এগারো দিন ওখানে লাকি আক্তার স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। কত টগবগে তরুন-পরিবার- শিশু-তরুনি-বৃদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধা...... সহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ একান্ত নিজের গরজে যে চত্বরে একজোট হয়ে দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন, ফাঁশি ও জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিতে মুহুর্মুহ স্লোগানে মুখরিত করেই যাচ্ছেন সেই এলাকা, যে স্লোগান, যে দাবি, যে প্রান ছড়িয়ে গেছে সমগ্র বাংলাদেশে তথা এই বিশ্বে প্রতিটি বাঙ্গালীর প্রানে, সেই দাবিতে-সেই গর্জনে তো আমি কোন ভাঁটা দেখিনি! বরং দেখেছি প্রতিদিন কিভাবে পিপীলিকার মত সবাই কেন্দ্রীভূত হয়ে যোগ দিয়ে চলেছেন বাঙ্গালীর প্রানের দাবি আদায়ে।
শক্তির শাহবাগ যেন দুর্বলতা না হয়ে যায়, প্রার্থনা এতোটুকুই।
এবং "ওরা" সফল হচ্ছে কিন্তু! একজন আয়োজক আপনি বা আপনাদের থেকে ওদেরকে সফল বলাই যুক্তিযুক্ত! পারতেন না আপনারা যদি প্রতিটি অনলাইন এক্টিভিস্ট আপনাদের সাথে যোগ না দিত, যদি তাদের কণ্ঠ আপনাদের সাথে না মিলত এতোসব করা সম্ভব হতো না। আজকেও যখন ইন্টারভিউ নেওয়া হল তরুনটি কিন্তু ঠিকই বলে উঠল, "এগারো দিন হয়েছে, প্রয়োজন হলে মৃত্যু পর্যন্ত এখানে থাকব, তাও দাবি আদায় করেই ছাড়ব!" তার উৎসাহে পানি ঢেলে দেবার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে "আয়োজক?"
আপনারা যখন ঠিকটি করছিলেন, হাততালি দিয়েছি, কার্পণ্য করিনি এতটুকু। ফিজিক্যালি উপস্থিত না হতে পেরে মনকষ্টে ভুগেছি, অপরাধবোধ হচ্ছিল। আজ যখন ভুল হতে দেখছি, আমি বলতে পারবোনা?
আপনাদের "আয়োজনে" নয়, দেশব্যাপি, বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশিদের প্রচণ্ড সহমত ও সমর্থন এবং একাধারে এর সাথে থাকাই মুলত সরকারকে বাধ্য করেছে বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে। আজ আমরা যখন "প্রায়" বিজয়ের পথে, এই অবস্থান যেখানে পারতো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেই ঘরে ফেরার আন্দোলন সেটাকে এখন বানিয়ে দেওয়া হলে ডেইলি শো! বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১০ টা।
আপনারা অনেক জ্ঞানী মানুষ, অনেক সম্মানও করছে জাতি আপনাদের, আমিও করতাম আজ বিকেল পর্যন্ত। কিন্তু আপনারা একটা ঘোষণা দিলেন তার পরিনাম ভেবে দেখলেন না? প্রতিদিন ঘরে ফিরে গিয়ে আবার আন্দোলনে আসা সবার পক্ষে কতটা সম্ভব হবে? কতজন ঠিক আজকের মত "মাটি কামড়ে আন্দোলন" এর শক্তিটি আর অনুভব করবে? যেখানে সময় আরও কঠোর আন্দোলনের, দেশ সহ প্রজন্ম চত্বরে পানি ঢেলে দেওয়া কেন হল ইমরান ভাই? আরিফ ভাই? ব্লগার???? অনলাইন এক্টিভিস্ট? অমি রহমান পিয়াল? তোফায়েল সাহেব? জবাব কি?
রাজাকার-জামায়াত-শিবির বিরোধী আন্দোলন আমাদের আজকের নয়, বুঝ হবার পর থেকেই দেশ ভালবেসে ওদের ঘৃণা করতে শিখেছি। অনলাইনে আপনারা খেয়ে না খেয়ে এদের বিরোধিতা করে চলেছেন তাও কত বছর হয়ে যাচ্ছে আজ গুনতে গেলে ভুল হয়ে যায় আঙ্গলে! তাহলে তার সামনে এগারো দিন অনেক বেশ হয়ে গেল? একটি সিস্টেমের ভেতরে পালাক্রমে যেখানে সবাই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছিলেন সেখান কেন এই রোধ? এখন কি খুব বেশী করে আপনাদের দলীয় পরিচয় নিয়ে কথা উঠবেনা? এখন কি নিন্দুকেরা বলবেনা যে "সরকার এর বিরিয়ানি রেডি, আন্দোলন থেমে যাক!" এটাই আপনারা চেয়েছেন?
এখনও জামায়াত এর নিষিদ্ধ করন নিশ্চিত হয়নি, সর্বদলীয় সমর্থনের অপেক্ষায় সরকার! সেখানে হাল হালকা কেন করে দেওয়া? তীব্র কষ্ট পেয়েছি আজ।
জামায়াত শিবির বেপরোয়া হামলা করছে, প্রশাসনকে আরও শক্ত হবার দাবি তোলার কথা ছিল আজ, সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়ার উচিৎ ছিল, "এতো দিনের মধ্যে জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ চাই! সেখানে এ কি শুনলাম? শক্ত নেতা আপনি নন, প্রথম দিনই মিডিয়াতে বলেছেন, কিন্তু যা শুরু করেছিলেন তা যদি শেষ না করেই "বিশ্রাম" নেবার আকাঙ্ক্ষা ছিল, কি করে হতো এই জাতির জয়?
তরুন প্রজন্মের আন্দোলনের আজকের বক্তৃতা ঠিক একজন বৃদ্ধ রাজনীতিবিদের মতই শোনালো। শাহবাগ হাল ছেড়ে দেওয়া শেখাবে কেন? শাহবাগের তো জয়ে উল্লাস করতে শেখানোর কথা!
আন্দোলন শক্ত করার এই সময় স্তিমিত করে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪২