somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি কেউ পড়ে.....এ আশায়

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিস্টার সোনিয়া প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আমাকে ইন্টারকমে ফোন দেয়। “স্যার এভাবে চলে না। সকাল দশটায় ছিল মার্জিয়ার শিডউল। এখন বারোটা বাজে। এখনো আসার নাম নেই। দুই ঘন্টা ধরে মেশিন খালি পড়ে আছে। অন্য কোন পেশেন্টকেও দেওয়া যাচ্ছেনা। আই সি ইউ তে একটা পেশেন্ট ছিল, আগে জানলে এই দুই ঘন্টায় ওটাকে দেওয়া যেত। কোন মানে আছে? এমনিতেই মেশিন অনুযায়ী পেশেন্ট বেশী। রোগীরা নিয়ম না মানলে কি ডায়ালাইসিস ইউনিট শান্তি মত চালানো যায়! ” আমি মার্জিয়ার বাবার মোবাইলে রিং দিলাম।ফোন যায়না, মোবাইল ক্যান নট বি রিচ্ড.....যান্ত্রিক কন্ঠটি শোনা যায়। মনে পড়ে গেল গত সপ্তায় মার্জিয়ার বাবা তার মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে দিয়েছে মেয়ের ডায়ালাইসিসের খরচ জোগানোর জন্য। কিন্তু এ সপ্তায় এখনো আসছেনা কেন? হয়তো আবারো টাকার সমস্যা। সিস্টার সোনিয়া আবারো অসহিষ্ঞু হয়ে ওঠে- -স্যার কি করবো? মেশিন কি আই সি ইউ তে নিব?
-আর একটু ওয়েট করেন ।
আমার অস্থির লাগতে থাকে। নিয়তির মতো বিনা নোটিশে একরকম চেপে বসেছে এই ডায়ালাইসিস ইউনিটটা আমার ঘাড়ে। সেটা আরেক গল্প। এখন এর সাথে জড়িয়ে গেছি । ফেলতে পারছিনা, আবার এর লোড ও নিতে পারছি না। দায়িত্ব নিতে আমি ডরাই না । সমস্যা আমার ইমোশনাল লোড নিয়ে। গত সাড়ে তিন বছরে কত রোগীকে চলে যেতে দেখলাম। জুয়েল, শাহানশাহ চাচা, ফারুক ভাই, মনিরুজ্জামান সাহেব -আরো কত নাম! সব এখন মনে ও পড়ছেনা। ডাক্তার হওয়ার অনেক যণ্ত্রণা। জুয়েলের নিষ্পাপ মুখটা এখনোর ভুলতে পারি না। মাত্র বাইশ বছরের একটা ছেলে ......সৌদি আরব গিয়েছিল ওই বয়সে ....বাপ মায়ের দুঃখ ঘোচাবে বলে। ছ মাস পরে ফিরে এসেছে বাপ মায়ের বোঝা হয়ে। ফারুক ভাই সন্ত্রাসী থেকে হয়ে উঠেছিল ভালো মানুষ। চাকরি ও করছিল একটা । হঠাৎ ধরা পড়লে কিডনী ফেইল । সবাই এরকম একেকটি করুন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। আমি মাঝে মাঝে সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
আমি করিডোরে হাঁটাহাঁটি করতে থাকি। মার্জিয়ার কিছু হলোনা তো! ‍বারোটা বিশ বাজে। হঠাৎ দেখি মার্জিয়া আসছে তার বাবার হাত ধরে । মুখ-চোখ ফোলা , পুরো শরীরেই পানি জমে ঢোল্ হাপাচ্ছে মেয়েটি। আহারে! কিছুদিন আগেও মেয়েটি এই হাসপাতালেরই সিস্টার ছিল। পরম মমতায় সেবা দিয়ে সারিয়ে তুলতো রোগীদের। আর আজ....।
মার্জিয়ার বাবা অপরাধীর মতো মুখ করে আমাকে বললো “ স্যার দেরী হইয়া গেল। একটা গাছ আছিল। বেইচ্চা পাচ হাজার ট্যাকা পাইলাম হ্যারপর আইলাম।’’
(রি পোস্ট)
আমি মার্জিয়ার দিকে তাকালাম। মেয়েটা হাঁপাচ্ছে, শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ইউনিটে যাও। সোনিয়া মেশিন রেডী করে বসে আছে।
মার্জিয়া চলে গেল। হঠাৎ ওর বাবা একরকম কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আমার হাতটা ধরে ফেললো। “ স্যার আমার মাইয়াডারে বাচান। চোখের সামনে মাইয়াডা মইরা যাইব....বাপ হইয়া চাইয়া দেখুম। কিডনীডা স্যার পাল্ডানোর ব্যবস্থা কইরা দেন । আমি স্যার আপনের পাও ডা ....”।
“আরে আরে করছেন কি!! ..দেখি কি করা যায়।”আমি এরকম সবাইকেই বলি। শেষ পর্যন্ত আসলে তেমন কিছুই করতে পারিনা। কি আর করার আছে আমার! কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করতে লাগে পাঁচ লাখটাকা। আমি একজন সামান্য বেতন ভুক্ত ছোট ডাক্তার কি আর করতে পারি? বড় জোর ব্লগে একটা পোস্ট দিতে পারি ....যদি কেউ পড়ে , কারো দয়া হয়। কেউ যদি কিছু করতে চায়। এছাড়া আমার আর কিইবা করার আছে ?


(পুনশ্চঃ এখানে আমার ফোন নাম্বার টাও দিলাম, যদি কেউ কিছু করতে চান তো ফোন করতে পারেন এই আশায়- ০১৯১৩৫০০৭২৬)
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×