somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরে মীর কাশেম আলী : উতসর্গ আমি সাগর

০১ লা অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সহযোদ্ধা আমি সাগর ইসলামী ব্যাংকের কর্ণধার মীর কাশেম আলীকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন । এতে তার স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে কিছু তথ্য সংযোজন করা হলো।

একাত্তরে চট্টগ্রাম গনহত্যার নায়ক, রাজাকার মীর কাশেম আলী এখন শত কোটি টাকার মালিক, রাবেতার কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইবনে সিনা ট্রাস্টের কর্ণধার। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন তার হাতে। আজকের এই ধনকুবের রাজকারের সূচনা একেবারে দীনহীন অবস্থা থেকে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার চালা গ্রামের পিডাব্লিউডি কর্মচারী তৈয়ব আলীর চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় মীর কাশেম। ডাক নাম পিয়ারু, সবাই চিনে মিন্টু নামে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পিতার চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম গিয়েছিল পড়তে। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়ে মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের দায়িত্ব পায় স্বাধীনতার আগে।

৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াত পক্ষ নেয় পাকিস্তানের। রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির পর জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের নেতাদের স্ব স্ব জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে। সেই সুবাদে মীর কাশেম আলী চট্টগ্রাম জেলার প্রধান হয়। চট্টগ্রাম জেলার সমস্ত রাজাকারী কর্মকাণ্ডের নাটের গুরু ছিল সে। ‘৭১ এর ২ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউটে তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সভাপতি হিসেবে সে তার ভাষণে বলে গ্রামে গঞ্জে প্রতিটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান বিরোধীদের শেষ চিহ্নটি মুছে ফেলতে হবে।

তার স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতার সময় ছাত্র সংঘের নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠন হয়। মীর কাশেম হয় তার সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র সংঘের নেতারা শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। নভেম্বরে ঘটা করে পালিত হয় বদর দিবস। এদিন বায়তুল মোকাররমে ছাত্র সংঘের সমাবেশে মীর কাশেম্ আলী বলে, পাকিস্তানীরা কোনো অবস্থাতেই হিন্দুদের গোলামী করতে পারে না। আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করব।

৪ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান জরুরী অবস্থা জারির পর মীর কাশিম এক বিবৃতি দিয়ে বলে হিন্দুস্তানকে হুশিয়ার করে দিতে চাই পাকিস্তান ভাঙতে এলে হিন্দুস্তান নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশপ্রেমিক সকলে শত্রুর বিরুদ্ধে মরন আঘাত হানুন। এরপর শুরু হয় বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা। মীর কাশেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের লাগোয়া ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দি শিবির খোলা হয়। বহু লোককে ওখানে এনে খুন করা হয়। পানির বদলে অনেক বন্দীকে খাওয়ানো হতো প্রস্রাব। ১৭ ডিসেম্বর সেখান থেকে সাড়ে তিনশ বন্দীকে প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বুদ্ধিজীবি হত্যার তালিকা প্রণয়নকারীদের অন্যতম ছিল মীর কাশেম আলী।

স্বাধীনতার পর মীর কাশেম পালিয়ে ঢাকা চলে আসে। মিন্টু নামে নিজেকে পরিচয় দিত, বলত সে মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যায় লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসে মীর কাশিম। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মুশতাক সরকার মুজিবের ঘাতকদের বাচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি প্রত্যাহার করে নেয় দালাল আইন। জিয়ার শাসনামলে নতুন করে সংগঠিত হয় ইসলামী ছাত্র সংঘ, নাম বদলে হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি হয় মীর কাশেম আলী। এরপর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নামে রাবেতা আল ইসলামী গড়ে তুলে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টাকায় আস্তে আস্তে বানায় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস। জামাতে ইসলামী ও শিবিরের আয়ের এবং কর্মসংস্থানের বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায় এসব প্রতিষ্ঠান।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ কোষ/ তৃতীয় খন্ড
সম্পাদক : মুনতাসীর মামুন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৮ ভোর ৪:৫৯
৫২টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×