somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইবোলা ভাইরাস কি, কতটা ভয়াবহ এবং কিই বা প্রতিকারের উপায়?

১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির পরীক্ষাগারে যখন গবেষণা করছি কিভাবে ইদুর H3N2 নামক সোয়াইন-ফ্লু সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, ঠিক তখনই পত্রিকা-টিভিতে একটাই খবর। আর তা হলো ইবোলা ভাইরাস। এ যেন হঠাত মৃত্যুদ্যুতের আবির্ভাব এই ধরাধামে! ইবোলা ভাইরাস এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পরেছে মধ্য-পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনে ৫০ থেকে ৯০ জন্ই মারা যাচ্ছে! সিয়েরা লিওন এবং লায়বেরিয়াতে এখন পর্যন্ত ৩,৪০০ জন লোক মারা গেছে এই ভাইরাস এর সংক্রমনে। শুধুমাত্র সিয়েরা লিয়নেই প্রতি ঘন্টায় পাঁচ জন নতুন করে ইবোলায় আক্রান্ত হচ্ছে! আফ্রিকার গন্ডি পেরিয়ে ইবোলা চলে এসেছে আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াতে। আমেরিকার টেক্সাস এ ইবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিটি মারা গেছে গতকাল। স্পেইনে আক্রান্ত নার্স মহিলাটির অবস্থাও আশংকাজনক। বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করছেন কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যেও ইবোলা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যাবে! বৃটেনের বিমান বন্দরগুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। যারাই আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসছে তাদের শরীরের তাপমাত্রা বা জ্বর মাপা হচ্ছে। চারদিকে এক ভীতিকর অবস্থা! ইবোলা প্রতিরোধে নেই কোনো যথার্থ চিকিত্সা, প্রতিরোধের জন্য নেই কোনো ভাকসিন!

ইবোলা ভাইরাস কি এবং কতটা ভয়াবহ?
ইবোলা হলো এক ধরনের আর.এন.এ ভাইরাস, আকৃতিতে অতি ক্ষুদ্র পাচ্যানো নালীর মত জীবাণু। আফ্রিকার কঙ্গো দেশের ইবোলা নদীর নাম এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইবোলা ভাইরাস’। ইবোলার ভয়ঙ্কর দিকটি হচ্ছে এই ভাইরাসটি সাংঘাতিক সংক্রমক সেই সাথে সাথে মারাত্মক। ইবোলা সংক্রমণ কিন্তু এবারই প্রথম নয়। ১৯৭৬ সালে কঙ্গোতে সর্ব প্রথম ইবোলা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, এবং সেবার সংক্রমিত ৩১৮ জনের মধ্যে ২৮০ জনই মারা যায়, অর্থাত মৃত্যুর হার ছিল ৮৮%। পরবর্তিতে কঙ্গোসহ সুদান, উগান্ডা এবং গেবনে বিভিন্ন ধরনের ইবোলা সংক্রমণ দেখা দেয়। তবে এবারের ইবোলা ভাইরাস সংক্রমনে মৃত্যের হার পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। গত ৩৬ বছরে ইবোলাতে যত লোক না মারা গেছে এবার এক বারেই মারা গেছে তার চয়ে বেশি লোক। এবারের ইবোলা মহামারী আকার ধারণ করেছে।

ইবোলা কি খুবই সক্রামক?
অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের মত ইবোলা কিন্তু বাতাসে ছড়ায় না। ইবোলা রোগীর সাথে সরাসরি সংস্পর্শে না আসলে এ রোগের জীবানু একজন থেকে আরেকজনে সঞ্চালিত হয় না। ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে নিসৃত রস যেমন লালা, থুথ, চোখের পানি, রক্ত এবং বীর্যের মাধমে জীবানু আক্রান্ত দেহ থেকে সুস্থ দেহে সংক্রামিত হয়। যেখানে একজন হামের রোগী মিজেলস ভাইরাস ছড়ায় ১৮ জন সুস্থ দেহে, একজন এইডস রুগী এইচ.এই.ভি ভাইরাস ছড়ায় ৪ জন সুস্থ দেহে, সেখানে একজন ইবোলা রোগী ভাইরাস ছড়ায় মাত্র ২ জন সুস্থ মানুষের মধ্যে।

ইবোলা ভাইরাস এলো কোথা থেকে?
ধারণা করা হয় বাঁদুর হলো ইবোলা ভাইরাসের প্রাকৃতিক হোস্ট। বাঁদুর থেকে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পরে বানর, গরিলা, শিম্পাঞ্জি প্রভৃতি বন্য প্রাণীতে এবং তারা আক্রান্ত হয়। মানুষ যখন এই আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসে তখন তারাও ইবোলাতে আক্রান্ত হয়। এর পর এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে একজন থেকে আরেক জনে। ইবোলা ভাইরাস রোগ থেকে সেরে ওঠার ৭ সপ্তাহ পরেও এক জন পুরুষ তার বীর্যের মাধ্যমে এই রোগের জীবানু ছড়িয়ে দিতে পারে একজন সুস্থ নারীর দেহে।

ইবোলা ভাইরাস রোগের লক্ষণ এবং রোগ নির্ণয় পদ্ধতি:
ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণের ২ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক লক্ষণ গুলো অন্যান্য ভাইরাস জনিত রোগের লক্ষণ সমূহের মতোই। যেমন:
১. হঠাত করে শুরু হবে জ্বর, সে সাথে মাথা ব্যথা, গা ব্যথা এবং গলা ব্যথা।
২.এর পর শুরু হবে বমি এবং ডায়রিয়া।
৩. সাথে থাকবে ত্বকে লালচে দাগ।
৪. ধীরে ধীরে কিডনি এবং লিভার অকার্যকর হয়ে পড়বে।
৫. এর সাথে কখনো কখনো দাঁতের মাড়ী থেকে রক্ত পড়তে পারে এবং সেই সাথে পায়খানার সাথে রক্ত।

রোগ নির্ণয় করা হয় লক্ষণ দেখে এবং তা নিশ্চিত করা হয় রোগীর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে পিসিআর এর মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাসের জিন ডিটেকশন এর মাধ্যমে। রক্তে ইবোলা ভাইরাসের এন্টিবডির উপস্থিতি দেখেও রোগ সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়।

চিকিত্সা এবং প্রতিরোধ পদ্ধতি:
দুক্ষজনক হলেও সত্য যে ইবোলা ভাইরাস রোগের কোনো যথাযথ চিকতসা নেই। চিকিত্সা যা দেয়া হয় তা হলো সিমটোম্যাটিক। পানিশুন্যতা রোধে মুখে এবং শিরাপথে স্যালাইন দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে দুটি ভ্যাকসিন পরীক্ষা মূলক ভাবে খুব তারাতারিই চালু করা হবে। এখন পর্যন্ত ইবোলা ভাইরাস বিস্তার প্রতিরোধে সবচয়ে শক্তিশালী পদ্ধতি হচ্ছে Containment. রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সতর্কতার সাথে চিকিত্সা দিতে হবে। চিকিত্সক এবং নার্স দের নিতে হবে অতিরিক্ত প্রটেকটিভ শিল্ড। ইবোলাতে কেও মারা গেলে তার মৃত দেহ সতর্কতার সাথে মাটির অনেক গভীরে পুতে ফেলতে হবে। সর্বপরি এ রোগের বিস্তার প্রতিরোধে সকলের মাঝে জন সচেনতা গড়ে তুলতে হবে।

খোন্দকার মেহেদী আকরাম
শেফিল্ড
১০ অক্টোবর ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৪০
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×