somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শালীন চোখে এক অন্যতম বিরক্তি "লেগিংস"

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেগিংস কি? : এক রঙের পাতলা কাপড়ের তৈরি পায়জামা কখনও পায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকে। আবার কখনও পায়ের গোড়ালি থেকে কুঁচি শুরু হয়ে উঠে গেছে কোমর অবধি। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে পশ্চিমা পোশাক লেগিংসের কথাই। পায়ের সঙ্গে আটকে থাকে বলেই পশ্চিমারা এই পোশাকের নাম দিয়েছে লেগিংস।

যা মনে পড়ে গেল : এইদেশে ছেলে মেয়ে উভয়ের কাপড় চোপড়ে যে ব্যাপক বিবর্তন হয়েছে তা অজানা নয়। এইদেশে ১৯৯৯ সালে কোন মেয়ে মাজাক্কালি পরার শখ হয় নাই, হয়েছে হিন্দী সিনেমা দেখার পর। এইদেশে ১৯৫২ সালে লেগিংস পরে কোন মেয়ে মাঠে নেমেছে দেখা যায় না, এটা দেখা যায় ২০১১ সালে। চিপা জিন্স দূরে থাক, আজ থেকে ১০ বছর আগে জিন্স পরতেও কোন মেয়েকে দেখা যায় নাই, আজকে অলিতে গলিতে। আপনি কি কখনও চিন্তা করেছেন কারা ঠিক করে মেয়েরা কি পরবে ? কাদের হাতের ডিজাইনের জামা ফলো করছি আমরা ?

২ জন মেয়ের অভিমত : "স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজমের ছাত্রী সামিয়াকে দেখা যায় সব সময়ই লেগিংস পরে আসতে। লেগিংস পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্যাশন সব সময় ঘুরে ঘুরে আসে। আর ফ্যাশনে বৈচিত্র্য আনতে লেগিংস এখন অনেক জনপ্রিয়।

লেগিংসের রঙ ও ডিজাইনে রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। তাই লেগিংস যে কোনো রঙের কামিজ আর টিউনিকের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায়। এমনটাই বলেন তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী তমা"। (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সমকালের শৈলীতে প্রকাশিত "সঙ্গে লেগিংস")

"তাহলে আপনিই হয়ে যাবেন সবার থেকে স্মার্ট!!" বলছে সমকাল : "লং, থ্রি-কোয়ার্টার, চুড়িদারসহ বিভিন্ন ঢঙের লেগিংস পাওয়া যায় এখন। এসব লেগিংসের সঙ্গে ফ্রক আর টপস বেশি মানানসই। লেগিংসের সঙ্গে টপস পরলে গলায় পেঁচিয়ে নিতে পারেন একটা স্কার্ফ কিংবা মাফলার। দেখবেন সাজে একটা বৈচিত্র্য চলে আসছে। আবার লেগিংস-এর সঙ্গে লং টপসও পরতে পারেন। চোখে যদি একটা চশমা থাকে তাহলে আপনিই হয়ে যাবেন সবার থেকে স্মার্ট। যাদের দেহের গড়নটা একটু ভারী তারা লম্বা কামিজের সঙ্গে পরতে পারেন লেগিংস। (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সমকালের শৈলীতে প্রকাশিত "সঙ্গে লেগিংস")


"এতেই নাকি ফিটফাট!!" বলছে সমকাল : লেগিংসের সঙ্গে অনুষঙ্গটাও হওয়া চাই মানানসই। চুড়িদার লেগিংসের সঙ্গে উঁচু হিলের স্যান্ডেল অনেক মানানসই। যারা একটু লম্বা তাদের ফ্লাট জুতায় মানিয়ে যাবে। আর গলায় পরতে পারেন কয়েক লহরের লম্বা মালা। সঙ্গে থাকতে পারে একটি সানগ্গ্নাস। এতেই আপনি ফিটফাট ! (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সমকালের শৈলীতে প্রকাশিত "সঙ্গে লেগিংস")


এটাই সত্য!!! : একটা মেয়ে কি কাপড় পরে সেটা ঠিক করে তার কালচার, ফ্যাশন হাউজ আর কিছু মডেল, সেটা সেই মেয়ে ঠিক করে না। বরং সে মার্কেটে যায়, সিনেমা দেখে, ম্যাগাজিন ঘাটে, সেখানে যেসব ড্রেসের বিজ্ঞাপন করা হয় সেগুলোই তারা পরে। আজকে যেটাতে স্মার্ট লাগছে, কালকে সেটা ক্ষ্যাত, কে বলেছে ? শখ আর সারিকা বলেছে।

কাদেরকে দিয়ে ঠিক করানো হয় কোনটা পরতে হবে আর কোনটা খুলে ফেলতে হবে ? এটা ঠিক করানো হয় এই মম-বিন্দু-ইশানাদের কে দিয়ে। বছরখানেক আগে লাক্স চ্যানেল আইয়ে এইদেশের মেয়েদেরকে শেখানো হল পার্টিতে গেলে হাটুর উপর কাপড় তুলতে হয়। নকশা শেখায় দিল ওড়নার জায়গা বুকে নয়, হাতে, না পরলেও চলবে। হিন্দী সিরিয়াল আর সিনেমাগুলো শেখায় শাড়ির ফাঁকে নাভি না দেখিয়ে চাম্মাক চালো হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমার প্রশ্ন তথাকথিত “স্মার্ট”,”উচ্ছল” এবং “মুক্ত” মেয়েরা যখন এইসব কাপড় পরে তখন কি তারা সেগুলো নিজে থেকে পরে নাকি তাদেকে এইসব ড্রেস পরানোর সেগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ঘোষণা করে সাইকোলজিক্যালি তাদেরকে প্রেসার দেয়া হয় ?

আপু "লেগিংস" পরছেন? মনে রাখবেন : স্কিন টাইট লেগিংস মূল্য: একশবিশ টাকা

স্কিন টাইট লেগিংস পরে নিচের দিকে তাকিয়ে চলা দ্বীনদার ভাইদের চোখের হিজাব ভঙ্গ করার মূল্য: জাহান্নামের আগুন।

"লেগিংস" মানসিকতার আপুদের জন্য বলতে চাইঃ
কিসের জন্য এই অবজ্ঞা/উপহাস? আমাদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন যেন শান্তিময় হয়, আমরা যেন জান্নাত বাসীদের কাতারে শামিল হতে পারি সেই চেষ্টা করার জন্য? আপু, তোমার সৌন্দর্য্য তোমার থাক তা যেন সবার জন্য উম্মুক্ত না হয়! আমি/আমরা তো সেটাই চাই। চোখতো আমার/আমাদেরও আছে। আমরা চাই আমাদের চোখে যেন তোমরা মর্যাদার কাতারে থাকো! আপু জিন্স,ফতুয়া, টপ্‌স, লেগিংস ইত্যাদি পোষাকে তোমাকে উম্মুক্ত নোংরা চোখের হ্মুধা বানিয়ে রাখে তা কি বুঝনা? বলো কেন তুমি অন্যের চোখের ফূর্তি হবে? আপু কী জবাব আছে তোমার কাছে?

অভিভাবক আপনাকেই বলছি : যারা তাদের মেয়েকে জিন্স,ফতুয়া, টপ্‌স, লেগিংস ইত্যাদি পোষাক পরিয়ে প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছেন, আর হাজার হাজার পুরুষ তা দেখে উপভোগ করছে/ উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে, তাদের সকলকেই কিয়ামতের দিন জবাব দিহি করতে হবে!

রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেনঃ

১. যে মদ তৈরী করে।

২. যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং

৩. "দাইয়ুস" (যে তার পরিবারের মধ্যে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয়)। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫৮৩৯

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (বুখারী : ৮৯৩; মুসলিম: ১৮২৯)

আপু আপনি যে হিজাব না মেনে যে লেগিংসকেই মানছেন, ভেবে দেখুন, আপনি আপনার হিজাবকে বিক্রি করছেন কি-না !! নিচের গল্পটি পড়ে দেখুন।

একটি গল্প বলিঃ
ফ্রান্সে একজন মহিলা, যিনি কিনা ইসলামী পোশাকের বিধান মেনে হিজাব-নিকাব পরেছিলেন, একটা সুপারমার্কেটে গেলেন। তিনি কিছু জিনিস নিয়ে কাউন্টারে সেগুলো চেক করিয়ে মূল্য পরিশোধের জন্য গেলেন। কাউন্টারে ক্যাশিয়ার হিসেবে একজন মুসলিম মহিলা বসা ছিলেন। যা হোক, ক্যাশিয়ার মহিলাটি কিন্তু খুব স্বাভাবিক পোশাক পরেছিলেন আর তার চুলও ছিল খোলা এবং চেহারায় অনেক সাঁজ-গোছ করা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই ক্যাশিয়ার মহিলাটি নিকাব পরা মহিলাটিকে দেখে একটু বিব্রতবোধ করলেন, আর তার নিয়ে আসা জিনিসগুলো তাচ্ছিল্যভরে চেক করতে লাগলেন।

কয়েক মিনিট পর, ক্যাশিয়ার মহিলাটি নিকাব পরা মহিলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ কেন আপনি এখানে আসলেন? আপনি যদি নিকাব পরতেই চান, তো নিজের দেশে গিয়ে নিজের ঘরে বসেই তো ধর্ম কর্ম করতে পারতেন। আমরা তো ফ্রান্সে এসেছি আমাদের নিজেদের উন্নতির জন্য। নিকাব পরা ভদ্র মহিলাটি খুব শান্তভাবে তার নিকাবটি খুলে ক্যাশিয়ার মহিলার সামনে তার চেহারা উন্মুক্ত করলেন। ক্যাশিয়ার মহিলাটি তখন হতভম্ব হয়ে গেলেন ! তিনি দেখলেন বাদামী চামড়া ও রঙ্গীন চোখ বিশিষ্ট এক মহিলাকে। জী হ্যাঁ তিনি ফ্রান্সেরই অধিবাসীনী।

নিকাব পরা মহিলাটি তখন ক্যাশিয়ার মহিলাটিকে বললেনঃ তোমরা এখানে এসছো নিজদের ধর্ম বিক্রি করতে , আর আমরা তা ক্রয় করে নিচ্ছি!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২৭
৪৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×