somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশ্ববিখ্যাত লেখক, "ঔপন্যাসিকদের ঔপন্যাসিক" হিসেবে খ্যাত ফরাসী ঔপন্যাসিক এমিল জোলা। দ্য আর্থ (বাংলায় অনুদিত গ্রন্থ মাটি) বা দ্য জার্মিনাল (বাংলায় অনুদিত গ্রন্থ অঙ্কুর) এর মতো উপন্যাস সহ আরো অনেক কালজয়ী উপন্যাসের রচয়িতা ছিলেন এমিল জোলা। ফ্রান্সের রাজনৈতিক উদারনৈতিকতার জন্য সবসময় কাজ করেছেন এমিল জোলা। শুরুতে তিনি ফরাসি শুল্ক বিভাগের একজন করণিক ছিলেন। পরে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে এমিল বিভিন্ন পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা শুরু করেন। এই সময়ে তিনি ফ্রান্সের পরিবেশবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সাহিত্যে প্রকৃতিবাদী চিন্তাধারার অত্যন্ত জোরালো প্রবক্তা ছিলেন তিনি। ১৮৭১ হতে ১৮৯৩ সালের মধ্যে তাঁর ২০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে ‘নিনা’, ‘লা তেরা’, ‘লা মিরর’ প্রভৃতি। প্রথিতযশা ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার ১১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯০২ সালের আজকের দিনে ফ্রান্সের প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান সাহিত্যিক । বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


(শিশু বয়সে এমিল জোলা)
এমিল জোলা ১৮৪০ সালের ২ এপ্রিল ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্রেন্সকোসিস জোলা ছিলেন ইতালিয়ান প্রকৌশলী এবং মা ফ্রান্সের মেয়ে এমিল অবার্ট। ১৮৪৭ সালে জোলার বয়স যখন মাত্র সাত, তখন তার বাবা মারা যান। এরপর তিনি মায়ের কাছেই বড় হতে থাকেন। ১৮৫৮ সালে তিনি পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান প্যারিসে। সেখানে বন্ধু হিসেবে পান বিখ্যাত চিত্রকর পল সেজানকে। এ সময় তিনি রোমান্টিক ধাঁচে লেখালেখি শুরু করেন। জোলার মায়ের পরিকল্পনা ছিল ছেলেকে আইন পড়াবেন এবং আইনেই তার ক্যারিয়ার গড়বেন; কিন্তু লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় জোলা স্নাতক পরীক্ষায় ফেল করেন।পরর্বতী সময়ে তার আর আইন পড়া হয়ে ওঠেনি। লেখালেখির শুরুতে জোলা লেখেন ছোটগল্প ও গদ্য, চারটি নাটক এবং তিনটি উপন্যাস। তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৮৬৪ সালে। ১৮৬৫ সালে তার জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি পুলিশের তোপের মুখে পড়েন। লেখক হিসেবে পরিচিতির আগে তিনি কাজ করতেন একটি জাহাজ কোম্পানির কেরানি হিসেবে। তখনো তিনি পত্রিকায় সাহিত্য ও শিল্প সমালোচনা লিখতেন সাংবাদিকদের মতো।


১৮৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘থেরেস রিকুইন’। এরপর এমিলি দ্বিতীয় ফরাসি সম্রাটের পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিক লিখতে শুরু করেন। জোলা এবং সেজানের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল। কিছুটা ছন্নছাড়া ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন জোলা আর সেজান। একটি উপন্যাসে জোলা তাদের ছন্নছাড়া শিল্পী জীবনের জীবনচিত্র আঁকার পর তাদের জীবনে কিছুটা পরির্বতন আসে। জোলার জীবনে অপরাধীদের সঙ্গে মেশার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটার ঘটনাও আছে। তিনি বলতেন, 'সত্য সর্বদা চলমান এবং তাকে কখনোই থামিয়ে রাখা যায় না। ' তিনি সব সময় একটি নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন। ১৮৯৮ সালের ১৩ জুলাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে তিনি একটি খোলা চিঠি লেখেন এবং দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় তা প্রকাশিত হয়। একজন আর্টিলারি অফিসারের বেআইনি কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেন ওই চিঠিতে। এছাড়া বিচার ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি এবং মামলার গুরুত্বপূর্ণ দলিল মুছে ফেলার কথাও তিনি বলেন। ফলে রাজরোষে পড়েন এবং ১৮৯৮ সালে তাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি কারাদণ্ড এড়াতে ইংল্যান্ডে আত্মগোপন করেন এবং দেশে ফেরেন তার পরের বছর।


কেরানী থেকে লেখক হয়ে ওঠা এমিল জোলা ১৯০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সে ঘরের চিমনি বন্ধ হয়ে বিষাক্ত কার্বন-মনোঅক্সাইডজনিত গ্যাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর জন্য তার শত্রুদের দায়ী করা হলেও কোনো প্রমাণ ছিল না। তবে বলা হয়ে থাকে, শত্রুরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ঘরের চিমনি বন্ধ করে দিয়েছিল। জোলাকে প্যারিসে সমাহিত করা হয়; কিন্তু মৃত্যুর ছয় বছর পর অর্থাৎ ১৯০৮ সালের ৪ জুলাই তার স্মরণে তাকে সর্বদেবতা মন্দিরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৩৭ সালে জোলার জীবনী নিয়ে তৈরি করা হয় চলচ্চিত্র 'দ্য লাইফ অব এমিলি জোলা'। মুভিটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড পায়। আজ মহান লেখক এমিল জোলার মৃত্যুবার্ষিকী। প্রথিতযশা ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×