somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

ঘুষ ইজ নট গুড ফর হেলথ, ইট ইজ ডেন্জারাস এ্যালিমেন্টস ফর হেলথ!!

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী কম হতাশা থেকে এই কথা বলেনি। ‘মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ঘুষ, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে বারবার কথা বলেছেন, নানা নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত ঘুষ-দুর্নীতির জাল এতটাই বেশি যে তা থেকে সহসা মুক্তির কোন পথ নাই বলেই সম্ভবত তাঁর এমন মন্তব্য।
শত বছর আগের কথা তখনও বাঙালি ঘুষ খেত তবে তা টাকায় নয়; এক কাদি বড় কলা, বিশাল সাইজের মুরগি, বড় মাছ, রসালো আম, কাঠাল ইত্যাদি। এক ইংরেজ বিচারকের আদালতে বিচার চলছে। হঠাৎ চাপরাশি হন্তদন্ত হয়ে তার রুমে ঢুকলেন। কোনোরকম বিরতি না দিয়েই বললেন, ‘হুজুর, মিস্টার নাজির ইজ ইটিং ঘুষ।’ বিচারক মহাশয় আবারও বিপাকে! ‘ঘুষ’ শব্দের সঙ্গেও তার পরিচয় নেই। কী আর করা। চাপরাশি ঘুষ কী তা বোঝাতে সরাসরি নাজিরের রুমে নিয়ে গেলেন বিচারককে। গিয়ে দেখেন নাজিরের টেবিলের ওপর এক কাদি পাকা কলা। এই কলার কাদি ঘুষ হিসেবে দেয়া হয়েছে নাজিরকে। সেখান থেকেই কলা নিয়ে খাচ্ছিল সে। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব রুমে গিয়ে দেখেন কলা মুখে পুরেছেন নাজির। এ অবস্থায় তরুণ বিচারক ভাবলেন, ‘কলা’কেই বুঝি ‘ঘুষ’ বলা হয়। কিছুদিন আগে তিনি এই ফলটি খেয়েছেনও। খুবই সুস্বাদু লেগেছে তার কাছে। জেনেছেন এর পুষ্টিগুণও। তাই তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট ‘ঘুষ’ আর ‘কলা’ একই শব্দ মনে করে বললেন, ‘ওহ, আই থিংক সামথিং রং। বাট ইউ আর ইটিং ঘুষ। ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ, এভরিবডি মাস্ট ইট ঘুষ।’

ব্রিটিশ ভদ্রলোক বাংলা জ্ঞানের ঘাটতির কারণে ‘ঘুষে’র মাহাত্ম্য (!) না বুঝলেও যুগে যুগে দুর্নীতিবাজরা তার কথাকে বেদবাক্য হিসেবেই নিয়েছেন। ‘তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট যখন নাজিরের রুমে ওই কথা বলেছেন, তখন মনে হয় পুরো বাঙালি জাতিই সেখানে ছিলেন এবং আজও তা ধ্যানে-জ্ঞানে মেনে চলছেন।’ মন্ত্রীরাও তা পালন করছেন অক্ষরে অক্ষরে। ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত আমাদের ব্যক্তি জীবন, সমাজ সংসার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কতোটুকু উন্নতি হলো? কি পেলাম, কি পেলাম না, সর্বোপরি আমাদের ব্যক্তি ও জাতীয় চরিত্রের উন্নতি অবনতি অথবা উন্নতির অন্তরায় কী? ব্রিটিশরা ভেগেছেন। তাড়ানো হয়েছে পাকিস্তানিদের। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বয়স এখন ৪৬ বছর। কিন্তু দুর্নীতির এই গল্পের প্লট কি বদলেছে? নাকি অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে? দৃঢ়তার সাথে বলা যায় অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেটের উপদেশ শিরধার্য করে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে আপমর জনতা আহাম্মকের মত মাথায় হাত দিয়ে সরকারী অফিসার,কর্মকর্তা,প্রভাবশালীদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর তারা একের পর এক কলা খেয়েই যাচ্ছে।

ঘুষ দুর্নীতি ভালো নয়। এ কথাটি আজিকাল সত্যিকার অর্থে কেউ বলে না। কারণ এ ছাড়া গত্যান্তর নেই। ’সাধারণ মানুষও জেনে গেছে ঘুষ ছাড়া দেশে কাজ হয় না। ফেলো কড়ি মাখো তেল। এটিও একটি প্রবাদ। ঘুষ প্রদান এ্খন অলিখিত বিধান। চিকিৎসা সেবা পেতে ঘুষ, চাকুরী পাতে ঘুষ বদলি কিংবা চাকুরী নিয়ে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রেও টুপাইস না দিলে ফাইল স্থানুর মতো ঠায় দাড়িয়ে থাকে। ‘এই নট নড়ন চড়ন অবস্থা হতে ফাইল নড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খুশি করতে হবে।
কিছু দিন পূর্বে টাকা মন্ত্রী ঘুষ জায়েজ করে বলেছিলেন- ঘুষ হলো স্পীড মানি! যা কাজের গতি বাড়ায়!
ঢাকা ডিভিশনের এক ডিআইজি তার পুলিশদের হুকুম দিয়েছিলেন, রাস্তায় না খেয়ে অফিসে বসে ঘুষ খেতে! এবার স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রী শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ঘুষ বন্ধ করতে না পেরে সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নিতে শিক্ষামন্ত্রীর আকুতির পেছনে রয়েছে শিক্ষাখাতের দুর্নীতির করুণ চিত্র। সেখানে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সহসা উত্তরণের আশা করাও এক ধরনের দুঃসাহসের বিষয়। তিনি তার অধিদপ্তরের ঘুষ খাবার দ্বায় স্বীকার করে বলেন শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীরাই নয়, মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করে, তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস আমার নাই। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘খালি যে অফিসাররা চোর তাই না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর, এই জগতে এরকমই চলে আসতেছে।’ কি অমিয় বানী ! অকপট স্বীকারোক্তি!! শিক্ষামন্ত্রীর চমৎকার ছবক!!! শিক্ষামন্ত্রী কম হতাশা থেকে এই কথা বলেনি। ‘মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ঘুষ, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা নিয়ে বারবার কথা বলেছেন, নানা নির্দেশও দিয়েছেন।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি ঘুষ দুর্নীতি আগেও ছিল। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলেও ছিল। তবে তখন লুকোলুকি করে আদান প্রদান হতো। দাতা গ্রহীতা উভয়ের একটু শরম শরম ভাব ছিল। ছিল অপরাধবোধ। সমাজও ঘুষ খোরকে দেখতো আড়চোখে। কিন্তু মিথ্যা কথা বলতে বলতে যেমন সত্য হয়ে যায়, পাপ তেমনি করতে করতে সামাজিক বৈধতা লাভ করে। এখন ঘুষ কেউ রাখ ঢাক করে খায় না। ঘুষখেকোরা এখন সংখ্যাগুরু। দুর্নীতি বিরোধী মানসিকতা ও মূল্যবোধের জন্ম দেবে শিক্ষা। সেই শিক্ষাক্ষেত্রেই দুর্নীতির খেলাকে জায়েজ করে দিলেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। সরিষায় ভূত। এত শস্য, ফল-মূল থাকতে ভূত সরিষায় গিয়ে আস্তানা গাড়ে কেন? এই ডিজিটাল যুগেও বাঙালি মাত্রেই এর উত্তর জানেন। জ্বিন ভূতে বিশ্বাসী মানুষ আমরা। কোনো নারী পুরুষকে জ্বিনে ধরলে ডাক্তার ছেড়ে এখনো অনেকে দৌড়ান অন্য দিকে। তাদের বলা হয় মোল্লা মৌলভী। সকল মাওলানা এ কাজ করেন না। যারা তাবিজ তুবিজ দেন তারা জ্বিন বা ভূত ছাড়াতে সরিষা এবং সরিষার তেল ইস্তেমাল করেন। কিন্তু সরিষার মধ্যেই যদি ভূত লুকিয়ে থাকে তাহলে প্রতিকার হবে কি করে ! প্রতিকার নেই!! দুঃখ লাগার কথা। কিন্তু আমাদের দুঃখ লাগেনা এ জন্য যে, দুঃখ সইতে সইতে আমরা বুলেট প্রুফের মতো দুঃখ প্রুফ হয়ে গেছি।
তবে ঘুষ যতই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হোকনা কেন সকল ধর্মেই ঘুষকে হারাম করেছে। “মুসলিম আইন অনুযায়ী এক জন মুসলমানের ঘুষ খাওয়া এবং দেয়া সম্পুর্ণ নিষেধ, যাকে ইসলামে হারাম বলা হয়।” তারমানে এক জন সাচ্চা মুসলমানকে যে কোন অবস্থায় ঘুষ খাওয়া এবং দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ঘুষ খাওয়া এবং দেয়া শুধু ইসলামে না সামাজিক ভাবেও ঘৃনীত কাজ। সমাজও ঘুষ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে। আমাদের নবী করিম হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও ঘুষ খাওয়া এবং দেয়া থেকে বারংবার নিষেধ করেছেন।সুদ, ঘুষ এবং সম্পদ আত্মসাতের পরিনাম সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বানী রয়েছে। সুদ-ঘুষের পয়সা হচ্ছে নিকৃষ্টতম হারাম উপার্জন। সুদ দেওয়া, সুদ নেওয়া; ঘুষ দেওয়া, ঘুষ নেওয়া - সবই চরম অন্যায় এবং মারাত্মক কবীরা গুনাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেনঃ
"ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা ও ঘুষের লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী সকলের উপর আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।"
আল মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাকীম আবু আবদিল্লাহঃ ৪:১০৩

উপসহারঃ যে জিনিষ দেয়া এবং খাওয়া হারাম এবং সামজিক ভাবে ঘৃনীত ও অপরাধ মুলক কাজ তাহলে আমরা কেনো করি। তাই ভাবতে শিখুন ঘুষ ইজ গুড নয় বাট ঘুষ ইজ ডেন্জারাস থিংকস ফর হেলথ। ঘুষের ক্রমবিকাশ যত সত্বর কমে আসে ততোই মঙ্গল।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×