somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুষ্ঠিযুদ্ধের কিংবদন্তি, সর্বকালের সেরা মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিন বারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাপিয়ন এবং অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজয়ী বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। তিনি ৬১ টি বক্সিং প্রতিযোগিতার মধ্যে ৫৬ টিতে জয়ী হন এবং মাত্র ০৫ টিতে পরাজিত হন। ১৯৯৩ সালে আমেরিকার ৮০০ জীবিত অথবা মৃত অ্যাটলেটের মধ্যে বেইব রুথের সাথে তাকে যুগ্মভাবে সেরা ঘোষণা করা হয়। যাদের তিনি পরাজিত করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন-লিয়ন স্পিংস্, জো ফ্রেজিয়ার, জর্জ ফোরম্যান, লিয়ন স্পিংস্, কেন নরটন, হেনরী কুপার, সনি লিসটন। যাদের কাছে হেরেছেন তারা হলেন, ট্রেভর বারবিক, ল্যারি হোমস, লিয়ন স্পিংস্, কেন নরটন ও জো ফ্রেজিয়ার। বর্ণিল কর্মজীবনে মোহাম্মদ আলী ছিলেন আপোসহীন একজন মানুষ। অন্যায়, অবিচারের কাছে কখনই মাথা নত করেননি। জীবনের শুরু থেকেই ছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে উপেক্ষিত হওয়ার পর বলেছিলেন ‘আমাকে যদি মুষ্টিযুদ্ধ অথবা ইসলামের মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে হয় আমি ইসলামকেই বেছে নিব।’ ১৯৯৯ সালে সালে বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাট্রেটেড তাকে স্পোর্টসম্যান অব দ্যা সেঞ্চুরী অর্থাৎ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে। এক শ্বেতাঙ্গ রেস্টুরেন্টে কালো বলে তিনি সার্ভিস পাননি। ১৯৬৪ সালে তিনি আমেরিকার মুসলিম সংগঠন নেশন অব ইসলামে যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালে ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতার কারণে গ্রেফতার হন এবং তার বক্সিং খেতাব কেড়ে নেয়া হয় এবং তার বক্সিং লাইসেন্সও স্থগিত করা হয়। এই ক্ষোভে তিনি তার অলিম্পিক স্বর্ণপদক ওহাইও নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকে সেই স্বর্ণপদক ফিরিয়ে দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ অবসরে যাবার পর বিভিন্ন মানবতাবাদী কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তি, সবার জন্য শিক্ষা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতা উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আজ কিংবদন্তি মুষিটযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের আজকের দিনে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ।


মোহাম্মদ আলী ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি কেন্টাকি রাজ্যের লুইসভিলে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম নাম ক্যাসিয়াস ক্লে। ক্লে ছিল তার ক্রীতদাস পূর্ব পুরুষদের খেতাব। পরবর্তীতে ক্যাসিয়াস ক্লে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বিশ্ব দরবারে মোহাম্মদ আলী নামে পরিচিত হন। ক্লের বাবার নাম ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে সিনিয়র ও মাতার নাম ওডিসা গ্রেডি ক্লে। বাবা বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড লিখতেন, মা ছিলেন গৃহিণী। একটি মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে তার মুষ্টিযুদ্ধ জগতে আগমন। ১৯৫৪ সালের একদিন মোহাম্মদ আলীর সাইকেল চুরি হয়ে যায় তখন সে লুইসভিলের পুলিশ অফিসারকে (জো ই মার্টিন) জানায় সে চোরকে পেটাতে চায়। অফিসার তাকে বলে যে এর জন্য তাকে লড়াই করতে জানতে হবে। পরদিন তিনি মার্টিন এর কাছ থেকে বক্সিং শেখা শুরু করেন। তিনি তাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাতে হয়। তিনি বক্সিং মাস্টার ফ্রেড স্টোনার ও চাক বোডাক এর কাছেও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৬০ সালে রোমে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীণ অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েটে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে লিখন ও বানান দুর্বলতার কারণে তিনি মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু পরের বছর তার পরীক্ষা নেয়া হয়, তিনি এ ওয়ান শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। সেই সময় আমেরিকা ভিয়েতনামে যুদ্ধ করছিল। ভিয়েতনামে যুদ্ধের জন্য তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, "যুদ্ধ পবিত্র কোরান শিক্ষার বিরোধী। আমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কোন খৃস্টানের কিংবা অবিশ্বাসীদের যুদ্ধে শরিক হওয়া আমাদের উচিত হবে না।" তিনি আরও বলেন, "তাদের (ভিয়েতনামীদের) সাথে আমার কোন বিবাদ নেই। তারা (ভিয়েতনামীরা) আমাকে কালো বলে গাল দেয় নি। অন্যত্র তিনি বলেন," তারা (মার্কিনিরা) কেন আমাকে উর্দি পরিয়ে দশ হাজার মাইল দূরে পাঠিয়ে ভিয়েতনামীদের উপর বোমা আর বুলেট মারতে বলবে যখন লুইসভিলেই (আলীর গ্রাম) সামান্যতম মানবাধিকার অস্বীকার করে নিগ্রোদের সাথে কুকুরের মত আচরণ করা হয়।" ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতির কারণে তাকে গ্রেফতার ওবিচারের সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৬৭ সালের ২০ জুন মাত্র ২১ মিনিটের বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শাস্তিস্বরূপ তার বক্সিং খেতাব কেড়ে নেয়া হয় এবং তার বক্সিং লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর কারণে তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত লড়াই করতে পারেননি। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপীল করা হয়। ইতোমধ্যে আলীর সমর্থনে ও যুদ্ধের বিপক্ষে জনমত তীব্রতর হতে শুরু করে। আলী তার সমর্থনে সারাদেশব্যাপী যুদ্ধবিরোধী মনোভাবসম্পন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বক্তৃতাদান অব্যাহত রাখেন। পরে আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হন।


ব্যক্তিগত জীবনে মোহাম্মদ আলী ৪ বার বিয়ে করেন। তার ৭ মেয়ে ও ২ ছেলে। এর মধ্যে লায়লা আলী জগদ্বিখ্যাত নারী মুষ্টিযোদ্ধা। ক্যারিয়ারের কারণে মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করার সুযোগ পান। ৭টি মহাদেশেই রয়েছে তার পদচারণা। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিওন স্পিঙ্কসের সঙ্গের বিখ্যাত ম্যাচে হারের পর হেভিওয়েট শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায় মোহম্মদ আলীর। এরপরই ছুটি কাটাতে আসেন বাংলাদেশে। স্ত্রী ভেরোনিকাকে নিয়ে ৭ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে অভিভূত হয়েছিেলেন মোহাম্মদ আলী। সাত দিনের সফরে তিনি সুন্দরবন, রাঙ্গামাটি, সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে কক্সবাজারে তার জন্য একটি জমি বরাদ্দ করা হয়। বাংলাদেশের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি বলেছিলেন ‘যাই হোক আমেরিকা আমাকে বের করে দিলেও আমার আরেকটি বাড়ি আছে।’ আমেরিকায় ফিরে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন ‘স্বর্গে যেতে চাইলে আগে বাংলাদেশ যাও।’ মোহাম্মদ আলী শুধু দু’হাত দিয়ে মুষ্টিযুদ্ধই করেননি। তিনি অবিচল, আপোষহীন এক সংগ্রামী পুরুষ ছিলেন। সনি লিস্টন আর ফ্রাজিয়াররাই তার প্রতিপক্ষ ছিল না; অন্যায়, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, বর্ণবাদ, জাতিগত ভেদাভেদের বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। তার এই দৃঢ়তাই বলে দেয় তার মুষ্টি যেমন প্রতিপক্ষের চেহারা আর শরীরকে এবড়ো থেবড়ো করে দিয়েছে ঠিক তেমনি আজ পৃথিবীর মানুষ যদি তাদের মুষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করে তাহলে দুমড়ে-মুচড়ে যাবে অন্যায়-অবিচার, রক্তপাত, বর্ণবাদ, দারিদ্র্য, আর প্রতিষ্ঠিত হবে মানবজাতির কাক্সিক্ষত শান্তি। অবসরের পরে তিনি তার জীবনকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ইনফেকশন। ১৯৮৪ সালে আলীর পারকিসন্স রোগ ধরা পড়ে। মাঝে সমস্যা দিয়েছে মূত্রনালীতে ইনফেকশন। তবুও দমেন নি তিনি। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি একজন আন্তর্জাতিক কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।


দীর্ঘদিন ধরে পারকিনসন রোগে আক্রান্ত এই কিংবদন্তি ২০১৬ সালের ৩ জুন শ্বাসনালীর সংক্রমণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার স্কটসডেলএ মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৭৬তম জন্মবার্ষিকী।বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×