somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধশিশু '৭১ : দ্য চেঞ্জিং ফেস অব জেনোসাইড ৪

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৬ রাত ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থানীয়ভাবে যে পদ্ধতিতে গর্ভপাত ঘটানো হতো সেটা অবৈজ্ঞানিক হলেও যথেষ্ট কার্যকর বলেই বিবেচিত হয়েছিল। বেশীরভাগ গ্রামেই দেখা গেছে 5 থেকে 6 ইঞ্চি লম্বা ও পৌনে ইঞ্চি চওড়া একটা চোখা কাঠি ব্যবহার করা হতো। এটা যোনীপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো যতক্ষণ না তা জরায়ুর দেওয়াল ছোঁয়। বেশীরভাগ এলাকাতেই কাঠির ধরণটাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না, একটা হলেই হলো। বিবাহিতারা ব্যাপারটা নিজেই করত আর অবিবাহিতদের নিয়ে যাওয়া হতো স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের কাছে (এসব জায়গায় বিয়ের আগে গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে, তবে কী হারে সেটা জানা যায়নি)। কাঠিটা জায়গামতো রেখে খোঁচানো হতো যতক্ষণ না ব্যাথা উঠে জরায়ুর পেশী এটাকে ঠেলে বের করে দেয়, সুবাদেই গর্ভপাত। জানা গেছে এটি শতভাগ কার্যকর বলে স্বীকৃত পদ্ধতি, তবে একটু ধীরগতি।

ব্যাপারটা ত্বরান্বিত করতে অন্য অনেক পদ্ধতি যুক্ত হতো। স্থানীয় করবী নামের একটি গাছের মুলের রস খেয়ে বা মুলটা সরাসরি প্রবেশ করিয়ে (কবিরাজ ও আয়ুর্বেদ পদ্ধতি) গর্ভপাত ঘটানো সম্ভব। আর যাদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধের কথা শুনেছে (এবং খানিকটা বিশ্বাসও করত) তারা ব্যবহার করেছে কাঠি ঢোকানোর পরদিন একডোজের 9 গ্রাম ভিটামিন সি (0.5গ্রামের 8টি ট্যাবলেট) যাতে 48 ঘন্টায় গর্ভপাত হতো। পদ্ধতিটার কার্যকারিতা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত।

এছাড়া অনেককে কাঠি প্রবেশের পর প্রতিদিন 4/5টি গর্ভনিরোধ পিল খাওয়ানো হতো, 5 থেকে 7দিন ধরে। আর কোর্স শেষ করার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে গর্ভপাত ঘটত। পিলের সরবরাহকারী আইপিপিএফ, সুইডিশ সরকার ও অন্যরা জেনে নিশ্চিত খুশী হবেন যে তাদের যোগানটা বৃথা যায়নি। স্থানীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো থেকে এই পিল বিনামূল্যেই পেত ব্যবহারকারীরা।

তো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরের কথা, বাংলাদেশ সরকারের কাছে অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের ভীতিকর ধাক্কাটা লাগার আগেই দেখা গেল সাধারণ গ্রাম্য চিকিৎসকরাই তা অনেকখানি সমাধান করে ফেলেছে। কিন্তু দুঃজনকভাবেই বলতে হচ্ছে, এর ফলে এরা বাড়তি দুটো বড় ধরণের সমস্যার জন্ম দিল।

গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো গর্ভপাত পিছু 150 থেকে 300 টাকা খরচ করতে গিয়ে আরো ফতুর হয়ে পড়ল।
গ্রামের কুমারীরা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি গাইনি সমস্যায় আক্রান্ত হলো (যার মধ্যে বাড়তি ছিল পাক সেনাদের বদৌলতে পাওয়া যৌন রোগও)।
এসব কারণে গ্রামবাসীরা আরো নির্বাক হয়ে গেল, চেপে যাওয়ার প্রবণতাটা তৈরি হলো তাদের মধ্যে।

ইংল্যান্ডে আমাকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে 2 লাখের মতো অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের শিকার নারীর অস্তিত্ব রয়েছে (মার্চ 1972)। এও জানানো হলো ঢাকায় একটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে তবে সেখানে বাঙ্গালী কর্মচারিরা কাজ করছে এবং অবৈধ গর্ভপাত বিষয়ক আইনটি স্থগিত করা হয়েছে এই কর্মসূচীটি সুচারুভাবে শেষ করার জন্য। আমার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলকে গর্ভধারণের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ার পর কীভাবে সফলভাবে গর্ভপাত করানো সম্ভব (টার্মিনেশন অব অ্যাডভান্সড প্রেগনেন্সি)। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:২৪
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×