somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যালেনটাইন ( দুটি গোলাপ আর একটি গল্প )

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লক্ষ্য করলাম বুকের ভেতরটা ফুটবলের মত লাফাচ্ছে । ও এই ব্যাপারটা আমি আগেও খ্যাল করেছে । নিপার সাথে দেখা হবার ঠিক আগের মুহুর্তে ওর এমন অস্থির লাগে । এমন বুক ধড়ফড় করে ।
একটু আগেই নিপা ফোন করেছিল ।
বলল "কোথায় তুমি ? চলে এসেছ ?"
" হ্যা চলে এসেছি । তুমি ?"
" এই তো আর পাঁচ মিনিট । এখানকার কাজ শেষ । আর ইছিবাইক পেয়েছ ?"
" হুম । পেয়েছি । তুমি আসো । ওকে !"
" আচ্ছা সোনাপাখি আমি আসছি ।"
ও আসছে আর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছি । প্রতিটা মুহুর্ত যেন আমি অনুভব করতে পারছি । চারি দিকে কি হচ্ছে আমার সেদিকে কোন খেয়াল নাই । ও আসছে আর কেবল ওর জন্যই অপেক্ষা করে আছি । আমার কাছে কেবল এইটাই ইম্পর্টেন্ট ।
একটু পরেই আমি ওকে দেখতে পেলাম । ঐ তো হেটে হেটে আসছে । আমার হার্টবীট যেন আরো বহু গুনে বৃদ্ধি পেল ।
ভাগ্য ভালো বুকের খাচাটা অনেক মজবুত করে তৈরি । তা না হলে, ওকে দেখলে যে পরিমান লাফায়, কবে যে এই হার্টটা খাচা ভেঙ্গে বের হয়ে পড়ত !
বোরকা পরেছে তার উপর মুখ আটকানো । কেবল ওর ঐ মায়াময় চোখদুটো দেখা যাচ্ছে তবুও ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও হাসছে ।
হাসলে ওর চোখ দুটো একটু ছোট হয়ে যায় আর কাঁপতে থাকে । এটা আমি খুব পছন্দ করি ।
একসাথে ইজিবাইকে উঠে বসলাম । আমাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু হল । প্রথমে আমি ওর মুখোমুখি বসলাম । নিপা বলল "আমার কিন্তু একটু ভয় ভয় করছে । আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি এমন দিনে তোমার সাথে দেখা করতে পারবো । এভাবে একসাথে যেতে পারবো ! যদি কেউ দেখে ফেলে , একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে "।
আমি কেবল হাসি । ভয় আমার ও একটু একটু করছে । কিন্তু ভাল লাগাটা তার থেকে হাজার গুন বেশি ।
"দেখো আমি পাঞ্চাবী পড়েছি" ।
"জি আমি দেখেছি । আর আপনাকে অনেক সুন্দরও লাগছে ।"
" কচু লাগছে ।" মুখে যাই বলি ওর মুখে প্রসংশা শুনে আমার মনটা অনেক ভাল লাগল । অনেক বেশি ।
তারপর ব্যাগ থেকে গোলাপ ফুল বের করে ওকে দিলাম । বললাম "হ্যাপি ভ্যালেনটাইস ডে ।" ওর চোখ দুটো আবার ছোট হয়ে কেঁপে উঠল । তারমানে ও খুশি হয়েছে ।
"জানো এই প্রথম আমি কাউকে ফুল দিলাম । মানে নিজ হাতে দিলাম । এর আগেও তোমাকে দিয়েছি কিন্তু অন্যের মাধ্যমে ।" ও আবার হাসল । আজ কি কেবল ওর চোখের হাসিই দেখতে হবে , ঠোটের হাসি কি আর দেখতে পাবো না আজ ?
নিপা বলল "সকালবেলা পড়তে যাওয়ার সময় আমিও তোমার জন্য কিনেছি ।" বলে ও ব্যাগ থেকে দুটো গোলাপ ফুল বের করল । আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল "হ্যাপি ভ্যালেনটাইনস ডে ।"
আমার যে কি পরিমান আনন্দ লাগল । এই প্রথম কেউ আমাকে ফুল দিল ।
তারপর রজনিগন্ধার তোড়াটা ওকে দিলাম । এতে ও আরো বেশি খুশি হল । বলল "এইতো আমার প্রিয় ফুল । থ্যাঙ্ক ইউ ।"
ওর জন্য কিনে আনা সাফারিটা বের করে দিলাম ।
বললাম "এটা আমার সব থেকে প্রিয চকলেট ।"
আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো বাসায় নিয়ে খাবে । কিন্তু ও এখনই প্যাকেটটা খুলল ।
আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল "তুমি খাও ।"
" তুমি খাবে না ?"
"খাবো । আগে তুমি নাও । আমি একটা বাইট নিলাম ।"
তারপর ও স্কাপ একটু নামিয়ে সাফারিতে কামড় মাড়ল । এই দৃশ্যটা আমার অনেক ভাল লাগল । নিপা কথনও কারো এটো কিছু খায় না । কথাটা বলাটা তে ও হাসল ।
বলল "আমাদের মধ্যে কি ওসব কিছু এখন আর আছে ?"
সত্যি তাই । সাফারি খেতে খেতে এবার ওর পাশে গিয়ে বসলাম । ও হাত দেখিয়ে বলল "এই দেখো হাতে মেহেদি দিয়েছি ।"
আমি ওর হাত ধরলাম । ইস কি সুন্দরই না লাগছে ! আমি কালকে ওকে বলেছিলাম হাতে মেহেদি দেবার জন্য ।
হঠাত্‍ আমার মনে পড়ল । আমার অনেক দিনের ইচ্ছা নিজের হাতে ওর পায়ে পায়েল পড়াব । অনেক দিন পর সুযোগটা এল । পকেট থেকে পায়েল বের করে ওর পায়ে পড়িয়ে দিলাম । আবার ওর পাশে বসলাম ।
বললাম "শুধু কি চকলেটই খাবো আর কিছু খাবো না ?"
" মানে ?" ও বুঝতে পেরে বলল "মাথা খারাপ তোমার ? এই রাস্তার মধ্যে পারবো না । আর সেদিন হয়েছে না !"
" তো কি হয়েছে ? দিবা না ?"
"দেখো সামনে আমার মামাদের বাড়ি । যদি দেখে ফেলে ।"
জার্নি প্রায় শেষ হয়ে আসছিল ঠিক এমন সময় ও আমার গালে চুম খেলো । চট করে । আমি ভাবতেই পারি নি ও কাজটা করবে !
বললাম "মাত্র একটা ?"
" এই হল তোমার দোষ । একটা পেলে আরো চাও । আর হবে না । এই রাস্তার মধ্যে কিভাবে হবে বল ?"
দেখতে দেখতে জার্নি শেষ হয়ে এল । এবার বিদায় নেওয়ার পালা । ইজি বাইক থেকে নেমে পড়লাম । ওকে আরো কিছুটা পথ যেতে হবে । ওর সাথে যেতে খুব ইচ্ছা করছিল । কিন্তু শহরে মধ্যে ওর সাথে যাওয়া রিস্ক । যতক্ষন ওকে দেখা যায় ততক্ষন তাকিয়ে রইলাম ।
খুব সাধারন এই ইজিবাইক জার্নিটা । কিন্তু আমার সাথে ও ছিল । এর থেকে বড় কিছু আমার কাছে হতে পারে না । এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না । এখনও পর্যন্ত এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন শ্রেষ্ঠ জার্নি । হোপ সামনে আরো অপেক্ষা করছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১১:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×