somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বিয়ে আগামী সপ্তাহে । সবাই কে দাওয়াত করলাম

১৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাঞ্চ আওয়ার এখনও শুরু হয় নি তবুও হাতের ফাইলটা একপাশে সরিয়ে রাখলাম । মনটা ভাল নাই । সকাল বেলা থেকেই কোন কাজে মন বসাতে পারছি না । ঈশিতার কাছ থেকে কথাটা শোনার পর থেকে কিছুতেই নিজের মন কে স্থির রাখতে পারছি না ।
কেন পারবো আর কিভাবে পারবো ? যে মেয়েটাকে গত একটা বছর ধরে ভালবেসে আসছি সে যদি হঠাত্ এসে বলে সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে । তাহলে কেমন লাগে !
আজ সকাল পর্যন্তও সব কিছু ঠিকই ছিল । বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল । দিন গুলো কাটছিল ভালই ।
প্রতি দিন অফিস করি । ঈশিতার সাথে একসাথে লাঞ্চ করি । কোন দিন বা অফিস শেষে একসাথে ফুসকা খাই কিংবা নাটক দেখি । আর কাজের ফাকে আড্ডা তো আছে । জীবনটা তো মন্দ ছিল না ।
তবে হ্যা একটা কষ্ট অবশ্য ছিল । ওকে যে ভালবাসি এই কথাটা না বলতে পারার কষ্ট । কিন্তু কিভাবে বলি তার পথ টা তো ও নিজেই বন্ধ করে রেখেছিল ।
ঈশিতার আমার ডিপার্টমেন্টে যোগ দেয় । ওর বস হবার সুবাদে ওর সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্ব্য হয়ে যায় । আপনি থেকে তুমি তে আসতেও বেশি সময় লাগে নি । এমন ভাবেই চলছিল । আমি ওর প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছি । যেদিন বলব বলে করছি ঠিক সেই দিনে লাঞ্চ আওয়ারে দেখলাম ঈশিতার মুড অফ ।সোজা কথায় মেজাজ খারাপ ।
আমি বললাম “কি ব্যাপার মেজাজ খারাপ কেন” ?
“আর বল না” । ঈশিতার কথায় রীতিমত আগুন ঝরছে । “এই ছেলে মানুষ গুলো এমন হ্যাংলা কেন হয়” ?
“মানে কি” ?
“মানে আবার কি ? তোমরা ছেলেরা কি মেয়ে দের কে প্রেমিকা আর বৌ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারো না । একজনের সাথে একটু কথা বলেছি ওমনি প্রোপজ করে বসতে হবে ? কেন বাবা ছেলে মেয়ে কি কেবল প্রেমিক প্রেমিকাই হয় ? ভাল বন্ধু হতে পারে না” ?
আমি শুকনো মুখে বললাম “তা তো অবশ্যই” ।
“কই তুমিও পুরুষ মানুষ তুমি তো ওদের মত নও” ।
আমি আবার শুকনো মুখে বললাম “তা তো অবশ্যই” ।
“Thanks God । তুমি ওদের মত নও । আমার অন্তত এই টুকু বিশ্বাস আছে তুমি আমাকে কোনদিন হ্যাংলার মত এসে বলবে না যে ঈশিতা তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই” ।
“তা তো অবশ্যই । তা তো অবশ্য.....” শেষ বার বলতে গিয়ে গলায় ভাত আটকে গেল ।
নাম মুখ দিয়ে ভাত বের হয়ে একাকার অবস্থা ।
ঐ দিনের পর যদিও প্রোপজ করার চিন্তা বাদ দিয়ে ছিলাম তবুও মনের ভিতর একটা আশা ছিলোই ।
কিন্তু আজ সকালে যখন ঈশিতা বলল যে আগামী সপ্তাহে ওর বিয়ে আমি যেন আর আমার মধ্যে ছিলাম না ।
আমি কোন মতে বললাম “এতো জলদি ? তুমি তো কিছুই বলনি” ।
“আর বল না । আম্মুর এক বান্ধবীর ছেলে । বাইরে থাকে । বিয়ে করার জন্য দেশে এসেছে । গত সপ্তাহে আমার এক কাজিনের বিয়ে গিয়ে ছিলাম না ? ঐ যে তোমাকে বললাম । ঐ বিয়েতে নাকি আমাকে দেখেছে । খোজ খবর নিয়ে চলে এসেছে । আর আম্মু আব্বুরও পছন্দ হয়ে গেল । সবাই চাচ্ছে তাড়াতাড়া বিয়েটা হয়ে যাক” ।
আমি বললাম “তোমার পছন্দ হয়েছে” ?
“হু” । ও হাসল । “খারাপ কি । ভাল জব করে । দেখতে শুনতেও খারাপ না । বিয়ে তো করতেই হবে । একেই না হয় করে ফেলি । কি বল” ? ঈশিতা হাসল ।
আমি আর থাকতে পারলাম না । নিজের কেবিনে চলে আসলাম । শালার সবাই এক রকম । সবাই সব সময় ভাল টাই চায় । গত একটা বছর ধরে যে ওকে ভালবেসেছি সেটা ওর একটুও চোখে পড়ল না । কোথা থেকে কে না কে এসেছে বিয়ে করার জন্য তার হাত ধরে চলে যেতে হবে ? আমার কথাটা একবারও ভাববে না ?
ঠিক লাঞ্চ আওয়ারে ঈশিতা এল । “চল লাঞ্চ করা যাক” ।
“ আমার ভাল লাগছে না । এখন খাবো না” ।
“কেন খাবে না ? চল আমার খুব খিদে লেগেছে ? চল চল চল” ।
হঠাৎ আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে উঠল । বললাম “শোন কেন খাবো না সেটা আমি তোমার কাছে কৈফত্ দিবো না । ঠিক আছে ? তোমার খিদে লেগেছে তুমি খাও গিয়ে” ?
ঈশিতা খুব অবাক হল । বলল “তুমি এমন করে কেন কথা বলছ” ?
“তো কেমন করে কথা বলব ? খেতে না ইচ্ছে করলেও কি তোমার কথা মত খেতে হবে ? তোমার কথা শুনতে হবে আমাকে ? কেন শুনতে হবে” ?
ঈশিতা আহত স্বরে বলল “তুমি এমন কেন করছ ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না” ।
“বুঝতে পারছো না” ? আমার মেজাজটা যেন আরো একটু খারাপ হয়ে গেল । “তুমি কচি খুকি না ঈশিতা । গত একটা বছরে তুমি একটা বারও কি আমার মনে কথা বুঝতে চেয়েছ ? বোঝার চেষ্টা করেছ ? এতো দিন তোমার সাথে আছি আমি কি চাই আমি কি বলতে চাই একবারও শুনতে চেয়েছে ? চাও নি । আর কোথা থেকে কে না কে এসেছে বিয়ে করার জন্য তাকে বিয়ে করে ফেলতে হবে” ?
ঈশিতা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম “ঈশি জীবনে টাকা পয়সা টাই কি সব ? ভালবাসার কি কোন মূল্য নাই ? সে ভাল জব করে আমি কি ঘাস চড়াই ? আমি ....” আমি কথাটা শেষ করতে পারি না ।
কেবিন ছেড়ে বের হয়ে যাই । পিছে ঈশিতা এখনও অবাক বিশ্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হাটতে হাটতে অফিসের বাইরে চলে এলাম ।
দুদিন অফিসেই গেলাম না । মোবাইল টাও সুইট অফ করে রাখলাম । সব কিছু জাহান্নামে চলে যাক । কিচ্ছু যায় আছে না ।
তিন দিনের দিন ঈশিতা আমার বাসায় এসে হাজির হল । ওকে দেখে বললাম “কেন এসেছো” ?
ও একটু মন খারাপ করল । তবুও মুখ হাসি হাসি করে বলল “ ভিতরে তো আসতে দাও । ভিতরে এসে বলি” ?
দরজা ছেড়ে দাড়ালাম । ও ঘরে ছোফার উপর বসতে বসতে বলল “চা খাওয়াবা না” ?
“আমি চা বানাতে পারি না” ।
“আহা আমার কাছে কত চাপা মারতে ! এমন কিছু নাই যে তুমি রান্না করতে পারো না । এখন চা বানাতে গিয়েই কাত” !
রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এলাম । ঈশিতা হাসি মুখে চায়ে চুমুক দিলো । ওর মুখ দেখে মনে ও খুব আনন্দে আছে ।
“বাহ ! ঠোট থেকে কাপ সরিয়ে ঈশিতা বলল । তুমি আসলেই তো খুব সুন্দর চা বানাও” ।
“খুব আনন্দে আছো মনে হচ্ছে” ?
“হুম । আনন্দে আছি । বিয়ে হচ্ছে না আমার” ?
কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা !
“কেন এসেছো বললে না” ?
“বিয়ের কার্ড দিতে এসেছি । তুমি আমার সব থেকে কাছের মানুষ না তাই তোমাকে সবার আগে কার্ড দিতে এলাম” ।
ঈশিতা একটা কার্ড বের করে দিল । “খুলে দেখো” ।
“না থাক । পরে দেখবো” ।
“আরে দেখো না ? দেখে বল কেমন হয়েছে? আমার হাজব্যান্ডের নাম টা দেখ” ।
অনিচ্ছা স্বত্বেও আমি কার্ডটা খুলে দেখলাম ।
কনে : আরিশা চৌধুরী ঈশিতা
পিতা :জামান চৌধুরী
:মাতা ... ইত্যাদি ইত্যাদি
এবার বরের পরিচর দেখলাম
বর; অপু হাসান একটু চমকালাম । অপু হাসান আমার নাম । পিতা; শহীদুল হাসান
মানে কি ? এখানে আমার নাম কেন ?
আমি ঈশিতার দিকে তাকালাম । ও মিটমিট হাসছে ।
“মানে কি” ?
“মানে এখনও বুঝতেছ না গাধা” !
“তোমার সেই ফরেন মাল কই” ?
“রিজেক্ট” ।
আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে । সত্যি কি হচ্ছে । ঈশিতা বলল “সেদিন আমার সাথে অমন ব্যবহার না করলেও পারতে ! ভাল ভাবে বললে কি হত না ? আমি কি না করতাম” ?
আমি ওকে আগের কথা মনে করিয়ে দিলাম । ও বলল “সবাইকে কি এক পাত্রে বিচার করা যায় । তুমি বলেই দেখতে” !
আমি হাসি বোকার মত । আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না এটা সত্যি সত্যি হচ্চে আমার সাথে । আমি ওকে বললাম “তো বিয়ে কি সামনের সপ্তাহেই করবা” ?
“কার্ড ছেপে গেছে দেখছ না ? আগামী সপ্তাহেই” ।
“ওকে মহা রানী যা ইচ্ছা” ।
আমার বিয়ে আগামী সপ্তাহে । সবাই কে দাওয়াত করলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩১
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×