somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

♣ ।।-- গল্পঃ বরাবর অনুভূতি--।। ♣

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



।।ক।।

সমস্ত রাত ঘুমোতে পারেনি দীপ্ত। শুধু আদৃতার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনেছে রাতভর। আজ রাতে চাঁদ যেন সম্পূর্ণ প্রভায় আঁধার চিরে দেবার পণ করে এসেছিল! আলোর বন্যা দেখতে গিয়ে, জ্যোৎস্নায় ভিজে চুপচুপে হবার ইচ্ছেটা অনেক কষ্ট দমন করতে হয়েছে। নাগরিক ব্যস্ততায় এসব নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই, সময়মতো ঘুমাতে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা! আর আদৃতাকে বলতে ইচ্ছে করছিল না, ওর সব সময়ই মুড অফ থাকে, ভড়কে যায় কিনা এই ভয়ে থাকতে হয় সব সময়। একা একা শুভ্র আলোয় হারাবার আনন্দ ততোটা নেই। কিন্তু চন্দ্রকণ্যা ভালোবাসাকে বঞ্চিত করেনি, কাঁচের জানালাগুলো হাট করে খোলা, আলো উপচে পড়েছে ঘরময়। নিঃশ্বাসের ছন্দময়তায় আদৃতার বুকের ওঠানামা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ও। এতো অপূর্ব কিছুর পানে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না, নেশা হয়!

ভোরের আগে আগে আর বিছানায় থাকা গেলো না। পা টিপে টিপে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো দীপ্ত, ভোরবেলার সূর্য বড্ড মায়ায় টানে ওকে। এভাবে নিঃশব্দে যাওয়ার চেষ্টা কেন করছে ভেবে কোন উত্তর পেল না, বিষয়টা বেশ হাস্যকর! আদৃতাকে ভয় পায় দীপ্ত? উঁহু, মেয়েটাকে জাগিয়ে দেবার অনিচ্ছা কাজ করে থাকবে হয়ত। আর ওর নিঃশ্বাসের শব্দটা শুনতে নেহায়েত মন্দ লাগছে না, রাতের মোহটাকে মোহনীয় করার দায়িত্ব পালন করছে যেন! শেষরাতে কাছেই কোথায় একটা পাখি ডাকে। কোথায় আজ পর্যন্ত বের করা সম্ভব হলো না। তবে দীপ্তর সাথে তার অদ্ভুত এক বন্ধুত্ব রয়েছে। রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় দীপ্তর ঘুম ভেঙ্গে যায়, পাখিটাও সে সময়েই ডাকতে শুরু করে। ভোর পর্যন্ত একটানা ডেকে যায় সে। প্রথম দিকে প্রচন্ড বিরক্ত হতো দীপ্ত, ঘুমোতে দিতো না পাখিটা। আজকাল অভ্যাস হয়ে গেছে, ভালোলাগা জন্মেছে। সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া মুখটা আড়াল করে শুনছে ডাকটা, অদ্ভুত একটা কান্না সেই ডাকে, একঘেয়ে পাগল করা কষ্ট। সিগারেট শেষ, আরেকটা ধরালো, নির্ঘুম রাতটা এভাবেই পার করে দিতে ইচ্ছে করছে। যদিও বেশ শীত করছে, চাদরটা নিয়ে আসার চিন্তা আসলেও বাতিল করে দিলো, আদৃতার ঘুম খুব হালকা, ভেঙ্গে যেতে পারে।

পাখির ডাকটা আচমকা থেমে গেলো, যেমন প্রতিদিন যায়। এখন নির্ঘাত সূর্য উঠবে, পাখিটা ডাক থামালেই সূর্য প্রথম কিরণ বিলাতে শুরু করে।

পুব দিকে লালচে আভা দেখা দিচ্ছিল কেবল, আদৃতা ডেকে উঠলো। ‘এইই, তুমি কই!’

‘এই যে এখানে, একটু দাঁড়িয়েছি।’

‘শীত করবে তো, ঘুমাবে না?’

‘তুমি ঘুমাও, আমি আরেকটু দাঁড়াবো।’

সূর্য ততক্ষণে দেখা দিয়েছে। আদৃতা আর ঘুমোয় নি, চাদর জড়িয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো। দীপ্ত’র বুকে মাথা রেখে সূর্যটা দেখছিল, দীপ্ত কাঁধে হাত রাখতেই চমকে গেলো!

‘দীপ্ত, তোমার হাত তো ঠান্ডায় জমে গেছে!’

‘এতোক্ষন তোমার পাশে না থাকার প্রমান।’

‘বলেছে তোমাকে! কিছু একটা না জড়িয়ে ঠান্ডায় দাঁড়ালে এমন তো হবেই। চাদরটা জড়িয়ে নাও।’

কেন জানি আর ভালো লাগছে না দীপ্ত’র। এখনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু আদৃতা এমন জেঁকে মাথা দিয়ে রেখেছে বুকে, সরিয়ে যাওয়াটা প্রচন্ড রুঢ় দেখাবে!

‘আচ্ছা, এখন যাই। আমার তো বেরুতে হবে...’

‘হুম, তুমি ফ্রেশ হও আমি চা করে দিই।’

প্রতিদিনের মতো নীরবে চা পান করছিল দুইজনে। সাধারণত খাবার টেবিলে ওদের কেউই তেমন কিছু বলে না। বিয়ের দু’বছর হয়ে গেলো, এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু দীপ্ত’র কথা বলতে ইচ্ছে করে, অনেক কথা, অপ্রয়োজনীয় কথা। বলতে ইচ্ছে করে আদৃতাকে সকালে কতোটা সুন্দর লাগে, অবর্ণনীয় সৌন্দর্যটুকু বর্ণনা করার বৃথা চেষ্টায় মেতে ওঠার ইচ্ছে হয়। কিন্তু সেসব আর হয়ে ওঠে কই! দরজার বাইরে গিয়ে প্রতিদিনের মতো পেছনে ফিরলো ও, যেন কিছু একটা বলার ছিল, কিছু একটা বলা হয় নি। আদৃতাও বরাবরের মত উৎসুক তাকিয়ে থাকে ততক্ষণ। কিন্তু বিদায়টা নিঃশব্দেই হয়, কখনও একটু হাসি বা হাত নাড়ানো। কিন্তু জগতের জড়গুলোও ঠিক বুঝে নেবে কতোটা মেকী সেটা। দীপ্তর বলতে ইচ্ছে করে, ‘সমস্ত দিন তোমাকে মিস করবো, প্রতিদিনই করি।’ কিন্তু কথাগুলো শব্দে রুপান্তরের ব্যর্থতাকে সঙ্গী করেই বাঁচে সে।

দীপ্ত প্রচন্ড ভালোবাসে আদৃতাকে, আদৃতা দীপ্তকে। তারা যে অসুখী এমনটা নয়, সব কিছুই নিখুঁত! কিন্তু সব নিখুঁত কোন কিছুর প্রতি ভালোবাসা জন্মায় কিনা সে অনুসন্ধিৎসাটি কখনও মেটে নি। সব কিছু ঠিক থেকেও যেন কিছু নেই। ছন্দময় একটা গানের সূরটা যেন ভুল হয়ে যাচ্ছে। প্রথম বছরটা এমন যায় নি যদিও, কিন্তু সে উচ্ছলতা দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।


।।খ।।

ঘড়িটা কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে অফিসেরও দেরী হয়ে যাচ্ছে। খুঁজতে-খুঁজতে ড্রয়ারের কোণায় কিছু একটায় হাত লাগলো দীপ্তর, কৌতূহলের বসে বের করে আনতেই দেখলো, কিছু ছবি। আদৃতার কলেজ জীবনের কয়েকটা ছবি, বন্ধুদের সাথে। কিন্তু একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো ওর। ছেলেটা আদৃতার হাত ধরে আছে, মেয়েটার মুখে লজ্জাটুকু স্পষ্ট।

‘আদৃতা, এদিকে আসবে একটু?’

‘কই পেয়েছ ঘড়ি?’

‘উঁহু, এই ছবিগুলো পেলাম।’

প্রথমটায় ভয় ও আশংকা, পরে সামান্য বিরক্তি মেশানো রাগ। আদৃতার মুখের ভাবগুলো স্পষ্ট পড়তে পারা যায়।

‘এগুলো ধরেছো কেন, আমার পার্সোনাল কিছু জিনিস ওখানে রেখেছিলাম! এটুকু প্রাইভেসি কি পেতে পারি না?’

‘অবশ্যই পারো বাবু, রাগ করছো কেন, স্যরি! কিন্তু এই ছবিটায় ইনি কে?’

‘আমার ফ্রেন্ড ছিল...’

বেশ রেগে গেছে আদৃতা, ছবিগুলো নিয়ে ছিঁড়ে ফেললো সে, ‘এসব ট্র্যাশ, দরকার নেই কোন।’ আদৃতাকে থামাতে গিয়েও থেমে গেলো, প্রচন্ড অবাক হলো দীপ্ত, এমন আচরণের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না সে। বিষয়টাকে সহজভাবে নেয়ার কথা ছিল না ওর, অনেক প্রশ্ন জন্ম নেয়ার কথা ছিল মনে। কিন্তু নিলো না, অদ্ভুতভাবে দীপ্ত সম্পূর্ণ বিষয়টাই ভুলে যেতে পেরেছিল, মন থেকে হাওয়া করে দিয়েছিল এমন কোন ঘটনার অস্তিত্ব। সেদিন বিকেলে অনেকগুলো ফুল নিয়ে ফিরেছিল বাসায়, স্যরিও বলেছিল। কিন্তু আদৃতার মুড অফটা আর যাচ্ছিল না! সেদিনের পর থেকে আর কোন কিছুই যেন জমছিল না। আসলে জমছিল না বললে ভুল হবে, সবই আগের মতো ছিল, কিন্তু সবকিছুতেই অদ্ভুত এক শুন্যতা যায়গা করে নিয়েছিল কেন জানা নেই।

তারপরও, ক্ষত তৈরি হলে তা শুকিয়েও যায়। দীপ্ত ভেবেছিল, একটু সময় লাগবে হয়ত। ওই বিষয়টা নিয়ে একটি কথাও আর জিজ্ঞেস করে নি সে আদৃতাকে। কোন বাক্য বিনিময় হয় নি ঘটনাটি নিয়ে। কিন্তু একটা সূক্ষ্ম খুঁতখুঁতে ভাব রেখে গেছে হয়ত! দীপ্ত নিজেও বোধয় সচেতনভাবে বলতে পারবে না। কিন্তু ক্ষতটা দগদগে ঘা হয়ে যন্ত্রণা দিতে শুরু করলো সেদিন থেকে, যেদিন অন্য কোথাও ‘সেই ছবিটা’ লুকোনো দেখলো দীপ্ত। কেউ একজন খুব যত্ন করে টেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে রেখে দিয়েছে।

প্রশ্ন করার সাহস হয়নি দীপ্ত’র, আদৃতার রাগে-দুঃখে লাল হয়ে যাওয়া চেহারাটা দেখা ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না, প্রচন্ড ভালবাসে মেয়েটিকে। নিশাচর পাখীটার করুণ আর্তনাদ শোনার সেই ওর শুরু। খুব প্রিয় শেষ রাতের ঘুম হঠাত কোথায় যেন হারালো। কিন্তু আজকাল আর কোন অভিযোগ নেই, সব কিছু সয়ে গেছে। আদৃতার সাথে একটু অভিনয় করা, পাখীর গল্প শুনতে মাঝরাতে ঘুম জেগে ওঠা কিংবা সামান্য অপূর্ণতার সাথে মানিয়ে নেয়া। দিন দিন শিখে যাচ্ছে দীপ্ত। দীপ্ত’র জানতে ইচ্ছে করে, আদৃতা কি মানিয়ে নিচ্ছে? নাকি কিছুই আসে যায় না ওর? দীপ্তর কী কোন স্থান কী আদৌ রয়েছে ওর হৃদয়ে? যে চোখে নিজের প্রতিচ্ছবি প্রতিনয়ত দেখছে দীপ্ত, সে চোখ’দুটো কী ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে? নাকি দেখছে দূরের কাউকে, অচেনা কাউকে? এই প্রশ্নগুলো দীপ্তকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। ও নীরবে কথা বলে, নির্বোধ প্রশ্নগুলোকে বোঝাবার চেষ্টায় ব্যাকুল হয়।

একদিন না একদিন দীপ্তকে উত্তর খুঁজতে বেরুতেই হতো। কিন্তু আদৃতাকে কষ্ট দিয়ে কোন কিছুই চাওয়ার ছিল না ছেলেটির, সে পথে হাঁটলোই না তাই। জানতে পারলো আদৃতার কাজিন রাত্রির কাছ থেকে। ওকে জিজ্ঞেস করা নিরাপদ ছিল, মেয়েটা দীপ্তর বন্ধুও।

ছেলেটার নাম ছিল সুপ্ত। ভার্সিটিতে পড়তো আদৃতার সাথে। বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল দু’জনের মধ্যে, প্রায় তিন বছরের রিলেশনটার অবসান হয় ছেলেটার আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। আত্মহত্যা কারন অবশ্য আদৃতা ছিল না, পরে জানা যায় নেশা করতো ও, প্রচন্ড ডিপ্রেশন থেকেই এমনটা করে হয়ত। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আদৃতা এর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবতে শুরু করে, মানসিক অসুস্থতার ভেতর দিয়ে যেতে থাকে ও। ক্ষত, সেরে যায় একটা সময়, এটাও সেরে গিয়েছিল। তবে ছেলেটাকে হয়ত মন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে নি আদৃতা, অন্তত সম্পূর্ণভাবে নয়।


চারপাশের জগত, বিশ্বাস ও প্রতিদিনের অভ্যাসগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা যায় না সহজে। ফেলতে বাধ্য হলে প্রচন্ড ব্যাথা হয়! আদৃতার ভালোবাসাকে তখন মেকী মনে হতে থাকে। জানা নেই, হতে পারে এ শুধুই দীপ্তর অভ্যন্তরীণ জটিলতা! কিন্তু একে সাথে করে বেঁচে থাকা কঠিন।


।।গ।।

‘ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো আদৃতা, কক্সবাজারে যাচ্ছি আমরা।’

‘হঠাত প্ল্যান করলে!?’

‘হুম, সময় হয়ে ওঠে না, আর আমার দমবন্ধ লাগছে।’

‘আচ্ছা।’

এক শব্দে আদৃতার দেয়া উত্তরগুলো অসহ্য লাগে দীপ্ত’র, কিন্তু কিছু করার নেই। দীপ্তর সাথে এভাবেই কথা বলে ও।

সন্ধ্যায় প্রচন্ড ক্লান্ত দ’জনে হোটেলে চেক ইন করে রুমে গিয়েই শুয়ে পড়লো সটান! আদৃতাকে জার্নির ধকল বেশ পেয়ে বসে। দীপ্ত’র ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো গভীর রাতে। পাশে রাখা ঘড়ির আলোকিত ডায়ালে দেখলো, চারটা ত্রিশ বাজে! সমুদ্রের মৃদু গমগম শব্দটা ভালো লাগছে। আদৃতা কি ঘুমিয়ে আছে? জাগাবার প্রচন্ড ইচ্ছেটা দমন করার অনেক চেষ্টা করেও পারা গেলো না।

‘জেগে আছো?’

‘হু’

‘ঘুমাওনি কেন?’

‘তোমার নড়াচড়ায় মাত্র ভেঙ্গে গেলো।’

হেসে ফেললো দীপ্ত, ‘স্যরি!’

‘ইটস ওকে।’

‘কখনো রাতের সমুদ্র দেখেছো?’

‘উঁহু! রাতে যাওয়া ঠিক না শুনেছি।’

‘কিন্তু আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, সাথে আসবে?’

‘কিন্তু শীত করছে যে!’

‘তবু...’

‘আচ্ছা, চলো।’


উঠে পড়লো আদৃতা, দীপ্ত একটু অবাক হলো আদৃতা উঠে যাওয়ায়। আশা করে নি ও রাজি হবে।

নীরবে হাঁটছিল দু’জন। নীরবতা দীপ্ত’র অসহ্য লাগে, কখনো বলা হয় নি আদৃতাকে! নীরবতা ভাঙার ইচ্ছেটা আজ দমন করতে মন সায় দিচ্ছিল না।

‘একাকীত্ব আমার প্রিয় নয়, কিন্তু একাকিত্বে কবিতারা আসে জানো?’

‘তুমি বুঝি কবিতা খুব পছন্দ করো?’

‘কবিতা পছন্দ করি না, যেমন করি না একাকীত্ব।’

‘হঠাত এই কথা বললে যে?’

‘আমি যে একা... আমরা একা...’

আদৃতার মুখটা সম্ভবত দীপ্তর দিকে ঘুরে গেলো! আবছা আঁধারে তেমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু কিছু বলল না।

‘পানিতে নামবে?’

‘পাগল হও নি তো?’

‘একটু পাগলামি করলে কিইবা এসে যায়, নিয়মতান্ত্রিকতায় প্রাপ্তিই বা কতোটুকু বলো!’

‘আমি যে সাঁতার পারি না, পানি ভয় করে। আর বেশ ঠান্ডা...’

‘আমার রক্তে উষ্ণতা জমা করে রেখেছি... ভয় নেই, এসো...’

আদৃতার হাত ধরে নেমে পড়লো দীপ্ত। গোড়ালিটায় স্রোত এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে। শীতল নোনা জলের শিরশিরে অনুভূতিতে একটু কাঁপছে আদৃতা। কোমড় পানি পেড়িয়ে এলো ওরা, বুক সমান পানিতে গিয়ে আদৃতার কোমড় জড়িয়ে তুলে ধরলো দীপ্ত।

‘দীপ্ত, চলো ফিরে যাই, আমার অনেক ভয় করছে।’

‘কোথায় ফিরতে চাইছো আদৃতা?’

‘হোটেলে, আমি জমে যাচ্ছি!’

‘অথচ আমি তোমার হৃদয়ে ফিরতে চেয়েছি, কতো শতবার কড়া নেড়েছি, শোনোনি কেন তুমি?’

‘তুমি অদ্ভুত আচরণ করছো! আমাকে ছাড়ো! ফিরবো এখন!’

‘সুপ্তকে এখনো ভালোবাসো?’

আদৃতার মুখটা আতংকিত, কথা বেরুচ্ছে না মুখ থেকে... উত্তরটা পেয়ে গেলো দীপ্ত।

‘কিন্তু তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি আমি...’

‘দীপ্ত প্লীজ, ফিরে চলো পরে কথা বলবো।’

‘কোথায় ফেরাবো তোমাকে? আমার হৃদয়ে? যেখানে একলা আমি তোমার অপেক্ষায় বসে রয়েছি বছরের পর বছর? সেখানে তুমি ফিরবে না আদৃতা।’

‘দীপ্ত প্লীজ... এমন কোরো না...’

‘চারিদিকে তাকিয়ে দেখো, এদিকটা অথৈ সমুদ্র। পায়ে মাটির স্পর্শ নেই, ডানে-বামে শুধুই নোনা পানি। অথৈ জলে না হোক, কষ্টে আমি ভেসেছিলেম এতোদিন, কূল পাইনি খুঁজে। অনুভূতির রক্তগঙ্গায় সাঁতার কাটা আমার পক্ষে শিখে নেয়া সম্ভব হয়নি আর। অশ্রুগুলো এই বিশালে মিশে গেলে কেউ দেখতে পাবে না। আমি তোমাকে সুপ্ত’র কাছে পৌঁছে দিতে এসেছি।’

‘তুমি কি কাঁদছ?’ আদৃতার সাড়া পেলো না দীপ্ত। আদৃতাকে ছেড়ে দিয়ে, নিজের শরীর এলিয়ে দিলো দীপ্ত। সম্ভবত সূর্য উঠছে, খুব হালকা আলোর রেখাটা চোখে পড়ছে। অতল জলের শান্ত-সৌমতায় নিজেকে উৎসর্গ করতে করতে একটা প্রশ্ন মনে এলো, ‘পাখিটা কি আজকেও ডেকেছে?’ চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে আসছে দীপ্তর।

সে রাতেও পাখিটা ডাকছিল কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। অবশ্য তার গুরুত্বই বা কতোটুকু, সে অপেক্ষায় কান পেতে আর কেউ যে জেগে থাকেনি শেষ রাতের শুন্যতায়।
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×