somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্ডিয়ানা জোনস এবং ‘অসভ্য’ ভারতীয়রা

১০ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Indiana Jones and the Temple of Doom (1984) নামের চলচ্চিত্রটি হয়তোবা অনেকে দেখেছেন । স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ছবিটি বেশ চমৎকার । দর্শকরা এর ভয়ংকর একশন পার্টগুলো দেখে প্রশংসা না করে পারবে না । কিন্তু এই ছবিটি আমাকে বিন্দুমাত্র মজা দিতে পারেনি ।
আমি কোন চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ বা সমালোচক নই । মুভি দেখা আমার পুরনো অভ্যাস, বিশেষ করে হলিউডের মুভি । আমি যেকোনো চলচ্চিত্র বা মুভি দেখে থাকি দর্শক হিসেবে । যে মুভিটির কথা বলছি তার পরিচালকের পরিচালিত অনেক মুভি আমার প্রিয় ছবির লিস্টে আছে । কিন্তু এই পরিচালকের ছবি ‘ইন্ডিয়ানা জোনস এন্ড দ্যা টেম্পল অব ডুম’ আমার অপ্রিয় ছবিগুলোর শীর্ষে থাকবে । কারণ এই ছবিতে ভারতীয়দের এমন আদিম প্রকৃতির গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি । বিশেষ করে ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাস এমন অরুচিকর হিসেবে দেখানো হল, যে খাদ্যের হাল দেখে আপনার বমি চলে আসবে । ছবিতে দেখানো হল একজন ভারতীয় করদ মহারাজা অতিথিদের সন্মানে এক ভোজসভার আয়োজন করলেন । সেই ভোজসভায় খাবারের আইটেমগুলো দেখুন-
• শুরুতেই ভারতীয়রা সাপের জীবন্ত বাচ্চা গিলে গিলে খাচ্ছে,
• তারপর তারা ভাজা করা গুবরে পোকা খাচ্ছে,
• সেই ভোজসভায় ইন্ডিয়ানা জোনসের শ্বেতাঙ্গ বান্ধবী উপস্থিত ছিলেন । ভারতীয়রা এসব অরুচিকর খাবার খাচ্ছে দেখে তো উনার বেশ অস্বস্তি লাগছিল, তাই তিনি খাবার পরিবেশকদের কাছে এসব খাবার বাদ দিয়ে তাঁর জন্য স্যুপ জাতীয় কোন খাবার আনতে নির্দেশ দিলেন । খাবার পরিবেশক নিয়ে এল চোখের (তাও আবার কাঁচা চোখ) স্যুপ !
• অবশেষে বানরের মগজ এনে ডেজার্ট হিসেবে সবাইকে খেতে দেয়া হল !
উল্লেখ্য, ভোজসভায় উপস্থিত ভারতীয় অভিজাতগণ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বেশ আয়েশ করে খেয়েই চলছেন, অন্যদিকে সেখানে উপস্থিত শ্বেতাঙ্গ লাটসাহেবগণ এসব অখাদ্য খাওয়া থেকে বিরত রইলেন ।
এবার আমার প্রশ্ন, ভারতের কোন জায়গার জনগণ সাপ খান বা খেতেন ? ভারতীয়রা কখন গুবরে পোকাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করতেন ? ভারতের ইতিহাসে কেউ কোনদিন বানরের মগজ খেয়েছিল বলে আমি শুনিনি, আপনারা শুনেছেন ? বেশিরভাগ ভারতীয় তাদের সনাতন ধর্মবিশ্বাসের কারণে নিরামিষভোজী, বানর বা সাপ কাঁচা খাওয়া তো দূরে থাক রান্না করেও তারা খেত না । কিন্তু কেন যে ভারতীয় খাবারের তালিকায় এই দুই প্রাণীকে দেখানো হল তা বুঝতে পারছি না ।
সুপ্রাচীন কাল থেকে Indian Cuisine রুচিকর মসলাদার স্বাদের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে । কিন্তু স্পিলবার্গের এই ছবিতে সত্যিকারের ভারতীয় রন্ধনশিল্প বাদ দিয়ে প্রস্তরযুগের এসব খাবার দেখানোর মানে কি ?
শুধু খাবারের জন্যই নয়, এই ছবিতে ভারতীয় গ্রামবাসীদের এমন বিদঘুটে চেহারার লোক হিসেবে দেখানো হল যেন ভারতীয়রা এখনো পুরোপুরি Homo Sapiens হতে পারেনি !
ছবিতে এমনভাবে দেখানো হল, হিন্দু ধর্মের দেবী কালী যেন অন্ধকারের এক রক্তপিপাসু শয়তান ! আর কালি দেবীর পূজারিরা যেন শয়তানের বান্দা !
ভারতীয়রা দু'শ বছর বৃটিশদের নিগড়ে বন্দী ছিল, তখনো বৃটিশরা ভারতীয়দের অধীনস্ত দাসের মত হেয় প্রতিপন্ন করত । এখনো কি শেতাঙ্গরা সেই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভারতীয়দের দেখে থাকেন ? এই ছবি দেখে তো তাই মনে হয় !
অবশ্য ভারতীয়দের নীচ মনে করা আমাদের এককালের শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য । ভারতীয়রা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল, কোন ইংরেজি ছবিতে সেই ঘটনার প্রতিফলন আমি এখনো খুঁজে পাইনি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের Dunkirk Evacuation এর ঘটনায় অসংখ্য ভারতীয় সৈনিক মিত্রবাহিনীর পক্ষে প্রাণ দিয়েছিল । সেই ডানকার্ক নিয়ে কত ব্লকবাস্টার মুভি হল, সেই মুভিগুলোতে ভারতীয়দের ভুমিকা হয় উপেক্ষা করা হয়েছে নয়ত উহ্য রেখে দেয়া হয়েছে । মজার ব্যপার হল এসব চলচ্চিত্র আধুনিক ভারতে মহাসমারোহে প্রদর্শিত হচ্ছে !
সে যাহোক, একজন উপমহাদেশীয় নাগরিক হিসেবে আমি স্পিলবার্গের এই ‘চমৎকার’ মুভিটিকে (এবং উপমহাদেশীয় জনগোষ্ঠীকে ছোট করে দেখানো সকল মুভিকে) প্রত্যাখ্যান করছি
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×