somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি অপেক্ষা করবো ঐদিন পর্যন্ত !!!

৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যান্টিনে ঢুকেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । আজও ছেলেটা ক্যান্টিনে বসে আছে । কয়েকদিন থেকেই লক্ষ্য করছি ছেলেটা আমার ভার্সিটির ক্যান্টিনে কিংবা ওর ডিপার্টমেন্টের আসে পাশে ঘোরাফেরা করছে ।
আগে যখন করতো খুব একটা খারাপ লাগতো না । কিন্ ঐ ঘটনার পর আর আর ভাল লাগে না । মেজাজটা খারাপ হয় ।
একবার মনে হল ক্যান্টিন থেকে চলে যাই । অন্যান্য দিন যেমন পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম আজও যাই ! কিন্তু তারপর মনে হল আমি কেন পাশ কাটাবো ? আমার লুকানোর মত কিছু নাই ! আজ এর একটা দফারফা করতে হবে ।
সরাসরি ছেলেটার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম । ছেলেটা আরাম করে চা খাচ্ছিল । আমাকে দেখে চা খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল । কিছু যেন বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছেনা এমন অবস্থা ।
-আপনি এখানে কি করছেন ?
-চা খাচ্ছি ।
-চা খাচ্ছি মানে ? এখানে কেন ?
-না মানে এখানে কি চা খাওয়া নিষেদ নাকি ?
-দেখুন বেশি চালাকি করবেন না । আপনার অফিস মতিঝিলে আর আপনি এখানে এসে প্রতিদিন চা খাচ্ছেন ! ফাজলামো পেয়েছেন ?
ছেলেটা কোন কথা বলল না । এমন সময় সুমনকে আসতে দেখলাম । আমার মুখ দেখে নিশ্চই কিছু বুঝতে পেরেছে । কাছে এসে বলল
-কি হয়েছে রে নীলু ?
-কিছু হয় নি ।
-আমাকে বল কি হয়েছে ?
-আরে বললাম তো কিছু হয় নি । তুই যা ।
সুমন ছেলেটার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেল । আমি বললাম
-আপনি আর কখনও এখানে আসবেন না । সুমনকে দেখলেন না ? ওর মাথা কিন্তু খুব গরম । ওকে বললে কিন্তু আপনার হাতপা সব গুড়ো করে দেবে ।
ছেলেটা তবুও চুপ করে থাকল । এই ছেলেটা এমন নির্বিকার কেমন করে থাকে ? আর কিভাবে আমার সামনে আবার আসে আমি ভেবে পাই না । আবার বললাম
-কথা গুলো কি বোঝাতে পারলাম আপনাকে ? আপনি আর আসবেন না ।
অনেকক্ষন পর ছেলেটা মুখ খুলল
-আমি তোমার সাথে অল্প কয়েকটা কথা বলতে চাই ।
ছেলেটার কণ্ঠে কেমন যেন একটা আকুতি ছিল । একবার মনে হল শুনি কি বলতে চায় ! কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলাম । খুব কঠিন করে বললাম
-আপনার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না ।
ছেলেটা কেমন জানি আহত হল । তবে আর কিছু বলল না । মাথা নিচু করে ছেলেটা চলে গেল ।
আমি ছেলেটার চলে যাওয়া দেখলাম । চোখের আড়াল হতেই কেন জানি আমার বুকের মধ্যে কেমন জানি তোলপাড় শুরু হল । আমার মনে হল আমার সব কিছু যেন আমার কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছে ।
কেন জানি আমার খুব কান্না পেতে লাগল ।
বারবার মনে হল ছেলেটার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার কেন করলাম ? ছেলেটার তো কোন দোষ নেই । ছেলেটাতো আমাকে পছন্দই করেছিল ।
আমি নিজে ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছি ওখানে কেবল আমার জন্য ভালবাসাই ছিল । অন্য কিছু না । তাহলে কেন খারাপ ব্যবহার করলাম ছেলেটার সাথে ?
ক্যান্টিনের কোনার টেবিলটায় বসে পড়লাম ও যেখানে বসে ছিল ।

সজিব মতিঝিলের একটা ব্যাংকে চাকরি করে । সজিবকে প্রথম দেখি মানে ও আমাকে দেখে ওরই অফিসে । নাবিলার কি একটা কাজে গেছিলাম ঐ ব্যাংকে ।
আমরা যখন ওর কাছে গেলাম প্রথম কিছুক্ষন কেন যেন একটা ঘোর লাগা চোকে সজিব আমার দিকে তকিয়ে থাকল ।
আমি দেখতে কোন কালেই খুব বেশি সুন্দর ছিলাম না । কিন্তু সজিবের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার নিজের কাছে মনে হল হয়তো আমি খুব সুন্দর হয়ে গেছি । ঐ দিন বাসায় এসে আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে অনেক বার দেখলাম ।
তারপর থেকেই সজিব আমার আসে পাশে ঘোরাফেরা করা শুরু করে দিল । আমমি কখন ভার্সিটিতে যাই কখন আসি সব যেন ওর মুখস্ত ছিল । মাঝে মাঝে ভাবতাম এই ছেলেটা কি কোন কাজ কাম নাই । ব্যাংকের চাকরি ফেলে মেয়েদের পিছনে
ঘোরাঘুরি করছে । কিন্তু আমার ব্যাপারটা খারাপ লাগতো না ।
আমার দিকে ও যখন তাকাত অদ্ভুদ এক ভাল লাগার দৃষ্টি তাকাত । সত্যি কথা বলতে কি সজিবকে আমার খুব একটা খারাপ লাগত না । দেখতে সুদর্শন । ভাল জব করে আর সব থেকে বড় কথা সজিবের চোখ গুলো খুব সুন্দর ছিল । যখন আমার দিকে তাকাত কেমন যেন একটা দুত্যি ছড়াত ! সজিবের ঐ দৃষ্টি আমার খুব ভাল লাগত ! একদিন তো সোজাসুজি আমার সামনে এসে হাজির ।
বাসায় যাচ্ছিলাম । রিক্সায় উঠতে যাবো ঠিক এমন সময় আমার সামনে এসে হাজির ।
-আপনার সাথে কিছুক্ষন কথা বলা যাবে।?
- কেন আপনার সাথে কথা বলব? আপনাকে কে কি আমি চিনি ?
-চিনেন না । চিনবেন । সমস্যা তো নাই ।
-সমস্যা আছে ।
-আমার মা অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতে মানা করেছে । আর আমি মা বাবার বাধ্য সন্তান ।
সজিব খুব হাসলো আমার কথা শুনে । বলল
-আচ্ছা । যান তাহলে । তবে গুড বাই বলবো না । আপনার সাথে খুব জলদিই দেখা হবে ।
আমি তখনও সজিবের ঐ কথার মানে বুঝতে পারি নি ।
ঠিক দুদিন পরে ও আমার বাসায় হাজির । একা আসে নি ওর মাকে নিয়ে এসেছে ।
আমার এক পরিচিত চাচার মাধ্যমে এসেছে । আমার মা বাবাও জানতেন কিন্তু আমাকে বলেন নি । সজিবই নাকি মানা করেছিল ।
আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম । কিন্তু নিজের মনের মধ্যে খুব ভাল লাগছিল । অদ্ভুদ এক আনন্দ হচ্ছিল ।
কিন্তু তবুও মুখ যথাসম্ভব গম্ভির করে সজিবের মার সামনে গেলাম । ভদ্রমহিলা অনেকক্ষন আমাকে দেখলেন । কথা বার্তা জিজ্ঞেস করলেন । যাওয়ার সময় আমাকে ৫০০ টাকাও দিয়ে গেলেন । আর বলে গেলেন পরে জানাবে । এটা আমার কাছে কেমন যেন লাগল ।
দুচার দিন পার হয়ে গেল তবুও ঐ দিক দিয়ে কোন খবর পেলাম না । নিজের কাছেই খুব অস্বস্থির লাগছিল । শেষে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিজেই মার কাছে জিজ্ঞেস করলাম ।
কিন্তু মা যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ।
সজিবের মার নাকি আমাকে পছন্দ হয় নি । আমার গায়ের রং নাকি ফর্সা না । সজিবের সাথে আমাকে মানাবে না ।
ঐ দিন রাতে অনেক কেঁদে ছিলাম আমি । নিজের সৌন্দর্য নিয়ে আমার কখনই কোন আক্ষেপ ছিল না । কিন্তু ঐ দিন নিজে কে বড় হীন মনে হল । বড় ক্ষুদ্র মনে হল ।
তরপর থেকেই সজিব কে আবার আমার আসে পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম । কিন্তু খুব কঠিন ভাবেই ওকে এড়িয়ে চললাম ।

ক্লাসক্লাস থেকে বের হতে হতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল । প্রায় বিকেল হয়ে গেছে । মনটা খারাপই ছিল সকালের ঘটনার জন্য ।
গেটের কাছে আসতেই সজিবকে আবার দেখলাম । আমার ভার্সিটির গেটের কাছে একটা এটিএম বুথ আছে । এটিএম বুথের সিড়ির এক কোনায় পা ছড়িয়ে চুপচাপ বসে আছে ।
মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে । অপেক্ষা করতে করতেই মনে হয় এমনটা হয়েছে । আমার এবার সত্যি সত্যিই খুব মায়া লাগল । আমাকে দেখেও এগিয়ে এল না । কেবল তাকিয়ে থাকল আমার দিকে । নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছিল ।
এমন করে খারাপ ব্যবহার টা না করলেই চলত । আমি নিজেই এগিয়ে গেলাম ।
-আপনি এখনও কেন বসে আসেন ?
-এটিএম বুথে টাকা আছে কিনা চেক করতে এসেছি । তোমার সাথে দেখা করতে আসি নি ।
এতো মন খারাপের মধ্যেও আমার হাসি পেয়ে গেল । বললাম
-আপনি কোন ব্যাংকে চাকরি করেন আর এটা কোন ব্যাংকের এটিএম ?
সজিব কি বলবে বুঝতে পারল না ।
-অজুহাত দেখাবেন একটু ভাল করে দেখান ।
আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সজিব বলল
-আমার অল্প কয়টা শুনবে না নীলু ?
সজিবের আকুতিটা কিছুতেই ফেলতে পারলাম না । ওকে নিয়ে এলাম ক্যান্টিনে । বললাম
-বলুন আপনার কথা ।
সজিব প্রথমেই কি বলবে কিছু বুঝতে পারল না । নিজের পকেটে হাত দিয়ে একটা আংটি বের করল । আমার দিকে আংটিটা এগিয়ে দিয়ে বলল
-এটা আমি তোমার জন্য কিনেছিলাম ।
-কিন্তু এটাতো আমার না । এই অধিকার তো আপনার মা আমাকে দেয় নি । আমি কেন নিবো ?
-নীলু আমি .... আমি ....
-আপনি কি ?
-নীলু আমি আমার সবটুকু ভালবাসা নিয়ে তোমার জন্য এই আংটিটা কিনেছিলাম । কেবল তোমার জন্য । পরিস্থিতি যাই হোক না কেন এটা সব সময় তোমারই থাকবে ।
-যদি আমি এটা না নেই ?
-হ্যা সেইটা আলাদা কথা । তুই ইচ্ছা করলেই আমাকে রিফিউজ করতে পারো ?
সজিব আর কিছু বলল না । চুপ করে বসে থাকল কিছুক্ষন । একটুপর বলল
-নীলু আমার কথা গুলো আমি বললাম । সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব তোমার । আমি আর তোমার সামনে আসবো না । তবে আমি বিশ্বাস করি তুমি একদিন এই আংটিটা পড়বে । আমি ঐ দিনটার জন্য অপেক্ষা করবো । দিনটা আজ হতে পারে কাল হতে পায়ে অথবা ...
সজিব কথা শেষ করল না
-অথবা ?
-আমি অপেক্ষা করবো নীলু । আমি অপেক্ষা করবো ।
সজিব আর দাড়াল না ।
আমি আংটিটার দিকে তাকিয়েই রইলাম ।

গল্পটা এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:১৫
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×