somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মহাসমুদ্র পার করে এসেছি তোমার কাছে, কেবল বলতে ভালবাসি

০৪ ঠা মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“দেখ তুমি যাই বল আর যেখাবেই বোঝানোর চেষ্টা কর আমার উত্তর ঐ একই থাকবে । আমি কাউকে না দেখে কোন রিলেশনের মধ্যে যাবো না” ।
“এখন আমি কিভাবে দেশে আসবো বল” ? আবিরের কন্ঠে কেমন জানি একটা কাতর ভঙ্গি ।
নিশির মনটা যেন একটু কেমন করে উঠল । তবু ও নরম হল না । বলল “আমি তো তোমাকে দেশে আসতে বলি নি । তুমি বুঝতে পারছো না যে আমি এটা চাচ্ছি না । আমি চাচ্ছি না তুমি আমাকে প্রোপজ কর” ।
“কিন্তু কেন” ?
“আবির তুমি কচি খোকা না ? তুমি জানো আমার এমন টা বলার কারন কি ? এরকম ভার্চুয়াল রিলেশনের কোন মানে নেই” ।
আবির কোন কথা বলল না ।
নিশি আবার বলল “আমি চাইলেই তোমাকে দেখতে পারবো না চাইলেই তোমার হাত ধরতে পারবো না । একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো না । কোন বিশেষ দিনে তোমাকে কাছে পাবো না । অন্যেরা যখন তাদের মনের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটাবে আর আমাকে তখন চেয়ে দেখতে হবে । আমি এতোটা কষ্ট সহ্য করতে পারবো না । এটা আমি মেনে নিবো না” ।
নিশি খানিকটা সময় নিল । আবিরের কোন কথা আছে নাকি শোনার জন্য ।
আবির কোন কথা বলল না । নিশি জানতো আবির কিছু বলবে না । ওর কিছু বলারও নাই ।
নিশি আবার বলতে আরাম্ভ করল “দেখো তুবুও আমি এটা মেনে নিতে পারতাম যদি আমাদের রিলেশনটা একটা হ্যাপি এন্ডের দিকে যেত । আমি কষ্ট করে হলেও অপেক্ষা করে থাকতাম । কিন্তু তাও তো হবার নয়” ।
“কেন তুমি এমন কথা কেন বলছ” ?
“বোঝ না আমি এমনটা কেন বলছি ? তুমি মেলবোর্ন গেছো কত দিন” ?
“এই তো চার মাস” ।
“তার মানে কি দাড়াল ? তোমার এখনও ফার্ষ্ট সেমিস্টারই শেষ হয় নি । স্টাডি শেষ হতে এখনও চার বছর । জব পেতে পেতে আরো একবছর । তার মানে পাঁচ বছর এখনও আমাকে ওয়েট করতে হবে । কিন্তু একটা মেয়ের পক্ষে কি এতোটা ওয়েট করা সম্ভব ? বল” !
নিশি জানতো আবির এটারও কোন জবাব দিতে পারবে না ।
“হ্যা আমি যদি স্কুলে পড়তাম তাহলে হত । আমি অনার্সের পড়ি । আর খুব বেশি ২ বছরের মধ্যে আমার মাবাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে । তখন আমি কি করবো ? তুমি নিশ্চই এটা আশা কর না যে তোমার জন্য আমি আমার বাবা মা কষ্ট দিবো বা তাদের মতের বিরুদ্ধে যাবো” ।
“না তা তো না” ।
“আমার প্যারেন্টস আমার কাছে সবার থেকে বড় । আজ পর্যন্ত তারা আমাকে দিয়েই গেছেন । কোন কিছু আমাকে মুখ ফুতে চাইতে হয়নি । তাহলে কেন আমি তাদের কে কষ্ট দিবো” ?
“আমি তো তাদের কে কষ্ট দিতে বলছি না” ।
“না । ইন্ডাইরেক্তলি তাই বোঝায় । তোমার সাথে রিলেশন হওয়া মানে তাই বোঝায়” ।
তারপর দুজনেই চুপ হয়ে গেল । কারো যেই আর কিছু বলার নাই ।
অনেকক্ষন পর আবির বলল “তাহলে এটাই কি শেষ ? আর কি আমাদের যোগাযোগ হবে না” ?
“না হওয়াটাই ভাল । তোমার সাথে যোগাযোগ হওয়া মানে কষ্টটা বেড়ে যাওয়া । আমি এসব চাই না” ।
“আচ্ছা ভাল থেকো” । আবির ফোন রেখে দিয়েছিল ।
ফোন রাখার পরও নিশি অনেকক্ষন ফোনটা কানে ধরে রেখেছিল । কেন কে জানে !
নিশির কাছে মনে হল ওর কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে । নিশি খুব ভাল করেই জানে ওর কি হরিয়ে যাচ্ছে । ইচ্ছা করলেই ও সেটা ধরে রাখতে পারে । কিন্তু তাতে ওর কষ্টটা বাড়বেই । এখন ও কষ্ট পাচ্ছে । কিন্তু ও যদি আবির প্রোপজ গ্রহন করে তাহলে পরে ওকে কষ্ট পেতে হবে । আর পরের কষ্টটা হবে আকারে আরো বেশি । তার থেকে এখনই ভাল । কোন কিছু শুরুর আগেই সব কিছু শেষ হয়ে গেল । ভাল হল ।
ওর খারাপ লাগছে । কিন্তু নিশি জানে এটা সময়ের সাথে সাথে কমে যাবে । কিন্তু কমছে না কেন ? আবিরের সাথে ওর শেষ কথা কথা হয়েছে সপ্তাহ আগে । কিন্তু ওকে ও মিস ঠিকই করছে ।
“এই কি ভাবছিস” ? নিশি ফিরে তাকাল । ফারিয়া আসছে । ওর মনটা একটু ভাল হল । আজ একটু আগে আগেই ক্যাম্পাসে চলে এসেছে । ফারিয়াই আসতে বলেসে । কেন কে জানে ! এতোক্ষন একা একা এসব কথাই ভাবছিল । ফারিয়া এসে ভাল লাগল ।
“বললি না কি ভাবছিস” ? ফারিয়া আবার জিঞ্জেস করল ।
“না এমন কিছু না” ।
“আবিরের কথা ভাবছিস” ?
নিশি কিছু বলল না । ওর মনটা আরো একটু বিষন্ন হল ।
“দেখ তুই আমাকে বন্ধু মনে করিস তো” ?
“হুম করি” ।
“তাহলে আমার একটা কথা শোন । তুই আবিরের প্রোপজালটা একসেপ্ট কর” ।
“তুই তো সব জানিস তারপরও কেন এমনটা বলছিস” ?
“সব জানি । তারপরও বলছি । বলার প্রথম কারন হল তুই আবিরকে মিস করছিস আর মিস করতেই থাকবি কারন তুই ওকে ভালবাসিস । আর মন কি ওটো ক্যাকুলেশন বোঝে ? ভবিষ্যতে কি হবে না হবে এটা চিন্তা করে কি আর ভালবাসা হয় বল” ?
নিশির খুব ইচ্ছা হল ফারিয়ার কথা গুলো মেনে নিতে । এখনই আবিরকে ফোন করে ভালবাসি বলতে খুব ইচ্ছা হল । কিন্তু ও নিজেকে আবার সামলালো । কেবল ইমোশন দিয়ে জীবন চলে না । দীর্ঘস্থায়ী কষ্ট থেকে সাময়িক কষ্ট সহ্য করা ভাল । যদিও ও জানে না আবিরকে ও এতো সহজে ভুলতে পারবে কিনা । কি অবাকই না ওর লাগে মাঝে মাঝে ।
আবিরের সাথে ওর পরিচয় নেট এ । প্রথমে টুকটাক কথা হত তারপর এমন একটা পর্যায় এল সারা দিন নিশি অন লাইনে থাকতো । ওর আর কিছুই ভাল লাগতো না । আবিরের যে জিনিসটা সব থেকে ভাল লাগতো সেটা হল আবির ওকে খুব ভাল করে বুঝতো । ও কখন কি চায় কেমন ওর মন ভাব মন খারাপ নাকি ভাল সব কিছু যেন আবিরের জানা ।
তারপর প্রথম যেদিন আবিরের সাথে কথা হল বুকের মাঝে কি যে এক অনুভুতি হচ্ছিল নিশি সেটা বলতে পারবে না । কেবল সেদিন রাতে মনে হল আবির নামের এই ছেলেটাকে সে ভাল বাসে । সত্যি ভালবাসে । তখন নিশি কেবল নিজের মন দিয়ে ভেবেছিল আবিরের কথা গুলো । কিন্তু চারপাশের সব কিছু যখন সে ভেবে দেখল ওর সব স্বপ্ন ভাঙ্গতে সময় লাগল না ।
“আরে কি এতো ভাবছিস ? এতো মুখ গোমরা করে থাকিস না তো । আজ তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে” ।
“কি সারপ্রাইজ” ?
“এখানে না । ক্যান্টিনে চল তোকে দেখাচ্ছি” ।
ক্যান্টিনটা ফাঁকাই বলা চলে । সকাল বেলাতো এখনও লোকজন আসে নি । কেবল বাঁ দিকে একটা ছেলে বসে আছে ।
“কোথায় তোর সারপ্রাইজ” ?
“এই যে” ! ফারিয়া ছেলেটার দিকে ইশারা করল । প্রথমে নিশি কিছু বুঝতে পারল । ছেলেটাকে কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে । ছেলেটা এতোক্ষন অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । ওর দিকে ফিরল ।
“এতো ....” নিশির দুটো হার্ট বীট মিস হল । তারপর পুরো শরীরটা কেঁপে উঠল উত্তেজনায় ।
এতো আবির ।
আবির !
আবির !
সত্যি সত্যি আবির !
কিন্তু ও এখানে কিভাবে ?
ফারিয়ার দিকে তাকাল । ফারিয়া হাসল । “সত্যি ওটা আবিরই । গতকাল ই এসছে । কালকেই দেখা করতে চেয়েছিল । আমি তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ওকে এখন আসতে বলেছি । তোকে তো এতো সকাল সকাল আসতে বললাম” ।
নিশি এক ভাবে ফরিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল । ওর মনে হল ফারিয়া ওর সব থেকে ভাল বন্ধু ।
“যা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আসিছ কেন” ?
নিশি কাঁপা পায়ে আবিরের দিকে এগিয়ে গেল । ধুকধুক বুকে বসল ওর সামনে । ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আবির সত্যিই ওর সামনে বসে আছে !
“সত্যিই কি তুমি” ?
“বিশ্বাস হচ্ছে না” ? আবির হাসল ।
ইস কি সুন্দর করেই না হাসছে ছেলেটা !
“আমার হাসি মোটেই সুন্দর না” ।
নিশি চমকালো । আবির কেমন করে জানি ওর মনের কথা বুঝে ফেলে ।
“তুমি কেন আসলে” ?
“তুমি জানো আমি কেন এসেছি” ।
“আবির তুমি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসো নি মেলবর্ন থেকে বাংলাদেশে এসেছ” !
আবির কোন কথা বলল না ।
“কেন” ?
“তুমি বলেছিলে না তুমি কাউকে না দেখে প্রপোজ একসেপ্ট করবে না” ।
নিশির কথা আটকে গেল । এই ছেলেটা কি পাগল নাকি ।
আবির এবার উঠে দাড়াল । পাশে এক তোড়া গোলাপ রাখা ছিল । ওটা তুলে নিয়ে নিশির সামনে একহাটু বাঁকা করে বসল । গোলাপের তোড়াটা নিশি দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
“নিশি আমি পুরো একটা মহাসাগর পার করে এসেছি কেবল তোমাকে একটা কথা বলার জন্য । আমি বলতে এসেছি আমি তোমাকে ভালবাসি । প্রচন্ড রকম ভালবাসি” ।
নিশি কিছুতেই নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারল না । কেবল ওর জন্য একটা ছেলে মেলবোর্ন থেকে চলে এসেছে কেবল ভালবাসি বলার জন্য । কেবল এই জন্য যে ও না দেখে কোন প্রপোজ গ্রহন করবে না বলে ।
ও কেমন করে এই ছেলেটাকে না বলবে ? ওর সব যুক্তি তর্ক মুহুর্তের মধ্যে ভেঙ্গে গেল । নিশির কেবল মনে হল ও নিজেও এই ছেলেটাকে ভালবাসে । প্রচন্ড রকম ভালবাসে ।
“ডু ইউ লাভ মি” ?
নিশির মুখ দিয়ে আর কিছু বেরই হল না । কেবল বলল “ইয়েস”

( সত্য ঘটনা অলম্বনে)
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×