somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষতো খাল কেটে কুমির আনে আর আমি বিয়া কইরা বউ আনছি /:) /:) /:)

১০ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

থর্নটন নিভেন ওয়াইল্ডার একটা কথা আমার খুব মনে ধরেছে । ভদ্রলোক খুব বুদ্ধিমানের মত একটা কথা বলেছেন । কথাটা এরকম
“বিয়ে হল এক ধরনের ঘুষ যেটা পেলে একজন হাউসকিপার নিজেকে বাড়ির মালিক ভাবতে শুরু করে”

ভদ্রলোক তো কেবল বলেছেন যে ভাবতে শুরু করে আর আমার জীবনে সেই হাউসকিপার অলরেডি বাড়ির মালিক হয়ে গেছে । আর শুধু বাড়ির মালিক বলবো কেন আমার সব কিছুর উপর তার একচ্ছত্র অধিকার ।
আমার বাড়ির কোন কিছুর উপরই এখন আর আমার অধিকার নাই । এমন কি আমার নিজের বাবা মা , তারা পর্যন্ত আমাকে পাত্তা দেয় না । তাদের কাছে তাদের পুত্রের বউই এখন সব ।
বউ যা বলবে তাই আর পুত্র কিছু বলতে গেলেই আর রক্ষা নাই । আব্বা রাগ দেখিয়ে বলবে
-ছেলে লায়েক হয়ে গেছে ! লায়েক ! আমার কিছু বলার উপায় ও নাই ।
আমি এখন এই সংসারের সব থেকে অবহেলিত প্রানী । কাউরে কিছু বলতে পারি না । কেবল শুনে যাই !

-এই ল্যাপটপের সামনে কি করছো ? ফেসবুকিং করছো ?

আমার লেডি বস এসে হাজির । পুরো বাড়ির মধ্যে কেবল এই ল্যাপটপের উপরেই আমার অধিকার । সেটারও কৈফত্ৎ দিতে হবে !
হঠাৎ মন বিদ্রহী হয়ে ওঠে । গলা চড়িয়ে বলি
-কি করি তা কি তোমাকে কৈফত্ দিতে হবে নাকি ? আমার যা ইচ্ছা তাই করবো !

-কি হল কথা বলছ না কেন ? ল্যাপটপে কি করছো ?

পাঠক মনে হয় সত্যি ভেবে বসেছেন আমি বুঝি সত্যি সত্যি কথাটা বলেছি ! এসব কথা কেবল স্বপ্ন আর কল্পনাতেই বলা সম্ভব । বাস্তবে নয় আর বউয়ের সামনে তো নয়ই !!
বাস্তবে বউকে বললাম
-তেমন কিছু না জান । এই একটু ব্লগ পড়ছিলাম ।
-কোন মেয়ের লেখা পড়ছ না তো ? কই দেখি..
বলতে বলতে নিশি আমার ল্যাপটপ টা ওর দিকে নিয়ে নিল । একটুপর আবার ফেরৎ ও দিয়ে দিল ।
সত্যি বলতে কি একটু আগেই একটা মেয়ের লেখাই পড়ছিলাম । ভাগ্যভাল যে প্রথম পাতায় চট করে প্রথম চলে গিয়েছিলাম । না হলে খবরই ছিল আমার ।
নিশি আবারও বলল
-শোন এত ব্লগিং করতে হবে না । তাড়াতাড়ি শুতে এসো । কাল সকালে আবার অফিস আছে ।
-আর একটু পড়ি ।
-না । এখনই ল্যাপটপ বন্ধ কর । না হলে কিন্তু আছাড় মেয়ে ভেঙ্গে ফেলবো ।

হায়রে আমার জীবন ! কোন দুঃখে নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছিলাম । পিচ্চি একটা মেয়ে ! আমার উপর কেমন করে খবরদারি করছে !

আমার না মাঝে মাঝে বিশ্বাসই হয় না যে এই মেয়েটা এক সময় আমার আন্ডারে কাজ করতো ! আমার এখনও সেদিনের কথা মনে আছে । সারাটা সকাল খুব বিজি ছিলাম । বিরক্তও ছিলাম । এক গাদা কাগজ নিয়ে তাড়াহুড়া করে মিটিং রুমে যাওয়ার সময় একজনে সাথে ধাক্কা লেগে সব কাগজ ছড়িয়ে পড়ে গেল । মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেল ।
ধমক দিতে গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে কেমন জড়সড় হয়ে কাগজ গুলো তুলছে । কাগজ গুলো আমার হাতে দেবার সময় মেয়েটা খুব নার্ভাস ভাবে বলল
-সরি স্যার আমি একদম দেখি নি ।
সেদিনএকটা ভূল হয়েছিল । একটা ধমক দেওয়া উচিৎ ছিল । জীবনে নিজের কাছে অন্ততঃ বলতএ পারতাম যে আমি আমার বউ কে ধমন দিয়েছি ! চোখ রাঙ্গিয়েছি!! আহা !! ভাবতেই ভাল লাগছে !! কিন্তু হায় !! ঐ দিন কিছুই বলতে পারি নি !
ঐ দিন এতো বিরক্তি আর মেজাজ খারাপের মধ্যেও আমার কেন জানি মনটা ভাল হয়ে গেল ।
তারপর থেকে মেয়েকে দেখতাম আমার মনের ভিতরে কেমন জানি একটা আনন্দের অনুভূতি হত । সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যেত ।
প্রায় এক মাস পর মেয়েটা আমার ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার হয়ে এল । বলতে গেলে একেবারে আমার আন্ডারেই । আসতে আসতে মেয়েটার সম্পর্কে সব কিছু জানলাম ।
ওর নাম যে নিশি এই কথাটা জানতে পেরেও খুব ভাল লাগছিল ।

কয়দিন পর একটা উড়ো উড়ো খবর শুনতে পেলাম আমার আন্ডারের এক জুনিয়র অফিসার,কি নাম জোবায়ের না ফোবায়ের ওকে নাকি প্রোপজ করেছে,না করবে জানি ।
ঐ বেটার উপর এতো মেজাজ খারাপ হল !! মনে হল সকাল বিকাল থাপ্পর দেই । কিন্তু থাপ্পর তো আর দিতে পারলাম না । কিন্তু অন্য ব্যাবস্থা করলাম । বেটার প্রোপজ করার সাধ মিটিয়ে দিলাম ।
বসের সাথে আমার রিলেশন বেশ ভাল । রাঙ্গামাটিতে আমাদের অফিসের নতুন একটা ব্রাঞ্চ খুলেছিল । বেটাকে ঐ খানে ট্রান্সফার করে দিলাম ।
যা বেটা দুরে গিয়া মর ।

আমার আন্ডারেই ছিল । তাই প্রতিদিন কোন না কোন বাহানায় ওকে কাছাকাছি আনার চেষ্টা করতাম । টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করতাম । কিন্তু খুব বেশি জমত না ।
আর নিশি আমার সামনে আসলেই কেমন জানি নার্ভাস ফিল করতো । আমার ভাবতেই অবাক লাগে এই নার্ভাস মেয়েটা এতো সাহসী হল কিভাবে ?
এভাবেই চলছিল এর মাঝে আবার এক উঠকো ঝামেলা এসে হাজির হল । বস একদিন আমাকে ডেকে বলল
-আরিফ ?
-জি স্যার ।
-সগির কে তো চেনো ? তোমার ভাবীর ছোট ভাই ।
-জি স্যার চিনি । ওর বিয়ের জন্য একটা ভাল মেয়ে দরকার ।
-আমি কি স্যার খোজ খবর লাগাবো ।
-আরে তোমাকে খোজ লাগাতে হবে না । মেয়ে আমি পছন্দ করেছি ।
-ও আচ্ছা ।
-তুমি শুধু মেয়েটাকে একটু রাজি করাবে ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম । বললাম
-আমি কিভাবে রাজি করাবো ?
-আরে মেয়েটা তো তোমার আন্ডারেই আছে । নামিয়া নূসরাত ।
নামিয়া নূসরাত ?
নামিয়া নূসরাত !!
নিজের মনের মধ্যেই নামটা বিস্ফোরিত হল । নামিয়া নুসরাত নিশির নাম ।
বুড়ো ভাম বলে কি ?
তুইতো এক বুইড়া তোর আকাম্যায়া শালার জন্য নিশিকে চাস ?
তোর সাহসতো কম না !!
তোরে তো নিয়োমিত থাপড়ানো দরকার ! সকাল বিকাল নিয়ম করে দুবেলা থাপড়ানো দরকার । তোর এতো বড়.......
-এই আরিফ ? কি ভাবছ ?
-জি স্যার কিছু ভাবছিনা ।
-মেয়েটাকে রাজি করাও কেমন ?
-আচ্ছা স্যার !

আমি গুড এমপ্লয়ীর মত নিশির কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেলাম । আমার কথা সব শুনার নিশি বলল
-এটা আপনার কথা ?
আমি কিছু বলি না । আমি অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি । অনেক ক্ষন কোন কঠা বললাম না । হঠাৎ নিশি বলল
-আরিফ আমার দিকে তাকাও ।
আমি খানিকটা চমকালাম ।
আগে আমাকে ও স্যার বলে ডাকত । তার উপর কেমন নার্ভাস একটা ভাব থাকতো কথায় ।
কিন্তু আজকের কথায় তার কোন কিছুর বালায় নাই ।
-তুমি জোবায়ের কে রাঙ্গামাটিতে ট্রান্সফার কেন করলে ? তোমার তো নিজের ওখানে ট্রান্সফার হওয়া উচিত্ ছিল । জোবায়ের নিজের কথা অন্তত বলেছিল । তোমার মত বসের শালার কথা সে বলে নি । হি ইজ বেটার দ্যান ইউ ।
- নো হি ইজ নট বেটার দ্যান মি ।
আমি খানিকটা চিৎকার করেই বলে উঠে ।
-আচ্ছা ? প্রুভ ইট ।
-প্রুভ ? দাড়াও !
এই বলে ঐ দিন খুব সাহসিকতার একটা কাজ করেছিলাম ।

কি চমৎকার দিনই না ছিল ! ইস ! ওরকম সাহসী যদি আবার আমি হতে পারতাম ।

-কি হল এখনও বসে আছো কেন ? আমি উঠলে কিন্তু সত্যি সত্যি ল্যাপটপ ভেঙ্গে ফেলবো ।
আমি আশ্চার্য হয়ে যাই । ওর সাথে বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি এরই মধ্যে ও কি থেকে কি হয়ে গেছে ।
আগে তো অফিসে আমি ওর বস ছিলাম ।
চাকরি ছেড়ে দিয়ে ও এখন আমার বস । সত্যি এখন আমার বস । চুপ চাপ ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমাতে এলাম ।
৬১টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×