somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব মেঘ গর্জনে আমি রইবো তোমার পাশে

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ দুইদিন ধরে পৃথিশার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি । ওর সামনে পড়তে চাচ্ছি না । কেমন জানি একটা অস্বস্তি খেলা করছে বুকের ভিতর ।
কি সহজ সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল ওর সাথে আর এখন কেমন জানি হয়ে গেল । হয়তো কিছুই হয় নি কিন্তু নিজের কাছে কিছুতেই সহজ হতে পারছি না । স্যার ঢোকার পরপরই ক্লাস রুমে ঢুকেছি তাই পৃথিশা কথা বলার সুযোগ পায় নি । এখন স্যার ক্লাস রুম থেকে বেরোনোর সাথে সাথে বের
হয়ে যেতে হবে যাতে পৃথিশা আমাকে ডাকার সুযোগ না পায় । কিন্তু যেমনটি ভাবলাম তেমনটি হল ।
ক্লাস রুম থেকে বের হতে যাবো ঠিক এমন সময়ই পেছন থেকে ডাক শুনতে পেলাম
-এই আবির । দাড়া বলছি ।
পৃথিশা ডাকছে । ডেকে যখন ফেলেছে দাড়াতেই হল । আমার সামনে এসে বলল
-মোবাইল হারিয়ে ফেলছিস ?
-মোবাইল হারাবো কেন ?
-কাল আর পরশু মিলে কত বার ফোন দিয়েছি ?
আমি হিসাবটা জানি । পরশু দিন থেকে ও কম করে হলেও সত্তর বার ফোন দিয়েছে । মেসেজও পাঠিয়ে অনেক গুলো ।
আমি ধরি নি ।
বলতে গেলে ধরতে পারি নি । অস্বস্তির জন্য ।
-সাইলেন্ড ছিল তো বুঝতে পারি নি ।
-পরে তো দেখেছিস । ব্যাক করিস কেন ?
-আসলে ........
-থাক মিথ্যা কথা বলতে হবে না । আমি দুদিন ধরে দেখছি তুই আমাকে এড়িয়ে চলছিস । কারনটা বলবি ?
-কই না তো এড়িয়ে চলছি না তো । এড়িয়ে চলবো কেন ? আশ্চর্য ।
-আমার সাথে মিথ্যা কথা বলার ট্রাই করিস না । এখন পালাচ্ছিলি কেন ?
-পালাবো কেন আশ্চর্য ?
-আমি তোর বিহেবিয়ার খুব ভাল করে জানি । তুই যখন কিছু লুকাতে চাস তখন তুই কথার শেষে বারবার আশ্চর্য লাগাস । আর তোর নাক ঘামতে থাকে ।
কথা সত্য । নাকে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যি নাক ঘামতেছে ।
-না সত্যি এখন আমার একটা জরুরী কাজ আছে । এখনই যেতে হবে ।
মনে হল না যে পৃথিশা আমার কথা বিশ্বাস করেছে । বলল
-ঠিক আছে যা । তবে বিকাল বেলা দেখা করবি ।
আমি বলতে যাচ্ছিলাম টিউশনি আছে কিন্তু আমার বলার আগেই পৃথিশা বলল
-আমি জানি আজ তোর টিউশনি নাই ।
তারপর কি মনে হল পৃথিশা আমার আর একটু কাছে এসে দাড়াল । আমার হাতটা ধরে বলল
-আমার হাত ছুয়ে কথা দে যে দেখা করবি । বল ।
আমি অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম ।
ওর চোখের দিকে তাকাতেই অস্বস্তিটা আরো বেড়ে গেল । কি গভীর চোখেই না ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে । এই দৃষ্টিটা আমার একদমই পরিচিত নয় ।
-আচ্ছা আমি কথা দিলাম । আসবো ।
পৃথিশা ক্লাস রুমের ভিতরে চলে গেলো । আমি পালালাম ওখান থেকে ।

বলতে গেলে পৃথিশা আমার সব থেকে ভাল বন্ধুদের একজন । একজন বলছি কেন ও ই সব থেকে ভাল বন্ধু আমার । ওর সব থেকে যে দিকটা আমার ভাল লাগে সেটা ও সব কিছু সোজা সুজি বলে । কোন ঘুরিয়ে পেচিয়ে না । একজনকে ওর পছন্দ না সরাসরি বলবে যে পছন্দ না । কথা ঘোরাবে না । আর ও কোন কিছুতে লুকোছাপা করতো না । একটু এক গুয়ে । যা একবার বলবে তা করবেই ।
এমন একটা মেয়ের সাথেই ছিল আমার বন্ধত্ব । ওর সাথে সময় বেশ ভালই কাটছিল । আমাদের সম্পর্কটা বেশ সহজ আর স্বাভাবিক ছিল । আমরা একসাথে পড়তাম খেতাম ঘুরতাম গল্প করতাম । কি চমৎ‍কারই না দিন কাটছিল !
কিন্তু সব কিছু কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল দুদিন আগে । দুদিন আগে ওর সাথে সোঁনার গায়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম । আমাদের প্লান ছিল বিকালের মধ্যেই ফেরত্‍ আসবো । সোঁনার গা দেখার পর আমরা পাশের একটা গ্রামের পথ ধরে হাটছিলাম ।
সত্যি বলতে ওর সাথে হাটতে খুব ভাল লাগছিল । পৃথিশাকে হাসি খুশি লাগছিল । কিন্তু হঠাত্‍ ওর মুখটা কালো হয়ে গেল । আমি বললাম
-কি হল ? তোর মুখটা ওমন কেন হয়ে গেল কেন ??
ও আকাশের দিকে ইশারা করে বলল মেঘ জমছে ।
-তো কি হয়েছে ? আমরা গ্রামের কোন ঘরে আশ্রয় নিয়ে নেবো । সমস্যা কি ?
-না না চল । জলদি চল ।
-কেন ? দেখ না কি চমৎ‍কার একটা আবাহাওয়া । আর একটু থাকি না ?
কিন্তু পৃথিশার চেহারায় কেমন জানি একটা অস্বস্থিরতা দেখতে পেলাম । ও বারবার বলতে লাগল
-চল আবির । প্লিজ চল ।
আর থাকা গেল না । ওকে নিয়ে রওনা দিলাম । কিন্তু এতো দ্রুত সারা আকাশ কালো হয়ে গেল যে আমরা খুব বেশি যেতে পারলাম না । পুরো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল । আর বিদ্যুৎ‍ চমকাতে লাগল । বাধ্য হয়ে একটা বড় বটগাছের নিচে দাড়াতে হল ।
একটু পর খুব জোড়ে বিদ্যুৎ‍ চমকাতে লাগলো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম পৃথিশা কেমন জানি ভয় পাচ্ছে । প্রতিটা বর্জ্যপাতের সাথে ওর চেহারায় কেমন একটা ভয়ে চিহ্ন দেখা দিচ্ছে । বাচ্চা মেয়ে মত ভয়ে কুড়রে উঠছে ও ।
আমি ওর হাত ধরলাম ।
-কি হয়েছে পৃথু ? এমন করছিস কেন ?
ঠিক তখনই খুব জোড়ে বাজ পড়ল । পৃথিশা এতোই ভয় পেলো যে আমাকে জড়িয়ে ধরল । এতো জোড়ে জড়িয়ে ধরল যে আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগা আরাম্ভ করল ।
প্রতিবার বাজ পড়ছিল আর ও আরো একটু একটু করে আমাকে জড়িযে ধরছিল । কি করবো ঠিক মাথা কাজ করছিল না । তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে ও বর্জ্যপাতে ভয় পাচ্ছিল । আমার জড়িয়ে ধরে ও আশ্রয় খোজার চেষ্টা করছিল । যতক্ষন আকাশে মেঘ ডাকছিল ও আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল । তবে শেষের দিকটা ওর ভয় পাওয়ার মাত্রটা একটু কম ছিল ।
মেঘ ডাকা কমে গেলে আমরা ঢাকা দিকে ফিরে আসি । পুরো রাস্তা ধরে ও এক দম চুপ করে থাকল । আমার হাতটা একটা বারের জন্যও ছেড়ে দেয় নি । মনে হচ্ছিল যেন বাচ্চা একটা মেয়ে । কোন কিছু দেখে ভয় পাচ্ছে । তাই আমার হাত ধরে রেখেছে ।
ওকে হলে পৌছে দিলাম কিন্তু আমার মনের ভিতর একটা অস্বস্তি রয়েই গেল । বার বার ঐ সময়ের কথা আমার মনে পরছিল । পৃথিশা কিভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল ।
এই অনুভুতিটা আমি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছি না । তাই বিকেল বেলা যখন ওর সাথে দেখা হল খুব অস্বস্তি লাগছিল ।

আমি বসে ছিলাম জারুল গাছটার নিচে । পৃথিশা কেমন এলোমেশো পা ফেলে এগিয়ে আসছিল । কিছু একটা ভাবছিল । কাছে আসতে ওকে বললাম
-কেমন আছিস ? কেন জানি ওকে তুই করে বলতে একটা কষ্ট হচ্ছিল ।
-ভাল । পৃথিশা হাসল ।
আমার কাছে এসে বসল । কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকল । একসময় বলল
-কিছু বলছিস না কেন ?
-কি বলব ? তুই না বললি কি যেন বলবি ।
পৃথিশা আরো কিছুক্ষন চুপ করে থাকল । তারপর হঠাৎ‍ করে বলল
-তুই খুব অবাক হয়ে ছিলি না ?
- হুম ? কি বললি ?
-ঐ দিন যে তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম । অবাক হয়েছিলি ?
-একটু হয়েছিলাম ।
-এই জন্য আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলি ?
-পালাবো কেন ? আশ্চার্য !
পৃথিশা হেসে ফেলল ।
-তুই আসলেই একটা গাধা । ঠিক মত মিথ্যা কথাও বলতে পারিস না ।
আমি কিছু বললাম না । ও আবার বলল
-জানিস আবির আমি মেঘ ডাকা খুব ভয় পাই । সেই ছোট বেলা থেকে । এতো ভয় লাগে আমার । এই জন্য তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম । ভয়ে ।
-ঠিক আছে সমস্যা নাই ।
-জানিস আগে এতো ভয় পেতাম । মাঝে মাঝে তো অজ্ঞান হয়ে যেতাম ।
-এতো ভয় কেন পাস ?
-জানি না ।
-ওকে সমস্যা নাই । চল কিছু খাওয়া যাক ।
আমি উঠে দাড়ালাম ।
-আবির বস । আমি এখনও কথা শেষ করি নি ।
আমি আবার বসে পড়লাম । ও বলল
-আমি সারা জীবন মেঘ ডাকাকে এতো ভয় পেয়েছি তোকে কিভাবে বোঝাবো ? কিন্তু সেদিন যখন তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম প্রথম প্রথম খুব ভয় লাগছিল । কিন্তু একটা সময় এসে আমি লক্ষ্য করলাম আমার আর ভয় লাগছে না । আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম । তোমার বুকে আমি নিজেকে এতো নিরাপদ বোধ করছিলাম যে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না ।
পৃথিশা চুপ করে থাকল কিছুক্ষন ।
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।
-আবির ?
-হুম ।
আমি পৃথিশার দিকে তাকালাম । ওর ঠোট দুটো কাঁপছে । কিছু যেন বলতে চাইছে । কিন্তু বলতে পারছে না । ওর চোখ দুটো নির্বাগ চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখের ভিতে পানি জমতে শুরু করেছে ।
আমি হঠাৎ‍ করে বুঝে ফেললাম ও কি বলতে চায় ।
হঠাৎ‍ করে সেই অস্বস্তিটা চলে গেল ।
ওখানে কেমন যেন একটা ভাল লাগা আমার পুরো মন কে স্পর্শ করল । ওকে বললাম
-তোকে কিছু বলতে হবে না ।
ওর হাত দুতো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম
-আমি সব সময় তোর পাশে থাকবো ।

পৃথিশার চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ল । আমি সেই অদ্ভুদ ভাল লাগা অনুভূতি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:২০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×