somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষয়ে যান কবি নির্মলেন্দু গুণ - এক নির্বোধের মন থেকে...!!!

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(Photo courtesy: নির্মলেন্দু গুণ)

একটা মানুষের মধ্যে যখন মৌলিকতা, তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে না...তখন, সে বেঁচে থাকে শুধু তাঁর খোলসটা নিয়ে...আর, ভূতপূর্ব সেই মৌলিকতার কারনে সে যদি কিছু পরিমান খ্যাতি অর্জন করে এবং সেই খ্যাতির মোহে (আবার বলছি "মোহে") পড়ে নিজেকে ভাসিয়ে চলে উটপাখির মতো চোখ বন্ধ করে, তবে তাঁর সেই মৌলিকতা পরিবর্তিত হয় আবর্জনাতে। বিশেষ বিশেষ কারো খ্যাতি পাবার আগের এবং পরের সৃষ্টি নিয়ে তুলনা করলে, সত্যি অবাক হতে হয়... ... ...যা দেখলাম, আমার খুব, খুউব, খুউউব প্রিয় একজন কবির মাঝে - তিনি "নির্মলেন্দু গুণ"... ... (হতে পারে নির্বোধের মতো আমার বোঝার ভুল, হতে পারে উলটো রাজার উলটো দেশ, হতে পারে অনেক কিছুই - সব ছেড়ে দিয়ে বলছি ... এটা একান্তই আমার নিজস্ব অনুভুতি)।

১৩/১৪ বছরের কৈশোরে...এক বন্ধুর বাসায় আড্ডাবাজিতে...ঘরের এক কোনে কয়েকটা ছেঁড়া পাতা হয়ে “নির্মলেন্দু গুণ” আসেন আমার হাতে, চোখে, অন্তরাত্মায়। ছেঁড়া পাতার কলকাকলিতে প্রথম অংশটাই ছিলো –

“আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি”

ভালো লাগার সেই শুরু...এরপরতো শুধু হন্যে হয়ে খুঁজেছি তাঁর লেখা – যেখানেই গিয়েছি। ১৯৯৭-৯৮ সালে প্রথম তাঁর দেখা মেলে একুশের বইমেলায় – কাছে গেলে অচেনার মতো করে ছুঁয়ে দিলেন। কিন্তু, সে রাতে আমার ঘুমই হলো না প্রিয় কবির পরশে। এভাবেই, ওনাকে বসানো আমার মণিকোঠায়... তারপর দিন যায়, বছর যায়... সময় পাল্টায়, জীবন পাল্টায় – উনার লেখা থাকে, আমার একাকিত্যের একমাত্র সঙ্গী হয়ে। কারন, একমাত্র উনার কবিতার কিছু পঙক্তি স্মৃতিপূরে এমন ভাবে বাসা বেঁধেছে যে, সেটাকে অসম্মান বা ভুলে যাওয়া বা ছুঁড়ে ফেলা – কিছুই সম্ভব না। শুধু, একটা মানুষ কীভাবে ক্ষয়ে যায় আরেকজনের মন থেকে – সেই অভিজ্ঞতার কথাই বলছি।


ক্ষয়ে যাওয়ার শুরুটা - এই কিছুদিন আগে, তাঁর ফেসবুকে একটা ছবিতে তিনি কোন শিরোনাম দেননি তাই, আমি লিখলাম “সৌখিন মানবতা”। মানবতার প্রশ্নে ছবির চিত্রটা যেখানে হওয়া উচিত নিত্য-নিমিত্ত্যের, সেখানে এই চিত্র এখন ফেবুতে...সৌখিনতা নয় তো কি???


(Photo courtesy: নির্মলেন্দু গুণ)
জানতাম না, ঐ ছবিটা কোন এক চলচ্চিত্রের। কিন্তু প্রথম দেখাতেই যা মনে হয়েছে, তা “সৌখিন মানবতা” ছাড়া আর কি হতে পারে? চলচ্চিত্রটা আমি দেখিনি, অবশ্যই দেখার ইচ্ছে আছে – এবং দেখে এটাও জানতে চাই যে... পূর্ণ দৈর্ঘ্য একটা চলচ্চিত্রের ঠিক ঐ মুহূর্তটাই কেন তাঁর ফেবুতে বিজ্ঞাপন হল – যদি তা সৌখিন না হবে??? তারপর, তিনি বেজায় রাগ...ব্লক, ব্যানের হুমকি। বিখ্যাত মানুষ...করতেই পারেন।

দ্বিতীয় পর্বটা আসে, রাজস্ব বোর্ডের বিলবোর্ডে তাঁর ছবি ব্যবহার – কোন সম্মানী ছাড়া। প্রথম যেদিন তিনি এটা নিয়ে অর্থ দাবি করেন...সেদিন মনে হয়েছে...এটা তাঁর অবশ্য প্রাপ্য।


(Photo courtesy: নির্মলেন্দু গুণ)
তার ১/২ দিন পর আবার, অর্থের আবেদন ফেসবুকে...জানি, দুর্নীতির প্রথম কাতারে থাকা আমাদের দেশ বলেই রয়্যালটি শব্দের প্রতি তেমন কোন আপ্যায়ন নেই...সরকারী একটা সংস্থা অনৈতিকতার চূড়ান্ত প্রমান দিয়েছে...এরমধ্যে, একজন কবি-সাহিত্ত্যিক যদি দিনের পর দিন অর্থ নিয়ে মাতামাতি করতে থাকে...তবে, ‘অর্থলিপ্সা থাকা উচিত না’...এই কথা কেন বলে, কাকে বলে – কারা হবে ঐ নৈতিকতার ধারক – বাহক??? আর, কবিদের নাকি উদারতাই সব...সেটারই বা প্রমান কোথায়... ... রেগে-মেগে সেদিন উনিতো বলেই দিলেন... “Stay Away from my wall”। সেই শেষ লেখা তাঁকে।

এবং আজ, তাঁর দেয়ালে লিখা একটা নতুন কবিতা...যে কবিতাটা চান্দি আমার পুরা ৪৯ কইরা ছাড়ল... ... ...তাই, তাঁর হারিয়ে যাওয়া খ্যাতিহীন, মৌলিক দিনগুলোর সৃষ্টি “মানুষ” আর খ্যাতিতে মোড়া তাঁর এখনকার সৃষ্টি “দেহফুল” – আজ মুখোমুখি। খ্যাতির বিড়ম্বনায় এভাবেই, তিনি ক্ষয়ে যান... ... ক্ষয়ে যান একজন প্রিয় কবি... ...মনের একদম তলানিতে।।।

“তোমার দেহগাছে ফুল ফুটেছে,
চাঁদের মতো গোল – পাহাড়।
... ... ... ... ... ... ...
গাছে ফুল ফুটেছে, বাস ছুটেছে,
বন হয়েছে উতালা।
তুমি কী ফুল ফুটাইলা গুরু
তার চূড়ায় দিলা ঈষৎ-কালা।
... ... ... ... ... ... ...
সেই যুগল-ফুলের মধুই জানি
মানুষের অমৃত-আহার।।”


একজন "নির্মলেন্দু গুণ" কীভাবে এতো সস্তা ভাসায়...ভাবাবেগ বিহীন এমন সব শব্দ সম্ভার দিয়ে একটা কবিতা সাজায়। আজকের, এই কবিতাটার কবি যদি তিনি না হয়ে... ... ব্লগে বা পত্রিকায় প্রকাশিত একটা সাধারণ, অচেনা নাম হতো...তবে, এটা বলতে বাকি রাখে না যে, সেই নতুন কবির প্রতি দুয়ো দেয়ার লোকজনের অভাব হতো না। হয়তো, প্রথম দু-লাইন পরেই খ্যেমা দিতো।

তবে কি, আমরা সাধারণ পাঠকরা কবির নাম দেখে, কবির জন্য কবিতা পড়ি, নাকি কবিতার শব্দগুলোর জন্যই পড়ি – যেখানে সাজানো থাকে আমাদের জীবন ও কল্পনার রঙ – পরতে, পরতে...!!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×