সারাদিনে মনটা বেশ খারাপই ছিল । এমন একটা দিনে অন্তত একটা বার ইভার সাথে দেখা হলে ভাল লাগত ।
আর ইভাটা যে কি একটা খবর পাঠাতে কি পারতো না !!
একটু না হয় মনমালিন্য হয়েছে তাই বলে কি এমন একটা দিনে একটু খোজ পাঠানো যেত না ? ও তো খুব ভাল করে জানে আমি মুখে যাই বলি না কেন ওকে আমি ঠিকই ভালবাসি ।
এমন একটা দিন তো আর প্রতিদিন আসে না ! বছরে মাত্র একটাবার আছে !
মনটা খারাপই হয় আমার । যাক আর কি করার ? এই মেয়ে গুলো বড় ঝামেলা পূর্ণ । না দেখা হয়েছে ভাল হয়েছে !
একটু যেন রাগ করার চেষ্টা করলাম ইভার উপর । কিন্তু খুব বেশি লাভ হল না । মেয়েটাকে সত্যিই মিস করতেছি আজকের এই দিনে ।
মনটা খানিকটা খারাপই হল । আমি রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম । এখন একটা ভাল মুভি দেখলে মনটা খানিক হয়তো ভাল হতে পারে !
কিন্তু আজকে যে মুভিটা এনেছি এটা যে কেমন ভাল ঠিক বুঝতে পারছি না ।
মুভির নাম জাংলী জাওয়ানী !
নাম টা দেখেই আমার মন খানিকটা ভাল হয়ে গেল । দরজাটা আর এক বার দেখলাম । মুভি চলাকালীন সময়ে মা চলে আসলে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে । দরজা বন্ধই আছে ।
মুভি চালিয়ে দিলাম । প্রথমেই একটা জঙ্গলের দৃশ্য । কেউ দৌড়াচ্ছে । ভাব দেখে মনে হল এই নায়ক । টারজানের মত পোষাক পরেছে ।
কিন্তু বেটা দৌড়াচ্ছে কেন ? কোন জংলী জন্তু কি আক্রমন করেছে ? একটু পরেই দৌড়ানোর কারন বুঝতে পারবো ।
-সুমন ? এই সুমন ?
মা ঠিক এই সময় ডাক দিল । আসল মজা তো এখনই আরাম্ভ হবে এখন ডাক দিলে ভাল লাগে ?
দরজা না খুলেই বললাম
-কি হয়েছে মা ?
-দরজা খোল !
-কেন মা ? এতো তাড়াতাড়ি ভাত খাবো না ।
-আরে খুলবি তো ! কে যেন তোর সাথে দেখা করতে এসেছে ।
ঘড়ির দিকে তাকায়ে দেখলাম প্রায় নয়টা । মস্বলে নয়টা মানে অনেক রাত ।
এতো রাতে আমার সাথে আবার কে দেখা করতে এলো ? অনিচ্ছা থাকা সত্তেও জাংলী জাওয়ানী বন্ধ করতে হল ।
সিড়ি ঘরে গিয়ে দেখলাম গেটের বাইরে এলাকার সোমা জোয়ার্দ্দার দাড়িয়ে আছে । তার পেছনে একটা ছেলে যাকে আমি চিনি বলে মনে হল না ।
কিন্তু ঐ ছেলেটার পিছনে যে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখেই আমার বুকে ধাক্কার মত খেলাম ।
সবুর মামা !
একরাশ বিশ্ময় নিয়ে ভাবলাম ইনি এখানে কি করছে । সবুর হল ইভার মামা । আমাকে খুব ভাল করেই চেনে । আমাকে দেখতেই বলল
-ইভা কোথায় ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ।
-জ্বি আমি কিভাবে বলব ইভা কোথায় ?
-না মানে ও আসলে বিকেল বেলা বাইরে গেছে এখনও ফিরে আসে নি ।
আমি লক্ষ্য করলাম আমার বুকের মধ্যে ততক্ষনে তোলপাড় আরাম্ভ হয়ে গেছে । আমি বললাম
-গত পনের দিন থেকে তো ইভার সাথে আমার কোন যোগাযোগই নাই ।
কথাটা আসলেই সত্য । ইভার সাথে রাগারাগি করেছিলাম ফেব্রুয়ারির এক তারিখে । আর আজ ১৪ তারিখ । এর মধ্যে ওর সাথে আমার আর কোন যোগাযোগই হয় নি ।
-তাহলে ও গেল কোথায় ?
মার দিকে তাকালাম দেখলাম মার মুখ গম্ভীর । বাবাও দেখলাম মুখ ভার করে বসে আছে । সবুর মামা আরো কিছুক্ষন বসে থেকে চলে গেল ।
আমি আবার দরজা বন্ধ করে জাংলী জাওয়ানী দেখতে শুরু করলাম । কিন্তু জংলী নায়ক কেন দৌড়াচ্ছিল সেটা আর জানার আগ্রহ নাই । বারবার মনে হচ্ছিল
ইভা কোথায় গেল ?
কেনই বা গেল ?
এক হিসাব দিয়ে দেখলে ও যাক বা না যাক সেটা আমার দেখার বিষয় না । কারন শেষবার যখন ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল আমি ওর সাথে বেশ রাগারাগি করেছিলাম । একেবারে রিলেশন ব্রেকআপ !
অবশ্য এর পেছনে যুক্তুযুক্ত কারনও ছিল । আমি জগতে দুইটা জিনিস খুব অপছন্দ করি ।
এক, কেউ আমাকে অবহেলা করলে
আর দুই, কেউ আমার সাথে মিথ্যা কথা বললে !
ইভা এই দুইটা কাজই করেছিল । আর ......
আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না । সে যাই করুক না কেন তাকে তো আমি ভালবাসি । মনটাকে কিছুতেই শান্তি দিতে পারলাম না ।
বারবার মনে হটে লাগলো মেয়েটা কোথায় গেল??
। তার থেকে বড় কথা মেয়েটা কেন গেল !!!!
বিঃদ্রঃ যারা আমার লেখা পড়েন তারা সবাই হয়তো ভাবছেন প্রতিবারের মত এইবারও আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখছি । কিন্তু আজকের এই ঘটনাটা একদম সত্যি । এরকম একটা ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমার জীবনে এসেছিল । এবং ঐদিনকার সন্ধ্যাটা ঠিক এমনই ছিল ।
ইভা যখন চলে পালিয়ে যায় সবাই ভেবেছিল ইভা হয়তো আমার সাথেই ভেগেছে । এমন কি আমার মা ও আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে জানতে চেয়েচিল সত্যি আমি কিছু জানি কি না । আমার মুখের কথায় সেদিন আমার মা খুব বেশি ভরসা করতে পারে নি ।
রাত একটার দিকে জানা যায় ইভা এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে পালিয়েছে । ছেলেটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত ।
কাজটা ইভা মোটেও ঠিক করে নি । কিন্তু আমার মনে হয় এর পেছনে আমারও দোষ আছে ! যদি আমি ঐদিন ওর সাথে ওমন ব্যবহার না করতাম তাহলে হয়তো ও যেত না !! দোষ আমারও ছিল !!
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস, যে দিন আমার গার্লফ্রেন্ড পালিয়েছিল
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ
'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস
রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন