somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্প্রতি দেখা সিনেমাঃ Emperor (2012)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পরশু চমৎকার একটা মুভি দেখলাম। মুভি যা ইতিহাস এবং গল্প একত্রিত করেছে। মুভিটির নাম Emperor যা ২০১২'র ২৭ জুলাই মুক্তি পায়।



মুভিটির শুরু জাপান আত্মসমর্পণের অংশ থেকে। যেখানে জেনারেল ডাগলাস ম্যাকআর্থার কে তার সহযোগীদের সাথে পাঠানো হয় জাপানে। তারা জাপান আসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন ভাবে এগিয়ে নিতে আর যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির আলতায় নিয়ে আসতে। আসা মাত্রই জেনারেল বার্নার ফেলাস তৎপর হয়ে উঠে, যাতে কোন যুদ্ধাপরাধী পালাতে কিংবা আত্মহত্যা করতে না পারে। অল্প সময়ের মাঝেই প্রায় সবাইকে তারা ধরে নিতে সক্ষম হয়, তবুও এর মাঝে কয়েকজন আত্মহত্যা করে বসে। বাকি কিছু আমেরিকানরা দেশে এসেছে জেনেই গা'ঢাকা দেয়।



অন্যদিকে জেনারেল বার্নার ফেলাস, যে তার থিসিস করেছিল এই জাপানী সংস্কৃতি এবং রাজনীতি নিয়ে। তার থিসিস করার সময়ে পরিচয় হয় আয়া নামের এক জাপানি বালিকার সাথে। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের ভালোলাগায় পরিণত হয়। কিন্তু পারিবারিক কারণে আয়া ফিরে যায় তার দেশে। পরবর্তীতে বার্নার তার থিসিসের উদ্দেশ্যে জাপান আসলেও, আয়ার সাথে দেখা করাই তার মূল উদ্দেশ্য থাকে।



কিন্তু এর মাঝেই অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে যায়। জাপান সরকার তখনই জনসাধারণের মনে আমেরিকানদের শত্রু হিসেবে পরিচিতি দিতে প্রচারণা চালাতে থাকে। বিভিন্ন স্তর আর বয়সের মানুষে আমেরিকানদের উপর যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়েই বিদ্বেষ আর আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ পায়।



এদিকে যুদ্ধপরবর্তী জাপানের অবস্থা তখন বেশ ভয়াবহ। বিস্ফোরণের আঘাতে মানুষ আর তাদের জীবন একেবারেই মানবেতর পর্যায়ে। ভেতর ভেতর ক্রোধ থাকলেও সেটা প্রকাশ করতে পারে না। আবার অন্যের সিদ্ধান্তে বেঁচে থাকা সেটাও মেনে নিতে পারে না মন থেকে। ঘৃণা আর আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ সর্বস্তরে, যদিও সেটা তখন নিজেদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ।



কিন্তু এইসব ছাপিয়েও জেনারেল বার্নারের মনে জাপানের মানুষদের জন্যে একটু দুর্বলতা রয়েছে। আর এই দুর্বলতার বড় একটা অংশ আয়া। থিসিস করার সময় আয়ার সহযোগিতায় সে জাপানীদের অতীত সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অনেক কিছুই বিস্তর ভাবে জানতে পেরেছিল। আয়া'র এক চাচা জেনারেল হবার সুবাদে তার থেকে রাজনৈতিক অনেক ব্যাপার জানতে পেরেছিল বার্নার। একই সাথে জাপানের ঐতিহ্য আর একে এগিয়ে নিয়ে যাবার কৌশল কিছুটা আয়ত্ত করতে পেরেছিল সে ঐ সময়।



যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নিজের কাজের পাশাপাশি বার্নার আয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এখানে আসার পর তার জন্যে একজন জাপানী ড্রাইভার, পথ নির্দেশক এবং দোভাষী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। জেনারেল বার্নার আয়াকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তার সেই ড্রাইভার তাকাহাসিকে প্রদান করে। তাকাহাসিও দায়িত্বের সাথে আয়ার খোঁজ করতে শুরু করে। কিন্তু প্রতিবারই তাকে হতাশ হতে হয়। প্রতিবারই আয়াকে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পায় বোমা হামলায় নিশ্চিহ্ন এলাকার অবস্থান।



অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের তথ্য যাদের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তারা সবাই এইসব তথ্য দিতে নারাজ। আমেরিকানদের সরাসরি সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। কিন্তু তাতে দমে যায় না জেনারেল বার্নার। আসলে সে নিজেও জানত জাপানী নেতাদের সম্মানেই জাপানের কোন সাধারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে উচ্চ মর্যাদার কেউ এগিয়ে আসবে তাদের কাজে অগ্রগতি আনতে। তাই সে ভিন্ন পথে এগুতে থাকে, বেছে নেয় বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের। সেই ধারাবাহিকতায় গভর্নর থেকে একজন যুদ্ধাপরাধী কানয়ী'র নাম জানতে পারে।



জেনারেল দেখা করে কানয়ীর সাথে। জেনারেল খুব জোর দিয়ে জানতে আগ্রহী হয় সম্রাট হিরোহিথো কি সরাসরি পার্ল হারবার এর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না সেই সম্বন্ধে। কিন্তু কানায়ী জানায় ঐ সময়টা ছিল বেশ গোলযোগপূর্ণ, সম্রাট নিজেও বেশ গোলমেলে ছিলেন এই নিয়ে। গভর্নর বিভিন্ন ভাবে উপদেশ আর নির্দেশ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তাই সম্রাটের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক নির্দেশনাই গভর্নর দিতে পেরেছিলেন ঐ সময়। প্রকৃত সম্রাট কি চাইতেন তা তার ধারণার বাইরে।




বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে জেনারেল বার্নার জেনারেল ডাগলাস এর সাথে সম্রাট হিরোহিথোর সাক্ষাত করার ব্যবস্থা করে। এর মাঝে বেশ চমকপ্রদ এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য পেতে থাকে জেনারেল বার্নার। একই সাথে নিজের বুদ্ধিমত্তা আর জাপানিদের সংস্কৃতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সমানভাবে নিজের কাজ এবং জাপানের স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে এগিয়ে যায় সে।



মুভিটিতে জেনারেল বার্নারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Matthew Fox আর জেনারেল ডাগলাস এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Tommy Lee Jones। পরিচালক পিটার ওয়েবার চমৎকার ভাবে ইতিহাসের সাথে জেনারেল বার্নারের ভালবাসাকে তুলে ধরেছেন। মুভিটা যতটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত অনুভূতি দেবে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে জেনারেল বার্নার আর আয়ার ভালোবাসাকে বর্ণনা করবে। বার্নারের এই ভালোবাসার কারণেই জাপানের সম্রাট হিরোহিথোর সম্মান রক্ষা করে পুরো ব্যাপারটাকে একটা চমৎকার সমাপ্তিতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল।



যারা ইতোমধ্যে মুভিটি দেখেছেন তারা অবশ্যই উপভোগ করেছেন বলে আশা করি। আর যারা এখনো দেখেন নি তারা সময় নিয়ে দেখতে পারেন। আশা করি মুভি দেখার পর সময়টা নষ্ট করেছেন বলে মনে হবে না।

মুভির ট্রেইলারটি এখান থেকে দেখতে পারবেন:






- !?! -
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৫:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×