somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধশিশু '৭১ : দ্য চেঞ্জিং ফেজ অব জেনোসাইড ৫

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৬ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় আমি অবাক হয়ে দেখলাম যেমন আশা করেছিলাম সে হারে মেয়েরা আসছে না। সাধারণ ব্যাখ্যাটা ছিল তেমন একটা প্রচারণা হয়নি আর ব্যাপারটা দারুণ অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু বোর্ড বিশ্বাস করত যে প্রচারণ যথেষ্টই হয়েছে এবং যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে বার্তাটা ঠিকই পৌছেছে। মেয়েরা কম আসার কারণ মুসলিম পরিবারগুলোর রক্ষণশীলতা। কুমারী মা সমাজে ভীষণ এক অপমান। যৌন নির্যাতনের শিকার যে কোনো মেয়েই ছিল পরিবারের কাছে এক লজ্জাকর বোঝা। পরিবারে এদের কারো অস্তিত্ব স্বীকার করাটা সমাজের কাছে একঘরে হয়ে পড়ার ঝুঁকি যা কেউ নিতে চাইছিল না।

এমনিতেই মেয়েরা বিশেষ করে মফঃস্বল বা গ্রামগুলোতে পরিবারের ওপর একটা চাপ (সম্ভবত ডেভিস যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে হয় বুঝিয়েছেন), আর ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে তাকে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। (পরে মাদার তেরেসার এক সাক্ষাৎকারে পড়েছি সে সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধাই অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে করেছেন-অঃরঃপিঃ)। এও ধারণা করা হয়েছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সেভাবে হয়তো খবর পৌছেনি, তবে খবরটা গেলেই মেয়েদের সংখ্যা বাড়বে। বোর্ডের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হলো জেলা সদরগুলোর প্রতিটিতেই একটি করে বিশেষ ক্লিনিক খোলার।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ক্লিনিকে ৮৪টি কেস সামাল দেওয়া হলো। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংখ্যাটা দাঁড়াল ১৩০। কোথাও একটা গলদ ছিল, নইলে ধারণার সঙ্গে বাস্তবের এই অমিল হবে কেন! আমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না আসলে কী হবে। আমি বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর রওয়ানা দিলাম যন্ত্রপাতির দুটো পূর্ণাঙ্গ সেট নিয়ে, সঙ্গে দুশো টিওপি সারার জন্য যথেষ্ট পরিমান ওষুধ।

রংপুরে গিয়ে জানলাম স্থানীয় সদর হাসপাতালে মেয়েদের ভর্তি করা হয়েছে এবং স্থানীয় গায়েনিকোলোজিস্ট তার সীমিত সামর্থ্য নিয়েও দারুণ কাজ করেছেন। তার ছিল না স্যালাইন, প্লাজমা, পিট্রোসিন সত্যি বলতে কোনো ধরণের অক্সিটোসিক এমনকি কোনো এন্টিবায়োটিকও!

দিনাজপুরে গিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খেলাম। সেখানকার সিভিল সার্জন মন্তব্য করে বসলেন টিওপি ব্যাপারটার বৈধতা নিয়ে তার যথেষ্টই সন্দেহ আছে এবং সরকারী এমন কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি যাতে এটার অনুমতি দিতে পারেন। তার কথা সরকারী মহলে ব্যাপারটা নিয়ে যে আলাপ হয়েছে তাতে জেলাসদরগুলোয় গর্ভবতীদের খুঁজে বের করে সবাইকে গর্ভপাত করাতে রাজী করানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসকরা কেউ এতে সায় দেননি। চিফ মেডিকেল অফিসার এও জানালেন একজন ফিরিঙ্গি হিসেবে (উনি ফেরাং শব্দটা ব্যবহার করেছেন) যেখানেই যাই আমাকে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলবে না, কারণ বাংলাদেশের সামাজিক আচারে বিদেশী অতিথিদের লজ্জা দেওয়ার রীতি নেই। তারা এও জানালো বিএমএর স্থানীয় শাখার প্রেসিডেন্ট (একজন খাটি মুসলিম) তাদেরকে গত ডিসেম্বরে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত মুসলিম আইপিপিএফ কনফারেন্সের মতামতের উদাহরণ দিয়েছেন যাতে পরিবার পরিকল্পনার খানিকটা অংশ যৌক্তিক মানা হলেও গর্ভপাতকে বলা হয়েছে নিষিদ্ধ। যেহেতু প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারেন না। পরদিন সকালে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। এমনিতে ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধের কমতি না দেখালেও তার মতবাদ থেকে নড়লেন না। এও জানিয়ে দিলেন তার এলাকায় তিনিই হর্তাকর্তা, যা বলবেন সেটাই হবে। (চলবে)

পাদটীকা : আমি শুরু থেকেই দ্বিধায় ছিলাম বীরাঙ্গনাদের ছবি ব্যবহার করা নিয়ে। পুরনো ছবিই আবার দিচ্ছিলাম, স্রেফ গত পোস্টে নিয়ম ভাঙ্গলাম। মনে হচ্ছিল ছবি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না ব্যাপারটা। এবার দিলাম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি ছবি। এটি ঢাকার সেই ক্লিনিকে গর্ভপাত ঘটাতে আসা তিন নারীর। আমাদের সম্ভ্রমহারা তিন মায়ের ছবি।

পাদটীকা : আমি শুরব্জ্ন ব্জ থব্জ্বকই দ্বিধায় ছিলাম বীরাঙ্গনাব্জ্বদর ছবি ব্যবহার করা নিব্জ্বয়। পুরব্জ্বনা ছবিই আবার দিব্জি ছলাম, ব্জ স্রফ গত ব্জ পাব্জ্বস্ট নিয়ম ভাঙ্গলাম। মব্জ্বন হব্জি ছল ছবি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হব্জ্বব্জ ছ না ব্যাপারটা। এবার দিলাম নিউইয়র্ক টাইমব্জ্বসর একটি ছবি। এটি ঢাকার ব্জ সই কিনিব্জ্বক গর্ভপাত ঘটাব্জ্বত আসা তিন নারীর। আমাব্জ্বদর সম্ভ্রমহারা তিন মাব্জ্বয়র ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৩১
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×