ও হেনরি আজীবন আমার টপ লিস্টে থাকবেন। একটা ছোট গল্পের কারণেই। গিফট অব দ্য ম্যাগাই (উচ্চারণটা ম্যাজাই কিংবা ম্যাগিও হতে পারে) পড়ে আমি খুব আপ্লুত হয়েছিলাম। সেটা ছিল ক্লাস এইট বা নাইনের ঘটনা। এরপর একই গল্প নিয়ে বিটিভিতে একটি নাটক হয়েছিল। তখন পুরো ব্যাপারটা মাথায় ঢুকেছিল আমার। দুটো মানুষের প্রচণ্ড ভালোবাসা দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেছিলাম। ছিঁচকাঁদুনে অবশ্য বলা যাবে না আমাকে। কি যে স্পর্শ করে আর কি করে না এটা আমিও বুঝি না ঠিকঠাক। ছোট ঘটনায় দেখা গেলো আমি তুমুল ব্যথিত, আবার সিরিয়াস কিছুতে খুবই নির্লিপ্ত। তো হেনরির জিম-ডেলা আবার ফিরে এসেছিল আমাতে। গত রাতে। তীব্র বেদনা নিয়ে আমি ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েছি। আমাকে ছুঁয়ে গেছে একজন ডেলা। আমি জিম হয়ে তার ভালোবাসায় ডুবেছি, ভেসেছি, হাবুডুবু দিয়েছি।
জন্মদিন নিয়ে আমার আদিখ্যেতা ছিল না কোনো কালেই। এমন কোনো পার্সোনালিটি নই যাকে নিয়ে গর্বিত হতে পারে কেউ। কিন্তু অদ্ভুত এক কারণে মুক্তা গর্বিত। এত না পাওয়ার মাঝে থেকেও তার ঝকঝকে হাসিতে মরচে পড়ে না। চাহিদার তালিকাটা লম্বা ছিল না কখনোই। তারপরো যেটুকু না হলেই নয়, সে অপূর্ণতাও তার মুখে বিষাদের ছাপ ফেলেনি। এই ঈদে সেটা আরো বোঝা গেছে বেশি করে। তো রাত বারোটায় জন্মদিনের একটা ফরমাল উইশ থাকে। সেটা না পেয়ে অবাক হয়েছি। যেটা পেয়েছি সেটা অদেখা দৃশ্য। আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ডাইনিং টেবিলে। উপস্থিত আমার সত্যি মা (সাহিবা) আর মিথ্যা মা। টেবিলে কেক ও মোমবাতি। মোমবাতিটা সাধারণ, আধপোড়া। ঘন ঘন পাওয়ার ফেইলিউরে জ্বালানো হয়। কেক বলতে ঘরে খাওয়ার সুজি দিয়ে বানানো। সেটাতে নানান উপকরণ মিশিয়ে এবং একটা প্লাস্টিক কনটেইনারে রেখে কেকের রূপ দেয়া হয়েছে। আমার দুই মা জন্মদিনের উইশ করলেন। কেক কাটা হলো। অতি সুস্বাদু- ভালোবাসার মসলা মিশে মুচমুচে টেস্টি।
ঘরে ফিরে একটা প্যাকেট পেলাম। সেটাতে আমার প্রিয় একটা বিলাস- বডি পারফিউম। মুক্তা কিভাবে কিনেছে জানার পর আমার ডেলার কথাই মনে এলো। সে স্মরণ করিয়ে দিলো কদিন আগে কিভাবে সে জিমকে পেয়েছিল। জিন্স আমার প্যাশন। একসময় ছিল, এখন নেই মনে হয়। মাস দুয়েক আগে এনাম প্লাজায় বুমারসে খেতে গেছিলাম। নামার সময় চোখ আটকে গিয়েছিল একটা জিন্সে। রাতে ঘুম হয়নি। সকালে আমার ইমার্জেন্সি ফান্ড ভেঙে গেছি সেটা কিনতে। দোকানীরা খাচ্ছিল। পাশের দোকানেই ডিসপ্লেতে একটা ড্রেস দেখে গিলে ফেললাম জিন্স কিনার ইচ্ছেটা। জিম হয়ে গেলাম।
আমার মাঝে অনেক বেদনা কাজ করে। দায়িত্বশীল স্বামী না হতে পারার বেদনাটাই বুঝি তীব্র বেশি। হানিমুনে হিমছড়িতে ওকে একটি কদম ফুল পেড়ে দিতে পারিনি বলে দিনটা পুরো গোমড়া ছিলাম। শুনে ওর সে কি হাসি। এইরকম নানা ইচ্ছে পুরো করতে না পারার বেদনায় আমি নীল থাকি। সংসার এরকম চাওয়া-পাওয়া-না পাওয়া এবং হঠাত পেয়ে অভিভূত হওয়ার অজস্র গল্পেই ভরে থাকে সবার। আমি আমার সাময়িক সেটব্যাকে একদমই অখুশী নই। কারণ তাহলে যেটা হারাতাম সেটা হলো ভালোবাসা। একদম পরানের গহীন ভিতর থেকে উঠে আসা ভালোবাসা। ম্যাজাইরা জেসাসকে তেমনই কিছু দিয়েছিল যাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল জিম-ডেলা। জীবনের এই তৃতীয়ার্ধে এসে হিসাব কষতে বসলে দেখি, মুক্তা আমার জীবনের সেরা উপহার। মিলন প্রভাবিত হয়ে যৌবনের শুরুতে খুব বকতাম- চল্লিশের পর বেচে থাকার কোনো মানে দেখিনা। আত্মহত্যা করবো। মরে যাবো। এখন কেনো জানি খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৩৯