somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেন দিবস আজঃ বিকশিত হোক মুক্ত গণতন্ত্রের চর্চা

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দূর্বার আন্দোলনে জীবন দিয়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় দিন। শহীদ নূর হোসেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম। যিনি মিটিং-মিছিল ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার অধিকার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সবসময় তিনি সক্রিয় ছিলেন মিছিল মিটিং সমাবেশে। এই অকুতোভয় যোদ্ধা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন। সময়ের সাহসী সন্তান নূর হোসেন সেদিন রাজপথে স্বৈরাচারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গনতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগান বুকে পিঠে লিখে । ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৫,৭ ও ৮ দলীয় জোটের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়। এদিন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। গুলিতে আরো শহীদ হন যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো, ফাত্তাহসহ অনেকে। নূর হোসেনের আত্মত্যাগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান ও তিন জোটের সংগ্রাম অপ্রতিরোধ্য রূপ লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতন ঘটে। তার বীরোচিত জীবনদানের ফলে নূর হোসেন সেই সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। এরপর থেকে নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা সেই শ্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রতীক। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফিরে পায় ভোট ও ভাতের অধিকার। উল্লেখ্য ১৯৯৬ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় সংসদে নূর হোসেনের মৃত্যুর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নূর হোসেন দিবসে শহীদ নূর হোসেনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


১৯৬১ সালে (জন্মতারিখ অজ্ঞাত) পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাতবুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তার পরিবার স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে। তার পিতার নাম মুজিবুর রহমান পেশায় ছিলেন আটো-রিকশা চালক। তাঁর মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। অথর্নৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশুনা বন্ধ করে মোটর চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে নূর হোসেন ঢাকা মিনিবাস সমিতি চালিত বাসের সুপারভাইজর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তারুণ্যে পা দিয়েই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর নূর হোসেন তার বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৫ দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এক স্মৃতিচারণে বলেন," সেদিন আমরা যখন মিছিল শুরু করছিলাম তখন নূর হোসেন আমার পাশে দাড়িয়ে ছিল। আমি তাকে কাছে ডাকলাম এবং বললাম তার গায়ের এই লেখাগুলোর কারনে তাকে পুলিশ গুলি করবে। তখন সে তার মাথা আমার গাড়ির জানালার কাছে এনে বলল, "আপা আপনি আমাকে দোয়া করুন, আমি গণতন্ত্র রক্ষায় আমার জীবন দিতে প্রস্তুত।" নিয়তির নিষ্ঠুর নিয়তিতে মিছিলটি রাজধানীর জিরো পয়েন্টে পৌঁছলে একটি বুলেট এসে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়।


নূর হোসেনের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাঁর আত্মাহুতির ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। তাঁর এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলকে বেগবান করে। নূর হোসেনসহ অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে স্বৈরাচারের পতনকে ত্বরানিত্ব করে দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। এই আন্দোলনের জোয়ারে নব্বইয়ের শেষ দিকে ভেসে যায় স্বৈরাচারের তক্তপোশ। সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেনেরন শহীদী আত্মদান আন্দোলনকারীদের প্রাণে বিপুল শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তার নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরন করা হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার। তবে সারাবছরই ভাস্কর্যটি পোস্টার ও ফেস্টুনে ঢাকা থাকে। ১০ই নভেম্বর তার মৃত্যুর কিছু সময় পূর্বে তোলা তার গায়ে লেখাযুক্ত আন্দোলনরত অবস্থার ছবিটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


শহীদ নূর হোসেন দিবস বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন। বাংলাদেশের মাটিতে নূর হোসেনের মতো সাহসী মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন এদেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হবে না এ বিশ্বাস আমাদের। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় নূর হোসেন, টিটোরা যে স্বপ্ন নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ২৭টি বছর পার হয়ে গেলেও ক্ষমতার রশি টানাটানিতে সেই গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। শহীদ নূর হোসেনের পরিবার আজও প্রত্যাশা করে তার হত্যার সুষ্ঠ বিচার। শহীদ নূর হোসেন দিবসে নূর হোসেন, বাবুল, টিটো ফাত্তাহসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশই হবে মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য শহীদ নূর হোসেনসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উৎকৃষ্ট উদ্যোগ।শহীদ নূর হোসেনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশে বিকশিত হোক মুক্ত গণতন্ত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন-হাদিস অনুযায়ী তারা পাকিস্তান এবং অন্যরা অন্যদেশ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২১



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬০। তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে, এছাড়া অন্যদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×