somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধ শিশু '৭১ : স্বাধীনতার এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা-৩

১২ ই নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীলিমা ইব্রাহিম এও জানিয়েছেন, মোল্লারা সেসময় বেশ সরব হয়ে উঠেছিল এই দত্তক নীতির বিরুদ্ধে। তাদের কথা, শিশুদের সব খৃষ্টান দেশে পাচার করা হচ্ছে! এদিকে পরিবারে পুনর্বাসিত হতেও সমস্যায় পড়ছিল মেয়েরা। মালেকা আলী জানাচ্ছেন, ‘ধরুন একটা মেয়ে জন্ম দিল। প্রসবের আগে সে বলেছে বাচ্চা দত্তক দিয়ে দেবে। কিন্তু সময় যখন এল, তখন তার সে কী কান্না। কেউ সাহায্যে এগিয়ে এল না... কেউ বলল না যে সে মা ও বাচ্চার দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক। এমন অমানবিকতা আমি দেখিনি।’

যুদ্ধশিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন নীলিমা ইব্রাহিম। জবাব পেলেন, ‘না আপা। যে সব বাচ্চার বাবার পরিচয় নেই, তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দিন। মানুষ হিসেবে ওরা সস্বম্মাণেই বড় হোক। তাছাড়া এই দেশে এসব দুষিত রক্ত রাখতে চাই না আমি।’

আগেই বলা হয়েছে ’৭২ সালে ডঃ জিওফ্রে ডেভিস বাংলাদেশের নিপিড়িতাদের সাহায্য করতে এসেছিলেন। সে বছর একটি পত্রিকা (দৈনিক বাংলা) তার কাজের খুটিনাটি তুলে ধরে। সেই প্রবন্ধে ডেভিসের ভাষ্য দিয়ে বলা হয় এসব মেয়ের একটা বড় অংশই জীবনে কখনোই মা হতে পারবে না। এও জানান যে সরকারীভাবে কর্মসূচীটি শুরু হওয়ার আগেই অনেক মেয়ে স্থানীয় দাই এবং অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে গর্ভপাত করিয়েছে। তার হিসেবে দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার মেয়ে সরকারীভাবে গর্ভপাত কর্মসূচী শুরু হওয়ার আগেই তা সেরে ফেলে। তিনি নয় মাসের ওই যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তান আর্মির ধর্ষণের শিকার মেয়েদের সঠিক সংখ্যা লুকিয়ে যাওয়ার জন্য দোষারোপ করেন বাংলাদেশ সরকারকে। সারা বাংলাদেশে তখন ৪৮০টি থানা। ডেভিস আমাকে তার সাক্ষাৎকারে অপ্রতুল প্রমাণাদির তথ্যও উল্লেখ করেন। তবে এটা স্বীকার করেন যে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা ও সমাজকর্মীরা এসব মেয়েদের ব্যাপারে সত্যিকার ভাবেই আন্তরিক ছিলেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন (আমরা তাকে এ বলে সম্বোধন করব) মাদার তেরেসার অনুরোধে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন ২১ জানুয়ারি (১৯৭২)। যুদ্ধশিশুদের দত্তকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ভদ্রমহিলা। এসব শিশুর বেশিরভাগই কানাডার নানা পরিবারে আশ্রয় পেয়েছিল। এছাড়া ফ্রান্স এবং সুইডেনেও। উনি একজন মেয়ের কথা বলেছিলেন, ‘অপরূপ সুন্দরী ছিল মেয়েটা, ওর বাবা ইঞ্জিনিয়ার। তার বাচ্চাটাকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছিল সে।’ যোগ করেছেন, ‘আমার ধারণা যে পাক আর্মির ঔরসজাত এসব শিশুদের বিভিন্ন ক্লিনিকে খালাস করা হয়েছিল। এছাড়া বাবা-মা তাদের মেয়েদের ঘরে নিতে পারতেন না। আর তারা কখনোই স্বীকার করতেন না কে অত্যাচারিত হয়েছিল, কে হয়নি। যখনই জেনেছেন মেয়ে সন্তানসম্ভবা, তাড়াতাড়ি গর্ভপাত করিয়েছেন। তাই ব্যাপারটা যে খুব প্রচার পেয়েছিল, এমন নয়।’
তার কথাতেই পরিষ্কার রাষ্ট্র ও পারিবারিক সম্মানটা পরিপূরক ছিল এক্ষেত্রে। যদিও আমি তর্ক করেছি যে ‘যুদ্ধশিশু’ বিশেষণটা ব্যবহার করেই এসব মেয়েদের আসলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারী নির্দেশনার অধীনস্থ হয়েছেন। এবং সমাজ কর্মী ও চিকিৎসকরাও রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটাননি। আগের এক আলাপচারিতায় উনি হালকা চালেই আমাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি বিশেষ রেপ ক্যাম্পের উল্লেখ করেছিলেন। যখন পরে তার কাছে খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করলাম, জানালেন উনি নিজে দেখেননি তবে মাদার তেরেসার কাছে শুনেছেন এর কথা। বলেছেন, আমরা তো ঢাকঢোল পিটিয়ে গেলাম যুদ্ধনিগ্রিহিতা মেয়েদের নিয়ে কাজ করব বলে। বলতে গেলে কোনো মেয়ে পাইনি, তবে শিশু পেয়েছি প্রচুর। এদের অনেককেই দত্তক দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় এর রেকর্ড আছে। নার্সিংহোমগুলোকে বলে রেখেছিলাম বাচ্চারা জন্মালে বা গর্ভপাত ঘটালে ডাস্টবিনে না ফেলে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে, ওরা কান দিত না। তাদের যত ভাবনা ছিল মায়েদের নিয়ে। বাচ্চাদের ঠাঁই হতো ডাস্টবিনে।

এটা ডেভিসের কথার বিপরীতে যায়। উনি 'এ’র অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জোর দাবি করেছেন কোনো শিশুকেই কখনোই ছুড়ে ফেলা হয়নি। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১১:৫৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×