কেন পারবো আর কিভাবে পারবো ? যে মেয়েটাকে গত একটা বছর ধরে ভালবেসে আসছি সে যদি হঠাত্ এসে বলে সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে । তাহলে কেমন লাগে !
আজ সকাল পর্যন্তও সব কিছু ঠিকই ছিল । বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল । দিন গুলো কাটছিল ভালই ।
প্রতি দিন অফিস করি । ঈশিতার সাথে একসাথে লাঞ্চ করি । কোন দিন বা অফিস শেষে একসাথে ফুসকা খাই কিংবা নাটক দেখি । আর কাজের ফাকে আড্ডা তো আছে । জীবনটা তো মন্দ ছিল না ।
তবে হ্যা একটা কষ্ট অবশ্য ছিল । ওকে যে ভালবাসি এই কথাটা না বলতে পারার কষ্ট । কিন্তু কিভাবে বলি তার পথ টা তো ও নিজেই বন্ধ করে রেখেছিল ।
ঈশিতার আমার ডিপার্টমেন্টে যোগ দেয় । ওর বস হবার সুবাদে ওর সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্ব্য হয়ে যায় । আপনি থেকে তুমি তে আসতেও বেশি সময় লাগে নি । এমন ভাবেই চলছিল । আমি ওর প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছি । যেদিন বলব বলে করছি ঠিক সেই দিনে লাঞ্চ আওয়ারে দেখলাম ঈশিতার মুড অফ ।সোজা কথায় মেজাজ খারাপ ।
আমি বললাম “কি ব্যাপার মেজাজ খারাপ কেন” ?
“আর বল না” । ঈশিতার কথায় রীতিমত আগুন ঝরছে । “এই ছেলে মানুষ গুলো এমন হ্যাংলা কেন হয়” ?
“মানে কি” ?
“মানে আবার কি ? তোমরা ছেলেরা কি মেয়ে দের কে প্রেমিকা আর বৌ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারো না । একজনের সাথে একটু কথা বলেছি ওমনি প্রোপজ করে বসতে হবে ? কেন বাবা ছেলে মেয়ে কি কেবল প্রেমিক প্রেমিকাই হয় ? ভাল বন্ধু হতে পারে না” ?
আমি শুকনো মুখে বললাম “তা তো অবশ্যই” ।
“কই তুমিও পুরুষ মানুষ তুমি তো ওদের মত নও” ।
আমি আবার শুকনো মুখে বললাম “তা তো অবশ্যই” ।
“Thanks God । তুমি ওদের মত নও । আমার অন্তত এই টুকু বিশ্বাস আছে তুমি আমাকে কোনদিন হ্যাংলার মত এসে বলবে না যে ঈশিতা তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই” ।
“তা তো অবশ্যই । তা তো অবশ্য.....” শেষ বার বলতে গিয়ে গলায় ভাত আটকে গেল ।
নাম মুখ দিয়ে ভাত বের হয়ে একাকার অবস্থা ।
ঐ দিনের পর যদিও প্রোপজ করার চিন্তা বাদ দিয়ে ছিলাম তবুও মনের ভিতর একটা আশা ছিলোই ।
কিন্তু আজ সকালে যখন ঈশিতা বলল যে আগামী সপ্তাহে ওর বিয়ে আমি যেন আর আমার মধ্যে ছিলাম না ।
আমি কোন মতে বললাম “এতো জলদি ? তুমি তো কিছুই বলনি” ।
“আর বল না । আম্মুর এক বান্ধবীর ছেলে । বাইরে থাকে । বিয়ে করার জন্য দেশে এসেছে । গত সপ্তাহে আমার এক কাজিনের বিয়ে গিয়ে ছিলাম না ? ঐ যে তোমাকে বললাম । ঐ বিয়েতে নাকি আমাকে দেখেছে । খোজ খবর নিয়ে চলে এসেছে । আর আম্মু আব্বুরও পছন্দ হয়ে গেল । সবাই চাচ্ছে তাড়াতাড়া বিয়েটা হয়ে যাক” ।
আমি বললাম “তোমার পছন্দ হয়েছে” ?
“হু” । ও হাসল । “খারাপ কি । ভাল জব করে । দেখতে শুনতেও খারাপ না । বিয়ে তো করতেই হবে । একেই না হয় করে ফেলি । কি বল” ? ঈশিতা হাসল ।
আমি আর থাকতে পারলাম না । নিজের কেবিনে চলে আসলাম । শালার সবাই এক রকম । সবাই সব সময় ভাল টাই চায় । গত একটা বছর ধরে যে ওকে ভালবেসেছি সেটা ওর একটুও চোখে পড়ল না । কোথা থেকে কে না কে এসেছে বিয়ে করার জন্য তার হাত ধরে চলে যেতে হবে ? আমার কথাটা একবারও ভাববে না ?
ঠিক লাঞ্চ আওয়ারে ঈশিতা এল । “চল লাঞ্চ করা যাক” ।
“ আমার ভাল লাগছে না । এখন খাবো না” ।
“কেন খাবে না ? চল আমার খুব খিদে লেগেছে ? চল চল চল” ।
হঠাৎ আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে উঠল । বললাম “শোন কেন খাবো না সেটা আমি তোমার কাছে কৈফত্ দিবো না । ঠিক আছে ? তোমার খিদে লেগেছে তুমি খাও গিয়ে” ?
ঈশিতা খুব অবাক হল । বলল “তুমি এমন করে কেন কথা বলছ” ?
“তো কেমন করে কথা বলব ? খেতে না ইচ্ছে করলেও কি তোমার কথা মত খেতে হবে ? তোমার কথা শুনতে হবে আমাকে ? কেন শুনতে হবে” ?
ঈশিতা আহত স্বরে বলল “তুমি এমন কেন করছ ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না” ।
“বুঝতে পারছো না” ? আমার মেজাজটা যেন আরো একটু খারাপ হয়ে গেল । “তুমি কচি খুকি না ঈশিতা । গত একটা বছরে তুমি একটা বারও কি আমার মনে কথা বুঝতে চেয়েছ ? বোঝার চেষ্টা করেছ ? এতো দিন তোমার সাথে আছি আমি কি চাই আমি কি বলতে চাই একবারও শুনতে চেয়েছে ? চাও নি । আর কোথা থেকে কে না কে এসেছে বিয়ে করার জন্য তাকে বিয়ে করে ফেলতে হবে” ?
ঈশিতা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম “ঈশি জীবনে টাকা পয়সা টাই কি সব ? ভালবাসার কি কোন মূল্য নাই ? সে ভাল জব করে আমি কি ঘাস চড়াই ? আমি ....” আমি কথাটা শেষ করতে পারি না ।
কেবিন ছেড়ে বের হয়ে যাই । পিছে ঈশিতা এখনও অবাক বিশ্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হাটতে হাটতে অফিসের বাইরে চলে এলাম ।
দুদিন অফিসেই গেলাম না । মোবাইল টাও সুইট অফ করে রাখলাম । সব কিছু জাহান্নামে চলে যাক । কিচ্ছু যায় আছে না ।
তিন দিনের দিন ঈশিতা আমার বাসায় এসে হাজির হল । ওকে দেখে বললাম “কেন এসেছো” ?
ও একটু মন খারাপ করল । তবুও মুখ হাসি হাসি করে বলল “ ভিতরে তো আসতে দাও । ভিতরে এসে বলি” ?
দরজা ছেড়ে দাড়ালাম । ও ঘরে ছোফার উপর বসতে বসতে বলল “চা খাওয়াবা না” ?
“আমি চা বানাতে পারি না” ।
“আহা আমার কাছে কত চাপা মারতে ! এমন কিছু নাই যে তুমি রান্না করতে পারো না । এখন চা বানাতে গিয়েই কাত” !
রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এলাম । ঈশিতা হাসি মুখে চায়ে চুমুক দিলো । ওর মুখ দেখে মনে ও খুব আনন্দে আছে ।
“বাহ ! ঠোট থেকে কাপ সরিয়ে ঈশিতা বলল । তুমি আসলেই তো খুব সুন্দর চা বানাও” ।
“খুব আনন্দে আছো মনে হচ্ছে” ?
“হুম । আনন্দে আছি । বিয়ে হচ্ছে না আমার” ?
কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা !
“কেন এসেছো বললে না” ?
“বিয়ের কার্ড দিতে এসেছি । তুমি আমার সব থেকে কাছের মানুষ না তাই তোমাকে সবার আগে কার্ড দিতে এলাম” ।
ঈশিতা একটা কার্ড বের করে দিল । “খুলে দেখো” ।
“না থাক । পরে দেখবো” ।
“আরে দেখো না ? দেখে বল কেমন হয়েছে? আমার হাজব্যান্ডের নাম টা দেখ” ।
অনিচ্ছা স্বত্বেও আমি কার্ডটা খুলে দেখলাম ।
কনে : আরিশা চৌধুরী ঈশিতা
পিতা :জামান চৌধুরী
:মাতা ... ইত্যাদি ইত্যাদি
এবার বরের পরিচর দেখলাম
বর; অপু হাসান একটু চমকালাম । অপু হাসান আমার নাম । পিতা; শহীদুল হাসান
মানে কি ? এখানে আমার নাম কেন ?
আমি ঈশিতার দিকে তাকালাম । ও মিটমিট হাসছে ।
“মানে কি” ?
“মানে এখনও বুঝতেছ না গাধা” !
“তোমার সেই ফরেন মাল কই” ?
“রিজেক্ট” ।
আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে । সত্যি কি হচ্ছে । ঈশিতা বলল “সেদিন আমার সাথে অমন ব্যবহার না করলেও পারতে ! ভাল ভাবে বললে কি হত না ? আমি কি না করতাম” ?
আমি ওকে আগের কথা মনে করিয়ে দিলাম । ও বলল “সবাইকে কি এক পাত্রে বিচার করা যায় । তুমি বলেই দেখতে” !
আমি হাসি বোকার মত । আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না এটা সত্যি সত্যি হচ্চে আমার সাথে । আমি ওকে বললাম “তো বিয়ে কি সামনের সপ্তাহেই করবা” ?
“কার্ড ছেপে গেছে দেখছ না ? আগামী সপ্তাহেই” ।
“ওকে মহা রানী যা ইচ্ছা” ।
আমার বিয়ে আগামী সপ্তাহে । সবাই কে দাওয়াত করলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩১