somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আজঃ ‘অভিবাসী অধিকার-মর্যাদাও ন্যায় বিচার’

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘অভিবাসী অধিকার-মর্যাদাও ন্যায় বিচার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০১৮। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। চলতি বছর ৭ লাখ ১২ হাজার ৩৪২ জন কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমন করেছেন। এছাড়াও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণপাপ্ত কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মীদের পাঠানোর লক্ষ্যে সারাদেশে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো থেকে কর্মী বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের গোড়ার কথাঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি। শুরুর দিকে তারা ১৮ ডিসেম্বরকে নির্ধারণ করে এবং অভিবাসীদের ঘিরে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। উল্লেখ্য ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে তাদের রেখে আসা পরিবারের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল। এই সম্মেলনে অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি ৪৫/১৫৮ প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে। এর প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর দিনটিকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটসসহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। ১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিনো এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করতে শুরু করে। অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষার্ধে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণার ফলে জাতিসংঘের মুখপাত্র ১৮ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হন। ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস হিসেবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।


অভিবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। অভিবাসী ভাইবোনেরা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩ জন বাংলাদেশি কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২১৩ জন নারী কর্মী। বর্তমানে বছরে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের হার ৬১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। যা বিগত সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি। যাদের অর্থে সচল আমারেদর অর্থনীতির চাকা তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবপাচার বিরোধী আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বিশ্বের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিদেশে যেতে আগ্রহী অভিবাসীদের কর্মের সুযোগ সৃষ্টিতে নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রতারণারোধ, অভিবাসন ব্যয়হ্রাস, প্রশিক্ষণ, ঋণপ্রাপ্তিতে সহজকরণের মাধ্যমে অভিবাসীর অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এছাড়াও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন সাধন এবং নিরাপদ অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোত্তম ব্যবহার বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে পারে। তাই অভিবাসী নারী-পুরুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।


প্রাচীনকাল থেকেই জীবিকার সন্ধান, আর্থ-সামাজিক, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। তাই মানব সভ্যতার বিকাশে অভিবাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও বৈচিত্র্যময় ও বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রেও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ভূ-রাজনৈতিক নানা কারণে অভিবাসন আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অভিবাসীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন ও সনদসমূহে বর্ণিত বিধানাবলীর যথাযথ প্রতিপালন অত্যন্ত জরুরি। হয়রানি মুক্ত অভিবাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতার একান্ত প্রয়োজন। ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে (International Migrants Day) প্রবাসে কর্মরত সকল বাংলাদেশি অভিবাসী ভাইবোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×