somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার ছোট্ট গল্প

১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ মেলেই ফারিয়ার মনটা ভাল হয়ে গেল । আবীর ওর পায়ের দিকে বেডের উপর বসে বসে মোবাইলে কি যেন দেখছে । আবির এখনও খ্যাল করেনি যে ও চোখ মেলেছে । ফারিয়া কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থাকল ।
আবীরকে কত বিপদেই না ফেলে দিয়েছে । আজ পাঁচ দিন ধরে ফারিয়ার শরীর খারাপ । সেদিনের রাগ করে হলে ফেরার পর ফারিয়ার জ্বর আসে । ফারিয়ার সাথে এই একটা অদ্ভুদ ব্যাপারটা ঘটে । কোন কারনে যদি খুব বেশি রেগে যায় তাহলে ওর গায়ে জ্বর চলে আসে ।
আবীরের সাথেই সেদিন রিক্সায় করে যাচ্ছিল । এমন সময় আবীরের সাথে রাগ করে ও রিক্সা থেকে নেমে পড়ে । এতো রাগ লাগছিল এখন আবীরের উপর , অন্য কিছুর দিকে তাই ওর খ্যালই ছিল না । হলে ফেরার পরও ও ও রাগ কে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছিল না । ফারিয়া নিজেও বুঝতে পারছিল রাতে ওর জ্বর আসবে ।
সন্ধ্যা থেকে ওর খারাপ লাগা শুরু করে । রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এল । সকাল হতে হতে ফারিয়ার আর হুস নেই । তারপর যতবারই ওর একটু জ্ঞান ফিরেছে প্রতিবারই ও কেবল আবীরের মুখটাই দেখেছে । উদ্দিগ্ন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ফারিয়া ক্ষীন কন্ঠে ডাক দিল ।
-আবির ।
মোবাইল থেকে মুখ সরিয়ে আবির ওর দিকে তাকাল । একটু হাসল শুকনো মুখে । কি চেহারা হয়েছে এই কয়দিনে । মুখে চার পাঁচ দিনের দাড়ি চোখের নিচে কালি পড়েছে চুলগুলো উস্কোভুস্কো ।
-কি চেহারা হয়েছে তোমার ?
ফারিয়ার প্রশ্ন শুনে আবির হেসে ফেলল । পায়ের কাছ থেকে সরে এসে একদম ওর কাছে বসল । বলল
-যে প্রশ্ন আমার করার দরকার সে প্রশ্ন তুমি করছো ?
ফারিয়া জবাব দিলো না । কেবল তাকিয়েই থাকল আবিরে দিকে । আবীর ওর কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখল ।
-নাহ আর জ্বর নাই । কি ভয়টাই না পেয়েছিল । এমনটা কেউ করে ?
হঠাৎ ফারিয়ায় সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল । মুখটা অভিমানে ভরে উঠল আবার । বলল
-তোমারই তো দোষ ?
-আমার দোষ ?
আবীর আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল । বলল
-আচ্ছা কার দোষ সেটা পরে বের করলে চলবে । এখন আবার রেগে যেও না প্লিজ । আবার শরীর খারাপ করবে ।
তারপর ফারিয়া কপালে ছোট্ট করে একটা চুম খেল । এতে কাজ হল ।
ফারিয়ার অভিমান নিমিষেই পানি হয়ে গেল । আবীর এই অস্ত্রটা প্রায়ই ব্যবহার করে । যখনই ফারিয়া খুব বেশি রেগে যায় ব্যস একটা কিস করলেই হল । ফারিয়া কিছুতেই আর রাগ ধরে রাখতে পারে না । আবীর আবার বলল
-তোমার চেকআপের সময় হয়ে গেছে । দেখি আমি কাউকে নিয়ে আসি ।
আবীর উঠে দরজার দিকে পা বাড়াল । ফারিয়ার আবার অভিমানে মন ভরে উঠল ।
আবীর ওকে কেন রেখে যাবে এখন ? কি সুন্দর লাগছিল ফারিয়ার ।
আর একটু পর চেকআপ করলে কি হয় ? ফারিয়া মনে মনে বলল ঐ দিন তুমি আমাকে চলে আসতে দিয়ে ছিলে ! আর আজকেও আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ ।
আবীর দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ঘুরে এল । বলল
-এমন পাগলামো করলে কি চলে ! আর আমি কোথায় চলে যাচ্ছি তোমাকে ছেড়ে ! যাই এখন ? ডাক্তার নিয়েই আবার ফিরে আসবো !
-যাবো ?
- আচ্ছা যাও ।
-একটু হেসে বল । এরকম মুখ গোমরা করে কেন বলছো ? এখনই চলে আসবো ।
-আচ্ছা যাও । এখনই আসবা কিন্তু ।
ফারিয়া খানিকটা অবাক হল । খুশিও হল ।
আবীর কিভাবে যেন ওর মনে কথা বুঝে ফেলে । এর আগেও এমনটা হয়েছে ।
একদিন মাঝ রাতে ফারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় । রুমে ঐ দিন ফারিয়া একাই ছিল । রুমমেট বাড়িতে গিয়েছিল । ঘুম ভাঙ্গার পর ফারিয়ার কেমন জানি ভয় লাগতে আরাম্ভ করল । ওর বারবার মনে হচ্ছিল কেউ যেন ওর রুমে রয়েছে । ঠিক এই সময়ই ওর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল । ফোন রিসিভ করে ফারিয়া কাঁপা গলায় বলল
-হ্যালো ।
-ভয় পেয় না সোনা পাখি । আমি আসি তোমার সাথে ।
-আমার ভয় করছে । তুমি কোথায় ?
-এই তো তোমার কাছেই । বারান্দায় আসো ।
বারান্দায় গিয়ে ফারিয়া দেখল সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছে । ল্যাম্প পোষ্টের আলো দাড়িয়ে আছে ফোন কানে ধরে । ওকে দেখে হাত নাড়ল ।
ফারিয়ার সব ভয় উবে গেল । বেশ অবাকও হল । আবীর কিভাবে বঝল যে ফারিয়ার ভয় করছে !
আর আজকেই বা কিভাবে বুঝল ? ফারিয়াতো মুখ ফুটে কিছুই বলে নি ।

আবীর যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই একজন মহিলা কেবিনে ঢুকল । পোষাক দেখে মনে হল ডাক্তার । ওর মাথার কাছে রাখা রিপোর্ট কার্ডটার দিকে চোখ রেখে মহিলাটা বলল
-ফারিয়া কি খবর ?
-জি ভাল ।
ফারিয়ার পালস দেখলো ।
-তুমিতো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে । এখন তো দিব্যি ভাল ।
এমন সময় আবীয় কে দেখা গেল দরজার কাছে । কার সাথে যেন কথা বলছে । ফারিয়া এক ভাবে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল ।
-কে হয় তোমার ?
-জি ?
ডাক্তারের কথায় ফারিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকাল ।
-জি ?
চোখের ইশারায় ডাক্তার আবীর কে দেখিয়ে আবার বলল
-কে হয় তোমার ? বয়ফ্রেন্ড ?
ফারিয়ার কেমন জানি লজ্জার মত লাগল । তারপর মনে হল কেন লজ্জা পাচ্ছে ?
-জি বয়ফ্রেন্ড ।
-অনেক ভালবাসো ?
- হুম ।
ডাক্তার হাসল । ফারিয়ার কেমন জানি পরিচিত মনে হল মহিলাটির হাসি । উনি আবার বলল
-ও কিন্তু তোমাকে অনেক ভালবাসে ।
ফারিয়া কিছু না বলে ডাক্তার মহিলার দিকে তাকাল । ডাক্তার মহিলাটি আবার বলল
-তুমি হাসপাতালে আসার পর থেকে ও কিন্তু একটা বারও তোমাকে ছেড়ে যায় নি । একটা মিনিটও ঘুমায় নি । একটা মিনিটের জন্যও না । সবসময় তোমার দরজার ঐ খানে দাড়িয়ে ছিল । আমি কত করে বললাম বাসায় যেতে ! কিছুতেই নড়ল না । ও যে তোমাকে এতো সিরিয়াসলি ভালবাসে আমি বুঝতেই পারি নি ।
তখনই ফারিয়ার একটু খটকা লাগল । আবীর ওকে ভালবাসে তা এই ডাক্তার কিভাবে বুঝবে ? ইনার চেহারাটাও কেমন জানি পরিচিত মনে হচ্ছে ।
-আচ্ছা তুমি একদম সুস্থ হয়ে গেছ । কালকেই রিলিজ করে দেব ।
বলে আবার হাসলেন । তখনই ফারিয়া মহিলাকে চিনে ফেলল ।
আরে এটা তো আবীরের আম্মু !! আবীরের আম্মুও তো ডাক্তার । এই জন্য ওনার হাসি এতো পরিচিত মনে হচ্ছিল ।
ব্যাপারটা ধরতে পেরে ফারিয়ার কেমন জানি অস্বস্থি লাগা শুরু করল ।
-আচ্ছা ফারিয়া তুমি বিশ্রাম নাও । আর গাধাটাকে বল বাসায় যেতে ।
-কি হল মা আমাকে কিছু বলছ ?
আরীর ঠিক কথনই কেবিনের ভিতর ঘুকল । আবীরের মা বলল
-দেখেছ গাধার নাম নিয়েছি গাধা এসে হাজির ।
ফারিয়া হেসে ফেলল । আবীরকে উদ্দেশ্য করে আবার বলল
-এখন তো ও সুস্থ । এখন বাসা যা । পাঁচদিন ধরে গোছল করিস না । তোর গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে ।
-আচ্ছা মা যাচ্ছি ।
আবীরের মা চলে গেলেন ।
-কি আমার সোনাপাখি । কেমন আছো এখন ?
-উনি তোমার মা ?
ফারিয়া মুখে অস্বস্থির একটা ভাব ফুলে উঠল । আবীর খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-হুম । কেন ?
-ছি! ছি! উনি আমাকে কি ভাববেন ?
-কেন কি হয়েছে ।
-উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তুমি আমার কি হও । আমি নির্লজ্জের মত বলেছি বয়ফ্রেন্ড !
-আরে কি হয়েছে তাতে ? আম্মু খুব ফ্রী । কিছু মনে করে নি ।
-উনি এলে আমি লজ্জায় মরে যাবো ।
ফারিয়ার আসলেই খুব লজ্জা লাগছিল । আবার খুব ভালও লাগছিল । আবীরের আম্মু যে ওকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে এটাই সব থেকে বড় কথা ।
- আবীর ।
-বল ।
-আই এম সরি ।
-সরি কেন ?
-ঐ দিন সব দোষ আমার ছিল । আমি না বুঝেই তোমার সাথে রাগা রাগি করেছি ।
আবীর হাসল ।
-ঠিক আছে বাবা । তুমি রাগ করবে না তো কে রাগ করবে বল ?
-ঐ দিন নিলিমার সাথে তোমাকে হেসে কথা বলতে দেখে এমন রাগ উঠে গেল । আমার এমনটা করা একদম উচিত্ হয়নি ।
-আচ্ছা বাবা । এবার বন্ধ কর । যা হবার হয়েছে ।
আবীর খুব কাছে এসে বসল ।
-তুমি আমাকে ভালবাসো তাই রাগ করেছ । না বাসলে তো করতে না ।
ফারিয়ার কি মনে হল আবীর কে জড়িয়ে ধরল । অবশ্য ওর মার চলে আসার ভয় আছে ।
থাকুক !
কতদিন আবীরকে জড়িয়ে ধরে না । জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ফারিয়া বলল
-আমি আর কোন দিন তোমার উপর রাগ করবো না । কোন দিন না । একেবারে লক্ষি মেয়ে হয়ে থাকবো ।
-লক্ষি মেয়ে হওয়া লাগবে না । তুমি যেমনটি আছো ঠিক তেমন টি থাকো ।
কতক্ষন আবীরকে জড়িয়ে ধরেছিল আবীর ওর বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল ।
-কি হল ?
-মা !
আবীর কেবল এই কথাটাই বলল । ফারিয়া তড়িঘড়ি করে আবীরকে ছেড়ে দিল । চোখ তুলে দেখলে আবীরের মা । দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে । ফারিয়ার লজ্জার সীমা রইল না ।


এখানে আছে গল্পটা
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৪৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×