somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণকারীদের অভায়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশঃ ধর্ষণের বিস্তার রোধে নরপশুদের ফাঁসি চাই

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রকাশ কালঃ ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪১, ২০১৭ সালেও একই চিত্র
=============================================
আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়া, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দানে অপারগতা কিংবা অবহেলা, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিরাপদে অবস্থান কিংবা প্রভাবশালী বিধায় ধর্ষণকারীর বিচার না হওয়ায় নরপশুরা দোর্দণ্ড প্রতাপে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। ধর্ষকদের মনে একটা কথা এখন বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে যে , ধর্ষণ করলে কিছুই হয় না। গণধর্ষণে বড়জোড় জরিমানা হয় কিংবা দোররা অথবা হাজার দশেক টাকা জরিমানা । আর ভিক্টিম মারা গেলে হয়তো বড় জোড় জেল হবে । আবার এসব কিছুই হবে না যদি ধর্ষকদের মামা – চাচা (!) থাকে । আর যদি রাজনৈতিক কর্মী হয় , তাহলে তো উল্টো ভক্টিমের পরিবারকেই হেনস্থা হতে হয় ! যে কারনেই এইসব নরপশুদের সাহস এতো বেড়ে গেছে । ডাঃ সাজিয়া আক্তার ইভার হত্যাকারী ,কিংবা ধর্ষক পরিমল অথবা মডেল তিন্নির হত্যাকারী এবং এরকম হাজারো ঘটনার নরপশুদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি।

তাই আগে যা হতো লোকচক্ষুর আড়ালে রাতের অন্ধকারে তা এখন প্রকাশ্যে অনেকের সামনে দিনের আলোয় সংঘটিত হচ্ছে। অভিজাত ভাষায় বলা হয় যাকে বলা হয় গণধর্ষণ। কয়েকটি সারমেয় মিলে এক যোগে একটি কিশোরী কিংবা তরুণীর দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে। এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়না তারা, নারী দেহ নিয়ে হায়নাদের সেই বিভৎস উল্লাস ক্যামেরা বন্ধী হয়ে তা ছড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে। যার চিত্রায়ণ দেখে তাদের স্বজাতিরা কামাতুর হয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোল; প্রলুব্ধ হয় এমন একটি কচি শরীর বাগে আনতে। ধর্ষিতা শত হাজারবার ধর্ষিতা হয় তার অজান্তে। এমনি ভাবে দিনে দিনে ধর্ষণকারী হিংস্র নরপশুদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এদের হাত থেকে নিস্কৃতি পায়নি ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোরী, তরুণী, গৃহবধু, শিক্ষিকা, আইনজীবী, ডাক্তারসহ ৬০ বছরের বৃদ্ধাও। একাধিক নরপশুরা একই সাথে ছিন্নভিন্ন করছে ৫ বছরের কোমল শিশুর শরীর। এমনি হাজারো ঘটনা ঘটেছে আমাদের এই দেশে যেমনঃ
বাঁশখালীতে যুবতী ধর্ষণের ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা, মাতবরেরাই ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তি করেন কুলিয়ারচরে, কুতুবদিয়ায় ১০ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা ধামা-চাপা, ঈশ্বরদীতে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টার অভিযোগ, চবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা। অভিযুক্ত শিক্ষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশু হত্যা, বরিশালে গৃহবধূকে-ধর্ষণের-ঘটনা-ধামাপাচা-দেয়ার-চেষ্টা, রামগঞ্জে শিক্ষক কতৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, ফতুল্লায় নববধূকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা, চাঞ্চল্যকর আরও ছয়টি রেইপ এর ঘটনা, তুমা চিং মারমাকে ধর্ষণের পর হত্যা, কেন্দুয়ায় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা, রাঙামাটিতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, ভিকারুন্নেসায় ছাত্রী নির্যাতন, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ভট্রসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর এক ছাত্রী ধর্ষণ, ডা. সাজিয়া আরফিন ইভাকে ধর্ষণে বাধা দানে হত্যা, ৬ বছরেও তিন্নি হত্যা, মীরসরাইয়ে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০০ থেকে ৪০০০ ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট হয় । যা সরকার স্বীকার করে । অন্য সুত্রগুলো বলে এই সংখ্যা ১০,০০০ এর কাছাকাছি থাকে গড়পড়তা। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে রেইপের ঘটনা ঘটেছে ১১,২৯১। ২০০৬ সালে ১১,৬৮২ টি খেয়াল করুন এইগুলা সবই রিপোর্টেড ঘটনা । রিপোর্টেড নয় এমন ঘটনা যোগ করলে এই সংখ্যা কতো হবে ধারনা করতে পারেন। প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে দেশে তিন হাজার ৫৮৪টি ধর্ষণ এবং ২০০৮ সালে তিন হাজার ৪৬২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০০৯ সালের ৯ মাসে এক হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ।জাতীয় মহিলা পরিষদের ২০১২সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজয়ের মাসে ৪০০-এর ওপর নারী ধর্ষিত হয়েছেন। এছাড়াও ঘটে বিভিন্ন নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনাও। টাঙ্গাইলে স্কুল ছাত্রীর হণ ধর্ষনের ঘটনা, বাগেরহাটে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণ , গোবিন্দগঞ্জে শিক্ষক কর্তৃকছাত্রীধর্ষণ , রাজধানীতে ধর্ষণের পর ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রীকে হত্যা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ভট্রসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর এক ছাত্রী ধর্ষণ, সাভারে গণধর্ষণ; ভিডিও ধারন, শিশু চাঁদনী ধর্ষণ, বনানীতে ২ শিক্ষার্থী ধর্ষণ।

সচেতনাতার অভাব কিংবা সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই হয়তো বিচার প্রার্থী হতে পারেনা বা হয়না। তাই দেশের ধর্ষণজনিত ঘটনার কিয়াদংশই আমাদের গোঁচরে আসে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ধর্ষণের খবর রসিয়ে রসিয়ে প্রচার করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে, কখনো্ কখনো ধর্ষীতার ছবি ও নাম পরিচয় প্রকাশ করে তাকে দর্শকদের দ্বারা ধর্ষণ করায় যা নৈতিকতা বিরুদ্ধ। সম্প্রতি ভারতে বাসে ধর্ষীতার নাম পরিচয় ও ছবি প্রকাশ না করার যে দৃষ্টান্ত ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দিয়েছে তার অনুকরণীয়। ভিক্টিমের পরিচয় গোপন করে সংবাদ প্রচার করে ধর্ষনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবার দ্বায়িত্ব প্রচার মাধ্যমের।

বেশ কয়েক বছর আগে '' এসিড সন্ত্রাস '' এতোটাই ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে , প্রতিদিন পত্রিকা, টিভি খুললেই গড়পড়তা ৫/৬ টা এই ধরনের ভয়াবহ নিউজ আসতো । এই এসিড সন্ত্রাস এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারন করেছিলো যে তখন নারী ও শিশুনির্যাতন বিষয়ক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত এবং কঠোর শাস্তির ব্যাবস্থা করা হয়েছিলো , আজ কিন্তু এসিড সন্ত্রাস প্রায় নেই বললেই চলে। জনগণ প্রতিবাদী হয়েছিলাম বলেই আমরা এসিড সন্ত্রাস রুখতে পেরেছিলাম। বর্তমানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, সন্ত্রাস আজকে এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছে যার বিরুদ্ধে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে একটা বড় ধরনের প্রতিবাদ প্রতিরোধ আবশ্যক এখনই।

ধর্ষণ প্রতিরোধে আমরা কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরতে পারি যেমনঃ
১। ধর্ষণের বিস্তার রোধে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। সেই ফাঁসীর খবরগুলোর মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করতে হবে যাতে করে সেইসব নরপশুদের মনে মৃত্যুর ভয় ঢুকিয়ে দিতে হবে।
২। বিকল্প হিসেবে ধর্ষনকারীদেরকে নপুংশক করা যেতে পারে। সম্প্রতি কোরিয়াতে এই আইন পাশ করা হয়েছে।
৩। ধর্মীয় অনুশাসন, প্রচলিত আইন, রীতি নীতি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:১২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×