somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ আর নেই

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ ইন্তেকাল করেছেন।(ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ ২৭ আগস্ট ২০১৫ ইং বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানী গুলশানের বাসায় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কাজী জাফর আহমদের এপিএস কামরুজ্জামান রনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কাজী জাফর আহমদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি ‘নির্বাচন বর্জনের’ পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজের অনুসারীদের নিয়ে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করে আলাদা দল গঠন করেন। যোগ দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নেতৃত্বাধীন খালেদা জিয়ার জোটে। তিনি এই জোটের শীর্ষনেতাদের অন্যতম ছিলেন। মুত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। কাজী জাফর হৃদরোগসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


কাজী জাফর আহমদ ১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কুমিল্লার বিখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে কাজী জাফর আহমদ খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকাররি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. অনার্স ও এম.এ. (ইতিহাস) পাশ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম.এ. এবং এল.এল.বি. কোর্স সম্পন্ন করা স্বত্ত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক এবং রাজশাহী কলেজ সাহিত্য মজলিশের মুখপাত্র ‘সাহিত্যিকী’র সম্পাদক হিসেবে তার কর্মময় রাজনীতিতে পদচারণ শুরু হয়। কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী জাফর আহমদ। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয় ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯-৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬-৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ১৯৯৯-২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দক্ষিণ এশীয় ভূমণ্ডলীয় রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ দিন যাবত কাজী জাফর আহমদ অসুস্থ ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৮ টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমরা প্রবীন এই রাজনীতিবীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×