল হিসেবে অনন্য স্থান করে নিয়েছে।


প্রখ্যাত সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা মওলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯৫৮ সালের ২২ ফে্ব্রুয়ারি ভারতের দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৯ বছর। আজ তার ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা মওলানা আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×