somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলুন : মীর কাশেম আলী

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সংশোধন: সিরিজটা আগেই লেখা হয়েছিলো, তাই প্রার্থীতা বদলের ব্যাপারে আপডেট না থাকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আর জনৈক স্বাধীনতা বিরোধী ব্লগার ম্যাতকার করে জানালেন ছবিটাও নাকি ভুল। এটি আমি সাগরের ব্লগ থেকে নেয়া, উনি বিজনেস এডিটর এক সনামধন্য পত্রিকার। তার ভুল হয়েছে বিশ্বাস করি না। তবে রাজাকারদের নেতা রাজাকাররাই ভালো চেনে। আমার অন্য একটি পোস্টের ছবি দেয়া হলো ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে। )

আমাদের বাবা-দাদারা হয়তো ভুল করেছে। তাই বলে সেই ভুল কি শোধরানো যাবে না? ক্ষমতার মোহে নেতারা হয়তো ছাড় দিয়েছে, কিন্তু সেটা কি আমার আপনার মতামত নিয়ে করেছে? আমি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক কুখ্যাত ঘাতক ও পাক সামরিক বাহিনীর দালাল মীর কাশেম আলীর কথা বলছি। স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতে ইসলামীর হয়ে বুদ্ধিজীবিদের ঘাতক এই কু্খ্যাত আল-বদর কমান্ডার ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছে। একে প্রত্যাখ্যান করুন। তার বিচারের দাবি জানান।

জেনে নিন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কি করেছিলো মীর কাশেম আলী :

একাত্তরে চট্টগ্রাম গনহত্যার নায়ক, রাজাকার মীর কাশেম আলী এখন শত কোটি টাকার মালিক, রাবেতার কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইবনে সিনা ট্রাস্টের কর্ণধার। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন তার হাতে। আজকের এই ধনকুবের রাজকারের সূচনা একেবারে দীনহীন অবস্থা থেকে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার চালা গ্রামের পিডাব্লিউডি কর্মচারী তৈয়ব আলীর চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় মীর কাশেম। ডাক নাম পিয়ারু, সবাই চিনে মিন্টু নামে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পিতার চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম গিয়েছিল পড়তে। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়ে মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের দায়িত্ব পায় স্বাধীনতার আগে।

৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াত পক্ষ নেয় পাকিস্তানের। রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির পর জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের নেতাদের স্ব স্ব জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে। সেই সুবাদে মীর কাশেম আলী চট্টগ্রাম জেলার প্রধান হয়। চট্টগ্রাম জেলার সমস্ত রাজাকারী কর্মকাণ্ডের নাটের গুরু ছিল সে। ‘৭১ এর ২ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউটে তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সভাপতি হিসেবে সে তার ভাষণে বলে গ্রামে গঞ্জে প্রতিটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান বিরোধীদের শেষ চিহ্নটি মুছে ফেলতে হবে।

তার স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতার সময় ছাত্র সংঘের নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠন হয়। মীর কাশেম হয় তার সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র সংঘের নেতারা শুরু থেকেই বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। নভেম্বরে ঘটা করে পালিত হয় বদর দিবস। এদিন বায়তুল মোকাররমে ছাত্র সংঘের সমাবেশে মীর কাশেম্ আলী বলে, পাকিস্তানীরা কোনো অবস্থাতেই হিন্দুদের গোলামী করতে পারে না। আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করব।

৪ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান জরুরী অবস্থা জারির পর মীর কাশিম এক বিবৃতি দিয়ে বলে হিন্দুস্তানকে হুশিয়ার করে দিতে চাই পাকিস্তান ভাঙতে এলে হিন্দুস্তান নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশপ্রেমিক সকলে শত্রুর বিরুদ্ধে মরন আঘাত হানুন। এরপর শুরু হয় বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা। মীর কাশেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের লাগোয়া ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দি শিবির খোলা হয়। বহু লোককে ওখানে এনে খুন করা হয়। পানির বদলে অনেক বন্দীকে খাওয়ানো হতো প্রস্রাব। ১৭ ডিসেম্বর সেখান থেকে সাড়ে তিনশ বন্দীকে প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বুদ্ধিজীবি হত্যার তালিকা প্রণয়নকারীদের অন্যতম ছিল মীর কাশেম আলী।

স্বাধীনতার পর মীর কাশেম পালিয়ে ঢাকা চলে আসে। মিন্টু নামে নিজেকে পরিচয় দিত, বলত সে মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যায় লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসে মীর কাশিম। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মুশতাক সরকার মুজিবের ঘাতকদের বাচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি প্রত্যাহার করে নেয় দালাল আইন। জিয়ার শাসনামলে নতুন করে সংগঠিত হয় ইসলামী ছাত্র সংঘ, নাম বদলে হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি হয় মীর কাশেম আলী। এরপর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নামে রাবেতা আল ইসলামী গড়ে তুলে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টাকায় আস্তে আস্তে বানায় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস। জামাতে ইসলামী ও শিবিরের আয়ের এবং কর্মসংস্থানের বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায় এসব প্রতিষ্ঠান।


তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ কোষ/ তৃতীয় খন্ড
সম্পাদক : মুনতাসীর মামুন



আরো সংযুক্তি: দৈনিক ভোরের কাগজের একটি রিপোর্ট

সমরেশ বৈদ্য, চট্টগ্রাম থেকে :
মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামে গণহত্যার নায়ক, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের খুন, নির্যাতনকারী ও লুটপাটের অন্যতম হোতা আল বদর বাহিনীর কমান্ডার মীর কাসেম আলী এখন জামাতে ইসলামীর প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী জামাতে ইসলামীকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করার জন্যে মীর কাশেম আলী মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। রোহিঙ্গা জঙ্গিসহ বাংলাদেশে আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের অর্থনৈতিক মদদদাতা বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বির"দ্ধে।৭১ সালে মীর কাসেম আলীর নির্দেশে পরিচালিত নির্যাতনের স্মৃতি স্মরণ করে আজো শিউরে ওঠেন চট্টগ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এই মীর কাশেম আলী রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অতি স¤প্রতি গুর"তর অপরাধ দমন সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটি সর্বশেষ যে ৮০ জন সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকা করেছে তাতে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর নামও রয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে মীর কাসেম আলী ছিলেন জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি,
পরে রাজাকারকর্মে কৃতিত্বের পুরষ্কার হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করেন। ইসলামী ছাত্র সংঘই মুক্তিযুদ্ধের সময় আল বদর বাহিনীতে পরিণত হয়। মূলত এই আল বদর বাহিনীই ’৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে খুন করে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে সচেষ্ট ছিল।

চট্টগ্রামের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায় বইসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রথমদিকে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে আল বদর বাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলেন। পরে তার অত্যাচার নির্যাতনে খুশি হয়ে তার ঊর্ধ্বতন নেতারা তাকে আল বদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তিন নম্বর পদে পদোন্নতি দেন। তখন আল বদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় প্রধান নেতা ছিলেন বর্তমানে জামাতে ইসলামীর আমীর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী।

চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকানন টিএন্ডটি অফিসের পেছনের সড়ক যা ইতিপূর্বে টেলিগ্রাফ রোড বলে পরিচিত ছিল সেখানে এক হিন্দু পরিবারের মালিকানাধীন ‘মহামায়া ভবন’টিকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী কেড়ে নিয়ে তার নাম দেয় ডালিম হোটেল। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ডালিম হোটেলই আলবদর, রাজাকারদের অন্যতম নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রামবাসীর কাছে। এই বন্দী শিবির ও নির্যাতন কেন্দ্রে আল বদর বাহিনী চট্টগ্রামের প্রধান মীর কাসেম আলীর পরিকল্পনা ও নির্দেশে খুন হয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা।

একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ‘পিপলস ভিউ’র ডেপুটি এডিটর নাসির"দ্দিন চৌধুরী এই আল বদর বাহিনীর হাতে আটক হয়ে ডালিম হোটেলে চরম নির্যাতনের শিকার হন। সে সময়ে টগবগে তর"ণ মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম শহরেই মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা হামলা চালাতেন পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের ওপর। কিš' তিনি ’৭১-এর ৩ ডিসেম্বর ধরা পড়েন তাদের হাতে। তারপর থেকে ঐ কুখ্যাত ডালিম হোটেলে তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। গত ৫ নভেম্বর তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বললেন, আমাকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলের একটি র"মে অন্য বন্দীদের সঙ্গে চোখ বেঁধে রাখা হয়। এ সময় অন্য বন্দীদের সঙ্গে আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য আদায় করতে চাইতো। ডালিম হোটেলে সারাক্ষণ চলতো বন্দীদের ওপর নির্যাতন আর নির্যাতিতদের চিৎকার-কান্নাকাটি। এই নির্যাতনের মূল পান্ডা ছিলেন মীর কাসেম আলী। তিনি এখন জামাতের অনেক প্রভাবশালী নেতা। শুনেছি ডিসেম্বরের কোনো এক সময় পতেঙ্গা এলাকাতে যখন মিত্র বাহিনী যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলছে তখন তিনি সামান্য আহত হয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিন আমরা ঐ নির্যাতন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাই। তখন অবশ্য এসব আল বদর রাজাকাররা পালিয়ে গেছে।
প্রায় ৭/৮ মাস আগে একাত্তরের সেই উত্তাল ও ভয়াল দিনগুলো নিয়ে প্রতিবেদকের কথা হয় গণতন্ত্রী পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সাইফুদ্দিন খানের সঙ্গে। তিনি একাত্তর সালে থাকতেন মাদারবাড়ি এলাকাতে। সে সময় ৩ নভেম্বর পটিয়া মনসা এলাকার কুখ্যাত রাজাকার আবুল কালামের নেতৃত্বে একদল রাজাকার তাকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় ঐ ডালিম হোটেলে। আজীবন ত্যাগী ও প্রগতিশীল এই রাজনীতিবিদ ১৭ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডালিম হোটেলে আল বদর বাহিনীর হাতে চরমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রসঙ্গত, যে রাজাকার আবুল কালাম তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সে এখন টি.কে গ্র"পসহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং জামাতে ইসলামীর অন্যতম অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক।

সাইফুদ্দিন খান জানিয়েছেন ’৭১ সালে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সে সময়কার ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী হান্নানা বেগমের ভাই মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিনকে ডালিম হোটেলে নির্যাতন, প্রায় একই সময়ে নন্দনকানন এলাকার রাহার পুকুর পাড়ের টাইপ মেশিন দোকানের মালিক জীবনকৃষ্ণ শীলকে একইভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলে। তার অপরাধ তিনি তার বাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ২/৩ দিন আগে ডালিম হোটেলে টর্চার চেম্বারের সামনে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন সাইফুদ্দিন খান।

শুধু এই তিনজনকেই নয়, আরো অনেককে আল বদর বাহিনী ডালিম হোটেলে নিয়ে এসে নির্যাতন করে খুন করেছে বলে জানান তিনি। সাইফুদ্দিন খান সে সময়কার ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, কেউ পানি খেতে চাইলে ঐ সব নরপশু আল বদর রাজাকাররা তাদের মুখে প্রস্রাব করে দিতো, আবার কখনো প্রস্রাব করে তা খেতে বাধ্য করতো বন্দী মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক বাঙালিদেরকে।
গত ২৮ জুন মৃত্যুবরণকারী এই প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খান মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ’৭১-এর নির্যাতনের চিহ্ন বয়ে বেড়িয়েছেন।

সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী নুরজাহান খান গত ৬ নভেম্বর বলেছেন, ‘১৭ নভেম্বর ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে একদল রাজাকার আমাদের বাসায় এসে সাইফুদ্দিন খানকে ধরে নিয়ে যায়। অধিকাংশই মুখোশ পরা ছিল। তবে একপর্যায়ে তাদের দলনেতা মুখোশ খুলে ফেলাতে আমি আবুল কালামকে চিনতে পেরেছিলাম। আমি নিজেই তো সে সময়কার জ্বলন্ত সাক্ষী।

মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় বইতে ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি তৎকালীন ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ এ প্রকাশিত ‘হানাদারদের নির্যাতন কক্ষে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে। এ বন্দী শিবিরে যাদের আটক রাখা হতো তাদের প্রথম ৩ দিন কিছুই খেতে দেওয়া হতো না। এ সময় যারা পানি চাইতো তাদের মুখে প্রস্রাব করে দিতো আর বদররা। অনেক সময় নারকেলের খোলে প্রস্রাব করে করে তা খেতে বাধ্য করা হতো

বন্দীদের সবাইকে কিছু কিছু স্থায়ী নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে আসতে হয়েছে। যেমন কারো শরীরের হাড়ভাঙ্গা, কারো আঙুল কাটা অথবা কারো এক চোখ, এক কান, এক হাত বিনষ্ট ইত্যাদিঃ.মাঝেমধ্যে হোটেলের ভেতর গুলির শব্দ শোনা যেতো। কিন্তু সেগুলো কোন বা কি ব্যাপারে তা তাদের জানবার উপায় ও অবকাশ ছিল না। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকাতে পশ্চিম মাদারবাড়ির আবুল কালাম পেশকারের ১৮ বছরের যুবক নজমুল আহসান সিদ্দিকী (বাবুল) তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে এ সব কথা বলেছিলেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, মুক্ত হওয়ার পর তিনি দেখেছেন হোটেলের একটি র"ম খালি ছিল এবং সে রুমের দেয়ালে এবং মেঝেতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বহু রক্তের ছাপ রয়েছে। সম্ভবত এ রুমে পর্যায়ক্রমে লোকদের এনে গুলি করে হত্যা করে তারপর অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হতো।

১৯৭১ সালের ২ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতির ভাষণে মীর কাসেম আলী বলেন, গ্রামগঞ্জের প্রত্যেকটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে শত্র"র শেষ চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। (সূত্র : একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়)।

একই বইতে লেখা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র সংঘের সভাপতি আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের গতকালের বেতার ভাষণকে অভিনন্দন জানিয়ে আমরাও ঘোষণা করছি যে, এদেশের ছাত্র জনতা ’৬৫ সালের মতন ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে যাবে।’

এসব বক্তৃতা, বিবৃতি, কর্মকাণ্ডই বর্তমানে প্রভাবশালী জামাত নেতা মীর কাসেম আলীর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট। যতোটুকু জানা যায়, মীর কাসেম আলী মানিকগঞ্জ জেলায় হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের জনৈক তৈয়ব আলীর ২য় পুত্র। ডাক নাম পিয়ার। কিš' দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই তিনি পালিয়ে যান সৌদি আরব। দেশে ফিরে আসেন ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে। তারপর জিয়াউর রহমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তিনি। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রচ্ছারি তৎকালীন পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্রসংঘের পরিবর্তিত রঙ পায় ইসলামী ছাত্র শিবির। জামাতের এই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন মীর কাসেম আলী। পরে মহানগর জামাতের আমীর পদ লাভ করেন তিনি।

ধীরে ধীরে সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর অর্থনৈতিক সাহায্যপুষ্ট ‘রাবেতা আল ইসলামী’ নামে একটি এনজিও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পদ লাভ করেন কাসেম আলী। কক্সবাজারে এই রাবেতার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আসে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্যের নামে আনা এই টাকায় রাবেতা হাসপাতালও করা হয়েছে। যেখানে ইসলামী জঙ্গিসহ রোহিঙ্গা ইসলামী জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গা জঙ্গিদেরকে দেশে প্রশিক্ষণ ও বিদেশে পাঠিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মীর কাসেম আলী সহায়তা করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। আর এই রাবেতার মাধ্যমে আসা কোটি কোটি টাকা দিয়ে জঙ্গিবাদে অর্থ সহায়তা এবং জামাতে ইসলামীকে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর জন্য মীর কাসেম আলী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন এমন তথ্য রয়েছে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:০৭
১৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×