somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন একটা গল্প পড়ি : একজন ইভটেজার, একজন ভুক্তভোগী, একজন সাধারন মানুষ আর একজন সাহসী ব্লগারের গল্প !!!

১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন ইভটেজার

সিগারেটে একটা টান দিতেই মেজাজটা গরম হয়ে গেল । শালা মুকিমকে বলেছিলাম ভালটা কিনতে । আর শালারপুত কিনছে কোনটা !
এই জিনিস খাওয়া আর আকিজ বিড়ি খাওয়া একই কথা । তবুও খাজা ভরা সিগারেটটা ফেলে দিতে পারলাম না । তবে মেজাজটা গরম হয়েই রইল ।
মুকিমকে হাতের কাছে পেলে হয় এখন ! শালার পৃষ্ঠদেশে জোরে একটা লাথি কশাতে পারলে ভাল লাগবে । একথা ভাবতে ভাবতেই দেখলাম মুকিম এদিকে আসছে ।
হালার শয়তানের নাম নাও আর শয়তান হাজির ।
-দোস্ত জলদি চল ।
মুকিম এসে কেবল এই কথাটা বলে আমার হাত ধরে টান দিলো । পাশে তুহিন আর জহির বসে ছিল ।
-কি হইছে টানস ক্যান ?
-আরে চল না মামা , স্টার কাবাবের কাছে এক জব্বর মাল দাড়িয়ে আছে ।
আমার মনে খানিকটা কৌতুহল জেগে উঠল ।
মুকিমের এইসব দিকে অভিজ্ঞতা খুব ভাল । বললাম
-দেখতে কেমন ?
-জোস মামা জোস !
-একা নাকি দোকা ?
জহির বলে উঠল
-দোকলা হলে কি হইছে । সব সাইজ করে দিবো । চল অনেক্ষন ধরে হাত নিশপিশ করছে ।
আমি বললাম
-চল ।
আসলেই অনেকক্ষন ধরে কিছু করা হচ্ছে না । গাজার স্বাধটাও ঠিক মত ধরে নি কিছুতো একটা করা উচিত্‍ ।

স্টার কাবাবের দিকে এসে মালটাকে দেখশাম । মুকিম শালা ঠিকই বলেছে । আসলেই জোস । আমি বললাম
-চল একটু মজা করি ।
আমরা চারজনই আস্তে আস্তে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাই । মেয়েটা কিছু লক্ষ্যই করেনি । একপরেই যে মেয়েটার সাথে কি হবে এটা ভাবতেই নিজের মনে হাসি চলে এল ।
ঐ তো মেয়েটার কোমরের এক জায়গায় পায়জামাটা বের হয়ে রয়েছে । মেয়েটার খুব কাছে যখন চলে এলাম ঐ জায়গাটা ধরেই টান দিলাম ।

ধ্যাত ! খুলল না ।
বেশ শক্ত করে বেধেছে শালী ।
টান মারার পর আমরা হাসতে হাসতে চলে আসছি একবার পেছন ফিরে তাকালাম । দেখলাম মেয়েটা কেবল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
একটু আগে ওর সাথে কি হল মেয়েটা যেন ঠিক মত বুঝতেই পারছে না । অধিক শোকে মানুষ যেমন পাথর হয়ে যায় মেয়েটা তেমন অধিক টানে পাথর হয়ে গেছে ।
এখনিই মেয়েটা নিশ্চই চিৎ‍কার করে উঠবে তার আগেই আমি মাথা ঘুরিয়ে নিলাম ।
আর দেখার টাইম নাই । আর চিৎ‍কার করলেও খুব একটা লাভ নাই ।
এটা আমাদের এলাকা ।
একটু আদতু মজা না করলে কে করবে ?
মনে আনন্দ নিয়ে দুই কদম গিয়েছি ঠিক এমন সময় কেউ আমার পেছন থেকে কলার চেপে ধরল ।
-এই খানকিরপুত ! জামা ধরে টান দিলি ক্যান ?


একজন ভুক্তভোগী

মোবাইলে সময় দেখেই চোখ কপালে উঠে গেল । সাড়ে নয়টা বাজে !
ও মাই গড !
এতো রাত হয়ে গেছে । একটা মিরপুরের গাড়ি যদি আসে !
আর এতো দুর তো রিক্সায় যাওয়াও সম্ভব না ।
কি যে করি ? আম্মুকে ফোন দিলাম
-কি রে তুই কোথায় ?
-মা এখনও ধানমন্ডিতে ।
-এতো দেরি করছিস কেন ? তোর আব্বু এখনই চলে আসবে ! তোকে বাসায় না দেখলে কি হবে ভেবে দেখেছিস ?
-মা এইতো ! বাস আসলেই চলে আসবো ।
-আয় । জলদি আয় ।
মা ফোন রেখে দিল । আসলেই এখন একটু চিন্তা লাগছে । কি যে করি !
তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়া দরকার ।
এসব কথা ভাবছি ঠিক এমন সময় আমার পাশে কে যেন এল । একটু গরম অনুভব হচ্ছে । ঠিক তখনই কে যেন পিছনের লেগিং ধরে টান দিল । আমি ভাবতেই পারি নি এমন কেউ করতে পার ।
ভাগ্য ভাল শক্ত করে বাধা ছিল । তা না হলে ....
আমি আর ভাবতে পারলাম না । আমার বাস্তবে আসতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল । ছেলেগুলোর দিকে তাকালাম ।
তাকিয়ে দেখি ছেলেটা বীশ্রি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
আমার এখন কি করা উচিত্‍ । খ্যাল করলাম নিজের চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি পড়ছে ।
বারবার মনে হচ্ছে কেউ দেখে নিতো । দেখলে লজ্জার সীমা থাকবে না । ছেলে গুলো হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে ঠিক তখনই দেখলাম একটা লম্বা মত ছেলে ঐ ছেলেগুলোর মধ্যে যে ছেলেটা আমার দিকে হাসছিল তার কলার চেপে ধরল ।


একজন সাধারন পাবলিক

স্টার কাবাব থেকে কাবাব খেয়ে বের হচ্ছিলাম ঠিক তখনই দেখলাম একটা লম্বা মত ছেলে অন্য একটা ছেলের কলার চেপে ধরল ।
কি কথা কাটাকাটি করতে করতে দেখলাম মারামারি বেধে গেল ।
লম্বামত ছেলেটা একা ছিল আর ঐ ছেলে গুলো চারপাঁচ জন ।
ঠিক বুঝলাম না ছেলেটা ওমন এগ্রেসিভ হল কেন ? ছেলেটাকে সাথে ঐ গুপটার সাথে গন্ডগোল বেঁধে গেল । আসেপাশে পাশে লোক জড়হতেও সময় লাগল না ।
একটু পরেই দেখলাম একটা মেয়ে ঐ লম্বা মত ছেলেটার পাশে এসে হাওমাও করে কাঁদতে লাগল ।
কিছুক্ষন দাড়িয়ে যা বুঝলাম তার সারমর্ম হল ছেলেগুলো মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে টিজ করেছিল । আর লম্বা মত ছেলেটা সেটার প্রতিবাদ করে মার খাচ্ছে ।
দেখলাম আসেপাশের কোন লোকজন ছেলেটাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না । তবে ঐ ছেলেগুলোও হাতপা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দিল ।
এতো মানুষ জন দেখে ছেলেগুলোও কেমন হিজিটেইড ফিল করা শুরু করেছে ।
কেউ কেউ আবার লম্বা ছেলেটাকে দোষ দিতে লাগল । বলল
-এতো বাড়াবাড়ি করার কি দরকার ! পথ চলার ক্ষেত্রে একটু আডটু ধাক্কা লেগেই যেতেই পারে ।
আমি আর থাকলাম না ।
কি দরকার পরের ঝামেলায় নাক গলানো !
আমি আমার সমস্যা নিয়া বাচি না ! পরের সমস্যা নিয়ে ভাবার সময় কোথায় ?

একজন সাহসী ব্লগার

সুমন সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছে । হাত ঘড়ি দিকে তাকিয়ে আবার পা চালালাম আরো দোড়ে ।
সুমন নিশ্চই রেগে পম হয়ে আছে । স্টার কাবারের কাছে এসেছি ঠিক তখনই একটা অদ্ভুদ একটা দৃশ্য দেখলাম ।
দেখলাম একটা মেয়ে দাড়িয়ে ছিল স্টার কাবারের সামনে । মনেহয় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল ।
কয়েকটা ছেলে মেয়েটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল । প্রথমে ভেবেছিলাম ছেলে গুলো হয়তো এমনিতেই ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তখনই একটা কাজ হল । ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে মেয়েটার পেছনের ল্যাগিংস ধরে টান দিল ।
মাই গড !
আমি ভাবতেই পারলাম না এমন একটা কাজ কেউ করতে পারে ?
কেন জানি নিজের মধ্যেই খুব রাগ অনুভব করলাম ।
আর কিছু ভাবলাম না আর কিছু মনেও এল না সোজা গিয়ে হারামজাদার কলার চেপে ধরলাম ।
-খানকির পুত ! জামা ধরে টান দিলি ক্যান ।
ছেলেটা প্রথমে খানিকটা অবাক হল । কিন্তু সামলে নিল । বলল
-ক্যান তোর কি লাগে ? বউ লাগে নি ?
দেখলাম ছেলেটার আশেপাশের ছেলে গুলোও সামনে চলে এসেছে । কথা কাটাকাটি বেধেই গেল ।
আমি একা ওরা চার জন তবুও বুকের মাঝে কেন জানি ভয় লাগলো না । আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি । আসেপাশের কত লোক আছে । তাদের বিবেক আছে । তারা আমার সাথে আসবেই !
কিছু ক্ষনের মধ্যেই লোকজন জমে গেল । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম । একটা মানুষও আমার সাহায্যের জন্য এল না ।
তার চেয়েও বেশি অবাক হলাম কেউ যখন বলল যে আমি নাকি বাড়াবাড়ি করছি ।
আমি ভুক্তভোগী মেয়েটার দিকে তাকালাম । মেয়েটা কাঁদছে ।
মেয়েটাকে দেখিয়ে বললাম মেয়েটা যদি আপনাদের মেয়ে হত কিংবা বোন তবুও কি এই কথা বলতেন ?
তবুও কেউ কিছু বলল না ।
আমি ভাবতেই পারলাম না আমাদের দেশের মানুষ গুলো এমন বিকেক হীন কেন হল ।
পরিস্কার দেখা যাচ্ছে একজন অন্যায় করছে কিন্তু কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না ।
এমন কি একটু সামর্থনও কেউ করছে না । দেখলাম ছেলেগুলো ততক্ষনে কেটে পড়েছে ।
মেয়েটা তখনও কেঁদে চলেছে ।
আমি মেয়েটাকে নিয়ে ভীড় ঠেলে বাইরে চলে এলাম । খুব সংকোচের সাথে বললাম
-আমি খুবই দুঃখিত । তোমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের কোন সুস্থ বিচার হল না ।



কিছুকথাঃ

এটা একটা কাল্পনিক গল্প । কিন্তু গল্পটার প্রেক্ষাপট একদম বাস্তব । আমাদের চারপাশে এমন ঘটনা হারহামেসাই হয় । এবং এমনটাই হয় । আমার ভাবতে কষ্ট হয় আমাদের চারপাশে এই চার রকমের লোকই আছে ।
ইউ ল্যাবের ছাত্র পরিচয়ে ঐ ইভটেজার যেমন আছে ভুক্তভোগী ঐ মেয়ের মত অনেক মেয়ে আছে ।
আর সব থেকে হতাশার কথা হল পড়ালেখা বিকেকবান আমাদের মত সাধারন লোকও আছে । যারা কেবল ঝামেলা এড়িয়ে চলে । যারা কেবল নিজেদের কথা ভাবে । অন্যের ঝামেলা তারা নিজেদের ঝামেলা মনে করে না ।

কিন্তু ..............
কিন্তু আমাদের সমাজে ঐ সাহসী কিছু মানুষও আছে । যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে । অন্যের ঝামেলা যারা নিজেদের ঝামেলা মনে করে । নিঃশর্ত ভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ।
আমাদের সমাজে এখনও এমন মানুষ আছে । এটা ভাবতেই মন ভাল হয়ে যায় ।

একজন সাহসী মানুষ ।
একজন সাহসী ব্লগার । সামহোয়ারের সাহসী ব্লগায় সর্বনাশা আপনাকে স্যালুট জানাই ।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×