আবদুস সালাম বলে, 'মাদ্রাসার হুজুর আমাগো ধোঁকা দিছে, মিছা কথা কইয়া ঢাকা আনছে। হুজুরের কথায় আর আসুম না।' আমিনুল বলে, 'হুজুর কইছে ঢাকায় বড় ওয়াজ মাহফিল হইব আর আমরা বইসা শুধু শুনমু। হুজুরের কথায় মাদ্রাসার দেড় শ ছাত্র আমরা ঢাকায় আসি, কিন্তু ঢাকায় আইয়া দেখি একেবারে যুদ্ধ লাইগা গেছে। একটুর লাইগ্যা মাথায় গুলি লাগে নাই।' সোহেব নিজের পিঠে লাঠির আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলে, 'অল্পের জন্য বাইচ্যা আইছি। আমরা কিছু করি নাই, আমাগো লগের অনেকেই পুলিশের ওপরে ঢিল মারছে, দোকানপাটে আগুন দিছে।'
শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারঃ হেফাজতের নেতারা মাদ্রাসার ছোট ছোট শিশুকে সমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচিতে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মাদ্রাসাছাত্ররা অভিযোগ করে, ঢাকায় নিয়ে আসা হলেও অনেককে দুপুরের খাবার খেতে দেওয়া হয়নি। অনেকেই বিস্কুট, চিঁড়া খেয়ে দিন পার করেছে।
![]()
ছবিঃ সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশের আশ্রয়ে অসহায় এক কিশোর
ডেইলি ইত্তেফাকের এক সাংবাদিক এই ছবিটি তুলেছেন। ছবিটি শেয়ার করার পরে তার কাছ থেকে জানা গেছে এই মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলেটি ভয় পেয়ে পুলিশ ভাইটার পিছনে এভাবে আঁকড়ে ধরে ছিলো। সাংবাদিক অবাক হয়ে দেখেছেন যে পুলিশ হুই হুই দৌড়া দৌড়া বলে তাড়িয়ে দিচ্ছিলো, কিন্তু প্রায় মিনিট খানেক সময় এই ১৪/১৫ বছরের ছেলেটিকে তার পিছনের আশ্রয় থেকে তাড়িয়ে বা সরিয়ে দেয়নি।
নরসিংদীর বেলাব বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, "আর ঢাকা শহরে আসব না। ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের কথা বলে আমাদের আনা হয়, কিন্তু নিজের চোখেই দেখলাম হেফাজতের লোকজনই বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের দোকানগুলোতে আগুন দিল। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল শত শত ইসলামী বই ও অনেক কোরআন শরিফ। এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।"
![]()
ছবিঃ আল্লাহ রসুলের পাক কালামও ওদের সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
ভেবে দেখুন তো একজন "বিধর্মী" "নাস্তিক" যাই বলেন, এইকাজ করেছে? কোথায় আপনার ধর্মঅনুতি এখন??
ওই মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, "যাদের ডাকে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ঢাকায় এসেছি কর্মসূচিতে, সেই তারাই যদি কোরআন শরিফে আগুন দেয় তাহলে এরা কেমন লোক! হেফাজতের ডাকে আর ঢাকায় আসব না।"
শাপলা চত্বরের সমাবেশ থেকে দাউদকান্দি ফিরে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদ্রাসাছাত্র বলে, 'দাউদকান্দির ২০টি মাদ্রাসা থেকে প্রায় আট/নয় শ ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি মাদ্রাসার মোহতামিম (অধ্যক্ষ) ও শিক্ষকরা ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের ঢাকায় নিয়ে গেছেন। তবে ঢাকায় নেওয়ার পর তাঁরা আর কোনো খোঁজ-খবর রাখেননি। আবার উত্তেজনার সময় এসে হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়ে পুলিশের সঙ্গে মারামারি করার নির্দেশ দিয়ে আমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন তাঁরা। শিক্ষকদের কথা শুনে আমরা শত শত নিরীহ ছাত্র হতাহত হয়েছি। অনেকে গুলি খেয়ে নিহত হয়েছে, আবার অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে।'
![]()
ছবিঃ আহত ব্যাক্তিটির সেবা করছেন র্যাব সদস্যরা, অথচ এই ছবিই ব্যাবহার করা হয় যখন সে শুয়ে ছিল তখন ক্যাপশনে মৃত জুড়ে দিয়ে।
এই হচ্ছে বাস্তবতা!! হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মাদ্রাসাছাত্রেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। অনেকের মা-বাবাও জানেন না তাঁদের সন্তানদের ঢাকায় হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা। অনেক মাদ্রাসাছাত্র জানায়, আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে যারা মাঠে নামছে, তাদের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দেওয়া হবে- এমন কথা বলেই শিক্ষকরা তাদের ঢাকায় নিয়ে আসেন।
------------- -------------- --------------- -----------------
এদের জন্যে নিতান্তই খারাপ লাগে। কিছুই করার ছিল না ওদের। শুধু অসহায়ের মতো নিয়তির হাতে মার খেয়েছে!! খবই দুঃখজনক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৩ ভোর ৫:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




