somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুদ্ধিজীবি হত্যার রূপকার আল-বদর

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[‘... আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনার সহযোগিতায় এ এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ ছাত্র সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল তিনশত তের। এই স্মৃতিকে অবলম্বন করে ৩১৩ জন যুবকের সমন্বয়ে এক একটি ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বদর যোদ্ধাদের সেইসব গুণাবলীর কথা আমরা আলোচনা করেছি, আলবদর তরুণ মুজাহিদদের মধ্যে ইনশাল্লাহ সেই সর্বগুণাবলী আমরা দেখতে পাব।

পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে গঠিত আলবদরের যুবকেরা এবারে বদর দিবসে নতুন করে শপথ নিয়েছে, তাদের তেজোদ্দীপ্ত কর্মীদের তৎপরতার ফলেই বদর দিবসের কর্মসূচী দেশবাসী তথা দুনিয়ার মুসলমানদের সামনে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। ইনশাল্লাহ, বদর যুদ্ধের বাস্তব স্মৃতিও তারা তুলে ধরতে সক্ষম। তরুণ যুবকরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে হিন্দুস্তানকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে।’

মতিউর রহমান নিজামী, ১৪ নভেম্বর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম ]

আল-বদর ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী। রাজাকার বাহিনী গঠনের পর জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা কর্মীদের দিয়ে গড়া এই স্পেশাল কিলিং স্কোয়াড। তবে রাজাকার অধ্যাদেশের মতো কোনো আইনগত বিধানে তা গঠিত হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এই বাহিনী দেশজুড়ে বুদ্ধিজীবি নিধনে নেমেছিল। রাও ফরমান আলীর নোট বইয়ে এ ব্যাপারে বিশেষ উল্লেখ পাওয়া গেছে।
আল-বদর প্রথম গঠিত হয় জামালপুর শহরে। পাকিস্তান বাহিনী ২২ এপ্রিল জামালপুর দখল করার পর, সেখানকার ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। জামালপুর মহকুমায় আলবদর বাহিনীর হাতে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার কৃতিত্ব জানাজানির পর জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হয় যে রাজাকারদের চেয়ে উন্নততর মেধাসম্পন্ন রাজনৈতিক সশস্ত্র ক্যাডার গড়ে তোলার সুযোগ বর্তমান। ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকেই সারাদেশে ইসলামী ছাত্রসংঘকে আল-বদরে রূপান্তরিত করা হয় এবং নভেম্বরে শেষ সপ্তাহ থেকেই বুদ্ধিজীবিদের তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয় তাদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার জন্য। ধর্মীয় উন্মাদনায় বুঁদ করে তাদের এই হত্যাকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল।
২৫ নভেম্বর ঢাকা শহরে ইসলামী ছাত্র সংঘের কার্যকরী পরিষদ পুনর্গঠিত হয়। এই পরিষদে বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের চিফ একজিকিউটর (প্রধান জল্লাদ) আশরাফুজ্জামানসহ বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী খুনী আলবদর কমান্ডাররা অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য শামসুল হকের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিটির সদস্যরা ছিল- ১. মোস্তফা শওকত ইমরান, ২. নুর মোহাম্মদ মল্লিক, ৩. একেএম মোহাম্মদ আলী, ৪. আবু মোঃ জাহাঙ্গীর, ৫. আশরাফুজ্জামান, ৬. আশম রুহুল কুদ্দুস, ৭. সর্দার আবদুস সালাম।

রাজাকারদের সঙ্গে আলবদরদের খানিকটা তফাত ছিল। রাজাকাররা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করেছে, সংঘর্ষ হলে খুন করেছে, লুটপাট ও ধর্ষণ করেছে। অনেকে যুদ্ধকালীন দূরাবস্থার কারণে বাধ্য হয়েও রাজাকার হয়েছে, কিন্তু আলবদরদের লক্ষ্য ছিল স্থির। প্রকৃতিতে তারা ছিল হিংস্র ও নিষ্ঠুর। তারা বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, যে ধরণের শাসনব্যবস্থা তারা চায়, বুদ্ধিজীবিরা হয়ে উঠবে তার প্রধান প্রতিবন্ধক। মুক্তিযুদ্ধতো একটি আদর্শগত লড়াইও।

আলবদরদের নিষ্ঠুরতা ক্ষেত্র বিশেষে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকেও হার মানিয়েছে। এত নির্মমভাবে কেউ স্বজাতিকে হ্ত্যা করতে পারে! বধ্যভূমির ছবি দেখলে এবং বর্ণনা পড়লে মনে হয় এরা মানসিকভাবে সুস্থ ছিল না, উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। তাদের তালিকাভুক্তদের তারা একটি চিঠি পাঠাত। সেটা ছিল এরকম :

শয়তান নির্মূল অভিযান

শয়তান,
ব্রাক্ষণ্যবাদী হিন্দুদের যেসব পা চাটা কুকুর আর ভারতীয় ইন্দিরাবাদের দালাল নানা ছুতানাতায় মুসলমানদের বৃহত্তম আবাসভূমি পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে তুমি তাদের অন্যতম। তোমার মনোভাব, চালচলন ও কাজকর্ম কোনোটাই আমাদের অজানা নেই। অবিলম্বে হুশিয়ার হও এবং ভারতের পদলেহন থেকে বিরত হও, না হয় তোমার নিস্তার নেই। এই চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে নির্মূল হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
শনি

নিচে শহীদ বুদ্ধিজীবি আলিম চৌধুরীর স্ত্রীর বর্ণনায় শুনুন আল-বদররা কিভাবে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল :


(চলবে)



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৫৩
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×