শিরোনামটা অনেক ভেবেচিন্তে এবং দ্বায়িত্ব নিয়েই দিলাম। তর্কের খাতিরে আমার সাথে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। দ্বিমত থাকতেই পারে। তবে বুকে হাত দিয়ে বলেন শিরোণামটি কি যথার্থ হয়নি? স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে যে সন্তানরা তার জাতির জনককে হত্যা করে, তাঁকে অসম্মান করে শুধু মাত্র নিজের ব্যক্তি স্বার্থ চারিতার্থ করার জন্য তারা কি করে দেশপ্রেমিক হয়। যারা মু্ক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার ব্যবহার করে অসৎকার্য সম্পাদনের জন্য তারা কি করে হয় দেশ প্রেমিক। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন সেদিন বাঙ্গালীদের মাঝে কোন বিভেদ বা মতভেদ ছিলোনা। সকল দল মত নির্বিশেষে সবাই যার যা ছিলো তাই নিয়ে পাকিদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে ছিলো। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের প্রিয় পতাকা এবং আমাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে রাজ করার অবাধ অধিকার।
যাঁরা একটি পৈশাচিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের পরাভূত করতে পারেন, তাঁদের পক্ষে দেশ পুনর্গঠনের কাজ করা মোটেই কঠিন নয়। সেদিনের বিধ্বস্ত দেশের ‘অর্থনৈতিক কাঠামো পুনরুদ্ধার’ করাও কঠিন ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। স্বাধীনতার পরে আমরা বিভেদ দেখেছি, কতক মুক্তিযোদ্ধা নামধারীরা ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার অর্জনের বিশাল জয়ের মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে পরাজিত হয়েছে লোভের কাছে। একশ্রেণি প্রাপ্তিযোগের জন্য ন্যূনতম নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিল। কেউ কেউ নিজেদেরকে শতভাগ মুক্তিযোদ্ধার কৃতিত্বের দাবীদার দাবী করে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করার ধৃষ্ঠতা দেখায়। কেউ সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে গেলেন, কেউ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার উৎখাতে আত্মনিয়োগ করলেন এবং ‘মারেঙ্গা অথবা মরেঙ্গা’ বিপ্লবী নীতিতে খুন করতে লাগলেন এবং খুন হতে লাগলেন। স্বাধীতনার ৪৭ বছর পরেও স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে চলে বিতর্ক ! শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারণে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপপ্রয়াস এখনো চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মতো একটি প্রামাণ্য ও স্বচ্ছ বিষয়কে ধোঁয়াচ্ছন্ন করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার যে ধুম্রজাল সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চলছে তা ছিন্ন করতে হবে। যারা জাতির জনকের অবদানকে অস্বীকার করে তারা কি করে হতে পারে দেশ প্রেমিক? হতে পারে তারা মুক্তি যোদ্ধা কিন্তু দেশ প্রেমিক নয় মোটেই। তারা মু্ক্তি যোদ্ধার তকমা এটে অন্যায়ের সব ময়লা ঢেকে দেবার ব্যর্থ প্রয়াস নিস্ফল হয়েছে বার বার। জাতির জনককে অসম্মান করার মতো অমার্দৃনীয় অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। জাতির পিতা এবং স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোন বিতর্ক থাকতে পারেনা। লেবাসধারী মুক্তিযোদ্ধারা ভুলে গেছেন একটি বিএ, বিএসসি বা এমএ, এমকম বা এমএসসির সার্টিফিকেট আর মুক্তিযোদ্ধা সনদ এক জিনিস নয়। মুক্তিযোদ্ধা সনদ কোনো ডিগ্রি নয়, ডিগ্রির চেয়ে হাজার গুণ বেশি এক অমূল্য স্বীকৃতি। ডিগ্রির সার্টিফিকেটে চাকরি হয়, পদোন্নতি পাওয়া যায়; দেশপ্রেমের সার্টিফিকেটে ইতিহাসে স্থান হয়। জাতি হিসেবে আমাদের অনেক গুণ আছে, কিন্তু দোষগুলোর মধ্যে একটি হলো আমরা কোনো কিছুর মহিমা উপলব্ধি করতে পারি না, রক্ষাও করতে পারি না। বরং বলা ভালো, যা কিছু মহান ও গৌরবের, তাকে তুচ্ছ করে ফেলি এবং তার গৌরব নষ্ট করি। যে দেশে আসল অবহেলিত এবং ভুয়াতে ভরপুর, সে দেশের গৌরব করার মতো কিছু থাকে না।কৃতী তাঁর কাজের জন্য সমাজ থেকে সম্মান ও মর্যাদা পান। একজন মহান দেশপ্রেমিককে মানুষ সম্মান জানিয়ে সালাম দেয়, দেশপ্রেমের জন্য তাঁর পকেটে কিছু টাকা গুঁজে দেয় না। যে তার দেশপ্রেমের বিনিময়ে কিছু অর্থ চায় বা অন্য কোনো বস্তু চায়, সে মর্যাদা পাওয়ার যোগ্যতা হারায়।
সামুতে কিছু জ্ঞানপাপী লেবাসধারী মু্ক্তিযোদ্ধা আছেন যারা জাতির জনককে যার তার সাথে তুলনা করে এমনকি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হিট বাড়ানোর মানসে পোস্ট দিয়ে নিজেদেরকে মহা-জ্ঞানী ভেবে পা'দোলাতে থাকেন তাদের জন্য করুণা হয়। আসুন আমরা এইসকল লেবাসধারী মুক্তিযোদ্ধাদের বয়কট করে সামুকে জঞ্জাল মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
বোনাসঃ একটি কবিতা
দেশপ্রেমিক ! (কবিতা)
নূর মোহাম্মদ নূরু
দেশ প্রেমিকের ধ্বজাধারী দেশের এ হাল কেন?
সহজ সরল মানুষেরে বিষের ছুরি হানো!
চায়না যারা বিশাল বিত্ত চায় দু'মুঠো ভাত
তাদের বুকে তীর হেনেছো যেমন করে ব্যাধ।
বুঝি আমি! কি চাও তুমি, দেশ বাঁচানোর নামে,
মারছো তাদের দেশটা গড়ে যাদের রক্ত ঘামে!
ক্ষান্ত দাও পুড়ে মারা, দেশটা বাঁচাও আগে,
যদিও তাতে কম পড়ে যায় একটু তোমার ভাগে !
দেশ বাঁচানোর অযুহাতে পরীক্ষা যে বন্ধ!
কেন তোমরা অবুঝ এত, হয়ে গেছো অন্ধ?
লেখা পড়া বাদ দিলে কী বাঁচবে আমার দেশ,
মুখশটাতে ঢেকে আছে তোমার আসল বেশ।
লেখা পড়া কাজ কর্ম দেশের জেনো প্রাণ,
বন্ধ হলে এসব কিছু যাবে দেশের মান।
ভালো কর দেশের তরে খুলে তোমার মুখোশ
হোকনা তাতে ভাগীদাররা তোমার উপর নাখোশ।
সবার আগে দেশটি আমার সে যে সবার মাতা,
মায়ের গায়ে লাগলে আঘাত করতে পারি যা-তা।
সময় আছে সামলে চলো দেশের হবে ভালো,
তা না হলে চুন কালিতে মুখটি হবে কালো।
২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য উৎসর্গীকৃত
প্রকাশ কালঃ ঢাকা
২ ফেব্রুয়ারি'২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫