somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিভিঊঃ পিঙ্ক ফ্লয়েডের “দ্য ওয়াল” অ্যালবাম -পিঙ্কের বিদ্রোহী বোধসত্ত্বার প্রতিক

১১ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৬০ এর দশকের সাইকিডেলিক রক মিউজিক এবং ৭০ এর দশকের প্রোগ্রেসিভ রক মিউজিকের জন্য বিখ্যাত ইংল্যান্ডের রক ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়োড । প্রাথমিক লাইন আপে ছিলেন সিড ব্যারেট (ভোকাল ও রিদম), রজার ওয়াটারস(বেস), বব ক্লোস (লিড গিটার), নিক ম্যাসন(ড্রামস) ও রিচার্ড রাইট(কি-বোর্ড)। তারা তাদের দার্শনিক চিন্তাধারার ও মনঃসমীক্ষণগত লিরিক্স, উচ্ছ্বসিত, পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত লাইভ শো বা কন্সার্ট, অ্যালবামের প্রচ্ছদে নান্দনিকতা, “কন্সেপ্ট অ্যালবাম” এর প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ সৃজন, ক্লাসিক্যাল রক কম্পোজিশন, সর্বপরি সাউন্ড ইফেক্ট উপর বিভিন্ন আদর্শ স্থাপনকারী নিরিক্ষা এমন বিভিন্ন বৈশিষ্টের আলোকে আলোকিত । লাইভ মিউজিকের অন্যতম পথপ্রবর্তক তারা । অ্যামেরিকার সাউথ করোলিনার বিখ্যাত ব্লুজ গায়ক ও গিটারিষ্ট পিঙ্ক এন্ডারসন এবং অ্যামেরিকার বিখ্যাত পিডমন্ট (ব্লুজ জেনার) ব্লুজ গায়ক ও গিটারিষ্ট ফ্লয়োড কাউন্সিল- এই দুজনের নাম পাশাপাশি স্থাপন করে ব্যান্ডের নামকরন করা হয় “পিঙ্ক ফ্লয়োড” । “পিঙ্ক ফ্লয়োড” নামকরনের পুর্বে এর নাম ছিল “টি সেট” । পিংক ফ্লয়েড এর গান যে কাউকে একটি ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। তাদের গানের সুররিয়েলিষ্টিক ভাবদর্শন শিল্পের মাধ্যমে বেঁচে থাকার অদম্য প্রেরণাটা পরিপূর্ণ মাধুর্য্য সহ প্রকাশ করে । বর্তমান সদস্যরা হলেন ডেভিড গিলমোর, নিক ম্যাসন, রিচার্ড রাইট ।



সিড ব্যারেটের সময়ের পিঙ্ক ফ্লয়েড

“দ্য ওয়াল” ৩০ নভেম্বর, ১৯৭৯ তে রিলিজ পাওয়া পিঙ্ক ফ্লয়োডের নবম অ্যালবাম । স্থায়িত্বকাল ৮১:০৯ । ট্রাক সংখ্যা ২৬ । ব্যাপক সাড়া জাগায় অ্যালবামটি । লিরিক্স, কম্পোজিশন, ইন্সট্রুমেন্ট এর ব্যবহার, সমালোচকগনের দৃষ্টিভঙ্গি, বানিজ্যিক সফলতা সহ সার্বিক বিষয় কাউন্ট করলে কন্সেপ্ট অ্যালবাম “দ্য ওয়াল” ইতিহাসের অন্যতম সফল রক অপেরা (গীতিনাট্য) ।



গিলমোর যোগ দেয়ার পরের পিঙ্ক ফ্লয়েড

অ্যালবামের প্রথম কথা “..we came in?” এরপর মেলডিয়াস রক এর ধারাবাহিকতায় শেষ গান "Outside the Wall" । অ্যালবামের গানগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালীন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় বিদ্ধস্ত ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া “পিঙ্ক” নামক চরিত্রের জীবনীর প্রতিকৃতি অঙ্কন করা হয়ছে । সারাটা জীবন সে চলার পথের অন্তরায় ও প্রতিবন্ধকতা গুলোকে লড়াই করে সমাধান করার চেষ্টা করে । "The Trial" গানটির ভাষায় “Since my friend you have revealed your deepest fear, I sentence you to be exposed before your peers, Tear down the wall” । পিঙ্ক বিদ্রোহী বোধসত্ত্বার প্রতিক । পিঙ্ক জন্মের পরে সে দেখতে পায় তার বাবার মৃত্যু । তার মা ছিল অতিরিক্ত খবরদারিপরায়ন । বাবাবিহীন শিশুবেলা, মায়ের অন্তর্মুখী মনোভাব, দেশের জন্য যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করা বাবাকে দেয়া ডেথ সার্টিফিকেটে রাবার স্ট্যাম্প সাটিয়ে দিয়ে দেশের রাজার দায়িত্বের পরিসমাপ্তি, স্কুলে শিক্ষকদের তিরস্কারপূর্ণ নিষ্ঠুর আচরণ ইত্যাদি ঘটনাগুলোতে সে নিজের চারপাশে থাকা দেয়ালটি আরো বড় করতে থাকে । সময়ের সাথে এক সময় পিঙ্ক রকস্টার হয়ে উঠে । অবিশ্বাস, নিষ্ঠুরতা, পেশাগত জগতে ব্যর্থতা, দূরে সরে যাওয়া স্ত্রী, ড্রাগ অ্যাডিক্ট হওয়া আন্তঃসম্পর্ক গুলোতে ছেদ টানতে থাকে । সমস্যা ধাপে ধাপে গাঢ় হয় । কন্সার্টে পারফর্মেন্সকে সে একজন নব্য নাজি-শাষকের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে "If I had my way I'd have all of you shot!" । "রান লাইক হেল" অথবা "কম্ফোর্টাব্লি নাম্ব" গান দুটি এই পারফর্মার-অডিয়েন্স সম্পর্কের রূপক উপস্থাপন । আর এইসব কিছুই ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে গানগুলোর মাধ্যমে। আস্তে আস্তে সে নিজেকে গুটিয়ে নেয় একটি দেয়ালের আড়ালে । স্ব-আরোপিত “দেয়াল” এখনে রূপক অলংকার যা সমাজ থেকে পিঙ্কের অন্তরণ, বিচ্ছেদ তথা তার নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বজনিত বিষণ্ণতাকে প্রকাশ করে ।

অ্যালবামের কন্সেপ্টের মুল উদ্দীপনা ও প্রেরণা এসেছিল এনিমেল ট্যুর নামে বিখ্যাত “In the Flesh Tour” থেকে যেখানে দর্শকদের আচরনে প্রচন্ড অসন্তষ্ট আর বিরক্ত হন রজার ওয়াটার্স । পরে অনুতপ্ত ওয়াটার্স তার ও দর্শকদের মাঝে একটি দেয়াল সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন । ১৯৭৭ সালের জুলাইতে ব্যান্ডের এক মিটিংয়ে ওয়াটার্স ৯০ মিনিটের একটি ডেমো সহ অ্যালবামের মুল ধারনা ও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন । প্রযোজক এজরিন অ্যালবামটির প্লটকে শক্ত ভিত প্রদান করেন । মুল লিরিকের বেশি অ্যালবামটি প্রকৃতপক্ষে ওয়াটার্সের আত্মজীবনীমূলক । তার বাবা “Operation Shingle” নামে পরিচিত ইটালির অ্যানযিয় ও নেট্টিয়তে ১৯৪৪ সালের ফেব্রুযারীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে মৃত্যুবরন করেন যা দ্য ওয়াল ট্রিলোজির প্রথম লাইনেই উঠে এসেছে “Daddy's gone across the ocean?”
“Nobody Home” গানে সাবেক সদস্য সিড ব্যারেটকে দেখা হয়েছে এভাবে "wild, staring eyes", "Hendrix perm" এবং "elastic bands keeping my shoes on"

অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্যা ওয়ালঃ

অ্যালবামের অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্যা ওয়াল ট্রিলোজি বলা যায় পিঙ্ক ফ্লয়োডের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান । পার্ট-১ পিঙ্কের কৈশোর ও যৌবনের কিছু অংশ ফুটিয়ে তোলে । এর পুর্বের ট্রাক “The Thin Ice” জীবন ও পৃথিবীর কাছাকাছি আসার আগেই কিভাবে যুদ্ধের বাস্তবতা নিষ্কলুষ ও ক্ষণস্থায়ী শৈশবকালকে প্রভাবিত করে তা প্রকাশ করেছে "Dragging behind you the silent reproach / Of a million tear-stained eyes" । বাবার মৃত্যু তার চারপাশেদেয়াল সৃষ্টি করে এবং এই অবস্থার জন্য বাবার প্রতি তার ক্ষোভও সে প্রকাশ করে পার্ট-১ এর প্রথম লাইনটি । পার্ট-১ এর শুরুতেই আছে সফট গিটার সলো ।

Part I লিরিক্সঃ

Daddy's gone across the ocean,
Leaving just a memory,
A snapshot in the family album.
Daddy, what else did you leave for me?
Daddy, whatcha leave behind for me?
All in all it was just a brick in the wall.
All in all it was just the bricks in the wall.


গানের ২য় অংশটুকু সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল । এই অংশের মধ্য দিয়ে কঠোর শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে বোর্ডিং স্কুলের মিলিটারি স্টাইলের নিন্দা জানানো হয় । গানটি কিছু দেশে ব্যান করা হয়েছিল। দক্ষিন আফ্রিকায় কালো ছাত্ররা এই গানটি বর্নবাদ ও সরকারি শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ব্যবহার করে । যার ফলস্বরূপ সরকার মে ২, ১৯৮০ সালে গানটি ব্যান করে দেয়। এই অংশে পিঙ্কের স্কুলের কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়। কিভাবে স্কুলের টিচাররা তার উপর অত্যাচার চালায়। মিউজিক ভিডিওটিতে দেখানো হয় তার কবিতার বই পড়ার অভ্যাস থাকার জন্য বৃদ্ধ শিক্ষক কিভাবে সবার সামনে তাকে উপহাস করে। এরকম হেনস্থা হয়ে সে স্বপ্ন দেখে তার সহপাঠীদের নিয়ে এই ধরনের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় ও বিদ্রোহ করে। স্বপ্নে বিভোর পিঙ্ক তার চারদিকে আস্তে আস্তে গড়ে ওঠা দেয়ালের উচ্চতা বাড়াতে থাকে। মূল গানে স্টুডিওর পাশের একটি স্কুলের ২৩ জন শিক্ষার্থীকে দিয়ে কোরাস গাওয়ানো হয়। আর ওভারডাবড করা হয় যেন মনে হয় অনেক বেশি মানুষ গাচ্ছে। এই অংশটির যে মিউজিক ভিডিও বানানো হয়েছে তাতে মুল গানের একটু রদবদল করা হয় । এই অংশটুকু লেখার জন্য রজার ওয়াটারসের পঞ্চাশ দশকের নিজের স্কুলের তিক্ত স্মৃতি উৎসাহ যোগায় ।

Part II লিরিক্সঃ

We don't need no education.
We don't need no thought control.
No dark sarcasm in the classroom.
Teacher, leave those kids alone.
Hey, Teacher, leave those kids alone!
All in all it's just another brick in the wall.
All in all you're just another brick in the wall.



গানটির শেষ অংশে দেখানো হয় পিঙ্ক তার চারপাশে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা দেয়াল সম্পুর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে তার চারপাশের মানুষজনকে “bricks in the wall” হিসেবে কল্পনা করে।

Part III লিরিক্সঃ

I don't need no walls around me.
And I don't need no drugs to calm me.
I have seen the writing on the wall.
Don't think I need any thing at all.
No. Don't think I need anything at all.
All in all it was all just the bricks in the wall.
All in all it was all just the bricks in the wall.

__________________________________________________

The Wall গানটি অনুসরণ করে নোভা ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে রাজাকারের তালিকা চাই নামে একটি টাইটেল সং বের করে । ডাউনলোড লিংকঃ

সম্পুর্ন অ্যালবামের টরেন্ট ডাউনলোড লিংকঃ

“পিঙ্ক ফ্লয়োড দ্য ওয়াল” মুভিটিকে অন্যতম সেরা মিউজিকাল মুভি ধরা হয় (এখনো দেখি নাই, ডাউনলোড চলতাছে) । “পিঙ্ক ফ্লয়োড দ্য ওয়াল” মুভির ডাউনলোড লিংকঃ

অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্যা ওয়াল পার্ট-২ মিঊজিক ভিডিও ডাউনলোড লিংকঃ

লিংক১ অথবা লিংক২

অনুপ্রেরনাঃসীড ব্যারেটঃ শাইন অন! -ছন্নছাড়ার পেন্সিল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:২৫
৩৪টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×