somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তিযুদ্ধের সফল রূপকার আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গ তাজ তাজউদ্দিন আহমদ। একজন সৎ, মেধাবী ও আদর্শবান রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল সর্বজন বিদিত। তিনি বাংলা ভাষার অধিকার, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সকল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দিন আহমদের আজ ৯০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।


তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই শীতলক্ষ্যার তীরঘেষা গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুননেসা খান। ৪ ভাই, ৬ বোনের মাঝে ৪র্থ তাজউদ্দীন আহমদের পড়াশোনা শুরু বাবার কাছে আরবি শিক্ষার মাধ্যমে। এই সময়ে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি হন বাড়ির দুই কিলোমিটার দূরের ভূলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ ১ম ও ২য় শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করেন৷ ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের কাপাসিয়া মাইনর ইংলিশ স্কুলে। এরপর পড়েছেন কালিগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশন, ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাই স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে৷ ১৯৪৩ সালে তাজউদ্দীন আহমদ অধ্যায়ন কালে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন। ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক ও পরবর্তীতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অবিভক্ত বাংলার সম্মিলিত মেধাতালিকায় যথাক্রমে দ্বাদশ ও চতুর্থ স্থান (ঢাকা বোর্ড ) লাভ করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ (সম্মান) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কারাগারে থাকা অবস্থায় এল.এল.বি. ডিগ্রীর জন্য পরীক্ষা দেন এবং পাস করেন।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু হলে তাজ তাজউদ্দিন আহমদ ঢাকা ত্যাগ করে ভারত চলে যান। ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনি এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। মুক্তিবাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আর্ন্তজাতিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ২২শে ডিসেম্বর তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বাংলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দ ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। মুক্তিযুদ্ধে চুড়ান্ত বিজয়ের পর তিনি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসলে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তাজউদ্দিন আহমদ প্রথমে অর্থ এবং পরে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৩-এ ঢাকা-২২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট পেশ করেন, প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনের বক্তৃতায় তিনি দল, সরকার এবং নেতা ও কর্মীদের মাঝে দূরত্ব দূর করে, সংগঠন এবং সরকারের মাঝে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান ৷


পঁচাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দল পরিচালনা এবং যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একক ক্ষমতার অধিকারী হন তিনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মুজিবনগর সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বাকশাল গঠনের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এ নিয়ে তাদের মতবিরোধ পরিবার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে আদর্শগত মতবিরোধও হয়েছিল। তাজউদ্দিন আহমদ দেখছিলেন শেখ মুজিব দেশকে ভিন্নপথে পরিচালনা করছেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রশ্ন তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়স্বজনদের নানা সুবিধা নেয়া প্রসঙ্গেও। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ) গঠন করতে যাচ্ছেন শুনে তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, এ জন্যই কি আমরা ২৪ বছর সংগ্রাম করেছি? আপনাকে আরো সতর্ক হতে হবে। যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি সে অবস্থা চলতে থাকলে আপনিও বাঁচবেন না আমিও বাঁচবো না। কিন্তু শেখ মুজিব তাজউদ্দিনের সে কথায় কর্ণপাত করেন নাই। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দীনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ ৩০ বছরের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহকর্মীকে ভুল বুঝেন। ১৯৭৪ সালের ২৬শে অক্টোবর তাজউদ্দীন মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি শেখ মুজিবকে বললেন, মুজিব ভাই, আমি আপনাকে সিরিয়াসলি একটা কথা বলি। আমার অনুরোধ, আপনি গোয়েন্দাদের দিকে একটু দৃষ্টি দেবেন। তা না হলে আপনি বাঁচতে পারবেন না। শেখ মুজিব যে রাতে খুন হলেন সে রাতেই গভীর ব্যথিত কণ্ঠে তাজউদ্দিন স্বগতোক্তি করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু জানতে পারলেন না-কে তার শত্রু আর কে তার বন্ধু ছিল?


(পরিবারের সাথে তাজউদ্দিন আহমদ)
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর হত্যাকারীদের নির্দেশে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দী করা হয়। ২২ আগস্ট সামরিক আইনের অধীনে তাজউদ্দীন আহমদ-সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরিবারের সদস্যদের প্রতি শুধু বলে গেলেন- ‘ধরে নাও আজীবনের জন্য’ যাচ্ছি ৷ ৩ কন্যা, ১ পুত্রসহ স্ত্রীকে ছেড়ে যাবার সময় একটুও বিচলিত ছিলেন না।


গ্রেফতারের পর তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। কারা অন্তরীণ হলেন আরো ৩ জন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান।১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলখানার মধ্যে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় এই নিঃসঙ্গ সারথি-কে… তৃষ্ণার্ত এই লোকটির “পানি পানের ইচ্ছা”-কে বেয়োনেট চার্জ দ্বারা মিটিয়ে দেয়া হয় চিরতরে…। একই দিনে জেলখনায় বন্দি অবস্থায় তাঁর সাথে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোঃ মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে জেলহত্যা নামে কুখ্যাত হয়ে আছে।


তাজউদ্দিন আহমদরা প্রতি বছর জন্মায় না। তারা কয়েক শ’ বছরে একজন জন্মান। সৎ ও আত্মত্যাগী এই মানুষটির ন্যায় আর একটি নেতা আমাদের এই দেশে অতি বিরল। আজ এই মহান ব্যাক্তিত্বের ৯০তম জন্মবার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধের নিঃসঙ্গ সারথী তাজউদ্দিন আহমদের জন্মদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×