somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরান বলে ভিন্ন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব রয়েছে

২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মহাবিশ্ব কি একটাই, যেখানে আমরা বসবাস করছি? নাকি আরো মহাবিশ্ব আছে? জীবনের অস্তিত্ব কি শুধু আমাদের এই পৃথিবীতেই, নাকি অন্য কোনো গ্রহে, অন্য কোনো মহাবিশ্বে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে? এই প্রশ্নের সূত্রপাত অনেক অনেক আগে থেকেই, এবং আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে আজ অবধি এর সঠিক উত্তর রয়ে গেছে অজানাই! হলফ করে বলা যায় না যে এর উত্তর আমরা খুব তারা তারই পেয়ে যাব। এই কিছুদিন আগেও আমরা জানতাম আমাদের ছায়াপথ বা Milky Way-ই একমাত্র মহাবিশ্ব, আর Andromeda কে আমরা ভাবতাম এক ধুলিকণাময় নেবুলা, এবং আমাদের ছায়া পথেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ! টেলিস্কোপের উন্নতির সাথে সাথে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আমরা আবিষ্কার করলাম যে Andromeda আসলে আরেকটা ভিন্ন ছায়াপথ (Galaxy) । বস্তুত: Andromeda আমাদের সবচেয়ে কাছের ছায়াপথ, যেখানে রয়েছে অগনিত তারা, গ্রহ এবং উপগ্রহ। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০০ কোটি (100 billions) ছোটো-বড় বিভিন্ন ধরনের ছায়াপথ বা Galaxy’র সন্ধান পাওয়া গেছে! আমাদের কাছে সংখ্যাটি অসম্ভব রকম বড় মনে হলেও- এটা ভুলে গেলে চলবে না যে এই মহাবিশ্বটাই তো অসম্ভভ রকম বড়, আর তাই এর পরিমাপের মাত্রা গুলোও সব জাইজ্ঞানটিক (gigantic) স্কেলের !



এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বকে (Universe) ছাড়িয়ে গিয়ে এক ধাপ এগিয়ে মাল্টিভার্স (Multiverse) এর কথাও বলছেন (লেনার্ড সাস্কিন/ Leonard Susskind এর ভাষায় মেগাভার্স; আবার কেউ কেউ এটাকে প্যারালাল ইউনিভার্স ও বলে) । তারা বলছেন আমরা যে মহাবিশ্বে বা Universe এ বসবাস করছি সেটাই একমাত্র মহাবিশ্ব নয়, এ’ রকম আরো অনেক মহাবিশ্ব থাকতে পারে! এই মাল্টিভার্স এর আইডিয়াটা কিন্তু বিজ্ঞানীগণ স্বপ্নে পাননি; এর পেছনে শক্তিশালী গাণিতিক যুক্তি রয়েছে। যারা পদার্থ বিদ্যার খোজখবর রাখেন তারা হয়ত জেনে থাকবেন, এই মহাবিশ্বকে বৈজ্ঞানিক ভাবে বোঝার বা ব্যাখ্যা করার জন্য বেশ কয়েকটি থিওরি এবং মডেল রয়েছে: এদের ভিতরে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ব সাপোর্ট করে ক্লাসিকাল মডেল এবং Quantum Mechanics সাপোর্ট করে স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে। Quantum Mechanics কে ভিত্তি করে আলোচিত দুটো থিওরি তথা: সুপার স্ট্রিং থিওরি এবং মেমব্রেন থিওরি (M-Theory) এই মহাবিশ্ব জগতকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল মধ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করে। আরেকটি এবং সবচেয়ে আলোচিত থিওরি হলো 'হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপাল'। আমি অবশ্য আজ এখানে সুপার স্ট্রিং থিওরি অথবা হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপাল নিয়ে কোনো কথা বলব না। আমি শুধু মেমব্রেন থিওরি এবং মাল্টিভার্স নিয়ে কিছু কথা বলব। (সময় পেলে অন্য কোনো দিন হয়ত আলোচনা করব যে কিভাবে ‘হলোগ্রাফিক প্রিন্সিপাল’ এর মাধ্যমে কোরানের কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করা যায়)।

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের মতে অনেকগুলো মহাবিশ্ব (ইউনিভার্স) নিয়ে এই বিশ্ব ব্রম্মান্ড। আর মেমব্রেন থিওরি বা M-Theory অনুযায়ী এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডে এক একটি মহাবিশ্ব মেমব্রেন বা চাদর এর মত বিস্তৃত এবং একটি আরেকটির উপরে ধাপে ধাপে (Layer by layer) সাজানো যেখানে একটি মেমব্রেন (ইউনিভার্স) আরেকটি থেকে একটি সুক্ষ্য দূরত্ব বজায় রেখে পৃথক ভাবে অবস্থা করে। আমি এতক্ষণ যা বললাম তা বিজ্ঞানের কথা; এখন আমি বলব কোরান এই মহাবিশ্ব সমন্ধে কি বলে। তবে তার আগে আমি পাঠকদের বলব উপরের এত কথা থেকে শুধু মাত্র দুটো শব্দ মাথায় রাখতে: (১) মহাবিশ্ব (ইউনিভার্স) এবং (২) মেমব্রেন থিওরি । এখন আমি নিচে আল কোরান এর সুরা আল মুমিনুন থেকে ১৭ নাম্বার আয়াতের ইংরাজি অনুবাদ তুলে দিচ্ছি। অনুবাদটি নেয়া হয়েছে masjidtucson.org থেকে।

Verse 23:17. “We created above you seven universes in layers, and we are never unaware of a single creature in them.”

এখানে আল্লাহ বলছেন “আমি তোমাদের উপরে স্তরে স্তরে সজ্জিত আরো সাতটি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছি; এবং ওই সমস্ত মহাবিশ্বে বসবাস রত একটি প্রাণীর খবরও আমার কাছে অজানা (অনবহিত) নয়।" এই আয়াতে পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে মহাবিশ্ব বা ইউনিভার্স একটি নয় বরং অনেকগুলো; অর্থাত মাল্টিভার্স। আর এই ইউনিভার্স গুলো মেমব্রেন এর মত একটির উপরে আরেকটি লেয়ার বাই লেয়ার সাজানো রয়েছে। কোরানিক বাণী আর আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান কি একই কথা বলছে না?

এখন উপরের আয়াতটির শেষাংশ নিয়ে কথা বলি। তার আগে জেনে নেই 'creature' শব্দের অর্থ কি। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে 'creature' এর ডেফিনেশন হলো ' An animal, as distinct from a human being'. অর্থাত মানুষ থেকে ভিন্ন যেকোনো ধরনের প্রাণী বোঝাতে সাধারনত: ‘creature’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সোজা কোথায় বলতে গেলে বলতে হয়, এই আয়াতে আল্লাহ অন্যান্য মহাবিশ্বে যে জীবনের অস্তিত্বের কথা বলছেন তারা খুব সম্ভবত: মানুষ থেকে ভিন্ন অন্য কোনো ধরনের প্রাণী । কোন ধরনের প্রাণী? বর্তমান যে তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে আছে তাতে বিজ্ঞানীরা এটাই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে অন্য কোনো মহাবিশ্বে অন্য কোনো গ্রহে কোনো জীবনের অস্তিত্ব আছে কি নেই; আর প্রাণী থাকলেও তাদের অবয়ব কেমন হবে তা বলাটা তো অনেক দূরের কথা। তবে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং নাম করা atheist লেখক রিচার্ড ডকিন্স তার ‘The God Delusion’ বইতে লিখেছেন যে প্রবাবিলিটি’র (probability) বিচারে অন্য কোন গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। গাণিতিক ভাবে এই সম্ভাবনা হলো ১০ কোটির মধ্য ১ ( 1 in 1,000,000,000)! সম্ভাবনাটি নিতান্তই ক্ষুদ্র তাই না! তবে মজার ব্যাপার হলো আমরা যদি সমগ্র মাল্টিভার্সটাকে আমাদের গাণিতিক হিসাবের আওতায় নেই তাহলে কিন্তু পাঠকগণ অবাক হবেন এই দেখে যে কম করে হলেও, আমাদের পৃথিবী বাদে, আরো প্রায় এক বিলিয়ন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব থাকার সম্ভবনা রয়েছে! এখন এই প্রবাবিলিটি হিসেব কষার জন্য বিজ্ঞানীদের ৬ টি ধ্রুব মাত্রার (Constant) প্রয়োজন। বিজ্ঞানীদের হাতে এই মুহুর্তে সব কটি constant নেই আর এ কারণেই সঠিক ভাবে প্রবাবিলিটি হিসেব করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য গ্রহে বা বিশ্বে জীবনের যে অস্তিত্বের কথা বিজ্ঞানীরা বলছে তা অনেকটা conjecture বা অনুমান এর মত।

বিশিষ্ট বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক Amir Aczel তার 'God’s Equation' বইতে লিখেছেন: তিনি একবার গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে বিশিষ্ট পন্ডিত এবং সনামধন্য Cosmologist স্যার রজার পেনরোজ কে ফোনে জিজ্ঞাসা করে ছিলেন অন্য কোনো গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা কতটুকু? রজার পেনরোজ উত্তরে বলেছিলেন তিনি ৬ টি ধ্রুব মাত্রার মধ্যে শুধু মাত্র একটি মাত্রা নিয়ে অঙ্ক কষে দেখেছেন অন্য গ্রহে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ! এখন এই ৬ টি ধ্রুব মাত্রার এর মধ্যে ৬ টি নিয়ে অঙ্ক কষলে তো সেই সম্ভাবনা ক্ষিণ থেকে আরো ক্ষিণ তর হবে। যাই হোক ভবিষ্যতই বলবে কোরান এ যে অন্য মহাবিশ্বে প্রানের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছে তা বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান কি না।

[বি দ্র: পাঠকগণ এই লিখাটিতে বৈজ্ঞানিক বিষয় বস্তু খুব সাধারণ ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে; প্রকৃত পক্ষ্যে উপরোল্লেখিত বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো বেশ জটিল। এই লিখাটি প্রথম পোস্ট করা হয় (কিছুটা সংক্ষিপ্ত ভাবে) আমার ফেইসবুক স্ট্যাটাস আপডেট এ ২৩ মে ২০১৪ তে।
উপরোল্লখিত মতামত সম্পূর্ণ ভাবেই আমার নিজশ্য, কার ও ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার জন্য লিখাটি পোস্ট করা হয়নি।]

ধন্যবাদ,
খোন্দকার মেহেদী আকরাম,
২৭ মে ২০১৪,
শেফিল্ড, ইউকে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×