somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: নিঃসঙ্গ নগ্ন মন

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি; ইন্টারনেট


অনেক দিন ধরে পাপড়ি রোজারিও কে মনে পড়ছে ।তবুও সময় হয়না তাকে নিয়ে মনে করার ভাবনা নিয়ে বসতে । মানুষের জীবনে হঠাৎ কিছু মানুষ আসে । কেমন করে যেন মনে জায়গা করে নেয় । তারপর মনের অজান্তে একটা দাগ রেখে চলে যায় । সেদিন এমনই বৃষ্টির দিন । ঘরে ভাল লাগছিল না । তাই বাসা থেকে বের হয়ে আসে পাশে ঘুরতে বের হয়েছিলাম ।

ধানমণ্ডির কোন এক রোডের গলি থেকে এরাবিক গানের সুর ভেসে আসছিল ।বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিজের মনের অজান্তে গানের সুরে আচ্ছন্ন হলাম । কিছুদূর সামনে এগুতেই বুঝলাম পাশের কোন পার্লার থেকে আসছে । নানা ব্যস্ততায় নিজের প্রতি খেয়াল নেওয়া হয়নি অনেক দিন ।নিজের চুলের কাট আর ভ্রু প্লাগ করব ।কৌতূহল বশত ঢুকলাম । শ্যামলা করে খুব সুন্দর প্রানবন্ত একটা মেয়ে বের হয়ে এল । ছোট একটা পার্লার কিন্তু খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা ।যে কোন মানুষের চোখ মুগ্ধ হবে ।

অনেক দেশের নানা রকম সৌখিন পন্য আর বাহারি রকমের ফুল । মনটা ভাল হয়ে গেল । দেখলাম দুজন কাজ করছে । সে আমাকে সোফায় বসতে বলল । কিছুক্ষন পর সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি করবো । আমি চুল দেখালাম । সে বলল এতো বড় চুল কেটে ফেলবেন । আমি হাসলাম । তারপর বললাম আবার বড় হয়ে যাবে । এমন করে নিয়মিত সেই পার্লারে আমার যাওয়া আসা । পাপড়ি রোজারিও আর আমার সাথে একটা ভাল বন্ধুত্ব হল । অনেক ধরনের গল্প হয় । ভ্রু প্লাগ করে কপাল টিপে দিতে দিতে জানতে চায় বাসায় কে কে আছে । কি রান্না করেছি । কি করতে ভালবাসি । এমনতর আরও অনেক গল্প । আমিও তাকে জানতে চাই ।

শ্যামলা মিষ্টি চেহারাটা কালো করে ফেলে । বলে আমার জীবন টা কোন মানুষের জীবনের মধ্যে পড়ে না । পনের বছর বয়সে একদিন পারাতো ভাই পবন কে বিয়ে করে পালিয়েছিল । উদ্ভ্রান্ত বয়সের কাল বৈশাখী তে সেই বয়সের সব স্বপ্ন এলো হয়ে গেছে । আমি কিছু জানতে চাই না । কি দরকার এতো দুঃখ মনে করিয়ে দেওয়ার । সে নিজ থেকেই বলে সতের বছর বয়সে এক কন্যা সন্তানের মা হয় । পবন ভাল রোজগার করছে । বেশ ভালই যাচ্ছিল । তখন সে নার্সিংয়ে চাকরি পায় । সব মিলে সুখের সংসার ।ব্যস্ত জীবনে কন্যা লালন পালন আর চাকুরি সব মিলেয়ে ক্লান্ত হয়ে যায় ।
এমন এক সময়ে বাড়িতে আসে তাঁর দুঃসম্পর্কের মাসিমা । তার স্বামীর সাথে মন মালিন্য চলছে । তাই রাগ করে বান্ধবীর মেয়ের কাছে চলে এসেছে । নার্সিং অথবা পার্লারের কাজ পেলে করবে ।

পাপড়ির মায়া হল । ভাবল সংসারে একজন লোক থাকলে বেশ হয় ।ছোট মেয়েটাও একটা সঙ্গি পায় । দুই এক মাস বেশ ভাল ভাবেই যাচ্ছিল । কিন্তু হঠাৎ কোথায় যেন একটা সন্দেহ উকি দিতে থাকে । পবনের সাথে মাসিমার অকারন মাখামাখি । শুধু কি তাই সেদিন রান্না করতে করতে মাসিমা নিজের সংসারের সাথে তুলনা করে বলছিল , তোমার তো রাজ কপাল । স্বামীর সুখ পাচ্ছো । এতো তাড়াতাড়ি সংসারের এতো জিনিস করে ফেলেছ । আমার তো এই কপাল ছিল না । সকাল সকাল পাপড়ির ভীষণ মেজাজ গরম হল । মনে মনে বলল আমার সংসারে বসে আমার সাথে তুলনা । আমার সুখ নিয়ে হিংসা ।

আমরা সবাই মানুষ তো । দোষে গুনেই জীবন ।তাই পাপড়ি কাজের চাপে সব ভুলেও যায় । কিন্তু না মাসিমা দিনে দিনে নিজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেছে পাপড়ির সংসারে । পাপড়ি আর পবনের একান্ত সময় গুলোতেও তার নির্লজ্জ উপস্থিতি । এতো কৌশলে কাজ গুলো করে যে পাপড়ির কিছু করার থাকে না । আবার সহ্য ও করতে পারে না ।

পাপড়ি কোথাও সংসারের টুকটাক কিনবে পবন আর পাপড়ির মাঝে মাসিমাও যাবে । মনে হচ্ছে সে জোর করে কিছু একটা পেতে চাচ্ছে । হয়তো অতৃপ্ত মনের ভালোবাসা । নয়তো হারানো সংসার । নাহ আর সহ্য হয়না মাসিমার নির্লজ্জ আচরন । পবন আর পাপড়ি যখন ছবি তুলবে সে মাঝে এসে দাঁড়াবে । পাপড়ির মেয়ে কে মা ডাক তে বলে ।ছুটির দিনে ঘরে পাপড়ি রান্না করছে নিজ হাতে পবন কে খাওয়াবে বলে । সেদিনও সে পাপন কে নিয়ে কাজের উছিলায় বাইরের রেস্তরাঁয় খেয়ে আসে ।পাপড়ি আর কতো মানসিক নির্যাতন সহ্য করবে।

মাসিমার চলনে বলনে আর জীবন যাপনে একটা গোপন হিংসার আগুন পাপড়ি জ্বলতে দেখে । সমাজ বলে কথা । বাইরে দেখা সম্মানের জায়গাটা যে মাসিমা নষ্ট করে ফেলছে । ভালবাসার সুন্দর সম্পর্কে সে যে পাপ টেনে আনছে । পাপড়ি কিছুই বলতে পারে না ।পাপড়ির ভীষণ কষ্ট হয় । একটা বেহায়া নগ্ন মন মাসিমার মাঝে বিরাজ করছে । আর সেটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে । মাসিমার এই ধরনের আচরন গুলো ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে ।সুখের সংসারের যে খুব দ্রুত আগুন জ্বলতে যাচ্ছে ।

কোন এক নিঃসঙ্গ রাতে মাসিমার ঘর থেকে আসা দুজন নারী ও পুরুষের একাকার হয়ে যাওয়া কন্ঠ দেওয়ালে ধাক্কা খায় । সে ধাক্কায় পাপড়ি জ্ঞান হারায় । এরপর শুধুই নদীর পাড় ভাঙ্গার মতো সংসার ভাঙ্গার গল্প । সমাজের কাছে যেন শুধুই পাপড়ির লজ্জা । মাসিমাদের কোন লজ্জা নেই । লজ্জা পেলে যে তারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবে না । স্বার্থ আর সুখ এক সাথে থাকে । এই দুটোর জন্য তারা সবই পারে ।

চিরন্তন মানুষের মধ্যে একটা নিঃসঙ্গ নগ্ন মন থাকে । কখনও সুখ কিংবা স্বার্থের ছোঁয়ায় নৈতিকতা কে পায়ে পিষ্টেও দ্বিধা করে না । সেই থেকে পাপড়ি নিজের আত্মীয় স্বজন থেকে দূরে থাকে । নিজেকে লুকিয়ে রাখতে মধ্য প্রাচ্য সহ অনেক দেশে কাজ করছে । কোথাও তার স্থিরতা নেই । তার ভিতরে বিশাল একটা সাহসী উদ্যমী মন আছে । সে মনটা সব সময় উন্মুক্ত । কিন্তু নগ্ন নয় ।

গল্প ; নিঃসঙ্গ নগ্ন মন

নুরুন নাহার লিলিয়ান ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×