
আজ ১২ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার এই দিবসটি পালন করা হয়। কিডনি মানুষের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি আমাদের শরীরের কোষ পর্যায়ের বিপাকীয় যে বর্জ্য তৈরি হয় তার পরিশোধন করে। আমাদের দুটি কিডনির মাধ্যমে প্রতিদিন ১৮০ লিটার রক্ত পরিশোধিত হয়। আমাদের কিডনীর মধ্যে প্রতিদিন ১৮০ লিটার জলীয় পদার্থ প্রবেশ করে৷ সেটা থেকে শতকরা ৯৯ ভাগ পানিই পরিশোধিত হয়ে আবার মানুষের দেহে ব্যবহৃত হয়, আর মাত্র একভাগ পানি প্রসাবের আকারে বের হয়ে যায়৷ মানুষের শরীরে কিডনীর প্রয়োজন এ থেকেই বোঝা যায়৷ তাই এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সুস্থতা রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গের সুস্থতা রক্ষার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচেতন করা্র জন্য গুরুত্বসহকারে এই দিবসটি পালন করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অপর্যাপ্ত পানি পান, ব্যথানাশক ওষুধ সেবনসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে ধীরগতির কিডনি রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। নানা ভেজাল, রাসায়নিক পদার্থযুক্ত খাবার খেয়েও অনেকে হয়েছেন কিডনি রোগী। ডায়বেটিস রোগীরা এর প্রত্যক্ষ শিকার। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগ দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনি সহজেই আক্রান্ত হয়। তাছাড়া জাংকফুড কিডনির জন্য ক্ষতিকর। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক সেবন, ধুমপান ইত্যাদি ফুসফুস ও হার্টের অসুখের পাশাপাশি কিডনিকেও আক্রান্ত করে। বাত-ব্যাথার বড়ি আমাদের দেশে খুবই সহজলভ্য। প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ গ্রহণ কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। কিডনি দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য "সবার জন্য সুস্থ্ কিডনি"। বিশ্ব কিডনি দিবসকে সামনে রেখে শুধু এক দিনের র্যালি, সভা, সেমিনার করলেই হবে না, বরং কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য নিশ্চিত করতে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ব কিডনি দিবসে আমাদের প্রত্যাশা সবার জন্য সুস্থ কিডনি।

কিডনি রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি বিশেষভাবে প্রয়োজন। প্রায়শই আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যে নানান রকমের ভেজাল মেশানোর খবর পাই। কারাখানার ভারি ধাতুর বর্জ্য খাদ্যশস্যকে আক্রান্ত করছে যা পরবর্তীতে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। গবাদি পশুকে এন্টিবায়োটিক, ক্লোফেনাক, স্টেরয়েড ইত্যাদি খাওয়ানো হচ্ছে। সেগুলো খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। প্রশাসনিক প্রচেষ্টা সত্বেও এক শ্রেণির মানুষের অতিরিক্ত মুনাফার এ চেষ্টা প্রকারান্তরে আমাদের কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। সুস্থ কিডনির জন্য ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপের মতো সচরাচর রোগের সঠিক নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি। ওষুধ সেবন, নিয়মিত ডায়ালাসিস করা এবং কিডনী প্রতিস্হাপন কিডনী রোগের চিকিৎসা। কিডনি রোগ বিশেষত ক্রনিক কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং মৃত্যুহার অপেক্ষাকৃত বেশী। কিডনী রোগের চিকিৎসায় বিশাল ব্যয় সামলাতে অনেকে হয়েছেন নিঃস্ব। বাংলাদেশে কিডনী রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকহারে বাড়ছে এবং চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় আক্রান্তের অধিকাংশেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। অথচ সুস্থ্য জীবনচর্চা কিডনী রোগ প্রতিরোধে তাৎপর্যপূর্ণ ভ’মিকা রাখতে পারে। কিডনি সুস্থ রাখার দায়দায়িত্ব কিন্তু চিকিৎসকের একার নয়। যেকোনো ক্রনিক রোগের মতো কিডনি রোগও প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে তার সুচিকিৎসা সম্ভব। এর ফলে আমাদের রোগীরা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও আর্থিক দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস-২০১৫। `সবার জন্য সুস্থ কিডনি` এ আহ্বান আন্তর্জাতিক। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপট স্থানিক। আমাদের দেশে আকস্মিক কিডনি বিকলের প্রথম ও প্রধান কারণ হলো ডায়রিয়া। এছাড়া নারীদের গর্ভপাতসহ অগ্নিদগ্ধ রোগীদেরও আকস্মিক কিডনি বিকল হয়। একথা অনস্বীকার্য যে, "কিডনি রোগ জীবননাশ করে। তাই প্রতিরোধই বাঁচার উপায়। আটটি বিষয়ে সচেতন থাকলেই সুস্থ কিডনি নিশ্চিত করা সম্ভব। সেগুলো হলো- ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, সুপ্ত উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্যে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা, কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান পরিহার করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা, পরিমিত নিরাপদ পানি পান করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, কিডনির কার্যকারিতা নিয়মিত পরীক্ষা করা। রক্তের এস. ক্রিটিনিন ও ইউরিন-আরএমই ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেসার চেক করলেই জেনে নেওয়া যায় আপনার কিডনি সুস্থ কিনা।

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনো ধরনের কিডনি রোগে ভুগছেন। তাই মরণঘাতী এই রোগ প্রতিরোধের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। কিডনি রোগ কখনও আগাম জানান দিয়ে আক্রান্ত করে না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং এ জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। বিশ্ব কিডনি দিবসে নীতি নির্ধারকেরা আমাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জনগণের কিডনির সুস্থতার জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা করবেন, সাধারণ মানুষ তাদের কিডনির সুস্থতার ব্যাপারে অধিক সচেতন হবেন, গণ মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করে সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব কিডনি দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




