বাবা,জানি না ভালো আছো নাকি?আমিও জানি না আমি ভালো আছি নাকি!? আমি আজ তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই,জানি না কথাগুলো কখনো তোমার কাছে পোঁছাবে নাকি? বাবু,আমি না জানি না পিতৃস্নেহ কি? আমি না জানি না বাবা কিভাবে সন্তানকে আগলে রাখে?
কই বাবু,আমাকে তো তুমি বলোনি এভাবে?! আমি কি অপরাধ করেছিলাম যে তুমি আমাকে এভাবে সবকিছু থেকে বঞ্ছিত করলে?? আমি এতটা ভাগ্যহীন কেন? আমি কেন সবার থেকে আলাদা, আমি কি জানতাম যে আমি সারাজীবন এভাবে কষ্ট বয়ে বেড়াবো? যদি জানতাম তাহলে আমি আমি আমার জন্মদিনের দিন ইশ্বরকে বলতাম আমাকে মেরে ফেলতে!!
প্লিজ,আমাকে একবার বলবে, বাবা কি? বাবার স্নেহ কি? আমি জানি বাবু,তুমি খুব কষ্ট পাবে তাও বলি,আমি না তোমার চেহারা ভুলে গেছি!! শুধু ছবি দেখে কি আর ১২ বছর আগের চেহারা মনে করা যায়?!! মাত্র ১০ বছর বয়সে তুমি আমাকে একা করে চলে গেলে। আমাকে ভুলে গেলে, অথচ আমি কেন তোমাকে ভুলতে পারি না? তোমার কথা কেন বারবার আমার মনে পড়ে? কেন আমার কাছে হিংসা লাগে অন্য কারো বাবার গল্প শুনলে?!!
আমি জানি তুমি থাকলে এতদিনে আমার অনেক অপূর্ণ ইচ্ছাই পূরণ হয়ে যেত। আমার অনেক চাওয়াগুলো পাওয়া হয়ে যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি বলে তুমি হয়তো বুক ফুলিয়ে হাঁটতে!! সবাইকে হয়তো বলতে,”আমার ছেলে এইচ,এস,সি তে জেলায় প্রথম গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে!!” আমার ছেলে এই করতে পেরেছে,ওই করতে পেরেছে!! বাবু,জানো আমি না অনেক কিছু পারি এখন। কি পারি নি জানো? তোমাকে আটকে রাখতে। আমি পারি নি আমার বাবার স্নেহকে ইশ্বর নামক কোন খ্যাপাটের কাছ থেকে কেড়ে নিতে?!! আমি কি করবো বলো? ১০ বছর বয়সে কি আর এত শক্তি লাভ করা যায়?!! আমি যদি জানতাম এইভাবে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,তাহলে সত্যি আমি ইশ্বরকে বলতাম যেন আমার আয়ুটা তোমাকে দেয় আর আমি যেন আবার তোমার ঘরেই জন্ম নিতে পারি!! সত্যি আমার একটুও কষ্ট হতো না!!! বিশ্বাস কর।
আমি জানি তুমিও জানতে না এভাবে চলে যাবে। তুমি অনেক সাহসী ছিলে। কিন্তু বাবু জানো একটা সত্যি কথা, আমরা না অনেক অসহায়,আমরা না ভালবাসতে পারি।মানুষকে কাছে টানতে পারি কিন্তু কাউকে চিরদিন ধরে রাখতে পারি না!!
বাবু,আজ না অনেক ইচ্ছা করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে,আমার দুঃখগুলো শুধু তুমিই পারো দুর করে দিতে। তুমি থাকলে আমি সত্যি তুমাকে একটু হলেও আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি না অভাগা,আমাকে না কেউ ভালোবাসে না,কেঊ কাছে টেনে নেয় না। আমার মা বাদে।তুমি কি করেছ জানো? আমার মা কে তুমি জীবনে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দিয়ে গেছো!
বাবু,জানো তোমার স্মৃতিগুলো আমার কাছে না অনেক ঘোলাটে হয়ে গেছে!! তাও মনে পড়ে আমার ৭ তম জন্মদিনে কি কারনে যেন তুমি আসো নি। পরে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলে। জানো, আমারও সেইদিন কান্না এসেছিল। আমার কি মনে হয় জানো, আমি সেইদিন বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো। কিন্তু তা হবে কেন?!! তুমি তো আর কিছু করো নি!! ইশ্বর নাকি ভালো মানুষদেরকে নিজের কাছে রেখে দেন।তাই হয়তোবা তোমাকেও রেখে দিল। বাবু,আমি না তোমার মত ভালো মানুষ হয়ে তোমার সাথে থাকতে চাই!!! প্লিজ,না করো না,আমাকে তোমার সাথে রাখবে তো?
আমার না মাথার ছাতা না,আমার মাথাটাই তুমি কেটে নিয়ে গেছো!! আমি জানি না বাবাকে কিভাবে সম্মান করতে হয়?আমাকে ক্ষমা করে দিও! জীবনে তুমি কখনো আমাকে নাম ধরে ডাকো নি,সবসময় বাবু বলে ডাকতে। আর তোমার অফিসের কর্মচারীরা এই নিয়ে মজা করে বলতো,”বাবু,আপনাকে আমরা বাবু ডাকি,আপনার ছেলেও আপনাকে বাবু বলে ডাকে!!” তুমি হাসতে। বাবু,কতদিন তোমাকে বাবু বলে ডাকতে পারি না, কতদিন তোমাকে বলতে পারি না,” বাবু,আমি তোমাকে ভালোবাসি।“ আর কখনো বলতেও পারব না!!
প্লিজ,বাবু আমাকে একবার বলে দাও তুমি আমাকে এখনো এখনো ভালোবাসো,আকাশের তারা হয়ে সারারাত আমাকে পাহারা দাও,আমি যেখানেই যাই,আমার ছায়ার সাথে এসে তুমি আমাকে এগিয়ে দিয়ে যাও। বাবু,জানো আমি না জীবনেও আমার সন্তানকে ভালবাসতে পারবো না কারণ আমি জানি না কিভাবে সন্তানকে ভালবাসতে হয়!! আমি জানি না বাবারা কেমন করে মিশে সন্তানদের সাথে।আমি কত... কি বলবো??... অসহায়?? না,বাবু আমি অনেক ভাগ্যবান যে তোমার মতো বাবা পেয়েছিলাম। আমি আরো ভাগ্যবান আমার মাকে পেয়ে। আমি যেন আমার মাকে কখনো কষ্ট না দেই সেইদিকে খেয়াল রেখো। যদি ভুলেও এই কাজ করি আমাকে নরকে পাঠিয়ে দিও।
যেখানেই তোমার আত্মা আছে শান্তিতে থাকুক।
( আমি কে তোমাকে বলতে হবে?? জানি এখনো আমাকে ভুলো নি!!!)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



