চট্টগ্রাম ষোলশহরে 8ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। এবং আরো কিছু বাঙ্গালী অফিসার। 25 মার্চ সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকার বুকে যখন গনহত্যা চলছে, জিয়া তখন এ ব্যাপারে অন্ধকারে। বরং রাত 11টায় তাকে রিপোর্ট করতে বলা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রিগেডিয়ার আনসারীর কাছে। তাকে নিয়ে যেতে নৌবাহিনীর একটা ট্রাকও ততক্ষণে হাজির, সঙ্গে নৌবাহিনীর 8 জন এসকর্ট ও অবাঙালী ট্রাক ডাইভার। মেজর জিয়া কেন যেন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যাটেলিয়ানের তিন যোয়ান।
আগ্রাবাদের কাছাকাছি আসার পর একটা ব্যারিকেডের সামনে ট্রাক থামাতে বাধ্য হলো ড্রাইভার। জিয়া নেমে পায়চারি করতে লাগলেন, বাকিরা ব্যারিকেড সরাতে। এমন সময় মেজর খালেকুজ্জামান সেখানে ছুটে এলেন। জানালেন পাক সেনারা ক্যান্টনমেন্টে হামলা শুরু করেছে। শহরে হতাহতের শিকার বহু নিরীহ লোক। জিয়ার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, 'উই রিভোল্ট- আমরা বিদ্রোহ করছি'। তিনি খালেকুজ্জামানকে শহরে ফিরে যেতে বললেন এবং নির্দেশ দিলেন সেখানকার পাকিস্তানী অফিসারদের বন্দী করার জন্য, সেইসঙ্গে ব্যাটেলিয়ানের সবাই যেন প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে। আর পাঞ্জাবি ড্রাইভারকে বললেন, ব্যাটলিয়ন হেডকোয়ার্টারের দিকে গাড়ি ঘোরাতে। বিনা আপত্তিতে ড্রাইভার নির্দেশ মেনে নিল। হেডকোয়ার্টারে পৌছে জিয়া ট্রাক থেকে দ্রুত নেমে নৌবাহিনির এসকর্টদের একজনের কাছ থেকে অতর্কিতে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে পাকিস্তানী নেভাল অফিসারদের দিকে তাক করে বললেন, 'হ্যান্ডস আপ, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।' অফিসার দুজন আত্মসমর্পন করল। বাকিরা অস্ত্র মাটিতে ফেলে দিল। কোয়ার্টারে ঢুকে সবার আগে বন্দী করলেন ব্যাটলিয়ন কমান্ডারকে- তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন!
এরপর তিনি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার থেকে লেঃ কর্ণেল চৌধুরি ও ক্যাপ্টেন রফিকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করতে চেয়ে ব্যর্থ হলেন। এরপর সিভিল টেলিফোন সার্ভিসের একজন অপারেটরকে পেয়ে বললেন, 'ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের 8ম ব্যাটেলিয়ান স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে'- এ খবরটা যেন চট্টগ্রামের কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি ও রাজনৈতিক নেতাদের অবিলম্বে জানিয়ে দেওয়া হয়।
পরে ব্যাটেলিয়ানের সব অফিসার ও যোয়ানদের একত্রিত করে তিনি এক সংক্ষিপ্ত ভাষনে বললেন, 'আমরা সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে নেমেছি পশ্চিমা স্বৈরাচারী সামরিক শক্তির বিরম্নদ্ধে।' রাত তখন সোয়া দুইটা-26 মার্চ শুরু হয়ে গেছে। ভোর 4টায় তিনি সঙ্গীদের নিয়ে পটিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। পথে ইপিআরের একশ জোয়ান সঙ্গী হলেন জিয়ার। দুপুর নাগাদ পটিয়া পাহাড়ে পেঁৗছলেন তারা। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতাযোদ্ধাদের ঘাটি এই পটিয়ার পাহাড়। পটিয়ার জনগনও সর্বোতোভাবেই এই বীরযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেন।
সেদিনই 300 সদস্যের এক বাহিনীকে হানাদারদের মোকাবেলা করার জন্য শহরে পাঠালেন জিয়া। শত্রুর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলো। দেশমাতৃকার বহু বীর সৈনিক বর্বর হানাদারদের কবল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে অকাতরে আত্মাহুতি দিলেন। শত্রুরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো। (চলবে)
পাদটীকা : বাবা এই জায়গায় আরো কিছু যোগ করতে চেয়েছিলেন, কারণ বিশাল একটা অংশ উনি খালি রেখেছেন (...) ব্যবহার করে। প্রসঙ্গতই আসে সোয়াত জাহাজের কথা- কারণ অন্যান্য রেফারেন্সে আছে জিয়াকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস করার কাজটা তদারকি করতে। কিন্তু পথে ক্যাপ্টেন রফিক (নাকি খালেকুজ্জামান!) তাকে পথ আটকে পরিস্থিতি জানান এবং জিয়া তার সঙ্গে যোগ দেন। ব্যাপারটা অবশ্যই ক্রসচেকিংয়ের দাবি রাখে। তবে পরের অধ্যায়েই ক্যাপ্টেন রফিক এবং সোয়াত নিয়ে ওনার আলাদা পরিচ্ছদ আছে। কালুরঘাটের ব্যাপারটা নেই। যাহোক আপাতত লিখে যাই, অসংলগ্নতা যদি কিছু থেকেই থাকে সেটা প্রতিষ্ঠিত তথ্যের ভিত্তিতে অবশ্যই সংশোধিত হবে। আপাতত ওনার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। আর এ কয়েকটা দিন খেলা নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছুই ছিল না। তার ওপর কালবোশেখীতে বাসার নেটলাইন খতম। আশাকরি দুয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। খুব মিস করছি ব্লগ ও ব্লগারদের।
ছবি : মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের একজন জিয়া, সামনের সারিতে ডান থেকে তৃতীয়
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




