somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখলাম মনপুরা এবং……..

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মনপুরার ছবিটা রিলিজ হবার আগে থেকেই এর গান নিয়ে মাতামাতি হয়ে গেল। গানগুলো মাতামাতির মতই, যথেষ্ট ভাল, বিশেষ করে বাবুর গানগুলো। দেখব দেখব করে দেখা হয়ে উঠল না, আবার দুইবার হলে গিয়েই দেখে এলাম। অভিজ্ঞতাও দুই রকম। মামা ঝালকাঠী হতে ঢাকা এসে বললেন, চল মনপুরা দেখে আসি। গেলাম দুইজন মধুমিতায় গিয়ে দেখি মনপুরা সেখানে চলছে না, মনপুরা চলছে হাটখোলার অভিসার সিনেমা হলে। বসুন্ধরা সিটি দূর হয়ে যায়, তাই অভিসারেই টিকেট নিলাম। সিনেমা শুরুর আগে মামি ফোন করল। মামা বলে, মহাখালি যাচ্ছি ডাক্তার দেখাব। ডাক্তারের ওখানে মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। ঢুকলাম মুভি দেখতে, মাঝে কেউই মোবাইল অন করলাম না। এদিকে সেইদিনই বসুন্ধরায় আগুন লাগল। আমরা আবার বাসায় বলে বের হয়েছিলাম যে সিনেমা দেখতে যাচ্ছি, কোথায় তা বলা হয় নাই। আগুনের খবরে বিচলিত আমার বাবা চারিদিকে ফোন দিয়ে অস্থির, কারন আমি আর মামা গেছি সিনেমা দেখতে। আমাদের মোবাইল বন্ধ, বাবা কল করল মামিকে। উদ্দেশ্য একটাই, সিনেমা দেখতে যাওয়া মামা-ভাগিনার খবর জানলে জানাতে। সিনেমা শেষে মামা মামিকে ফোন করল। ডাক্তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কি বলেছে তা একে একে বলল এবং মামিও শুনল। এরপর মামির জিজ্ঞাসা, “মনপুরা কেমন দেখলা?”। মামা তো ধরা!!!


এরপর আমাদের থিসিস জমা দিলাম, শেষ হল মাস্টার্স পর্ব। এতদিন আমাদের চারণভূমির অন্তর্গত অঞ্চলে টিএসসি ছিল না। মোরাররম ভবন, কার্জন হল ঘিরেই আমাদের আসা যাওয়া। অথচ, ঢাবি পর্ব শেষ করে আমরা সবাই মিলিত হই টিএসসিতে। ফোনে অন্যকে আগে জানাতাম, আছি ভার্সিটিতে বা ডিপার্টমেন্টে। এখন ঐ এলাকায় গেলে বলি, আছি টিএসসির আশে পাশে। বন্ধুরা ঠিক করলাম ২৬ মার্চ যাব মনপুরা দেখতে। এবারের ভেন্যু “বলাকা”।


এভাবেই একই মুভি আমার হলে গিয়ে দুইবার দেখা হল। এখন আসি মুভির কথায়। মনপুরা তেমন কোন অসাধারণ মুভি বলে আমার কাছে মনে হয় নাই। তবে দুইজন বা কয়েকজন মিলে ২/৩ ঘন্টা সুন্দর কাটিয়ে আসবার জন্য যথেষ্ট। কাহিনী টিপিকাল বাংলা সিনেমা, উপন্যাস বা নাটকের চাইতে আলাদা কিছু না। গ্রামের ধনী গাজী সাহেবের পাগল ছেলে হালিম একটা খুন করে ফেলে। ছেলেকে বাঁচাতে গাজী সাহেব তার ঘরের সরলমনা কাজের ছেলে সোনাইকে বলে সেই রাতে পালিয়ে যেতে এবং কাউকে কিছু না বলতে। যদি সোনাইকে পুলিশ ধরে তবে যেন সে সত্য বলে। স্বয়ং গাজী সাহেবই তার দখলকৃত চর “মনপুরা”তে সোনাইকে কিছু গরু ছাগল সহ ছেড়ে দিয়ে আসে। অন্যদিকে গাজী পুলিশকে বলে সোনাই খুন করে পালিয়ে গেছে। সেই চরে একাকী থাকতে থাকতে একদিন হাকিম মাঝির মেয়ে পরীর সাথে সোনাইয়ের দেখা। সোনাই-পরী একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। অন্যদিকে গাজী সাহেবকে এক পীর বলে, রূপবতী মেয়ে দেখে ছেলেকে বিয়ে দিলে ছেলে ভাল হয়ে যাবে। নিজ সমাজের কেউ পাগলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হবে না বিধায় গাজীর চোখ পড়ে মাঝির মেয়ে পরীর প্রতি। স্বাভাবিক ভাবেই, পরীর সাথে পাগল হালিমের বিয়ে হয়ে যায় এবং সোনাই হত্যার দায়ে গ্রেফতার হয়। পরী না পারে পাগলের সাথে স্বামী-স্ত্রীর মত থাকতে না পারে সোনাইকে ভুলতে। এই অবস্থায় গাজীর স্ত্রী পরীকে জানায় শুক্রবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে সোনাইয়ের ফাঁসি হবে। অথচ, বৃহঃস্পতিবার সকালেই সোনাইয়ের জামিন হয়, দুই দিন ছুটির কারনে সে শনিবার ছাড়া পায়। পরী শুক্রবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে বিশ খেয়ে আত্মহত্যা করে। সোনাই ফিরে এসে দেখে পরীর লাশ। এটাই কাহিনী।


সিনেমার কাহিনীর প্রবাহ কেমন বেখাপ্পা ছিল, সংলাপও তেমন আহামরি নয়। অভিনেতা হিসেবে চঞ্চল, বাবু, মামুনুর রশীদ বরাবরের মতই তাদের স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন। গ্রামের গানের দলের বুড়ির চরিত্রে দিলারা জামান একেবারেই ফিট হয় নাই। তার মাঝে কেমন একটা আভিজাত্য বোধ ছিল, অনেকটা অয়ময়ের জমিদারের মায়ের মতই। অথচ মনপুরার গ্রামের সেই বুড়ির থাকা উচিত ছিল অনেকটা বৈষ্ণবী বৈষ্ণবী ভাব। সোনাই চরিত্র অতিরিক্ত সরলতা ছিল, যেটা আমার আছে স্বাভাবিক মনে হয় নাই। তবে, অনেকের মতে গ্রামে এমন অতিরিক্ত সরল মানুষ দেখাই যায়।


তবে এই ছবির যেটা অসাধারণ লেগেছে তা ছিল, ক্যামেরার কাজ। প্রতিটি দৃশ্যই খুব যত্ন করে ক্যামেরা বন্ধি করা হয়েছে। আমি এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ নই তবে কোথাও বেখাপ্পা লাগে নি। পরিচালকের আর একটি সুন্দর কাজ ছিল নায়িকাকে তথা তার শরীরকে ফুটিয়ে তোলা। মনপুরার নায়িকা মিলিকে খাট এবং মোটাসোটা একটা মেয়েই মনে হত। অথচ, ছবিতে পরিচালক সেই মেয়েরই শরীরের ভাঁজ গুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। মিলির শারিরিক সৌন্দর্য্যের এই উপস্থাপন মোটেই অশ্লীল লাগে নি। মিলির অভিনয়ও ভাল ছিল। চোখ, মুখের সমন্বয়ে ভাব ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে।


একই ছবি দুই সিনেমা হলে দেখে একটা অভিজ্ঞতা যা পেলাম তা হল, সিনেমা হলের পরিবেশ। অভিসারের একটা বিশ্রী অবস্থা ছিল। নায়িকা আসা মাত্রই অধিকাংশ দর্শকের শীশ, তালী, চিৎকার করে উঠা প্রভৃতি সিনেমা দেখার মুডটাই নষ্ট করে দেয়। বলাকায় এমনটা ছিল না। তবে মোটের উপর বসুন্ধরা সিটির সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখবার আলাদা একটা পরিবেশ আছে। মধুমিতা খারাপ না, তবে পরিবেশের দিক দিয়ে বসুন্ধরাই বেস্ট।


শেষে মদ্দা কথা এই যে, মনপুরা দেখলাম, ভাল লাগল। সময়টুকু সুন্দর কাটল এমন ছবি আরো হওয়া উচিত। অনেকদিন কিছু লিখি না তাই হাবি-জাবি লিখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:৩০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×