somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতাপূর্ব কিছু চমকপ্রদ ঘটনা -৪

২৮ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ঠিক কি নিয়ে এনিয়ে আলোচনার আগে দেখা যাক কোন গ্রাউন্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন কমান্ডার মোয়াজ্জেম ও তার সঙ্গীরা। ঢাকা থেকে সে সময় মার্কিন দূতাবাসের পাঠানো এক তারবার্তায় জানা যায় যে ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের প্রাণনাশের একটি পরিকল্পনা করা হয় চিটাগাং ক্লাবে বসে। সেটা গোয়েন্দাদের কানে আসে। ৯ ডিসেম্বর পিআইএর চিটাগাং ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মির্জা রমিজকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে রাজনীতিবিদ সাইদুর রহমান, বিভূতিভূষন ওরফে মানিক চৌধুরী, দুই সাবেক নৌ বাহিনী কর্মকর্তা সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও কামালউদ্দিন আহমেদকে। বরিশাল থেকে লঞ্চ বোঝাই অস্ত্রসহ আটক করা হয় কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মিলিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ জন। এদের মধ্যে ১২ জনকে বিশেষ নিরাপত্তায় পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইয়ুব এই ঘটনায় ভীষণ ভয় পেয়েছেন এবং এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খানকে অনুরোধ করেছেন তার বিমানের চালক হতে। টেলিগ্রামটা এরকম :

Department of State

TELEGRAM

SECRET 832

PAGE 01 RAWALP 02518 2814172
52
ACTION NEA 15
INFO GPM 03, SC 01, RSC 01, USIA 12. li 02, NSC M L (13. INR 07,P 04, CIA 04, DOD 01, SP 02, SS 200PR 02, NSAE 00, RSR 01, MM 01. /089 W
R 281210Z DEC 67
FM AMEMBASSY RAWALPINDI
TO AMEMBASSY NEW DELHI 877
SECSTATE WASHDC 2837
SECRET RAWALPINDI 2.518
II/W DACCA 1029 3(110830, ACTION RAWALPINDI, INFO KARACHI, LAHORE, CALCUTTA AND PESHAWAR REPEATED FOR UR INFO: QUOTE.
SUBJECT : ABORTIVE COUP-ASSASINATlON PLOD
REF: DACCA’s A-133, DACCA 950, 978, 996, 1000, 1002, 1014, 1015, KARACHI’s 1122

1. Analysis of accumulated information seems to indicate that a comparatively small number of Bengali civil servants, ex-military officers, military officers, and politicians planned to assassinate President Ayub Khan during his recent visit to East Pakistan and to follow up the assassination with a coup d’etat aimed at establishing an independent state in East Pakistan. GOP security agencies detected plot before conspirators could act and subsequently arrested between 50 and 60 Bengalis. Authorities seem to be attempting to conceal both existence of plot and arrests. Resume of previously reported and recently required information follows.

2. Senior member of Chittagong Club stated that in early December several Bengalis met at Chittagong Club to plan assassination of President Ayub during his planned December 10 visit to Chittagong. Plan apparently called for elimination of Ayub during flight from Dacca to Chittagong on Chartered PIA air craft and involved PIA personnel at Dacca and Chittagong. Special Branch plain clothe men reportedly overheard plotters meeting at Chittagong Club and alerted GOP about plot.

3. In pre-dawn hours of December 9 several of conspirators were arrested in Chittagong and Dacca. According to fragmentary newspaper report, among those arrested were M. M. Rameez (PIA Chittagong city) Awami League leaders Syedur Rahman and Biphuti Bhusan (aka Manik Choudhury), and two ex-Pak Navy officers Kamuluddin Ahmed and Sultanuddin Ahmed, both residents of Dacca. Subsequently acquired information from sources who are believed to be well informed indicates that between fifty and sixty Bengalis (according to one source 54) have been arrested in connection with plot. This number reportedly includes five senior civil servants(CSP’s), several ex-military officers, military officers on active duty, and opposition politicians. A heretofore reliable source said that senior Bengali CSP who had recently been named to head an East Pakistan government corporation was involved in plot.

4. Subsequently Ayub’s visit to Chittagong city cancelled and Ayub was flown to Kaptai (near Chandraghana where he dedicated textile mill) by West Pakistan PAF pilot in military amphibian.

5. Several sources said that conspirators planned to follow up assassination with coup d’etat aimed at establishing independent East Pakistan. In this regard, one source who has previously given Consulate General accurate information said an exPakistan Navy Lieutenant Commander was arrested at Barisal with a motor launch load of arms which had 33. smuggled across border from West Bengal.

6. Twelve arrested conspirators reportedly have been sent to West Pakistan.

7. Several sources indicate President Ayub’s composure badly shaken by plot and that he delayed his departure from East Pakistan for one day both to confer with senior government servants and to bring his personal aircraft from West Pakistan to fly him to Karachi. Two source, stated that Ayub requested PL. chief Air Marshal Ashgar Khan to pilot aircraft to West Pakistan,

GP-3. KILLGORE
UNQUOTE. OEHLERT

জানুয়ারিতে একটি সম্পূরক টেলিগ্রামে বিস্তারিত বলা হয় :

৮ ডিসেম্বর ১৯৬৭। রাত ঘনিয়েছে। চট্টগ্রামের এক অন্ধকার গলিতে দাড়িয়ে আছেন মির্জা রমিজ। বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে এবার বউর কাছে যাচ্ছেন। বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে, প্রচণ্ড মাতালও। গত মাসতিনেক ধরেই পানের মাত্রা বেড়ে গেছে তার। রমিজ খুব ভয়ে আছেন। কিছুদিন ধরেই বুঝতে পেরেছেন তার পেছনে গোয়েন্দা লেগেছে। এ সপ্তাহের শুরুতেই এক বন্ধু জানিয়েছেন যে পুলিশ তাকে ও তার বন্ধুদের গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে। শুনে পালানোর কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই, এমন জায়গাও নেই লুকানোর। চার ঘণ্টা পর, রাত তিনটার দিকে তার দরজায় কড়া নাড়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চ।

৯ ডিসেম্বর ভোর। একজন সাবেক কলেজ অধ্যাপকের ঘুম ভাঙ্গালেন তার এক প্রাক্তন ছাত্র। ভীত কণ্ঠে জানালেন তাকে আর তার বন্ধুদের গ্রেপ্তারের জন্য খুজছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক এক ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। কি করবেন জানতে চাইলে অধ্যাপক তাকে বললেন গা ঢাকা দিতে। এই গা ঢাকার ব্যাপারটা ঠিক বুঝলেন না তিনি। আন্ডারগ্রাউন্ড শব্দটা কমিউনিস্টদের ব্যাপারস্যাপার, তার জানা নেই। তার সতীর্থ ও রাজনৈতিক দলের নেতারা নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছিলেন এই পরিকল্পনাটা কখনোই ফাঁস হবে না। তাই পালানোর কোনো বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবা হয়নি। ২২ ডিসেম্বর একজন তরুণ আইনজীবির সামনে দেখা গেলো তাকে। দু সপ্তাহের অমানুষিক অত্যাচারের চিহ্ন সারা শরীরে। বলছেন-‘বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে কিছু বলিনি, আমাকে বাধ্য করা হয়েছে।‘

ঢাকা ও চিটাগাং ক্লাবে তরুণ বাঙালীদের আগের চেয়ে বেশ নীরব দেখা যাচ্ছে। ঈদটা নিরানন্দেই কেটেছে তাদের। বাতাসে ভয়ের গন্ধ। হালকা শুভেচ্ছা বিনিময়ের বাড়তি কিছু করছে না কেউ। পাঞ্জাবী ও অবাঙ্গালীদের বিদ্রূপেও নিশ্চুপ তারা, আগের মতো পাল্টা জবাব নেই। কেউ জানে না কে বিশ্বাসঘাতক, কে গোয়েন্দাদের হয়ে কাজ করছে।

জানুয়ারির শুরুর এক ভোরে সাবমেশিন গান ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত সেনা সদস্যরা ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে এক বন্দীকে সরিয়ে নিলো। এখানে বছর দুয়েক ধরে বন্দী ছিলেন তিনি। খবরটা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লো- মুজিবকে সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু কোথায়, কেউ জানে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে এক বৈঠকে মিলিত হলেন কিছু আইনের ছাত্র। সেনা কবলে থাকা মুজিবকে উদ্ধারে কি করা যায়! শুধু প্রতিবাদ মিছিল কিংবা মিটিং করাটা যথেষ্ট ঠেকছে না। কিন্তু বিকল্প কিছু কেউ জানে না, অনেকেই ভয় পেয়ে গেছে খুব। বড় ভাই যারা এখন আওয়ামী লীগের নেতা, আর সহানুভূতিশীল শিক্ষকরাও কোনো সাহায্যে আসছেন না। শুধু বলেছেন, ’আপাতত চুপচাপ থাকো।‘ কথাটা পছন্দ হয়নি তরুণ তুর্কিদের- বাঙালী আর কতো পড়ে পড়ে মার খাবে?

হতাশ, বিহ্বল ও ভীতির পাশাপাশি রওয়ালপিন্ডির প্রতি ঘৃণা এখন প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালী যুবকের মধ্যে কাজ করছে। আর সেটা সংক্রামিত হচ্ছে সবার মাঝেই।

সারমর্ম ও সিদ্ধান্ত : ঢাকা ও চট্টগ্রামে গোপন খোজখবর, বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা ও তথ্যের সত্যতা যাচাই শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে বেশ কিছু বাঙালী সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, কিছু নীচু সারির রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী গত দু’বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার ষড়যন্ত্র করছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের অনেকেই গোলমেলে ব্যক্তিত্বের অধিকারী, পাশাপাশি পরিল্পনাটাও ছিলো বেশ আনাড়িপনায় ভরপুর। গত ডিসেম্বরে কয়েকজনকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়েই এর সমাপ্তি ঘটেছে। ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা যদি থেকেও থাকে তবে তা ছিলো আর্থিক সহায়তাতেই সীমাবদ্ধ।

আমাদের মনে হয় না গত ডিসম্বরে পূর্ব পাকিস্তান সফরে আইয়ুব খানের প্রাণনাশের কোনো পরিকল্পনা আদৌ ছিলো। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সম্ভবত এটা শুনেছে মির্জা মোহাম্মদ রমিজের কাছে। মুখ আলগা এই সাবেক বিমান বাহিনী কর্মকর্তা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পিআইএর চট্টগ্রাম জেলার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার করার আগে কয়েকমাস ধরেই তাকে নজরবন্দী রেখেছিলো গোয়েন্দারা।

যতই আনাড়ি শোনাক, তবে ষড়যন্ত্র যে ছিলো এটা ঠিক। পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালীদের ঐতিহ্যবাহী শত্রুতা এখন বেআইনী পথ ধরেছে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দুপক্ষে অবিশ্বাসের দূরত্বটা আরো বাড়বে। তাছাড়া শেখ মুজিবকে যদি এই ঘটনায় যুক্ত করা হয়, তা শেষ পর্যন্ত বাঙালী স্বাধীকার আন্দোলনের একজন বীর হিসেবেই তাকে প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়বে। (চলবে)
১৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×