অনুশেখার বাবার যে আমাকে চড় মেড়ে বসবেন আমি ভাবি নি । চড়টা খাওয়ার জন্য আমি প্রস্তুতও ছিলাম না । ব্যালেন্স হারিয়ে সোজা গিয়ে পড়লাম সোফার কাছে । মাথার মধ্যে কেমন জানি ঝিমঝিম করে উঠল । অনুশেখা একটু দুরে দারিয়ে ছিল । ও নিজেও ভাবতে পারে নি যে ওর বাবা আমাকে এভাবে চড় মাড়বেন ।
“বাবা ওকে মেরো না প্লিজ”
উঠে দাড়াতে দাড়াতে আমি অনুশেখার দিকে তাকালাম ।
ওর চোখে পানি ! আমার জন্য !
আমার মত একটা প্রতারকের জন্য ওর চোখে পানি !
অনুশেখার বাবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল “তুই চুপ থাক। তুই এতো বোকা হলি কিভাবে ? আর জোচ্চরটার জন্য তোর মায়া লাগছে কেন?”
অনুশেখা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে । ওর চোখ দিয়ে দেখলাম পানি গড়িয়ে পড়ল । মেয়ে এই কান্ড দেখে ওর বাবা বিরক্ত হলেন । ওর বাবা এবার আমার দিকে চোখ ফেরালেন ।
“বল হারামজাদা আর কি নিয়েছিস আমার মেয়ে কাছ থেকে?”
আমি কিছু বলার আগেই অনুশেখা বলল বাবা “ও আর কিছু নেয় নি । নেকলেসটা ও নিয়েছিল ও নিজেই ফেরত্ দিয়েছে । বাবা ও আর কিছু নেয় নি । বাবা প্লিজ ওকে আর মেরো না।”
ওর বাবা আবার ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলেন ।
আর আমি হলাম বিশ্মিত । সত্যি তো আমার জন্য ওর কেন মায়া লাগছে !
এই মেয়েটা আসলেই এতো বোকা হল কিভাবে? সব কিছু জানার পরও অনুশেখার মনে আমার জন্য মায়া রয়েছে ভালবাসা রয়েছে মেয়েটা আসলেই বোকা ।
শুধু বোকা না বোকার চুড়ান্ত । হঠাত্ আমি লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে । পানি পড়ছে অনুশেখার বাবার চড়ের জন্য না । অনুশেখার জন্য ।
তাহলে আমিও কি ওর মত বোকা হয়ে গেলাম?
আমার মত প্রতারকও কি তাহলে কাউকে ভালবাসতে পারে??
অনুশেখার বাবা আমাকে পুলিশে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু অনুশেখার জন্য দিতে পারল না । ওদের বাসা থেকে বের হয়ে হাটছি, মনকে বোঝালাম যে পিছন ফিরে তাকাবো না কিছুতেই ।
কিন্তু না তাকিয়ে পারলাম না । পিছন ফিরে যা দেখবো ভেবেছিলাম তাই হল ।
অনুশেখা দাড়িয়ে আছে । একদম গেটার কাছেই । মনের মধ্যে আবার সেই অচেনা অনুভূতি হল ।
এটার নামই কি ভালবাসা?
আমি হাটতে থাকি আবার ।
আরো একবার তাকাই পিছনে । সে তখনও দাড়িয়ে ।
কয়দিন আগেও আমার জীবনটা কেমন ছিল ! অন্য রকম । মেয়েদের কে পটিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নেওয়াই ছিল আমার কাজ । আর কেন জানি মেয়েগুলা পটেও যেত খুব তাড়াতাড়ি । আর একবার পটে গেলে মেয়েগুলার কাছে আমি হয়ে যেতাম দেবতা । যা বলতাম তাই বিশ্বাস করতো কোন কিছু না ভেবে ।
একবার একটা মেয়ে সাথে পরিচয় হয় ফোনে । মেয়েটার নাম ছিল দিয়া । বড় লোকের মেয়ে । যে আমাকে দিয়া নম্বরটা দিয়েছিল সে বলেছিল যে ওর কাছে একটা N97 আছে । আমার টার্গেট ছিল এই N97 গায়েব করবো । যেদিন ওর সাথে দেখা হয় সেদিনই সুযোগটা চলে আসে । KFC তে দেখা করি । দিয়ে চোখ মুখ দেখে আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছিলাম যে আমাকে ওর পছন্দ হয়েছে । ওর সাথে কথা বলছি এমন সময় আমার ফোনে একটা ফোন আসে । আগে থেকে ঠিক করা ছিল । হ্যালো বলি কিছুক্ষন কথা বলি খুব সিরিয়াস ভাবে তারপর ওহ্ সিট বলে রেখে দিই ।
দিয়া বলে “কি হয়েছে?”
“আমার একটা জরুরী ফোন ছিল এটা । মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে । তুমি একটু বসো ব্যালেন্সটা রিচার্য করে নিয়ে আসি।“
দিয়া টোপ গিলে ফেলল । বলে “আমার ফোন দিয়ে কল কর ।“
আমি প্রথমে নিতে চাই না । পরে নেই । KFC মধ্যে ভীড় ছিল । ওকে বলি তুমি অর্দার দাও । আমি একটু নিড়িবিলি কথা বলে আসছি । তারপর ওখান থেকেই হাওয়া । জানি না ও আমার জন্য কতক্ষন অপেক্ষা করেছিল । আমি একজনে সাথে খুব বেশি সময় ধরে থাকতাম না । যত তাড়াতাড়ি কেটে পড়া যায় ।
কিন্তু অনুশেখার বেলায় সব কিছু অলটপালট হয়ে গেল । আমার কিছু ইনফর্মার আছে । তাদের কাছ থেকেই আমি ওর খবর পাই । কদিন ওকে ফলো করি । খোজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে অনুশেখার মন অসম্ভব নরম । আমি যতখানি দেখলাম ওর কাছ থেকে খালি হাতে কেউ ফেরত্ যায় নি । আমি এই সুযোগটা নিলাম । একদিন অনুশেখা ওর ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছে ।
আমি আমার প্লান মত কাজ করা আরাম্ভ করলাম । ও যখন আমার কাছে চলে এসেছে তখন আমি একটা আইসক্রিম কিনে সবে একটা কামড় দিয়েছি অমনি একটা টোকাই এসে আমার প্যান্ট টান দিল । আগে থেকে টোকাইটা কে ঠিক করা ছিল ।
“স্যার দেন স্যার।“
একটু হেসে আমি আমি আইসক্রিমটা দিয়ে দিলাম । ঠিক তখনই কোথ্থেকে যেন আরে একদল টোকাই এসে হাজির । এগুলোও ঠিক করাই ছিল । সবাই কেই কিনে দিতে হল । আমি জানি অনুশেখা আমাকে দেখছে । শুধু ও আরো অনেকেই আমাকে দেখছে । যে দেখে দেখুক । এবার হল আসল পার্ট । ওদের আইসক্রিমের দাম দিয়ে আমি এবার আমার জন্য আরো একটা আইসক্রিম কিনতে গেলাম । টাকা দেওয়ার সময় এমন একটা ভাব করলাম যেন আমার কাছে আর টাকা নাই । আইসক্রিম ওয়ালাকে আইসক্রিমটা ফেরত্ দিয়ে বললাম
“সরি ভাই আর টাকা নাই আমার কাছে।“
তারপর হাটা দিলাম । একটু সন্দেহ ছিল তবুও ভরসা ছিল যে কাজ হবে । কাজ না হলে অবশ্য আরো অন্য ভাবে ট্রাই করতে হত । কিন্তু কাজ হল । একটু পরেই অনুশেখা আমাকে থামার জন্য ডাকদিল । পিছন ফিরে দেখি ও আমার দিকে এগিয়ে আসছে । হাতে দুটো আইসক্রিম ।
আমার দিকে একটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল “প্লিজ নিন” ।
আমি খানিকটা অবাক হওয়ার ভান করলাম একটু খুশিও হলাম ।
“Thank you”
“আপনি কি এমন কাজ প্রায়ই করেন?”
“কি রকম কাজ?” আমি না বোঝার ভান করি ।
“এই যে একটু আগে যা করলেন “ আমি হাসি ।
বলি “আসলে ব্যপারটা ওরকম না । কেউ যদি আমার কাছে কিছু চায় আর সেটা যদি আমার কাছে থাকে তাহলে কেন জানি দিয়ে দেই”।
“কিন্তু তাই বলে পকেট খালি করে দেওয়া তো ঠিক না “।
‘ঠিক না । তবুও । দেখুন এই যে ঐ বাচ্চা গুলো আইসক্রিম পেয়ে যে আনন্দিত হয়েছে , ওদের মুখে যে হাসি এসেছে , এর কি কোন তুলনা আছে বলুন? কাউকে কষ্ট দেওয়া খুব সহজ কিন্তু কাউকে আনন্দ দেওয়া খুব কঠিন । কারো মুখে একটু হাসি আনতে যদি আমার খানিকটা কষ্ট হয় , হোক না” ।
আমার কথা গুলো মনে হল অনুশেখার পছন্দ হয়েছে । ও হাসলো । সত্যি খুব সুন্দর করে হাসল । যদিও আমার সব কিছু প্লান করা তবুও কেন জানি অনুশেখার হাসি দেখে বুকের মাঝে একট অদ্ভুদ অচেনা অনুভূতি হল
“আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর” । ও আবার হাসলো ।
“আপনি কোথায় থাকেন?’
কি কথার কি উত্তর ।
“আমি থাকি আজিমপুর” ।
“ওমা সে তো অনেক দুরে । আপনি যাবেন কিভাবে?”
“বাসে|” ।
“কিন্তু আপনার কাছে তো টাকা নাই” ।
নিজের জ্বিব কাটলাম । তাইতো ভুল হয়ে যাচ্ছিল । বললাম “সমস্যা নাই । চলে যাবো” ।
“যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি আপনাকে পৌছে দেই ? আমার সাথে গাড়ি আছে” ।
আমি একটু খুশি হলাম । বললাম “আপনার বাসা কি ঐ দিকেই ।
"না ঐ দিকে না । এইতো কাছেই” ।
“না না তাহলে যাওয়ার দরকার নাই । সত্যিই বলছি একদমই প্রয়োজন নাই” ।
“তাহলে এতো দুর আপনি কিভাবে যাবেন ? আপনার কাছে তো কোন টাকা নেই” ।
আমি মনে মনে খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না । এই মেয়েটা আসলেই এরকম কেন ? আমি অপরিচিত একটা মানুষ আধা ঘন্টাও হয়নি এর সাথে কথা বলছি । তবুও আমি কিভাবে বাড়ি যাবো তা নিয়ে সে চিন্তিত । কেন? এরকম মানুষ কি আছে আজকাল?
“কি ভাবছেন” ?
“ভাবছি .... আচ্ছা আমার নাম কি বলুন তো?”
“ নাম তো বলেন নি আপনি ! কি নাম আপনার?”
“ আমরা কথা বলছি কতক্ষন?”
“ এই ২০ মিনিট প্রায়” ।
“তাহলে একজন অপরিচিত মানুষের জন্য এতো চিন্তিত?”
অনুশেখা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর বলল “চিন্তা করছি কারন আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি একজন ভাল মানুষ । একজন ভাল মানুষের একটু উপকার করতে পারলে আমার খুব ভাল লাগবে” ।
“এতো তাড়াতাড়ি কিন্তু মানুষকে চেনা যায় না” ।
অনুশেখা হাসল ।
“আমার মন বলছে আপনি ভাল মানুষ” ।
“ওকে ওকে মেনে নিলাম আমি ভাল মানুষ । তাহলে আমার একটা উপকার করুন” ।
“বলুন প্লিজ । আমাকে ২২ টাকা দিন আর আপনার মোবাইল নাম্বরটা” ।
অনুশেখা খানিকটা অবাক হল ।
“২২ টাকা?”
“ব্যাখ্যা করছি । ২২ টাকা হল বাস ভাড়া । মোবাইল নাম্বরটা হল ঐ ২২ ফেরত্ দেবার জন্য” ।
অনুশেখা হেসে ফেলল । বলল “আপনি যে ভাল মানুষ তার প্রমান কিন্তু আবার দিলেন ।
“কিভাবে দিলাম । আমি নিজেই তো বুঝলাম না” ।
ও কিছু বলল না । ব্যাগ থেকে চকচকে একটা ১০০ টাকার নোট বের করে দিল ।
“২২ টাকা” ।
“সরি এর থেকে ছোট নোট আমার কাছে নেই” ।
তারপর ও মোবাইল নাম্বার দিল । বলল “আমার নাম অনুশেখা । আপনার ?”
“ইফতেখার হাসান । তবে অপু বলে ডাকলে ভালো হয়” ।
তারপর আমি চলে আসি ওখান থেকে । ঐ দিন বিকালেই ১০০ টাকা অনুশেখার নাম্বরে পাঠিয়ে দিই । কিন্তু ওকে কল করি না । কেন জানি খুব ইচ্ছা করছিল ওর সাথে কথা বলার জন্য । কিন্তু করি না । অনুশেখাকে ফোন করি আরো ৩ দিন পর । মেয়েদের সাইকোলজি আমি মোটামুটি ভাল বুঝি । তাই আমি জানতাম আমার সাথে কথা বলার জন্য অনুশেখা অপেক্ষা করে আছে ।
ফোন দিলাম আমি
“হ্যালো? অনুশেখা?”
“ওহ্ আপনি? আমিতো ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমাকে আর ফোনই করবে না । টাকা পাবার পর আমি ওয়েট করছিলাম যে আপনি ফোন করবেন” ।
“সরি । আসলে সত্যি বলতে কি আমারও খুব ইচ্ছা করছিল আপনাকে ফোন করি । কিন্তু দ্বিধার কারনে করতে পারি নি । আপনি কি না কি মনে করেন?”
“বলেছে আপনাকে ! কিছু মনে করলে কি আপনাকে ফোন নম্বর দিতাম বলুন ? আমি সত্যি আপনার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম” ।
কিছুক্ষন নিরবতা ।
“আপনার কি আজ বিকালে একটু সময় হবে?”
“আমি বলি কেন বলুন তো?”
“আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম” ।
“বিকালে তো আমার একটু কাজ আছে” ।
“ও” অনুশেখাকে মনে হল যেন একটু হতাশ হল ।
“তবে” ।
“তবে?”
“আপনি ইচ্ছা করলে এখন আমার সাথে দেখা করতে পারেন । আমি এখন ঐখানেই আছি যেখানে আমাদের দেখা হয়েছিল” ।
“সত্যি?”
“আপনি একটু দাড়ান আমি এক্ষুনি আসছি।“
তারপর সেই একই কাহিনী । দেখা করা । ঘন ঘন দেখা করা । ফোনে কথা বলা । রাতের পর রাত কথা বলা । একসময় আই লাভ ইউ বলা । অন্য দের বেলায় আমিই বলতাম কিন্তু এবার অনুশেখা বলল । খুব সুন্দর ভাবে বলল ।
আমরা সেদিন বসুন্ধারার কাশবনে গিয়ে ছিলাম । চারিদিকে শুভ্র কাশফুল । তার মাঝে আমরা দুজন বসে ।
ও কি যেন বলতে চাচ্ছিল । আমি বুঝতে পারছিলাম ও কি বলবে ।
তবুও বললাম “তুমি কি বলবা আমাকে ! তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চাও” ।
“তুমি বুঝো না কি বলতে চাই” ।
“কি?”
ওর চোখের দিকে ভাল করে তাকাই ।
“কোথায়? কি বলতে চাও বলো প্লিজ” ।
ও খানিকটা যেন মুখ কালো করলো । অন্য দিকে তাকালো । আমি ওকে ধরে আমার দিকে ঘুরালাম । বললাম “প্লিজ বলো” ।
ও কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো । আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে । কি অদ্ভূদ সুন্দর সেই দৃশ্য !
“অপু আমি জানি না এটাকে সত্যিই ভালবাসা বলে কি না কিন্তু দিনের একটা মুহুর্তও আমি তোমার কথা চিন্তা না করে থাকতে পারি না । আমার মনে হয় আমি তোমার প্রেমে পড়েছি” ।
আমি হাসলাম ।
“মনে হয়? সিওর না?”
এবার অনুশেখার চোখ দিযে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ল ।
“যাও তুমি একদমই সিরিয়াস না । আমি আমি ....”
ও উঠে যেতে চাইল । আমি ওর হাত ধরে আটকালাম ।
“অনু কোথায় যাও ? বস বাবা, আমি সিরিয়াস । সত্যি ।“
অনুশেখা বসল । আমি ওর চোখ মুছে দিলাম ।
বললাম “তুমি আজকে বললে । তুমি যে দিন থেকে আমার প্রেমে পড়েছ আমি সেদিন থেকেই জানি। তোমার চোখ দুটো আমাকে চিত্কার করে বলেছে যে I LOVE YOU . আর আমিও তোমাকে ভালবাসি । অনেক আগে থেকেই তোমাকে ভালবাসি । ভালবাসি ।“
তারপর তারপর থেকে আমাদের দিন গুলোর যেন রঙিন হয়ে উঠল । আমি সাধারনত একটা মেয়ের সাথে খুব দিন থাকি না । কিন্তু অনুশেখার সাথে অনেকদিনের রিলেশন হয়ে গেল ।
তাহলে কি আমি ওর উপর সত্যি সত্যি ফল করেছি ?
নাহ্ ! এরকম হলে হবে না । তারপর ওর কাছ থেকে বড় কিছু হাতানোর চেষ্টা করলাম । এবং খুব সহজেই তা হয়েও গেল । ওর কাছ থেকে প্রায় লাখ টাকার নেকলেসটা হাতিয়ে নিলাম । এখন গায়েব হবার পালা । কিন্তু আমি কিছুতেই ওর কাছ থেকে গায়েব হতে পারলাম না । ওর ঐ নেকলেসটাও মেরে দিতে মন সায় দিলো না ।
ওকে না দেখে থাকতেও পারলাম না । প্রতি দিন ওর সাথে দেখা হয় কথা হয় ।
কিন্তু কি হল জানি না কাল রাতে ওকে ফোন করে সব কিছু সত্যি সত্যি বলে দিলাম । আর আজ সকালে নেকলেসটা ফেরত্ দিতে এসে এই বিপত্তি । ভদ্রলোক বেশ জোড়েই চড়টা মেড়েছে । এখনও ব্যাথা করছে ।
একা একা হাটছি আর অনুশেখার কথা ভাবছি ।
ও কি এখনও আমাকে ভালবাসবে ? নাকি ঘৃণা করবে ? যদি ঘৃণা করে তাহলে ? ওকে না দেখে কিভাবে থাকবো ? কিভাবে দিন কাটবে ? কিন্তু যদি ও আমাকে ঘৃণাই করবে তাহলে ওর চোখে পানি ছিল কেন ? ও আমাকে এখনও ভালবাসে । এখনও বাসে । আমার মন বলছে ও আমাকে ভালবাসে । ওর চোখ বলছে যে ও আমাকে ভালবাসে । আর.... যদিও এখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তবুও আমাকে স্বীকার করতেই হচ্ছে যে আমি সত্যি সত্যি অনুশেখার প্রেমে পড়ে গেছি !!
আমি জানতাম অনুশেখা আমাকে ফোন করবে কিন্তু এতো জলদি ভাবিনি । পরদিন ওর ভার্সিটির সামনে এসেছি ওকে দেখবো বলে । এমন সময় অনুশেখার ফোন । ফোন রিসিভ করার পরও ও কোন কথা বলে না । আমিও চুপ । কি বলব ভেবে পাই না । কেবল ওর নিঃস্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি । কতক্ষন চুপ ছিলাম জানি না ও ই আগে মুখ খুলল । বলল
“কাল রাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারি নি । কতবার চেষ্টা করলাম তোমাকে ঘৃণা করতে । একটুও পারি নি । একটুও না । তুমি আমার সাথে যা ই করনা কেন যে ভাবে আমাকে নিয়ে খেলা করনা কেন আমিতো তোমাকে সত্যি ভালবেসেছিলাম । একে বারে মন থেকে । আমি কিভাবে তোমাকে ভুলে যাবো? বল? কিভাবে তোমাকে ঘৃণা করবো বল?”
আমি কি বলব খুজে পাচ্ছি না । কি বলা উচিত্ তাও জানি না । খুব বলতে ইচ্ছা করছে যে আমিও সত্যি তোমাকে ভালবাসি । কিন্তু একথা কি ও বিশ্বাস করবে ?
“আমার মন কি বলছে জানো? কি আমি জানতে চাই । তুমি আমার আশে পাশে আছো । তুমি আমার কাছা কাছি থাকলে এই ফিলিংসটা আমার সব সময় হয়” ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমি এখানে এসেছি ওর জানার কথা নয় । ও কিভাবে বুঝল ?
“অনুশেখা আমি তোমার ভার্সিটির সামনে” ।
“সত্যি?”
কিছুক্ষন পরেই ও চলে আসল । ওর চোখ ফোলা ফোলা । রাতে কেঁদেছে অনেক । ও আমার সামনেই দাড়িয়ে । কিছু বলতে যাবো এমন কোথা থেকে যেন একদল টোকাই এসে আমাকে ঘিরে ধরল ।
“স্যার আইসক্রিম খামু স্যার । সেই দিন খাওয়াই ছিলেন । আইজাকাও খাওয়ান স্যার” ।
আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম "বিশ্বাস কর আমি আজ এ সব ঠিক করি নি । সত্যি বলছি । বিলিভ মি" অনুশেখা হেসে ফেলল ।
“আমি জানি” ।
আমার আরো খানিকটা কাছে এসে বলল “তবে আজ থেকে কথা দাও আমার সাথে তুমি আর কখনও মিথ্যা কথা বলবা না । প্রমিজ মি” ।
আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিল না যে অনুশেখা আমাকে মাফ করে দিচ্ছে । সত্যি কি এটা হচ্ছে ......
আমার কথাঃ লেখাটা আমি প্রথম দিকে একবার লিখেছিলাম । তিন পর্বের গল্প । আজ আবার পোষ্ট করলাম । লেখাটা খানিকটা বাস্তবতা বিবর্জিত । কিন্তু আমার মনে হয় আপনার লেখাটায় মেয়েটা আর ছেলেটার ভালবাসার কথাটা চিন্তা করবেন । ভালবাসায় কি না হয় !!
কখন যে ভালবেসেছি তোমাকে!! (এক প্রতারকের কাহিনী)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক
বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন