somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকার-বদরদের প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের লিফলেট : এসো মুক্তির ও ন্যায়ের সংগ্রামে...

১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্রেফ আদর্শিক কারণে। কিংবা হয়তো পরিস্থিতির চাপেই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কালে মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই এক বাস্তব ছিল রাজাকার-আল বদর। স্বাধীনতাকামীদের বিপরীত অক্ষ। মূদ্রার অন্যপিঠ। জাতিগতভাবে তারাও বাঙালী। বাংলারই জলে-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা। মুক্তিযোদ্ধাদের মাথায় ব্যাপারটা ছিল। তাই যুদ্ধশেষে বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে তাদের তরফেই আহ্বান জানানো হয়েছিল এসব ঘাতক-দালালদের। কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে তারা যেন বিবেকের ডাক শোনে।
কিন্তু কে শোনে! যাহোক, মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরের দলিলপত্রে পাওয়া গেছে একটি লিফলেট। এতে রাজাকার ও বদর বাহিনীর বাঙালীদের প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের তরফ থেকে যে ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা তুলে দিলাম :

সমগ্র বাঙ্গালীজাতি আজ মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছে। ঘৃণ্য পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাজিত নিশ্চিহ্ন করে মুক্ত করতে হবে সোনার বাংলাদেশ। তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ভাই, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করেছে বিজাতীয় পাকসেনারা, বাঙ্গালী মা-বোনদের উপরে এসকল দস্যুরা করেছে পাশবিক নির্মম অত্যাচার, শহরে ও গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় স্তুপীকৃত হয়েছে বাঙ্গালীর মৃতদেহ। ভাইসব, বাঙ্গালী হয়ে দেশের ও জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে তোমরা যোগ দিয়েছ বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে বিদেশী শাসক গোষ্ঠীর সাথে। শত্রুর পুতুল সেনা হয়ে নিজের জাতির এবং নিজের ভাই-বোনদের উপরে নির্যাতন মুখ বুজে মেনে নিতে এবং এই অন্যায় কার্যে শত্রুর সহায়তা করতে তোমাদের কি লজ্জা করে না?

পাকসেনারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসন বজায় রাখার জন্য তোমাদের বলির পাঠা বানিয়েছে। তোমার জীবনের বিনিময়ে তুমি তোমার আত্মীয় স্বজন ও স্বদেশবাসীর নিকট পাবে ধিক্কার, অপমান ও লাঞ্ছনা। তোমরা আমাদের ভাই, আমাদের জাতীয় স্বার্থ অভিন্ন। স্বেচ্ছায় তোমাদের অনেকেই হয়ত রাজাকার বা বদর হয়ে বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করনি। অবস্থার চাপে পড়েই হয়ত করতে হয়েছে।

তোমাদের নিকট একান্ত অনুরোধ, তোমরা শত্রুর চক্রান্ত বানচাল করে দাও। তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে নির্ভয়ে মুক্তি বাহিনীর নিকটস্থ শিবিরে চলে এসো। এ পর্যন্ত রাজাকার ও বদর বাহিনীর বহু বাঙ্গালী যুবক মুক্তি বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। তারা প্রত্যেকে পেয়েছে ক্ষমা এবং তাদের অনেকে আজ মুক্তি বাহিনীর বীর সৈনিক। তোমরাও মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের ও জনসাধারণের সেবা করে তোমাদের জীবন ধন্য কর। প্রতি সপ্তাহে দুই শতাধিক রাজাকার ও বদর অনর্থক প্রাণ হারাচ্ছে মুক্তিফৌজের হাতে শুধু এই রণাঙ্গনে। পেশাদার ঝানু দালালদের আমরা ক্ষমা করি না, কিন্তু যেসকল বাঙ্গালী যুবক অবস্থার চাপে পড়ে বা ভুলবশতঃ শত্রুর চক্রান্তে পড়ে রাজাকার বা বদর দলে যোগ দিয়েছে তারা আমাদের কাছে চলে এলে পাবে ক্ষমা, বিশ্বাস, উপযুক্ত সম্মান ও স্নেহ।

জয় আমাদের অনিবার্য্য। বাংলাদেশের সকল জনসাধারণ, সকল দেশপ্রেমিক ও সকল চিন্তাশীল নাগরিক আমাদের পক্ষে। বিশ্বের সকল সৎ ও ন্যায়বান মানুষ আমাদের পক্ষে, কারণ আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতিতের সংগ্রাম। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা ন্যায় ধর্মের পক্ষে। তিনিই আমাদের সহায়ক। লক্ষ লক্ষ শহীদের শক্তি আমাদের সহায়ক। ইনশাল্লাহ, বাঙ্গালী জাতি অচিরেই বিজয়ের, স্বাধীনতার ও গৌরবের অধিকারী হবে। এসো মুক্তির ও ন্যায়ের সংগ্রামে শরীক হয়ে তুমিও সেই গৌরবের অধিকারী হবে।
জয় বাংলা।


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৮ ভোর ৬:২৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×