somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতা সমগ্র : উৎসর্গ নীলাঞ্জনা

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[নীলাঞ্জনা নামে একজন সহ-ব্লগার হঠাৎই মন্তব্য করে পুনরুজ্জীবিত করেছেন আমার একদম প্রাচীন পোস্টটিকে। একটা অনুরোধও করেছেন। আমার পুরনো কবিতাগুলি রিপোস্ট করার জন্য। খুজেপেতে দেখি বহু কবিতা লিখে ফেলেছি। সেগুলি একসঙ্গে রাখলাম এই পোস্টে। অবশ্য নির্বাচিত কবিতাগুলোই। ধন্যবাদ নীলাঞ্জনা। এই পোস্ট আপনাকে]


এক.
পরিস্থিতি - চার


(মুক্তা, মুই তোরে খুব খুব কুচপাং)

ক.
তোর তো তবু বন্ধু আছে- গান শোনাবার,
কবিতা বা গল্প বলার;
আমি ছাড়াই দিনগুলো তোর ভালোই কাটে, কাটার কথা।
আমিই কেবল একলা থাকি
জগৎ জীবন সবই ভুলে
আমার যাপন মগ্ন কেবল স্বপ্ন বোনায়,
মগ্ন আমি একটু ছায়ায়, একটি কায়ায়
সঙ্গী যে তোর প্রতিকৃতি।


খ.
জানিসই তো মল্লে আমি কেমন কাঁচা!
তবু কেন উস্কে বেড়াস পাঞ্জা নিতে,
ওদের সাথে? চোখে মুখে ভীষণ খিদে
এক লহমায় এক পলকেই সব দেখে নেয়
পাহাড়-নালা, ভাঁজ-খাঁজ আর চোখের আড়াল মানচিত্র।
আমার প্রণয় খুব প্লেটনিক, তোর স'বে না তোর স'বে না
গদ্য-পদ্য ছত্র টুকে রোমান বাঙাল ওই এসএমএস
মোর আসে না। পারি না তাই জ্যোতিষ সেজে
হাত বুলোতে। এই বে-গুণে পোষাবে না, পোষাবে না
যদি বলিস! দু' পায়েতেই সরতে রাজি- বিঘ্ন চিতে।

গ.
কেঁদেকেটে কেন মিছেই বুক ভাসালি?
ভালোই জানিস- নাকের ডগা লাল করে তোর
ফোঁপানো জল, এই বুকেতেও আঁচড় কাটে তীব্রতর।
হৃদয় মাঝে তাল মিলিয়ে ক্ষরণ চলে, নিক্তিতে তোল
সমান সমান- একচুলও নয় এদিক-ওদিক। হয়তো
তবু অনিচেছ বা ইচেছ করেই, আত্মঘাতী হামলা চালাই
রক্তিম হই তোর নোনাজল-উৎস ধরে। তুমুল দামাল
ভালোবাসার ঘাত-প্রতিঘাত একেই বলে- নে জেনে নে।


দুই.
প্রণয় প্রলয়

প্রলয় মাতম, উথাল-পাথাল
ঢ্যাম কুরকুর শুনছি মাদল
নরমসরম, শরম শরম
প্রশ্বাসে ঝাঁঝ, বড্ড গরম;
আগুপিছু, ওপর-নিচু
তাল কাটে না, ছন্দশীলা।
তার আকুতি মরণ-বাঁচন
কাম-সুরসুর তুমুল রমণ,
আন্দোলিত ক্লান্ত শরীর
প্রকম্পিত পাহাড়-নালা,
ভেবেছিলাম প্রলয় বুঝি!
ভূল বকেছি- প্রণয় লীলা।


তিন.

পরিস্থিতি- পাঁচ

ঠোট দুটো তোর চক্ষু মুদে স্বপ্ন দেখায়,
ফিরব কবে বাহুডোরে- আলিঙ্গনে!
সেবার তুই ছাড়বি না যে জানি আমি,
আকড়ে র'বি জাপটে ধরে, বাহুর জোরে
-জানি আমি। আর কতটা রাখবি আড়াল,
থাকবি আড়াল? সাহস করে একটু নাহয়
নিলিই ঝুঁকি! হারা জেতা পরের কথা,
ভালোবাসায় যাদব বাবু ব্রাত্য ভীষণ,
অংক কষে কার কবে কোন প্রেম হয়েছে!
লাল পলাশে ফাগুন হাওয়ায় কোকিল ডাকে,
সময় যখন ভালোবাসার,
তাতেই না হয় ডুবিভাসি।।

চার.

পক্ষীকাল

(মানুষ আমি আমার কেন পাখির মতো মন
তাইরে নাইরে নাইরে গেল সারাটি জীবন...)

যখন ডানা গজালো, ইচেছ ছিল ঈগল হব।
প্রথম আসমানের উঁচুতেই হবে বিচরণ;
উড়ানকালে পাখা তেমন জোর পায়নি
চিলের মতো তবুও মেলেছি দুটোকে
কাক-চড়ুই থেকে একটু ওপরে;
যৌবনে আমি বাঁজ,
তীক্ষ চোখে খুজে বেড়াই সাপের ফনা!
হোক সে রোদেলা মরু, কিংবা পাহাড়ি ঢাল-ক্লান্তিহীন।
যোদ্ধা হতে গিয়েই গৃহস্থ হওয়া হলো না আমার,
গোধুলীতে নিড়ে ফিরে ডানা ঝাপটাই- একেলাই।
এখন আর ভোর বা ভরসন্ধ্যার কোনো বিভেদ নেই,
শুকনো ডাল আকড়ে ঠায় বসে রই
শিকারেও আসেনা রুচি কদাচিৎ।
শকুন, কিংবা পেঁচার মতো ঠায় বসে রই
চেয়ে দেখি, দেখে যাই- সুখের গেরস্থালী।

ছয়.
আনোয়ারের শার্ট

(কানসাটের বিদ্রোহী শহীদ এক বারো বছরের কিশোরের স্মৃতিতে)

মা'রে, তোরে দিনমান জ্বালাইছি খুব
তোর পাতের ভাগ খাওয়াবি বইলা 'আনুরে...'
ডাকটা ডাইনে-বামের সবাইর শোনা।
তারপর চোর-পুলিশ খেলা-তুই আর আমি।
কিন্তু সেইদিন তুই ছিলি না,
ছিল পুলিশ আর আমি।
আমার ডোরাকাটা লাল জামাটা ওগো পছন্দ হইছিল খুবই,
এর থাইকা ভালো চাঁদমারি তো হয় না!
তোর পোলার বুক ছেদা কইরা বাইরাইছে ছররা;

কিন্তু 'আনুরে...' কইয়া সেইদিন তুই মাতম তুলছ নাই।
কানছস। ঠিক কানছস।
মানুষ দেখে নাই, শোনে নাই
তোর বুকের গহীনের ক্ষরণ
খালি চোখে দেখে সাধ্যি কার!
তারা কাগজের পাতায় দেখছে-
ডোরাকাটা লাল শার্ট নিয়া প্রস্তর মূর্তি এক মা;
যেই রক্ত দিয়া দশ মাস পেটে পালছস
তাতেই ভেজা ডোরাকাটা লাল শার্ট, ছিদ্র ছিদ্র।

মা তুই শক্ত হইয়া দাঁড়াইয়াছিলি, কান্দস নাই
তুই শহীদের মা- কান্দন তোরে তো মানায় না।
আশ্চয্য! এইডাও তোর মতো অশিক্ষিতরে
কেউ শিখাইয়া দেয় নাই!
আমাগো একচালা ছাপড়ার ঘর,
বিদ্যুৎ দিয়া কী কাম!

বাজান যখন কয় 'দোকানে বয়'- আমি মিছিল দেখি।
ডোরাকাটা লাল শার্ট পইড়া
সবার আগে যাই-গুলি খাই।
আমার একটা ফটু তুলার শখ আছিল মা,
ফটু উঠছে, তাতে আমি নাই!
এই ফটু ঝুলবনা আমাগো বেড়ার কঞ্চিতে
এই ফটু, আমার গরবিনী মা'র দ্রোহের আগুনে হেম
ঝুলুক বাংলার প্রতিডা বিপ্লবীর অন্তরে।


সাত.

দেয়াল

দেয়ালটা'মি ভাঙতে পারি!
'ভালবাসি ওকেই ভীষণ'-
বিবৃতিতে, একতরফা সীমানাটা
দিলে তুলে; করতে আড়াল
সরতে নাগাল- দিলে তুলে।
তবু আমি ভাঙতে পারি!
ম্যাটাডরের লাল চাঁদোয়া
ওই সে দেয়াল, চুন-সুড়কির
আস্তরে মোর যায় আসে না।
সিংয়ের গুতোয় ধরবে ফাটল
কিংবা নাহয় দড়াবাজের মতোই
টপকে যাব, ডিগবাজিতে।
তখন তুমি কই পালাবে?
গনগনে এই হৃদয়টাতে সলতে দিলে
এক নিমেষেই উড়ে যাবে দূর্গ তোমার;
তখন তুমি কই পালাবে?
কিন্তু আমার ক্ষত্রিয় প্রেম
অহম জাগায়, দেয়ালটা'মি
ভাঙতে পারি- ভাঙব কেন!


আট.

পাণি গ্রহনের নেপথ্য কথন

ঐ সবল কাঠামোয় উদ্ভিন্ন যৌবন খুজি না নারী!
খুজে ফিরি অন্য অনুষঙ্গ।
আজনম একেলা পুরুষ আমি,
এই নিষ্ফলা ভূমিতে আবাদের প্রয়াস নিরন্তর।

'মেঘ দে পানি দে'তে গলেননি ঈশ্বর
তাকে ভোলাতে তাই প্রচেষ্টা নাই
তবু আমায় ভোলাতেই কী তুমি 'প্রেরিতা নারী'!

এই শরীর সঙ্গম কাতর ছিল না কোনোদিন
বহু লড়াইয়ে শ্রান্তক্ষত শুশ্রষাও খোঁজে না;
সঙ্গী খোঁজে, সবল- প্রবল সঙ্গী
তোমার নারীত্ব তাই কোনো বাধা নয়
ধাঁধাও নয় নারী
এই নিস্ফলা ভূমে আদম-হাওয়ার মতো প্রজনন
আমাদের এজেন্ডা হবে না।

খোক্কসের হানা অবিরাম- দিনরাত
ক্যালেন্ডার বা ঘড়ির কাটা মেনে চলে না;
আমি হাঁপালে তুমি তুলে নেবে তরোয়াল আমার।
তাই তোমার সবল কাঠামো দেখি
বাহু দেখি- কতখানি জোর
চোখ দেখি-কতখানি ক্রোধ
তোমার বুকের গড়নে আমি শক্তিশালী ফুসফুসের অস্তিত্ব খুঁজি
স্তনের কোমলভাব না
তোমার জঙ্ঘায় আমি পেশব উরুর প্রান্তমুখ খুঁজি
যোনীর গহীনতা না

পাঁজর হাতড়ে বোঝার চেষ্টা করি
কতখানি ব্যাপ্তি ওই অলিন্দ-নিলয়'র;
পায়ের গঠন স্পর্শে মাপি
কতটা পথ পাড়ি দিতে পারবে অনায়াস।

আমার স্পর্শে কাম নেই প্রেম আছে,
সেইটুকু সতীর্থ যোদ্ধার।
বোঝাপড়া আর লড়াকু মননের তুমুল মিশেল
এই নিষ্কাম প্রেম।

সুলতানের তুলিতে উঠে আসা
ক্যানভাসের জমাট বুননে পলাতকা
সবল ও প্রবলা নারী,
চলো এবার যুদ্ধে ঝাঁপাই।

নয়.

ভামকথন

ভামের ছোকছোক যতখানি
তড়পানি তারচেয়ে বেশী

বাধভাঙা যৈবনের যুবতীরা
তাহাদের পায়াভারি হয়
উপজাত চঞ্চলতায়
তারা ছোকছোক চোখ খুঁজে
আ মলো যা- ছিনালিতে
তুষ্ট যুবকেরা গদগদ হয়

ভামেরা ঘামে
তড়পায়

এই বুঝি কোল ছেড়ে নেমে যায় সখী
এত কড়ি এত তেল
রূপটান উপটানে
লেসফিতা কাজলে
তারা যুবকেই যায়

ভামেরা ঘামে
তড়পায়

দশ.
আয় মন প্যাচ খেলি...

কৃতজ্ঞতা ও উৎসর্গ : চোর (এই স্টাইলে তার একটা পইদ্য পড়ছিলাম মনে পড়ল)


দুর্বাঘাস দুর্বাতাস দুর্বাসা মন
হ্যান ত্যান ফ্যান নিয়া হই জ্বালাতন
কী বিষয় সমাচার মন নাহি জানে
শুধু জানি ত্যানাখানি টেনে টেনে বানে
হিংটিংছট দিয়া কাম নাহি হয়
কামভাবে কামাখ্যায় করি বরাভয়
বাড়ামাঝে বাড়াখানি বাড়াদেরও বাড়া
ক্যানো শুধু টানাটানি নাই যদি সাড়া
বেলতলে বেলপাতা পুংশক যম
ছ্যাচে ম্যাচে খ্যাচেও তো হইবে না ওম
ইস তুই ফিসফিস করে বলে মন
এই ভবে কর্মতো নইলো সাধন
এইভবে এইভাবে এইভাবে নয়
বনপথ খুলে দাও যদি চাও হয়
হলো নাকি হয় নাই বলে দিবে কারা
চোখ মুদে ঠেসে দিয়ে আরা পাবে যারা
আয় মন প্যাচ খেলি বলে যায় কবি
কবে আর কবে তুই যৈবতী হবি!

এগারো.

সাপ

গর্ত ছেড়ে বেরিয়েছি বহুদিন,
হাইবার নেশন শেষ
খোলস বদলে নতুন চামড়াটা এখন চকচকে খুব
সজীবও বড্ড, প্রোপালশনেই টের পাই।

লকলকে জিভে ইতিউতি
ফনাটায় ফোস ফোস
পিচ্ছিল গর্তের খোজে আনাগোনা
ফনা তুলে ইতিউতি

মেলে না! মেলে তো
বীনের সুরে নাচের শর্তটাই গোলমেলে বড্ড
বিষদাত লুকিয়ে ফনা দুলাই
অবদমনের ভারে বিচলিত
লকলকে জিবে বড্ড খিদে
ফনা দোলে, হিস হিস

আমি তার সর্বাঙ্গে জড়াই অনেক ভুখ নিয়ে
সে কেনো ওঝা ডাকে!

বারো.

আলিঙ্গন : দ্য স্টোরি অব আ হাগ

বগল তলে আকশি হয়ে কাঁধ ধরেছো
আমার বেড়ে তোমারো পিঠ
শর্ত কেবল- হাত যাবে না এদিক-ওদিক !
মানছি সেটা। পায়ের ওপর ভার চেপেছো
দুলছি দুজন হাওয়ার দোলন, এদিক-ওদিক।

তোমার চুলে নাক ডুবিয়ে নিচ্ছি সুবাস;
মুখ তুলো না, শর্ত ভুলে একটা চুমু দিতেও পারি
সেই চুমুটা এক'শ হয়ে ছড়িয়ে যাবে এদিক-ওদিক।

আলিঙ্গনের প্রাইমারি রুল, নিষ্কাম তা
কিন্তু আমার বুকে তোমার ধুকপুক চাপ
ঝড় তুলেছে, রিখটারে তা তির-তির-তির
দুলছে কাটা প্রবল বেগে এদিক-ওদিক।

এখন আমার তুমুল দ্বিধা,
তিন পরতের বাধা ডিঙ্গে
আমার দুহাত, দরাজ হয়ে
দেরাজ খোলার ছলের খোঁজে।
বুঝতে পারি, তুমিও ঠিক বুঝতে পারো
চাপ বেড়েছে, কাঁধের ওপর নখের আঁচড়
গরম প্রশ্বাস বুকে নিয়ে দ্বিধায় আমি
শর্ত ভেঙ্গে বেড়েরো ঘের কমিয়ে দেব?
নাড়ছো মাথা ধীরে-বেগে, এদিক-ওদিক।

বুকে আমার মুখ ঘষছো, নাক ঘষছো
উতর-চাপন; সন্ধিটাতো ভাঙ্গলে নিজেই!
এবার আমি আক্রমণে যেতেই পারি,
যাব নাকি? (ধ্যাততেরিকা!
একটেলের এই লাইনগুলো না ভীষণ বাজে,
মিনিট ত্রিশের সময়সীমা, কেটে দিলো!!)

তেরো.

সর্বংসহা

অবিরাম ঠকাই তারে পুরুষালী চালে। এবং বোলে;
'তোমাকে শক্ত হতে হবে নারী, যোদ্ধা হতে হবে
সবল শরীর শুধু নয়, সবল মনও চাই যে'!
শীলনটা ঠিকঠাক করে, অন্য পুরুষেতে
তারা বিচলিত ও বিপন্ন ঠিকরানো বিভাতে।

সুদীপ্তা সে নারী আমাতেই বিপন্না বারবার
আমি ও আমার পুরুষালী চালে, বোলে
মায়াবতী সে নারী আমাতেই লাঞ্ছিতা বারবার
আমি ও আমার পুরুষালী চালে, বোলে

আমি ষোলআনা শুষে নিই প্রবল-প্রতাপে
অধিকারবোধ কিসের? না সে জানে, না আমি
শুধু আমি ও আমার পুরুষালী চালে
সে বিপন্না-লাঞ্ছিতা বারবার। এবং বোলে

অথচ ভিন্ন তেপান্তরে
আমার গমন অন্য পরে
তবু সে অপেক্ষা করে,
উপেক্ষা উপেক্ষা করে;
যদি মন ফেরে!
ভিন নারীর ভালোবাসার গল্প শুনে
রাত এবং দিন কাটে তার,
উপেক্ষায়, প্রতীক্ষায়
যদি মন ফেরে!

হতাশা কী ছোঁয় না এই সর্বংসহাকে!
উপেক্ষা কি পোড়ায় না এই তুমুল বেহায়াকে!
কেন ফিরে ফিরে ঝাপায় সে
ভুল দীপের ফাঁদে!
জ্বলে পুড়ে ছাই হয়, রাত জাগা রোদনে
অজানা অধিকার বোধ, আমার শোষণে
ছাই হয়, জ্বলে পুড়ে, কাঁদে
তবু ঝাপায় বারবার, ফাঁদে

উপভোগ করি আমি এই জালিয়াতি
মন নিয়ে চালাক চালিয়াতি
তবুও দিনরাত, ঠকে সে অবিরাম
আমার পুরুষালী চালে, এবং বোলে

আমার কী আসে যায় তাতে!
কিছু কি আসে যায় তার বেদনাতে?

শুধু জানি বিপন্ন আমার নিরাপদ ঠাঁই আছে একখানা
শীতে জুবুথুবু হলেও অপেক্ষায় গরম বিছানা
তুমুল খিদেয় আছে পরম যত্নে সাজা থাল-বাটি
শোকে ও সন্তাপে ভালোবাসার দুর্ভেদ্য ঘাটি

তবু সে বিপন্না বারবার, লাঞ্ছিতা
আমি ও আমার পুরুষালী চালে, এবং বোলে
পরম মমতায় সে সব সয়ে যায়
প্রগাঢ় ভালোবাসায় সে সব ভুলে যায়
সয়ে যায়, ভুলে যায়; আর ঠকে বারবার
আমি ও আমার পুরুষালী চালে, বোলে।।

চৌদ্দ.

সভায় বসেছ কবি রুহানি জগতে

(শামসুর রাহমানের মৃত্যুতে)

(একজন কবির প্রয়াণে
শহরের পথঘাট গমগম করে না মিছিলে
সে সংবাদ কেউ কেউ শোনে কম বেশি;
কারো শ্রুতির আড়ালে থেকে যায়।
গাছপালা স্তব্ধ হয়, ফুরায় ফুলের আয়ু
আর নদীনালা কালো মেঘ রাখে বুকে...
একজন কবির প্রয়াণে : শামসুর রাহমান)

মিছিলে দেখিনি তো মুষ্ঠি তোমার
প্রুফও কেটে দাওনি লাজুক চিরকুটের
তবু অনুভবে ছিলে সহজাত- যুদ্ধ ও প্রেমে।

দুঃখিনী বর্নমালা আজ আবারো কালো
তোমারই সন্তাপে,ব্যানার শিরোনাম, শোক মিছিল
এবং বচনামৃত ঝরছে খুব;
আনুষ্ঠানিকতায় খামতি নেই কোনো।

আমি হব না শরিক ওই শোকের কফিনে
তুমিই তো কাঁদতে ভুলিয়েছ!
ঘাতকের ছুরিতে ফালাফালা হয়েও
কালো ফ্রেমের চশমায় জলকণা পাইনি খুজে

কালচে জমাট রক্তের বিছানায় শুয়ে অবাক বিস্ময়
এবং মুচকি হাসি ছিল অটুট।
অটোগ্রাফ বইয়ে গুরুর দক্ষিণা-
'শানিত যৌবন আজ টেনে সূর্য নামায়'

আমার নিয়তি তো তুমিই ঠিক করে দিয়েছিলে সেদিন
সেই মুহূর্ত থেকেই নির্বাণ, অনির্বাণের পথে।

তোমার আনুষ্ঠানিকতা চলছে কেমন!
জমিনের নিচে মুনকির নুকিরের সওয়াল জবাব;
মুজলিম আদিব কী ফের নির্যাতিত আযাবে!

জেরা শেষে ফিরবে কোথায় জানিইতো।
কবিসভায় যোগ দিতে উদগ্রীব তুমি;
স্বপনে আসছি তাই আজ রাতেই
দেখব নতুন কী লিখলে আজ কবি
গড়তে আমার নতুন প্রভাত।।

(মৃত্যুর সময় আল্লাহ রূহ কবয করেন এবং যারা জীবিত তাদের রূহও কবয করেন ওরা যখন নিদ্রিত থাকে। অতঃপর যার জন্য মৃত্যু অবধারিত তিনি তার রূহ আটকে রাখেন এবং অন্যদের রূহ এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সমপ্রদায়ের জন্য- সূরা আয-যুমার : আয়াত -৪২)

পনের.

'আমার রোদটা তোমাকে পাঠাচ্ছি...'

কথা ছিল রোদ পাঠাবে
ঝকঝকে রোদ
গনগনে রোদ
বিষাদ মেঘে ভিজছি আমি কখন থেকে!
দুঃখ জলে ভিজছি আমি তখন থেকে,
কালো ছায়ায় আকাশ ঢাকা
সূর্য্য কোথায়? রোদ মেলে না
ভিজছি আমি তখন থেকে
ক-খ-ন থেকে !
ঝকঝকে রোদ, কই? আসে না।
মিছেই তবে কেন আমায় ভুল বোঝালে!
ভুল শোধালে,
ভুল স্বপনে ডুব দে'য়ালে?
কখন থেকে বসে আছি-
সারা গায়ে রোদ মাখাবো!
তোমার লাজুক বার্তাটিতে গা ডোবাবো
রোদ আসে না, রোদ এলো না!!

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:২৩
৫৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×