somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ-24

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৬ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেজর জিয়া ও স্বাধীনতা সংগ্রাম :

চট্টগ্রাম ষোলশহরে 8ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। এবং আরো কিছু বাঙ্গালী অফিসার। 25 মার্চ সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকার বুকে যখন গনহত্যা চলছে, জিয়া তখন এ ব্যাপারে অন্ধকারে। বরং রাত 11টায় তাকে রিপোর্ট করতে বলা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রিগেডিয়ার আনসারীর কাছে। তাকে নিয়ে যেতে নৌবাহিনীর একটা ট্রাকও ততক্ষণে হাজির, সঙ্গে নৌবাহিনীর 8 জন এসকর্ট ও অবাঙালী ট্রাক ডাইভার। মেজর জিয়া কেন যেন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যাটেলিয়ানের তিন যোয়ান।
আগ্রাবাদের কাছাকাছি আসার পর একটা ব্যারিকেডের সামনে ট্রাক থামাতে বাধ্য হলো ড্রাইভার। জিয়া নেমে পায়চারি করতে লাগলেন, বাকিরা ব্যারিকেড সরাতে। এমন সময় মেজর খালেকুজ্জামান সেখানে ছুটে এলেন। জানালেন পাক সেনারা ক্যান্টনমেন্টে হামলা শুরু করেছে। শহরে হতাহতের শিকার বহু নিরীহ লোক। জিয়ার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, 'উই রিভোল্ট- আমরা বিদ্রোহ করছি'। তিনি খালেকুজ্জামানকে শহরে ফিরে যেতে বললেন এবং নির্দেশ দিলেন সেখানকার পাকিস্তানী অফিসারদের বন্দী করার জন্য, সেইসঙ্গে ব্যাটেলিয়ানের সবাই যেন প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে। আর পাঞ্জাবি ড্রাইভারকে বললেন, ব্যাটলিয়ন হেডকোয়ার্টারের দিকে গাড়ি ঘোরাতে। বিনা আপত্তিতে ড্রাইভার নির্দেশ মেনে নিল। হেডকোয়ার্টারে পৌছে জিয়া ট্রাক থেকে দ্রুত নেমে নৌবাহিনির এসকর্টদের একজনের কাছ থেকে অতর্কিতে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে পাকিস্তানী নেভাল অফিসারদের দিকে তাক করে বললেন, 'হ্যান্ডস আপ, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।' অফিসার দুজন আত্মসমর্পন করল। বাকিরা অস্ত্র মাটিতে ফেলে দিল। কোয়ার্টারে ঢুকে সবার আগে বন্দী করলেন ব্যাটলিয়ন কমান্ডারকে- তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন!
এরপর তিনি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার থেকে লেঃ কর্ণেল চৌধুরি ও ক্যাপ্টেন রফিকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করতে চেয়ে ব্যর্থ হলেন। এরপর সিভিল টেলিফোন সার্ভিসের একজন অপারেটরকে পেয়ে বললেন, 'ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের 8ম ব্যাটেলিয়ান স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে'- এ খবরটা যেন চট্টগ্রামের কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি ও রাজনৈতিক নেতাদের অবিলম্বে জানিয়ে দেওয়া হয়।
পরে ব্যাটেলিয়ানের সব অফিসার ও যোয়ানদের একত্রিত করে তিনি এক সংক্ষিপ্ত ভাষনে বললেন, 'আমরা সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে নেমেছি পশ্চিমা স্বৈরাচারী সামরিক শক্তির বিরম্নদ্ধে।' রাত তখন সোয়া দুইটা-26 মার্চ শুরু হয়ে গেছে। ভোর 4টায় তিনি সঙ্গীদের নিয়ে পটিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। পথে ইপিআরের একশ জোয়ান সঙ্গী হলেন জিয়ার। দুপুর নাগাদ পটিয়া পাহাড়ে পেঁৗছলেন তারা। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতাযোদ্ধাদের ঘাটি এই পটিয়ার পাহাড়। পটিয়ার জনগনও সর্বোতোভাবেই এই বীরযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেন।
সেদিনই 300 সদস্যের এক বাহিনীকে হানাদারদের মোকাবেলা করার জন্য শহরে পাঠালেন জিয়া। শত্রুর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলো। দেশমাতৃকার বহু বীর সৈনিক বর্বর হানাদারদের কবল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে অকাতরে আত্মাহুতি দিলেন। শত্রুরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো। (চলবে)

পাদটীকা : বাবা এই জায়গায় আরো কিছু যোগ করতে চেয়েছিলেন, কারণ বিশাল একটা অংশ উনি খালি রেখেছেন (...) ব্যবহার করে। প্রসঙ্গতই আসে সোয়াত জাহাজের কথা- কারণ অন্যান্য রেফারেন্সে আছে জিয়াকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস করার কাজটা তদারকি করতে। কিন্তু পথে ক্যাপ্টেন রফিক (নাকি খালেকুজ্জামান!) তাকে পথ আটকে পরিস্থিতি জানান এবং জিয়া তার সঙ্গে যোগ দেন। ব্যাপারটা অবশ্যই ক্রসচেকিংয়ের দাবি রাখে। তবে পরের অধ্যায়েই ক্যাপ্টেন রফিক এবং সোয়াত নিয়ে ওনার আলাদা পরিচ্ছদ আছে। কালুরঘাটের ব্যাপারটা নেই। যাহোক আপাতত লিখে যাই, অসংলগ্নতা যদি কিছু থেকেই থাকে সেটা প্রতিষ্ঠিত তথ্যের ভিত্তিতে অবশ্যই সংশোধিত হবে। আপাতত ওনার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। আর এ কয়েকটা দিন খেলা নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছুই ছিল না। তার ওপর কালবোশেখীতে বাসার নেটলাইন খতম। আশাকরি দুয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। খুব মিস করছি ব্লগ ও ব্লগারদের।

ছবি : মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডারদের একজন জিয়া, সামনের সারিতে ডান থেকে তৃতীয়
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:৫৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×